জন্ম তারিখ: ১ জানুয়ারি, ২০০৭
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: ঢাকা
পেশা : মোটর মেকানিক, শাহাদাতের স্থান : সাভার, এনাম মেডিকেল কলেজ
হাসিবুর রহমানের জন্ম ২০০৭ সালে মাদারীপুর জেলার উত্তর কানাইপুর গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারে। ছোটবেলা থেকেই তার জীবন ছিল সংগ্রামমুখর। তার মা যখন মারা যান, তখন হাসিবুর খুবই ছোট। মা-বাবার একমাত্র সন্তান হাসিবুর তার বাবার সঙ্গেই বড় হয়। বাবার শয্যাশায়ী অবস্থা তার জীবনে আরও এক নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে আসে। তাদের পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা অত্যন্ত নাজুক ছিল। মা না থাকায় সংসারের সব দায়িত্ব এসে পড়ে ছোট্ট হাসিবুরের কাঁধে। গ্রামের অন্য শিশুদের মতো স্কুলে যাওয়া তার পক্ষে সম্ভব হয়নি, কারণ সংসারের খরচ চালানোর মতো আর কেউ ছিল না। অর্থাভাবে পড়াশোনা করতে পারেনি সে। বয়স একটু বাড়তেই, সে দিনমজুরের কাজ শুরু করে, কখনও ক্ষেতখামারে, কখনও বা অন্যের গরু-মহিষ চড়িয়ে। জীবনের তাগিদে ছোটবেলায়ই তাকে বড় হতে হয়। কাজ করতে করতে তার হাতের শক্তি বাড়তে থাকে এবং একদিন সে মোটর মেকানিক হিসেবে কাজ শেখা শুরু করে। মেকানিকের কাজ তাকে অর্থ এনে দিতে শুরু করে, কিন্তু বাবা শয্যাশায়ী থাকায় সে পুরো পরিবারের একমাত্র অবলম্বন হয়ে ওঠে। হাসিবুরের জীবন ছিল কঠিন বাস্তবতার প্রতিফলন। তার প্রত্যেকটি দিন ছিল লড়াইয়ের দিন, কিন্তু সে কখনও থেমে থাকেনি। মা-বাবার প্রতি ভালোবাসা ও নিজের দায়িত্ববোধ তাকে প্রতিনিয়ত এগিয়ে নিয়ে গেছে। শহীদের অর্থনৈতিক অবস্থা মোটর মেকানিক হাসিবুর রহমান পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন। তার মা মারা যাওয়ার পর তার বাবা প্যারালাইজড হয়ে যায়। তিনি বিছানা থেকে উঠতে পারেন না। হাসিবুরের বৃদ্ধ দাদী মূলত হাসিবুরের বাবা ও তার ফুফুর দেখাশোনা করেন। তার ফুফুও হাসিবুরের পরিবারে থাকেন। হাসিবুরের ফুফু অসুস্থ ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। একমাত্র হাসিব আয় করে পরিবারটা চালাত। টাকার অভাবে হাসিবের বাবার চিকৎসা বন্ধ আছে। নিয়মিত ও ভালো চিকিৎসা দিলে তার সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। ৪ সদস্যের পরিবারটি হাসিবকে হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন। মোটর মেকানিক হাসিবুর রহমান ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। মায়ের মৃত্যুর পর তার বাবা প্যারালাইজড হয়ে পড়েন, বিছানায় শুয়ে কাটে তার দিন, আর উঠে দাঁড়ানোর ক্ষমতাটুকুও হারিয়ে ফেলেছেন। পরিবারের যত্ন আর দেখভালের ভার পড়ে হাসিবুরের বৃদ্ধ দাদীর ওপর, যিনি নিজেই বয়সের ভারে ক্লান্ত। শাহাদাতের বর্ণনা ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকেই আন্দোলনে সক্রিয় ভুমিকা পালন করে হাসিবুর। ৫ আগস্ট তার রাবার বুলেট লেগেছিল। সকালে খাওয়ার পরে মার্চ টু ঢাকা প্রোগ্রামে অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হয়ে সাভারে ছাত্রদের সাথে যোগ দেয়। হঠাৎ দুটি সাধারণ গাড়ি আন্দোলরত ছাত্রদের সামনে আসে, সেখান থেকে পুলিশ বের হয়ে গুলি শুরু করে।একটি বুলেট এসে হাসিবুরের মাথায় লাগে। সাথে সাথে সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে, আশেপাশের কোন হাসপাতাল তাকে ভর্তি করেনি । পরে এনাম মেডিকেল কলেজ এন্ড হসপিটালে নিয়ে গেলে, তার এলাকার এক ভাই তাকে দেখে চিনতে পারে। সে হাসিবের বাসায় খবর দেয়। তিনদিন আইসিউতে থাকার পর ৭ আগস্ট তিনি মৃত্যুবরণ করেন। নিজ বাড়ি মাদারীপুরে জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। শহীদ হাসিবুর রহমান ছিলেন এক অসাধারণ তরুণ, যিনি নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন দেশ ও সমাজের জন্য। ছোটবেলা থেকেই তিনি স্বপ্ন দেখতেন পরিবারকে ভালোভাবে দেখাশোনা করার এবং দেশের জন্য কিছু করার। তাঁর মায়ের মৃত্যুর পর সংসারের দায়িত্ব যেন আচমকাই তাঁর কাঁধে এসে পড়ে। বাবার অসুস্থতা এবং প্যারালাইজড অবস্থায় বিছানায় শুয়ে থাকা, অসহায় দাদী ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ফুফুর দেখাশোনার ভার—সব মিলিয়ে একটি দুর্বিষহ জীবন চালাতে তিনি নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছিলেন। হাসিব ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি, যার শ্রমের উপর নির্ভর করছিল পুরো সংসার। শহীদ সম্পর্কে অনুভুতি শহীদ হাসিবের চাচাত চাচা বলেন, হাসিবের দাদা ও মা মারা যাওয়ার পর তার বাবা অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসিব সংসারের হাল ধরেন। এখন সে মারা যাওয়ায় এ পরিবারকে দেখার আর কেউ নেই। প্রস্তাবনা হাসিবের বাবা ও ফুফুর চিকিৎসার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। নিয়মিত আয়ের কোন ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। এক নজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্য সমূহ নাম : হাসিবুর রহমান জন্মসাল : ২০০৭ পেশা : মোটর মেকানিক স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: উত্তর কানাইপুর, ইউনিয়ন: আলীনগর, থানা: মাদারীপুর , জেলা: মাদারীপুর পিতার নাম : দেলোয়ার ঢালি, বয়স: ৫১, শয্যাশায়ী মাতার নাম : মৃত আলমাস, মাসিক আয় : নেই ঘটনার স্থান : সাভার আক্রমণকারী : ঘাতক পুলিশ আহত হওয়ার সময়কাল : ০৫/০৮/২০২৪ সময়: সকাল ১০:৩০ নিহত হওয়ার সময়কাল : তারিখ ৭ আগষ্ট ২০২৪, সময়: বিকাল ৪:০০ এনাম মেডিকেল কলেজ কবরস্থান : উত্তর কানাইপুর, আলীনগর, মাদারীপুর