Image of মো: সুজন মিয়া

নাম: মো: সুজন মিয়া

জন্ম তারিখ: ৩ মার্চ, ২০০১

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: ঢাকা

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : রিক্সা চালক, শাহাদাতের স্থান : সাভার বাসস্ট্যান্ড, সাভার

শহীদের জীবনী

শহীদ সুজন মিয়া ৩ মার্চ ২০০১ সালে নরসিংদী জেলার শিবপুর থানায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মোঃ মোস্তফা কামাল এবং মাতার নাম সামসুর নাহার। অল্প বয়সে পিতার মৃত্যুতে পরিবার যখন অচল, তখন পড়ালেখা বাদ দিয়ে বিভন্ন কাজে যুক্ত হন এই সাহসী তরুণ। মৃত্যুর পূর্বে তিনি ভাড়ায় রিক্সা চলাতেন। কঠোর পরিশ্রমী, ভদ্র এই ছেলের মৃত্যুতে পুরো পরিবার শোকাহত। শহীদের পারিবারিক অবস্থা মৃত পিতার অবর্তমানে পরিবারের সম্পূর্ণ ভার মো: সুজন মিয়ার উপরেই ছিলো। তার বাবা ছিলেন রাজমিস্ত্রী। ৪ বছর আগে পিতার মৃত্যুর পর অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। পরিবারের খরচ চালাতে তিনি অটো রিক্সা চালানো শুরু করেন। নিজের রিক্সা না থাকায় তিনি ভাড়ায় রিক্সা চালাতেন। শহীদের স্ত্রীর সাথে বিচ্ছেদ ঘটেছে বিধায় একমাত্র কন্য দাদীর কাছে লালিত-পালিত হচ্ছে। আন্দোলনের প্রেক্ষাপট সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে টানা আন্দোলন শুরু হয়েছিল গত ১ জুলাই থেকে। অহিংস এই আন্দোলন ১৫ জুলাই থেকে সহিংস হয়। আন্দোলনে নিরস্ত্র ছাত্র জনতার ওপর সশস্ত্র ঘাতক ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও পুলিশ, জঅই সদস্যরা হামলা চালাতে থাকে। রংপুরে শহীদ আবু সাঈদের শাহাদাতের পর থেকেই আন্দোলন গণমানুষের আন্দোলনে পরিণত হয়। কোটা সংস্কার আন্দোলন ক্রমেই জনসাধারণের আন্দোলনে রূপ নেয়। এটি বৈষম্যবিরধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন হিসেবে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। শুরুতে সাধারণ ছাত্রদের অহিংস আন্দোলন ধীরে ধীরে ফ্যাসিস্ট সরকার বিরোধী অভ্যুত্থানের দিকে ধাবিত হতে থাকে। পর্যায়ক্রমে এ আন্দোলন শুধু ছাত্রদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না; হয়ে উঠে দেশের আপামর জনতার এক বিশাল গণঅভ্যুত্থান। জাতি,ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলে এ অভ্যুত্থানে একাত্মতা প্রকাশ করে রাজপথে বেরিয়ে আসে। ক্ষুব্ধ জনতার তোপের মুখে স্বৈরাচার সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। কিন্তু পদত্যাগের পূর্বে তিনি রেখে যান তার ঘৃণ্য ও বিকৃত মস্তিষ্কের অজস্র কুকীর্তি। এরই অংশ হিসেবে আন্দোলনকারী সহ অনেক নিরীহ জনতার উপর লেলিয়ে দেয়া হয় সশস্ত্র বাহিনী। তাদের গুলিতে শহীদ হয় নিরস্ত্র নিপীড়িত মুক্তিকামী জনতা। আন্দোলনে যোগদান সুজন মিয়া নিজের কানেই শুনেছেন মানুষের নিদারুণ আর্তনাদ; ব্যথিত মনের হাহাকার। নিজের চোখে দেখেছেন কিভাবে নির্বিচারে মানুষ হত্যা করছে শাসক নামধারী শোষক গোষ্ঠী। নিজের সন্তানতুল্য আহত, নিহত শিক্ষার্থীদের নিজের রিক্সায় করে নিয়ে যখন ছুটেছেন হাসপাতালে হাসপাতালে, তখন কি তার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে না? তিনিও তো রক্তে মাংসে গড়া একজন মানুষ। এরকম শত সহস্র প্রশ্ন জেগে উঠতো সুজনের হৃদয়ে। কোনো উত্তরই তিনি খুঁজে পেতেন না। আর যখন খুঁজে পেলেন, তখন নিজেকে তিনি আবিষ্কার করলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের পাশে। এই যে শিক্ষার্থীদের জন্য তার মন কাঁদে; কম ভাড়ায় বা বিনা ভাড়ায় আহত, নিহত শিক্ষার্থীদের নিয়ে ছুটোছুটি করেন; নিহত শিক্ষার্থীদের পরিবারের আর্তনাদে যে তার খুব কষ্ট হয়, এটা কেন? আস্তে আস্তে তিনি বুঝতে পারেন নিজের অজান্তেই এতোদিন শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে সমর্থন করে এসেছেন। কৃতজ্ঞতায় মাথা নত করে দিলেন মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে। সিদ্ধান্ত নিলেন, এখন থেকে প্রকাশ্যে এবং পুরোপুরিভাবেই যোগদান করবেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনে। যেই ভাবনা সেই কাজ। প্রতিদিন রিক্সা চালিয়ে যা উপার্জন হত তা থেকেই একটা অংশ ব্যয় করতেন আন্দোলনের জন্য। এককথায় আন্দোলনের সাথে সম্পূর্ণভাবেই নিজেকে যুক্ত করেন তিনি। শাহাদাতের ঘটনা স্বৈরাচারী সরকার শেখ হাসিনা পতনের জন্য ছাত্র-জনতার মিছিলে অংশগ্রহণ করতে শহীদ মোঃ সুজন মিয়া ৫ আগস্ট ২০২৪ সোমবার আনুমানিক দুপুর ১ টায় খাবার খেয়ে বাসা থেকে বের হয়। তিনি ছাত্র-জনতার মিছিলে বিভিন্ন স্লোগানের মাধ্যমে প্রতিবাদ করছিলো। এক পর্যায়ে সাভার থানা স্ট্যান্ড এলাকায় পুলিশের ৩ টি জিপ এসে থামে। পুলিশ গাড়ি থেকে নেমেই নির্বিচারে গুলি ছোঁড়া শুরু করে। ফ্যাসিবাদি সরকারের পেটুয়া পুলিশ বাহিনীর ছোঁড়া গুলিতে ছাত্র-জনতা দিশেহারা হয়ে দিগি¦দিক ছুটোছুটি শুরু করে। মুহুর্তেই পুরো এলাকা পরিণত হয় রণক্ষেত্রে। নিমিষেই কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয় এবং রাজপথে লুটিয়ে পড়ে। সুজন মিয়া তাদের উদ্ধার করার জন্য কয়েকজনকে সাথে নিয়ে এগোতে থাকে। হঠাৎ খুনি শেখ হাসিনার ঘাতক পুলিশের একটি গুলি এসে লাগে সুজন মিয়ার শরীরে। তিনি যন্ত্রণায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। ছাত্র-জনতা তাকে উদ্ধার করতে চেষ্টা করে কিন্তু মুহুর্মুহু গুলির মধ্যে কেউ তার নিকট পৌঁছাতে পারছিলো না। কিছুক্ষণ পর একজন গিয়ে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে কিন্তু ততক্ষনে দেরি হয়ে গেছে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে পৃথিবীর সকল মোহ ত্যাগ করে দেশের জন্য নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়ে আল্লাহর ডাকে সারা দিয়ে চলে গেছে না ফেরার দেশে। নিকটাত্মীয়ের অনুভূতি মো: সুজন মিয়া সম্পর্কে তার মামাতো ভাই মো: জুয়েল মিয়া জানান, সুজন খুব কর্মঠ ছিলো। তার বাবা মারা যাওয়ার পর থেকেই সে অটো রিক্সা চালিয়ে পরিবার চালায়। সে অসৎ পথে উপার্জন করত না। একনজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্যাবলি পূর্ণ নাম : মো: সুজন মিয়া জন্ম : ০৩ মার্চ ২০০১ জন্মস্থান : নরসিংদী পেশা : রিক্সা চালক স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: ঘাসিরদিয়া, ইউনিয়ন: শিবপুর, থানা: শিবপুর, জেলা: নরসিংদী পিতার নাম : মো: মোস্তফা কামাল মায়ের নাম : সামসুর নাহার পরিবারের বর্তমান সদস্য সংখ্যা : ৩ জন ঘটনার তারিখ ও স্থান : ০৫-০৮-২০২৪, সাভার বাসস্ট্যান্ড, সাভার আহত হওয়ার সময় : ০৫-০৮-২০২৪, বিকাল ৩.০০টা আক্রমণকারী/আঘাতকারী : স্বৈরাচারি সরকারের ঘাতক পুলিশ বাহিনী শহীদ হওয়ার তারিখ, সময়, স্থান : ০৫-০৮-২০২৪, বিকাল ৩.৩০টা, সাভার বাসস্ট্যান্ড শহীদের জানাজা : ঘাসিরদিয়া দক্ষিণপাড়া, শিবপুর শহীদের কবরের বর্তমান অবস্থান : ঘাসিরদিয়া দক্ষিণপাড়া কবরস্থান, শিবপুর প্রস্তাবনা মেয়ের লেখা-পড়ার খরচ যোগানে সহযোগিতা করা যেতে পারে

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: সুজন মিয়া
Image of মো: সুজন মিয়া
Image of মো: সুজন মিয়া

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

নাদিমুল হাসান এলেম

মো: ইমন

মো: সোহেল

মানিক মিয়া

মো: সাইফ আরাফাত শরীফ

 হাসিবুর রহমান

মো: লাল মিয়া

শেখ হৃদয় আহমেদ শিহাব

মো: শাওন

মো: রফিকুল ইসলাম চঞ্চল

মো: মিঠু বিশ্বাস মারুফ

মো: আল আমিন

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo