জন্ম তারিখ: ১২ জানুয়ারি, ২০০৩
শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৮ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: ঢাকা
পেশা :ছাত্র , শহীদ হওয়ার স্থান :ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
শহীদ ইমন টাঙ্গাইল জেলার নলিন বাজার ইউনিয়নের গোপালপুর থানার নলিন গ্রামে ২০০৩ সালের ১২ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তিন ভাই এবং এক বোনের মধ্যে শহীদ ইমন সবার বড়। তার বয়স যখন মাত্র ১২ বছর, তখন তার বাবা মো: জুলহাস মিয়া মৃত্যুবরণ করেন। ফলে চার সন্তানকে নিয়ে ইমনের মা অসহায় অবস্থায় পড়েন এবং তার নানার বাড়িতে আশ্রয় গ্রহণ করেন। ইমনের মা অন্যের বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ করে এবং তার নানার সহায়তায় কোনো রকমে জীবনযাপন করেছেন তার চার সন্তানকে নিয়ে। খুব ছোট বয়সে বাবাকে হারিয়ে দারিদ্রের কষাঘাতে পড়া ইমন খুব কষ্ট করে পড়াশোনা চালিয়ে যান। হেমনগর বেসরকারি কলেজে অনার্স প্রথম বর্ষে অধ্যয়নরত অবস্থায় টিউশনি করে নিজের পড়াশোনার খরচ চালানোর পাশাপাশি পরিবারের খরচেও কিছুটা সহায়তা করতেন। শহীদের সংক্ষিপ্ত প্রোফাইল নাম : মো: ইমন পিতা : মৃত মোহাম্মদ জুলহাস মাতা : রিনা বেগম পেশা : গৃহপরিচারিকা ভাই-বোন : তিন ভাই, এক বোন ভাই-বোনের মধ্যে অবস্থান : সবার বড় স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: নলিন, ইউনিয়ন: নলিনবাজার, থানা: গোপালপুর, জেলা: টাঙ্গাইল শহীদ হওয়ার স্থান : মির্জাপুর বাস স্ট্যান্ডে আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শহীদ হওয়ার তারিখ : ১৮/০৮/২০২৪ আঘাতের ধরন : পুলিশের আঘাতে ডান উরুতে গুলিবিদ্ধ, পরবর্তীতে বন্দুকের নল দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে আহত করা হয় প্রস্তাবনা ১. শহীদ পরিবারের সদস্যদের জন্য একটি বাসস্থান তৈরি করে দেওয়া। ২. নিয়মিত শহীদ ভাতা প্রদান করা। ৩. ছোট ভাই-বোনের শিক্ষার দায়িত্ব গ্রহণ করা। শাহাদাতের প্রেক্ষাপট বিগত ৪ঠা আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে স্বৈরাচারী হাসিনা সরকার কর্তৃক শিক্ষার্থীদের ওপর অন্যায় বলপ্রয়োগের প্রতিবাদে সারাদেশে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়। উক্ত কর্মসূচির অংশ হিসেবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মী ও সাধারণ জনতার সাথে শহীদ ইমনও মির্জাপুর বাস স্ট্যান্ডে অবস্থান গ্রহণ করেন। বিকাল চারটার দিকে উক্ত কর্মসূচিতে পুলিশ নির্বিচারে গুলি বর্ষণ করে। একটি গুলি শহীদ ইমনের ডান পায়ের উরুতে এসে লাগে। গুলির আঘাতে সাথে সাথেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন শহীদ ইমন। আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী কয়েকজন ভাই শহীদ ইমনকে সাথে নিয়ে মির্জাপুর সদর হাসপাতালে যাওয়ার পথে পুলিশ বাধা প্রদান করে এবং শহীদ ইমনকে ছিনিয়ে নিয়ে বেদম প্রহার করে। স্বৈরাচারের দোসর পুলিশ বন্দুকের নল দিয়ে গুলি লাগার স্থানে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে আঘাত করে। ইমন বারবার পানির জন্য পুলিশের কাছে আর্তনাদ করলেও পুলিশ তাকে এক ফোঁটাও পানি দেয়নি। অনেক প্রচেষ্টার পর স্থানীয় জনগণ পুলিশের হাত থেকে তাকে উদ্ধার করে মির্জাপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে আসে। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে গড়িমসি করেন এবং একপর্যায়ে ভর্তি না করেই গুরুতর আহত ইমনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। পরিবারের সদস্যরা অনেক প্রচেষ্টার পর মুমূর্ষ অবস্থায় শহীদ ইমনকে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। ৪ আগস্ট থেকে ১৮ আগস্ট পর্যন্ত দীর্ঘ ১৪ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর ১৮ আগস্ট ভোর পাঁচটায় মহান প্রভুর সান্নিধ্যে চলে যান শহীদ ইমন।