জন্ম তারিখ: ২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৩
শহীদ হওয়ার তারিখ: ২১ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: ঢাকা
পেশা : দর্জি ও কাপড় ব্যবসায়ী, শাহাদাতের স্থান : নরসিংদির মাজার বাসস্ট্যান্ডে
আনোয়ার মিয়া ১৯৭৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পিতা আমির হোসেন এবং মাতা মরিয়ম বেগমের সন্তান। আনোয়ার মিয়ার স্থায়ী ঠিকানা শেখেরচর গ্রামে, শিলমান্দি ইউনিয়নের মাধবদি থানায়, নরসিংদী জেলায়। বর্তমানে তিনি একই ঠিকানায় বসবাস করছেন। পেশায় তিনি একজন দর্জি এবং কাপড় ব্যবসায়ী। তাঁর সংসারে দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। মেয়ে বিবাহিত, বড় ছেলে বাবার সাথে ব্যবসায় যুক্ত আছে, এবং ছোট ছেলে পড়াশোনা করছেন। আনোয়ার মিয়া তাদের শিক্ষার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেন, পাশাপাশি পরিবারের ব্যাবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করে চলেছেন। সামগ্রিক ঘটনা ৫ আগস্ট হাসিনা পালিয়ে গেলেন লক্ষ্মণ সেনের মতো। তার আগে দেশে ঘটিয়ে গেলেন তাণ্ডব। সারাদেশে তার লেলিয়ে দেওয়া বাহিনী খুন করে নির্বিচারে। কত নিষ্পাপ মানুষের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে এদেশের মাটি তার ইয়ত্তা নাই। ২১ জুলাই নরসিংদির মাজার বাসস্ট্যান্ডে হত্যা করা হয় নিরীহ আনোয়ার মিয়াকে। আনোয়ার মিয়াদের রক্ত বৃথা যায়নি। তাদের রক্তের বিনিময়ে আসে ৫ আগস্ট। এদিন বিজয় হয় আন্দোলনকারীদের। ৫ আগস্ট ছিল লং মার্চ টু ঢাকা। ঘেরাও গণভবন। এই কর্মসূচী এগিয়ে আসছে ধাপে ধাপে। জুলাই জুড়েই ছিল আন্দোলন মুখর। আন্দোলনের সূত্রপাত কোটা নিয়ে। কোটা বিরোধী আন্দোলন হয়ে যায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ছিল একটি অহিংস আন্দোলন। নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার স্লোগানে মুখর ছিল রাজপথ। সরকার এই আন্দোলনকে করলেন রক্তাক্ত। রাজপথ নিরীহ ছাত্রদের তরতাজা রক্তে রঞ্জিত হল। ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করল শত ছাত্রকে। মানুষ নেমে গেলেন রাস্তায়। বুকের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ ঢাললেন মিছিলে। মিছিলে আসলেন কৃষক, শ্রমিক, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, কবি, সাংবাদিক সব শ্রেণী পেশার মানুষ। ৪ আগস্ট দেশ মৃত্যুর নগরী হয়ে গেল। ছেলে, বুড়ো, নারী, পুরুষ এখন একস্রোতে। ঢাকা ঘেরাও। সরকার প্রমাদ গুনলেন। কোথাও অবশিষ্ট রইল না সরকারের শক্তি। কেউ ভাবতেই পারেনি একটু পরই পালাবেন সরকার। সরকারের পালিত বাহিনী রাজনীতি, বা জনতার পালস বুঝতে ব্যর্থ হলেন। তারা তখনও খুনি ও স্বৈরাচারের আজ্ঞাবহ। আগস্টের ৫ তারিখ। আন্দোলনের চূড়ান্ত লক্ষ্য হাসিনার পতন, গণভবন ঘেরাও। হাসিনা পালিয়ে যায়। তার আগে নির্বিচারে খুন করে এদেশের মানুষকে। ২১ জুলাই যোহরের নামাজ পড়েন আনোয়ার মিয়া। বাসা থেকে বের হন বাজার করতে। বাজার করে ফিরছেন। পথিমধ্যে হাসিনার খুনি বাহিনী তার পথ আগলে ধরে। কাছে ডাকেন কথা শুনতে। আনোয়ার মিয়া সহজ সরল মানুষ। সরল মনেই বিশ্বাস করে হাসিনার গুণ্ডাবাহিনীর বিজিবি ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের। তিনি কাছে আসতেই কোন কথা না শুনে তাকে গুলি করে। সাথে সাথে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। আনুমানিক ২ টা ২৫ মিনিটে তিনি মারা যান ছটফট করতে করতে। বাজার করে তার বাসায় ফেরার কথা। দেরী হওয়ায় তাকে ফোন করেন। কোন সাড়া পাওয়া যায়নি। তাকে পাওয়া যায় সদর হাসপাতালে। তারপর পরিবারের লোকজন বাসায় নিয়ে আসেন তার লাশ। পরদিন জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয় গয়নার গাঁও শাহী ঈদগাহ কমপ্লেক্স শেখেরচরে। পারিবারিক অবস্থা শহীদ আনোয়ার মিয়া দর্জি ছিলেন। সাথে কাপড় বিক্রি করতেন। তার বড় ছেলেও তার সাথে কাজ করতেন। একমাত্র মেয়ে বিবাহিত। ছোট ছেলে পড়াশোনা করে। তার নিজস্ব কোন জায়গা জমি নাই। তার বাড়িও নাই। ছোট একটি দোকানে কাপড় বিক্রি করতেন। নিজেই কাপড় সেলাই করতেন। তার কোন সঞ্চয় নেই বরং ৫ লক্ষ টাকা ঋণ আছে। আনোয়ার মিয়ার মৃত্যুতে তার পরিবার শোকগ্রস্ত ও অর্থনৈতিক সংকটে নিপাতিত। প্রতিবেশীর বক্তব্য এনামুল হকের মতে শহীদ আনোয়ার মিয়া একজন সহজ, নম্র ও ভদ্র ছিলেন। তিনি কারো সাথে জোর গলায় কথা বলতেন না। সবসময় হাসি মুখে কথা বলতেন। তিনি চরমোনাই পীরের মুরিদ ছিলেন। অপ্রয়োজনীয় কথা তিনি বলতেন না। ধার্মিক লোক ছিলেন। নামাজ পড়তেন পাঁচ ওয়াক্ত। তার মৃত্যুতে এলাকাবাসী শোকাহত। এক নজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্য সমূহ নাম : আনোয়ার মিয়া জন্ম : ০২-০২-১৯৭৩ সালে পিতা : আমির হোসেন মাতা : মরিয়ম বেগম স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: শেখেরচর, ইউনিয়ন: শিলমান্দি, থানা: মাধবদি, জেলা: নরসিংদি বর্তমান ঠিকানা : গ্রাম: শেখেরচর, এলাকা: শেখেরচর, থানা: মাধবদি, জেলা: নরসিংদি পেশায় তিনি দর্জি ও কাপড় ব্যবসায়ী। তার দুই ছেলে, এক মেয়ে মেয়ে বিবাহিত। বড় ছেলে বাবার সাথে কাজ করেন, ছোট ছেলে পড়াশোনা করেন আনোয়ার মিয়া শহীদ হন ২১ জুলাই, বিজিবির গুলিতে তাকে দাফন করা হয় গয়নার গাঁও শাহী ঈদগাহ কমপ্লেক্স শেখেরচরে প্রস্তাবনা ১. প্রথমেই এককালীন অনুদান দিলে ছেলে ব্যবসা চাঙ্গা করতে পারবে। তার ঋণ পরিশোধ করার ব্যবস্থা করা যায় ২. বাসস্থানের ব্যবস্থা করা। ছেলেকে পড়ালেখায় সহযোগীতা করা ৩. মাসিক ভাতা দেওয়া যায়