Image of আশরাফুল হাওলাদার

নাম: আশরাফুল হাওলাদার

জন্ম তারিখ: ১ জানুয়ারি, ২০০৪

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: ঢাকা

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : গ্যারেজে গাড়ির ইঞ্জিনের কাজ শিখতো, শাহাদাতের স্থান : বাড্ডা থানার সামনে

শহীদের জীবনী

মাদারীপুর জেলার ছিলারচর ইউনিয়নের চরলক্ষীপুর গ্রামের একজন মেধাবী শিক্ষার্থী উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম আশরাফুল হাওলাদার। যার জন্ম হয়েছিল ২০০৪ সালের ১ জানুয়ারি। দরিদ্র পরিবারে তিন সন্তানের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ আশরাফুল হাওলাদার। বন্ধুদের মত আশরাফুলেরও স্বপ্ন ছিল পড়ালেখা শেষ করে বড় কিছু হয়ে পরিবারকে সহযোগিতা করার। সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রুপ দেওয়ার আগেই পরিবারের আর্থিক টানাপোড়নের কারণে ক্লাস সেভেন পর্যন্ত পড়ার সুযোগ হয়েছে আশরাফুলের। অভাবের সংসারে যেখানে খাদ্যের চাহিদা মেটানো দুষ্কর সেখানে পড়াশোনা করে বড় কিছু হতে চাওয়া তো নিছক কল্পনারই নামান্তর। তাইতো আশরাফুলকে যোগ দিতে হলো গ্যারেজের কাজে। আশরাফুল বাড্ডা থানার আফতাফনগরে গাড়ির গ্যারেজে ইঞ্জিনের কাজ করতো। পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা বাবা, মা, বড় ভাই, ভাবি ও ভাইয়ের ছেলেসহ ৭ জনের গোছানো একটি দরিদ্র্য পরিবার। যেখানে পরিবারের মূল উপার্জনের ভারই ছিলো আশরাফুলের উপর। আশফুলের বাবা ভাড়াকৃত সিএনজি চালক এবং বড়ভাই ভাড়াকৃত ভ্যানচালক। বাবা ও ভাইয়ের আয়ে পরিবারের ভরণপোষণ চালানো কষ্টসাধ্য হয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি তাদের কোন জমি নেই ফসল উৎপাদনের মতো। ৫ শতাংশ জমির উপর টিনের চালাবিশিষ্ট দুই রুমের ছোট্ট একটি বাড়ি আছে। ঘটনার প্রেক্ষাপট শহীদ আশরাফুলের প্রতিদিনের অভ্যাস ছিল গ্যারেজে কাজ করে দুপুরে বোনের বাসায় এসে খাবার খাওয়া।ঘটনার দিন ৫ আগস্ট মুঠোফোনে বোনকে খাবার খেতে আসার কথা বলেও আর আসা হয়নি। গ্যারেজ থেকেই সরাসরি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যোগদান করে।আনন্দ মিছিল উদযাপন করার সময়ে ফ্যাসিস্ট স্বৈরশাসক হাসিনার মদদকৃত দুষ্কৃতিকারী মনুষ্য বৈশিষ্ট্য বিহীন পুলিশ কর্মকর্তাদের দ্বারা বিকাল ৫ টা ৩০ মিনিটে গুলিবিদ্ধ হয়।পুলিশ নামধারী অমানুষগুলো আশরাফুলকে গুলি করে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি তারা আশরাফুলের লাশ গুম করার জন্য সর্বাত্মক অপচেষ্টা চালায় এবং লাশ গায়েব করার উদ্দেশ্যে শহীদ আশরাফুলের মৃতদেহ হাতিরঝিলে নিয়ে যায়।সেখানে আশরাফুলের পরিচিত একজন লাশ দেখে চিনতে পেরে আন্দোলনের সহযোগীদের কে ফোন দেয়। পরিস্থিতি প্রতিকূলে দেখে ফ্যাসিস্ট সরকারের পালিত পুলিশ নামধারী অমানুষ গুলো আশরাফুলের লাশ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। রাতে পরিবার খবর পেয়ে হাসপাতালের মর্গ থেকে আশরাফুলের লাশ শনাক্ত করে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যান এবং সেখানেই শহীদ আশরাফুলকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। শহীদের নিকট আত্মীয়ের স্মৃতিচারণ মায়ের আদরের ধনকে এভাবে হারিয়ে নির্বাক প্রায় মা। যেন তিনি বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছেন। অনেকদিন হয়ে গেল বুকের মানিক হারিয়েছেন তবুও মা প্রতিদিন কাঁদেন এই বলে যে, "আমার বাজান ভাত খেতে আর আসতে পারলো না, ওরা আমার বাজানকে দুপুরের খাবারও খেতে দিল না।" মা প্রতিদিন কবরের কাছে যান আর বুকের মানিকের জন্য এভাবে আর্তনাদ করতে থাকেন। মায়ের কাছ থেকে জানতে পারি আশরাফুল পাখি পালন করা পছন্দ করত। দুই রুমের ছোট্ট একটা ঘরে চারিদিকে যেন আশরাফুলের রেখে যাওয়া স্মৃতি পড়ে আছে।আর আশরাফুলের রেখে যাওয়া সেই পোশা পাখি, এগুলো দেখে প্রতিনিয়ত মা অশ্রুষিক্ত হন। বাবার কাঁধে সন্তানের লাশ যে কত ভারী তা বাবা ছাড়া আর কেউই জানে না। বাবা বলেন আশরাফুল খুব মেধাবী ও পরিশ্রমী ছেলে ছিলো।কখনো অন্যায় সহ্য করতে পারতো না। "স্বপ্ন ছিল একদিন আশরাফুল সম্পূর্ণরূপে পরিবারের হাল ধরবে সেদিন আর আমাকে সিএনজি চালাতে হবে না। "আমি আমি সেই সিএনজি চালক রয়ে গেলাম কিন্তু আমার মানিক আর নেই।” বোন কান্না বিজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আশরাফুল আমার একমাত্র আদরের ছোট ভাই। পিঠেপিঠি ভাইবোন আমরা। শৈশব কৈশোর সব একত্রেই কেটেছে। আমাকে আপু আপু করে পাগল করার ভাইটি আর রইল না। কাজ শেষে বাসায় ফিরে সারাদিনের গল্পগুলো বলার আর কেউ নেই। আশরাফুলের মুখেই প্রথম আপু ডাক শুনেছিলাম। ” বড়ভাই বলেন, “বড় ভাইয়ের জায়গাটা তো হয় বাবার মত। আমার একমাত্র আদরের ভাইটিকে ফ্যাসিস্ট সরকার শেষ করে দিল। ওর মুখেই প্রথম ভাইয়া ডাক শুনেছিলাম, আমাকে এখন আর কেউ ভাইয়া বলে ডাকবে না। ভালোমন্দ সবকিছুই শেয়ার করতো আশরাফুল। সবসময় পরামর্শ করতো কিভাবে পরিবারের অভাব দূর করা যায়, ঘরকে গুছানো যায়।” শহীদ সম্পর্কে আপন চাচা জানান, “আশরাফুল খুব চমৎকার একটা ছেলে ছিলো। বিনয় ও নম্রতা ছিল চোখে পড়ার মতো। ও শুধু আমাদের পরিবারের নয় পুরো এলাকার চোখের মনি ছিল। ” আশরাফুলের ফুপু জানান, “সম্মান ও ভালবাসার জায়গাটা অসাধারণ ছিল। ওর আদর মাখা ফুপু ফুপু ডাক আজও কানে বাজে। ওরা আমার বাজানকে কতো নির্মম ভালো শেষ করে দিলো। ” বন্ধুদের স্মৃতিচারণ, আশরাফুল ছিল খুবই মিশুক প্রকৃতির ছেলে। কখনো কোন বাজে নেশা করতে দেখিনি। সবসময় হাসিমুখে কথা বলতো। পরিবার নিয়ে সব সময় চিন্তা করত। খুব পরিশ্রমী একটা ছেলে ছিলো। নিজের সব কাজ নিজে করতে ভালোবাসতো। আমাদেরকে সবসময় ভালো পরামর্শ দিতো। নামাজী ছেলে ছিলো। সহযোগিতা সংক্রান্ত প্রস্তাবনা ১। বাসস্থান প্রয়োজন ২। বাবা/ভাইয়ের জন্য কোনো ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানের সুযোগ করে দিলে ভালো হবে। এক নজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্য পুরো নাম : আশরাফুল হাওলাদার জন্ম : ০১/০১/২০০৪ পেশা : গ্যারেজে গাড়ির ইঞ্জিনের কাজ শিখতো স্থায়ী ঠিকানা ও বর্তমান ঠিকানা : গ্রাম: চরলক্ষ্মীপুর, ইউনিয়ন: ছিলারচর, থানা: মাদারীপুর সদর, জেলা: মাদারীপুর পিতার নাম : মো: আনোয়ার হোসেন বয়স : ৫০ পেশা: সিএনজি চালক মাতার নাম : আসমা বেগম বয়স : ৪০, পেশা: গৃহিণী পরিবারের সদস্য সংখ্যা : ৭ ভাই বোনের সংখ্যা : ২ : ১। ভাই: রফিকুল ইসলাম (২৪), পেশা: ভ্যানচালক : ২। বোন: হাফিজা আক্তার (২৩), পেশা: গৃহিনী ঘটনা স্থান : বাড্ডা থানার সামনে আক্রমণকারী : পুলিশ আহত হওয়ার সময় : তারিখ: ০৫/০৮/২০২৪, সময়: বিকাল ৫.৩০ মৃত্যুর সময় ও তারিখ : ০৫/০৮/২০২৪, বিকাল ৫.৩০ শহীদের কবরের বর্তমান অবস্থান : নিজ গ্রামের বাড়ি

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of আশরাফুল হাওলাদার
Image of আশরাফুল হাওলাদার

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: মাহফুজ

মো: দুলাল

নাজমুল হাসান

মো: সুজন মিয়া

সুমন মিয়া

মোঃ বাবুল মিয়া

মোস্তফা জামান সমুদ্র

মো: সামচু মোল্যা

জাহাঙ্গীর আলম

মো: জুয়েল রানা

একরামুল হক সাজিদ

সৈয়দ মো: মোস্তফা কামাল রাজু

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo