জন্ম তারিখ: ২৩ অক্টোবর, ১৯৯৫
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: ঢাকা
পেশা : শিক্ষার্থী শাহাদাতের স্থান : বাইপাইল, সাভার
টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার বারপাখিয়া গ্রামের হারুন অর রশীদ ও আছিয়া খাতুন দম্পতির চার সন্তানের মধ্যে বড় এবং একমাত্র পুত্র সন্তান শহীদ আহনাফ আবির। ১৯৯৫ সালের ২৩ অক্টোবর কৃষক পিতার ছোট্ট ঘরকে আলোকিত করে জন্মগ্রহণ করেন শহীদ আহনাফ আবির। ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত মেধাবী একমাত্র সন্তানকে ইঞ্জিনিয়ার বানানোর স্বপ্ন দেখতেন শহীদের পিতা। সেই স্বপ্ন পূরণের একেবারে দোড়গোড়ায় পৌঁছেও বাবার সেই স্বপ্ন পূরণ হলো না। মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের মেধাবী এই শিক্ষার্থীর জীবন প্রদীপ নিভিয়ে দেয় হায়েনার থাবা। মায়ের চিৎকার আমার ছেলে পড়ালেখা করে অনেক বড় ইঞ্জিনিয়ার হবে। আমাদের অভাব-অনটন দূর করবে। এখন আমি কাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখব। আমার সব স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। আমি এখন কাকে নিয়ে বাঁচব। আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।’- একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে এভাবেই বিলাপ করেন শহীদের মা। শহীদের পরিবার সংক্রান্ত তথ্য তিন বোন সোমা আক্তার, সাইদা আক্তার এবং আসফিয়া জামানের অতি আদর এবং ভালোবাসার একমাত্র বড় ভাই শহীদ আহনাফ আবির আশরাফুল্লাহ। নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের আয়ের উৎস বাবার কৃষিকাজ। কৃষিকাজ করেই ছেলেকে ইঞ্জিনিয়ার বানানোর স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্য সামনে রেখে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি করান। বড় দুই মেয়ের বিবাহও দিয়েছেন। ছোট মেয়ে এবং বাবা-মা টাঙ্গাইলে নিজেদের বাড়িতে বসবাস করেন। বাবা-মায়ের স্বপ্ন ছিল ছেলে পড়াশোনা শেষ করে বড় ইঞ্জিনিয়ার হবে এবং তাদের দুঃখ-কষ্ট লাঘব করবে। শেষ বয়সে বৃদ্ধ পিতা-মাতা স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন কাটাবেন। কিন্তু তাদের সেই স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেল! শাহাদাতের ঘটনার প্রেক্ষাপট জুলাই মাস ধরে চলতে থাকা তীব্র বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আগস্ট মাসের শুরুর দিকে আরও চূড়ান্ত আকার ধারণ করে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে সাধারণ জনগণের সম্পৃক্ততা বাড়ে। একই সাথে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের দোসর পুলিশ-র্যাব এবং আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের তাণ্ডব পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে। সরকার এবং সরকারি দলের এই অমানবিক নৃশংসতার প্রতিবাদস্বরূপ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ৫ই আগস্ট ২০২৪ তারিখে মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচি ঘোষণা করে। সাধারণ ছাত্র-জনতার প্রতিবাদ প্রতিরোধের মুখে স্বৈরাচারী খুনি হাসিনা দেশ থেকে পালাতে বাধ্য হন। সারাদেশের মানুষ আনন্দে ফেটে পড়ে এবং দেশের অলিগলি থেকে আনন্দ মিছিল বের হতে থাকে। কিন্তু খুনি হাসিনা পদত্যাগ করলেও সারাদেশে তার দোসররা তখনো সক্রিয় ছিল। এমনি একটি আনন্দ মিছিলে যোগ দেন শহীদ আহনাফ আবির সাভারের বাইপাইল এলাকায়। বিকেল পাঁচটার দিকে উক্ত মিছিলে পুলিশ এবং আওয়ামী লীগের দোসররা হামলা চালায়। পুলিশের এলোপাথাড়ি ছোড়া একটি গুলি এসে আঘাত করে শহীদ আবিরের পেটে। আহত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে স্থানীয় লোকজন তাকে বাইপাইলের হাবিব হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক শহীদ আবিরকে মৃত ঘোষণা করেন। সংক্ষিপ্ত শহীদ প্রোফাইল নাম : শহীদ আহনাফ আবির আশরাফুল্লাহ জন্ম তারিখ : ২৩-১০-১৯৯৫, বয়স: ৩০ বছর পেশা : শিক্ষার্থী, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং পিতা : মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ পেশা : কৃষিকাজ মাতা : মোছাম্মৎ আছিয়া খাতুন পেশা : গৃহিণী ভাই-বোন : এক ভাই, তিন বোন ভাই-বোনের মধ্যে অবস্থান : সবার বড় শাহাদাতের স্থান : বাইপাইল, সাভার শাহাদাতের তারিখ : ৫ আগস্ট ২০২৪, বিকাল পাঁচটা আঘাতের ধরন : পেটে পুলিশের বুলেটের আঘাত প্রস্তাবনা ১. শহীদের বৃদ্ধ পিতা-মাতার ভরণ-পোষণের জন্য নিয়মিত ভাতা চালু রাখা ২. ছোট বোনের পড়ালেখার খরচ বহন করা