Image of মো: রফিকুল ইসলাম

নাম: মো: রফিকুল ইসলাম

জন্ম তারিখ: ১ জানুয়ারি, ১৯৯৭

শহীদ হওয়ার তারিখ: ২৭ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: ঢাকা

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : শ্রমজীবী, শাহাদাতের স্থান : উত্তর বাড্ডা

শহীদের জীবনী

শহীদ মো: রফিকুল ইসলাম মাদারীপুর জেলার কালকিনি থানার আলীনগর ইউনিয়নের অন্তর্গত দক্ষিণ কানাইপুর গ্রামে ১৯৯৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন। চার ভাইবোনের মধ্যে রফিকুলের অবস্থান তৃতীয়। মাতৃহারা রফিকুলের একমাত্র অভিভাবক তার বৃদ্ধ পিতা মো:কালু সরদার। পেশায় শ্রমজীবী রফিকুলই ছিলেন তার পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। বৃদ্ধ পিতার দেখভাল, মেয়েদের লেখাপড়া,আর পরিবারের খরচ চলতো তারই উপার্জিত অর্থে। কিন্তু স্বৈরাচার সরকারের কালো থাবার আক্রমণে চিরদিনের জন্য থেমে গেছে রফিকুলের কর্মক্ষম দুটি হাত। থমকে গেছে দুই মেয়ের সুন্দর ভবিষ্যৎ চিন্তা কিংবা বাড়ি ফেরার সময় স্ত্রীর জন্য একটা শাড়ি কেনার ইচ্ছা। পারিবারিক আর্থিক অবস্থান শ্রমজীবী রফিকুলের আয়েই চলতো তার সংসার। একটি টিনের ঘর ছাড়া সম্পদ বলতে তেমন কিছুই নেই। নেই চাষবাসের জন্য আবাদী জমিও। এই সামান্য সম্পদ আর কর্মক্ষম দুটি হাতের উপর নির্ভর করেই স্বপ্ন দেখে মেয়ে দুটিকে মানুষ করার। সেই স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেলো,আর রফিকুল হারিয়ে গেলো চিরতরে। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিত ২০২৪ সালের জুলাই মাস। চলছিলো বাংলাদেশের ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাকাণ্ড যার শিকার হয়েছিলো আপামর জনতা। যাদের অধিকাংশেরই লাশ দাফন করা হয়েছিলো বেওয়ারিশ হিসেবে কিংবা নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হয়েছিলো সেসব লাশের অস্তিত্ব। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচীর অংশ দিসেবে দেশে তখন কমপ্লিট শাটডাউন চলছিলো। সেই আন্দোলনে ছাত্র-জনতার সরব উপস্থিতিতে ভড়কে যায় স্বৈরাচার হাসিনা। তাই পুলিশ বিজিবি মোতায়েনের পরেও মাঠে নামায় ছাত্রলীগ-যুবলীগ নামক গুণ্ডাবাহিনীকে। সারাদেশে বন্ধ করে দেয়া হয় ইন্টারনেট সেবা। ১৯ জুলাই দিনের শেষ ভাগের ঘটনা। রফিকুল মুঠোফোনে কথা বলছিলো স্ত্রী শাবনূর খানমের সাথে, তখন গোলাগুলির শব্দে চমকে উঠেন তার স্ত্রী। উদগ্রীব হয়ে জানতে চান তার স্বামী নিরাপদে আছেন কিনা। মিনিট ২৫ পরে আবার কল আসে শাবনূরের ফোনে। কিন্তু এ যে তার স্বামীর কন্ঠ নয়! কোনো এক পথচারী উত্তর বাড্ডা থেকে জানায়, তার স্বামী পুলিশের গুলিতে আহত (সেই গুলি নাভির নিচ দিয়ে ঢুকে পিঠের পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়)। হতভম্ব শাবনূরের কানে তখন ধ্বনিত হচ্ছিলো মাগরিবের আজান। সেই পথচারী ও রফিকুলের এক রুমমেট তৎক্ষনাৎ তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করায়। ১৪ দিন চিকিৎসার পর কিছুটা সুস্থ হলে ১ আগস্ট নিজ বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয় রফিকুলকে। কিন্তু কয়েকদিনের ব্যবধানে পেটের ক্ষতস্থানের অবস্থা খারাপ হলে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল নেয়া হয়। কিন্তু অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় ও ডাক্তার স্বল্পতার কারনে তাকে নেয়া হয় ঢাকার একটি প্রাইভেট হাসপাতালে। প্রায় দশদিন চিকিৎসার পর আর্থিক সংকুলান না হওয়ায় তাকে শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়। সেখানেই ২৭ আগস্ট চিকিৎসাধীন অবস্থায় শাহাদত বরণ করেন রফিকুল ইসলাম। পরিবারের বর্তমান অবস্থা রফিকুলকে হারিয়ে যেন সর্বহারা হয়ে গেছে তার পরিবার।তার স্ত্রীর যে দুচোখ ভরা সংসার সাজানোর স্বপ্ন ছিলো সেই দুচোখে যেন এখন খেলা করে সর্বনাশা পদ্মার ঢেউ। মেয়েদের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ এর আশংকায় এখন দিন কাটে শাবনূর খানমের। বাবার কাছে খেলনা আর নতুন জামার আবদারের অপেক্ষায় তার দুই মেয়ে। সহযোগিতার প্রস্তাবনা যে রফিকুল প্রাণ দিয়ে দেশকে গড়ার সুযোগ দিয়েছেন,তার বিধবা স্ত্রীর ও মেয়েদের স্বপ্ন গড়ার ভার যেন আমাদেরই দায়িত্ব। ভালো বাসস্থান আর স্থায়ী আয়ের ব্যবস্থাও তাদের একান্ত প্রয়োজন। এক নজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্যাবলি পুরো নাম : মো: রফিকুল ইসলাম জন্মসাল : ১৯৯৭ পিতা : মো: কালু সরদার ঠিকানা : গ্রাম: দক্ষিণ কানাইপুর, ইউনিয়ন: আলীনগর, থানা: কালকিনি, জেলা: মাদারিপুর পরিবারের সদস্য সংখ্যা : ৪ জন। পিতা-মাতা ও ২ মেয়ে ১. পিতা, ২. স্ত্রী ৩. বড় মেয়ে: আনিশা, বয়স-১১ বছর, শ্রেণি: ৬ষ্ঠ ৪. ছোট মেয়ে (জান্নাত,বয়স: ৫ বছর) আহত হওয়ার স্থান ও তারিখ : উত্তর বাড্ডা ১৯/০৭/২০২৪, নিহত হওয়ার স্থান ও তারিখ : শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিট, ২৭/০৮/২০২৪

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: রফিকুল ইসলাম
Image of মো: রফিকুল ইসলাম

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: সামিউ আমান নুর

নাজমুল মিয়া

মো: রুস্তম

মো: আজিজুল মিয়া

নুর মোহাম্মদ সরদার

রিয়াজুল ফরাজী

মো: আকাশ

মো: শাওন

মো: রশীদ

সৈয়দ মো: মোস্তফা কামাল রাজু

মুহাম্মদ জান শরীফ

নাজমুল হাসান

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo