Image of মো: সিয়াম

নাম: মো: সিয়াম

জন্ম তারিখ: ২৮ এপ্রিল, ২০০৮

শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৯ জুলাই, ২০২৪

বিভাগ: ঢাকা

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : ছাত্র , শাহাদাতের স্থান : ইটাখোলা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ি

শহীদের জীবনী

শহীদ মো: সিয়াম ২০০৮ সালে নিজ জেলা নরসিংদীতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বর্তমানে শাষপুর দারুল উলুম হুসাইনিয়া মাদ্রাসার একজন হাফেজিয়া ছাত্র ছিলেন। তার মহাগ্রন্থ পবিত্র আল কুরআনের ২০তম পারা শেষ করে ২১ তম পারা মুখস্থ চলছিল। তার পিতার নাম শিবলী রেজা এবং মাতার নাম মরিয়ম বেগম । মেধাবী, ভদ্র এই ছেলের মৃত্যুতে পুরো পরিবার শোকাহত । শহীদের পারিবারিক অবস্থা সিয়ামের একটি ছোট বোন আছে যিনি প্রতিবন্ধী। পিতার অকাল মৃত্যুতে দিশেহারা মা নানীর বাড়িতে চলে যায় এবং নানীকে সাথে নিয়ে সেখানেই বসবাস শুরু করে। তার মামাতো ভাই এর সাহায্যে পরিবার চলছিল এবং এতিমখানায় থেকে সিয়াম পড়ালেখা করছিল। শহীদ সিয়ামের মা ২ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়ে সৌদি আরবে কাজের সন্ধানে গিয়েছিল। হঠাৎ ছেলের মৃত্যুর সংবাদে মা দেশে চলে আসে । আন্দোলনের প্রেক্ষাপট ২০২৪ সালের জুলাই মাসে শহীদ মো: সিয়াম তার বন্ধু আর সহপাঠীদের কাছে জানতে পারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনের কথা। আরও ৪ বছর আগে ২০১৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা শুরু করেছিল কোটা বিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সে বছর তারা স্বৈরাচার সরকারের হঠকারিতা ও একগুঁয়েমিতার কারণে সম্পূর্ণ খালি হাতে ঘরে ফিরতে বাধ্য হয়েছিলো। সাধারণ শিক্ষার্থীদের সেই আন্দোলন ২০২৪ সালে আবার ফিরে এসেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামে। সে বছর শহীদ মোঃ সিয়াম আরো ছোট ছিলেন। তাই সেদিনের কোটা বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে তিনি ছিলেন না। ছোট বলে কেউ কিছু বুঝাতেও আসেনি তাকে। তবে কোটা বিরোধী ছাত্র আন্দোলন না বুঝলেও ঐ বছর স্কুল কলেজ আর মাদ্রাসার ছোট ছোট শিক্ষার্থীদের ডাকা নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে সহপাঠীদের সাথে শহীদ মোঃ সিয়ামও ছিলেন। ঐ বছর দীর্ঘদিন তারা রাজপথে থেকে আন্দোলন করেছিলেন স্বৈরাচার আওয়ামী সরকারের বিরুদ্ধে। যৌক্তিক ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্যও যে এদেশে কত সংগ্রাম আর ত্যাগের প্রয়োজন হয় তা ছোট ছোট শিশুদের সাথে শহীদ সিয়ামও অনুধাবন করতে পেরেছিলেন। তাইতো দূর্নীতিবাজ স্বৈরাচার সরকারের বিরুদ্ধে এই আন্দোলন তার চেনা; এই রাজপথ তার পরিচিত। ২০২৪ সালের জুন মাসে ছাত্ররা দেখলো আবারও তারা বৈষম্যের চেতনাবাদী সরকারের কুটচালের শিকার হচ্ছে। তাই জুলাইয়ের শুরুতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা যখন থেকে রাজপথকেই তাদের দাবি আদায়ের শেষ ঠিকানা হিসেবে নির্ধারিত করলো সিয়ামও তখন থেকেই পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে নিয়মিত আন্দোলনের খোঁজ নিতে শুরু করলে। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন চলছে রাজপথে। এর মধ্যে স্বৈরাচার আওয়ামী সরকার অস্ত্র হাতে তুলে নিলেন নিরস্ত্র সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে। ১৬ জুলাই আন্দোলনরত নিরীহ-নিরস্ত্র সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর নির্বিচারে গুলি করলো খুনি গোপালীশ পুলিশ। শহীদ হলেন রংপুর রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ৬ জন শিক্ষার্থী। এই ঘটনায় উত্তাল হয়ে উঠলো দেশের প্রতিটি সরকারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। আন্দোলনের সাথে যোগ দিলো অনেক স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী। যোগ দিলেন শহীদ মোঃ সিয়ামও। আন্দোলনে যোগদান বন্ধুদের সাথে ১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনে সরাসরি যোগদান করেন মাদ্রাসা ছাত্র মোঃ সিয়াম। ১৯ জুলাই বৃহস্পতিবার সারাদেশে সাধারণ শিক্ষার্থীদের গণহারে হত্যা করে রক্ত পিপাসু হাসিনা সরকারের ঘাতক পুলিশ বাহিনী। সেদিন শুধুমাত্র পানি বিতরনের অপরাধে হত্যা করা হয় স্বেচ্ছাসেবক মেধাবী ছাত্র মুগ্ধকে। ঐদিন রাতে ইন্টারনেট বন্ধ করে সারাদেশ কারফিউ জারি করে অবৈধ আওয়ামী সরকার। ১৯ জুলাই একদিকে কারফিউর কারণে বাসা বাড়ি থেকে বের হওয়া যাচ্ছে না আবার অন্যদিকে ইন্টারনেট বন্ধ। তাই সারাদেশে কোথায় কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারেনি সাধারন জনতা। কিন্তু শহীদ সিয়াম বের হয়েছিলেন; কখনোই বেশি দূরে যেতে পারেননি তিনি। বারবার বাধা পেয়ে ফিরে আসতে হয়েছে তাকে। তাছাড়া এমনিতেই এর আগের চার পাঁচ দিন সারাদেশের সাধারন শিক্ষার্থীরা ব্যাপকভাবে আহত, নিহত হয়েছে। তার উপর আবার কারফিউ এবং ইন্টারনেট বন্ধ হওয়ায় কোথাও কোথাও শিক্ষার্থীরা অন্তত কারফিউ শেষ হওয়ার অপেক্ষায় ছিলো। তাই মোটামুটি ঘরে বসে বা মহল্লায় থেকেই সাধ্যমতো সহযোগিতা করা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিলো না সিয়ামের। শাহাদাতের ঘটনা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলন তখনও সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নেয়নি। এমন সময় ১৯ জুলাই বিকেল থেকে নরসিংদী জেলার ইটাখোলা পুলিশ ফাঁড়ির সামনে পুলিশ আন্দোলনকারীদের উপর নির্বিচারে গুলি বর্ষণ করতে থাকে। এক পর্যায়ে আন্দোলনের সামনে থাকা কুরআনের পাখি মেধাবী হাফেজ ছাত্র সিয়াম গুলিবিদ্ধ হয়। নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে যখন নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলো ঠিক তখনই আরেকটি গুলি এসে লাগে তার বুকে এবং সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। সেখানেই তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। স্মৃতিচারণ সিয়ামের খালু মোঃ সিদ্দিক শহীদ সম্পর্কে বলেন, সিয়াম খুব ভালো ছেলে ছিলো । সে পড়াশোনায় খুব ভালো এবং মনোযোগী ছিল। সে নাযারানা শেষ করে হাফেজিয়া ভর্তি হয় । সে ছোট থেকেই নামায পড়ত । জানাযা ও দাফন নিজ এলাকায় জানাজার নামাযের পর শহীদ মিনার কবরস্থানে এই কুরআনের পাখি শহীদ মোঃ সিয়ামকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। প্রস্তাবনা ১. শহীদের পরিবারের বাসস্থান প্রয়োজন। ২. ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা করা। ৩. প্রতিবন্ধী বোনের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। একনজরে শহীদ সম্পর্কে তথ্যাবলি নাম : মো: সিয়াম পেশা : ছাত্র জম্ম : ২৮-০৪-২০০৮ ঠিকানা : গ্রাম: শাষপুর, ইউনিয়ন : আয়ুবপুর, থানা: শিবপুর, জেলা: নরসিংদী পিতা : মো: শিবলি রেজা, মৃত মাতা : মরিয়ম বেগম, পেশা : গৃহিণী, বয়স: ৩৮ বছর ঘটনার স্থান : ইটাখোলা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ি আক্রমণকারী : স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার সন্ত্রাসী পুলিশ বাহিনী আহত হওয়ার সময়কাল : ১৯-০৭-২০২৪ , বিকাল ৫.৪০টা মৃত্যুর তারিখ ও সময় : ১৯-০৭-২০২৪ , আনুমানিক বিকাল ৫.৫০টা শহীদের কবরের অবস্থান : শহীদ মিনার কবরস্থান

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: সিয়াম
Image of মো: সিয়াম
Image of মো: সিয়াম
Image of মো: সিয়াম
Image of মো: সিয়াম

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: কবির

আব্দুল গণি

ছোবহান মুন্সি

মো: ইরফান ভূঞা

মোস্তফা জামান সমুদ্র

নাজমুল হাসান

মো: সোহেল

ইমন মিয়া

মো: ফরিদ শেখ

মো: শাওন

সুমাইয়া বেগম

মো: আবদুল্লাহ ইবনে শহীদ

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo