জন্ম তারিখ: ৬ এপ্রিল, ২০০৭
শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৯ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: ঢাকা
পেশা : লেগুনা চালক, শাহাদাতের স্থান : ইটাখোলা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির সামনে
মো: সুজন মিয়া ৬ এপ্রিল ২০০৭ সালে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি আবুল কাসেম ও ছালেহা বেগমের পুত্র। তার বাবা সুজনের জন্মের কিছুদিন পরই মারা যান। অর্থনৈতিকভাবে একেবারে নিঃস্ব পরিবারের সন্তান সুজন। তিনি মুনসেফেরচর গ্রাম পুটিয়া ইউনিয়ন শিবপুর থানার নরসিংদী জেলার নাগরিক। জন্মসূত্রে ঠিকানা আছে, কিন্ত তাদের ঘরবাড়ি কিছুই নাই। নানীর বাড়িতে তারা আশ্রিত। বন্ধুর লাশ আনতে গিয়ে শহীদ হলেন সুজন ১৯ জুলাই,নরসিংদী জেলার ইটাখোলা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির সামনে পড়ে থাকে তার বন্ধুর গুলিবিদ্ধ লাশ। এদিন সারাদেশে সরকার আন্দোলন দমন করতে সশস্ত্র হামলা চালায়। আন্দোলনটি ছিল অহিংস। খালি হাতে ছাত্ররা আন্দোলন শুরু করে। নিরস্ত্রই ছিল তারা। নিরস্ত্র আন্দোলনকারীদের দমন করতে সরকার লেলিয়ে দেয় আওয়ামীলীগের সকল সন্ত্রাসীদের। রাজপথে নামায় পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, সেনাবাহিনী। সরকার মসনদ টিকিয়ে রাখতে মরিয়া। দেশে জারি করে অঘোষিত যুদ্ধ। নিজের দেশের মানুষ মারতে প্রয়োগ করে সেনাবাহিনীর ভারী অস্ত্র। হেলিকপ্টার থেকে গুলি করে খুন করে নাগরিকদের। আহত ও নিহতদের চিকিৎসা কাজে বাঁধা দেয় দলীয় সন্ত্রাসীরা। লাশ দাফনেও বাঁধাগ্রস্থ হয় পরিবার। ১৯ জুলাই আন্দোলনে যোগ দেয় সুজন ও তার বন্ধুরা। সরকারের অনিয়ম,অন্যায়ে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে সর্বশ্রেণীর মানুষ। সুজন একজন লেগুনা ড্রাইভার। দেশের পরিস্থিতি তাকেও ভাবিয়ে তোলে। ছাত্ররা কোটা আন্দোলনের ডাক দেয়। সেই আন্দোলনের পরিবর্তিত রূপ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন। আন্দোলন যখন তুঙ্গে ওঠে সরকার তখন চালায় এক নারকীয় হত্যাযজ্ঞ। সুজনরা রাজপথেই থাকে। থাকতে হয় পেশার তাগিদে। সেখানে নির্মমতা প্রত্যক্ষ করেন। নিরীহ ছাত্রদের বুকে পাষণ্ড পুলিশের গুলি, দলীয় সন্ত্রাসীদের নির্মমতা তাদের ক্ষুব্ধ, বিক্ষুব্ধ করে। আন্দোলনে অংশ নেয় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীও। তারা ইটাখোলা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ি, নরসিংদীর সামনে জড়ো হয়। খালি হাত নিরস্ত্র প্রতিবাদী জনতা। তাদের দমন করতে হাসিনার ঘাতক পুলিশ গুলি ছুঁড়ে মিছিলে। সুজনের বন্ধু গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়। রাস্তায় লাশ পড়ে থাকে। হত্যাকারী পুলিশের ভয়ে কেউ লাশ আনতে যায়নি। সুজন তার বন্ধুর লাশ রেখে যেতে পারেনি। সন্ধ্যার সময় অসীম সাহসী সুজন, বন্ধুর লাশ আনতে যায়। বর্বর পুলিশ আবারও গুলি করে। লাশ আনতে যাওয়া একজন নিরীহ মানুষকে গুলি করে পুলিশ নামের আওয়ামী বর্বরেরা। সুজন গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে থাকে। আর কেউ সাহস করেনি লাশ আনতে। রাস্তায় পড়ে থাকে দুই বন্ধুর লাশ। পরে নিকটস্থ সরকারী হাসপাতাল থেকে লাশ হস্তগত হয় পরিবারের। জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয় সুজনকে। পারিবারিক অবস্থা চব্বিশের শহীদ মোঃ সুজন মিয়া। জন্মের কিছুদিন পরই মারা যায় তার বাবা। মা তাকে নিয়ে আশ্রয় নেন নানীর বাড়িতে। সুজনদের কোন ঘরবাড়ি নাই। নানীর বাড়িতেই থাকেন। আবদুল্লাহ নামে তার একটি প্রতিবন্ধী সৎ ভাই আছে। মা অন্যের বাড়িতে কাজ করে। নানী ভিক্ষা করে। সুজনই ছিল একমাত্র উপার্জনক্ষম পুরুষ। নিঃস্ব একটি পরিবারে সেই উপার্জনের মানুষটি শহীদ হলেন। পরিবারটির সামনে আর কোন সহায় রইল না। খুবই দুরাবস্থায় দিন যাচ্ছে তাদের। প্রতিবেশীর বক্তব্য মো: নুরুল ইসলাম মো: সুজন মিয়ার প্রতিবেশীর নানা, তার ভাষ্যমতে সুজন শৈশব থেকেই দুঃখী মানুষ। তার বাবা মারা যাওয়ায় সে ছোট থেকেই দুঃখে কষ্টে জীবন অতিবাহিত করছে। সে স্থানীয় রোডে লেগুনার হেলপারি করত। তারপর চালক হয়েছিল। তার মা মানুষের বাসায় কাজ করে। দুঃখ ও দরিদ্রতা তার নিত্য সঙ্গী। আচার ব্যবহার খুব ভালো ছিল। কারও সাথে উচ্চ কণ্ঠে কথা বলত না। খুব ভদ্র, নম্র ছিল। প্রস্তাবনা-১: বাসস্থানের ব্যবস্থা করা। প্রস্তাবনা-২: এককালীন অনুদান অবশ্যই প্রদান। প্রস্তাবনা-৩: মাসিক ভাতা তাদের একান্ত আবশ্যক। মা, নানী ও প্রতিবন্ধী ভাইয়ের জীবন যাপনের সুব্যবস্থা করা। একনজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্যাবলি নাম : মো: সুজন মিয়া পেশা : লেগুনা চালক। জন্ম : ০৬-০৪-২০০৭ সালে পিতা : আবুল কাসেম মাতা : ছালেহা বেগম স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: মুনসেফেরচর, ইউনিয়ন: পুটিয়া, থানা: শিবপুর জেলা: নরসিংদী বর্তমান ঠিকানা : গ্রাম: মুনসেফেরচর, ইউনিয়ন: পুটিয়া, থানা: শিবপুর, জেলা: নরসিংদী সদস্য : মা, প্রতিবন্ধী এক ভাই ও নানী কবরস্থান : পূর্ব সৈয়দ নগর কবরস্থানে তার কবর