জন্ম তারিখ: ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০০৯
শহীদ হওয়ার তারিখ: ২৩ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: ঢাকা
পেশা : ওয়ার্ক শপের কর্মচারী, শাহাদাতের স্থান : ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
শহীদ বাঁধন ৩ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ সালে শরিয়তপুর জেলার ডিঙ্গামানিক ইউনিয়নের দক্ষিণ মালধ গ্রামে এক সাধারণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি দারিদ্র্যের সাথে লড়াই করে বড় হয়েছেন। তার পরিবার ছিল অভাব-অনটনে জর্জরিত, যেখানে তার বাবা রোমান হাওলাদার ক্ষুদ্র ব্যবসা করে প্রতিমাসে মাত্র ৫,০০০ টাকা আয় করতেন। তার মা, বিথী আক্তার, একজন গৃহিনী। পরিবারের সদস্য সংখ্যা ছিল ৪, যার মধ্যে বাধনের দুই ভাইও ছিল। বাধনের জীবনে শৈশব থেকেই ছিল দায়িত্বের বোঝা। পরিবারকে সহায়তা করার জন্য তিনি কম বয়সেই ওয়ার্কশপে কাজ করতে শুরু করেন। তার কাজের মাধ্যমে পরিবারের আর্থিক কষ্ট কিছুটা কমানোর চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। পরিবারের অভাব-অনটন থাকা সত্ত্বেও তিনি ছিলেন সাহসী ও আত্মপ্রত্যয়ী। বাঁধনের জীবন বদলে যায় ১৯ জুলাই ২০২৪ সালে, যখন তিনি যাত্রাবাড়ীতে ছাত্র-জনতার শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। তবে সেই দিন পুলিশ বাহিনীর এক আক্রমণে বাঁধন গুরুতরভাবে আহত হন এবং তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায়, ২৩ জুলাই ২০২৪ সালে, বাঁধন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার মৃত্যুর পর তাকে গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত, বাঁধন তার পরিবারের হাল ধরে রাখার চেষ্টা করেছেন, যা তার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ মনোভাবের প্রতীক। তার এই আত্মত্যাগের কাহিনী এখনো অনেকের জন্য প্রেরণা হিসেবে কাজ করে, বিশেষ করে যারা দারিদ্র্যের মধ্যে থেকেও সাহস ও সংগ্রাম করতে জানে। শহীদ পরিবারের দারিদ্রতার ছাপ বাঁধনের জীবনের কাহিনী হলো বাংলাদেশের এক দারিদ্র্য-পীড়িত পরিবারের প্রতিচ্ছবি। ছোটবেলাতেই তার বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের ফলে জীবনের প্রথম ধাক্কা পান তিনি। মায়ের ভালোবাসা ও বাবার সান্নিধ্য থেকে বঞ্চিত হয়ে বাঁধনকে নানির কাছে থাকতে হয়। নানি অনেক কষ্ট করে তাকে বড় করেন, কিন্তু সংসারে অভাব-অনটন ছিল তার নিত্যসঙ্গী। বাঁধনের পরিবারের এমন পরিস্থিতি ছিল যে, তারা প্রতিদিনের খাবার জোগাড় করতেই হিমশিম খেত। বাঁধন কিছুটা বড় হয়ে স্বপ্ন দেখতেন একদিন বিদেশ যাবেন এবং পরিবারকে এই দারিদ্র্যের কবল থেকে মুক্ত করবেন। এ স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি ঢাকায় মায়ের কাছে যান এবং মোটর মেকানিকের কাজ শিখতে শুরু করেন। কাজ শেখার পাশাপাশি মায়ের সঙ্গে থাকা, কিন্তু সেই সময়টাও ছিল কষ্টে ভরা। তার পরিবার দিনে এনে দিনে খেত। অর্থাৎ, আজকের দিনটি কাটানোর মতো কিছু খাবার জোগাড় হলে, কালকের জন্য নতুন করে সংগ্রামের মুখোমুখি হতে হতো। পরিবারের এই কঠিন বাস্তবতা বাঁধনকে জীবনের প্রতি বাস্তববাদী করে তোলে। স্বপ্ন ছিল বিদেশে গিয়ে বড় রোজগার করবেন, তবে বাস্তবতার কষাঘাতে সেই স্বপ্ন কতটা পূরণ হবে, তা ছিল অজানা। এমন দারিদ্র্যের মধ্যে দিন কাটানো মানুষের কষ্ট ও সংগ্রাম যে কত গভীর, বাঁধনের জীবনের কাহিনী তারই একটি নিদর্শন। ঘটনার প্রেক্ষাপট ১৯ জুলাই ২০২৪, সোমবার দুপুরের দিকে বাঁধন ঢাকার যাত্রাবাড়ি এলাকায় শান্তিপূর্ণভাবে ছাত্রদের একটি আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। এই আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপর ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার প্রতিবাদ করা, যেখানে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মত প্রকাশের অধিকারকে দমন করার চেষ্টা হয়েছিল। ফ্যাসিস্ট সরকারের অত্যাচারের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতা একত্রিত হয়ে ন্যায়ের দাবি তুলে ধরতে রাস্তায় নামে। বাঁধন মিছিলে সামনের দিকে অবস্থান করছিলেন, তার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে, দেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র রক্ষার লড়াইতে তার ভূমিকা অপরিহার্য। কিন্তু পরিস্থিতি হঠাৎ করে পাল্টে যায়। শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চলতে থাকলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এই সময় বাঁধন গুলিবিদ্ধ হন এবং গুরুতরভাবে আহত হয়ে মাটিতে পড়ে যান। তাকে দ্রুত সহযোদ্ধারা উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসকরা আপ্রাণ চেষ্টা করেন তাকে সুস্থ করে তোলার, কিন্তু চরম চেষ্টা সত্ত্বেও ২৩ জুলাই ২০২৪, রাত ৯ টা ৩০ মিনিটে বাঁধন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মো: বাঁধনের এই আত্মত্যাগ দেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্বাধীনতা, ন্যায় এবং গণতন্ত্রের জন্য লড়াইয়ের এক উজ্জ্বল উদাহরণ হয়ে থাকে। তার স্বপ্ন ছিল একটি সমৃদ্ধ এবং ন্যায্য সমাজ গড়ে তোলার, কিন্তু তিনি তা দেখে যেতে পারলেন না। তবুও তার এই ত্যাগ ও সাহসিকতা তার সহপাঠীদের এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য প্রেরণা হয়ে থাকবে। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বাঁধনের অংশগ্রহণ তার সাহসিকতা ও ন্যায়বোধের পরিচায়ক, যেখানে তিনি নিজের জীবন উৎসর্গ করেও মানুষের অধিকারের জন্য লড়াই করে গেছেন। শহীদ সম্পর্কে অনুভুতি শহীদ বাঁধন সম্পর্কে প্রতিবেশীরা বলেন- বাঁধন অনেক সৎ ও সাহসী মানুষ ছিলেন। আন্দোলনে সক্রীয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। তার অকাল মৃত্যুতে তার পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করছে। সরকার ও দাতা সংস্থাদের পরিবারের পাশে দাড়ানোর আহবান জানান এবং এই নির্মম হত্যার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন। প্রস্তাবনা ১. শহীদের পরিবারকে এককালীন ও নিয়মিত আর্থিক সাহায্য প্রদান ২. শহীদের বাবাকে একটি ভালো ব্যবসা ধরিয়ে দেয়া ৩. শহীদের ভাইদের পড়াশুনার যাতে কোনোরকম ব্যাঘাত না ঘটে সে ব্যবস্থা করা এক নজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্য সমূহ পুরো নাম : বাঁধন জন্মসাল : ০৩/০২/২০০৯ পেশা : ওয়ার্ক শপের কর্মচারী স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা : গ্রাম: দক্ষিণ মালধ, ইউনিয়ন: ডিঙ্গামানিক, থানা: নড়িয়া, জেলা: শরিয়তপুর পিতার নাম : রোমান হাওলদার, বয়স: ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, বয়স: ৪০ বছর মাতার নাম : বিথী আক্তার, ২৭, গৃহিনী মাসিক আয় : ৫০০০/- আয়ের উৎস : ব্যাবসা পরিবারের ভাইদের নাম : ২ জন ১. নাবিল, ১১ বছর, শিক্ষার্থী, মাদরাসা ২. আদনান, ১০ মাস ঘটনার স্থান : যাত্রাবাড়ী আক্রমণকারী : ঘাতক পুলিশ আহত হওয়ার সময়কাল : তারিখ: ১৯ জুলাই ২০২৪ নিহত হওয়ার সময়কাল : তারিখ: ২৩ জুলাই ২০২৪, সময়: ২:০০টা স্থান : ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কবরস্থান : পারিবারিক কবরস্থান