জন্ম তারিখ: ১৫ আগস্ট, ১৯৮০
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৩ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: ঢাকা
পেশা :ব্যবসায়ী , শাহাদাতের স্থান :গাজীপুরের শ্রীপুরের বকুলতলা পুলিশ ফাঁড়ির
শহীদ জাহাঙ্গীর আলম ১৯৮০ সালের ১৫ আগস্ট গাজীপুর জেলার বারতোপা শ্রীপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা জনাব শেখ আব্দুল হান্নান ও মাতা জাহানারা খাতুন। জাহাঙ্গীর আলম পেশায় ব্যবসায়ী ছিলেন। লেপ, তোষক ও বালিশ কারিগর দিয়ে তৈরি করে নিজ দোকানে বিক্রয় করতেন। শাহাদাত বরণের পূর্বে ব্যবসা পরিচালনার জন্য এক লক্ষ টাকা ঋণ করে গিয়েছেন। শহীদের দুইটি কন্যা সন্তান রয়েছে। বড় মেয়ে জিমকিয়া আলমী (৭) ‘তাকওয়া বালিকা মাদরাসায়’ প্রথম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। ছোট মেয়ে জাকিয়া সুলতানা (৫) এখনও প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া শুরু করেনি। শহীদের নিজস্ব বাড়ি নেই। তিনি নানা শশুরের বাড়িতে স্ত্রী ও সন্তানদের সাথে বসবাস করতেন। ইচ্ছে ছিল দুই মেয়েকে আলেমা হিসেবে তৈরি করবেন। একমাত্র উপার্জনকারী হিসেবে পরিবারের অবলম্বন তিনিই ছিলেন। শাহাদাতের প্রেক্ষাপট স্বাধীন সার্বভৌম বাংলার আলো বাতাসে বেড়ে ওঠা তৃতীয় বিশ্বের অতি সাধারণ নাগরিক আমরা। হাজারও শহীদের রক্তের বিনিময়ে ন্যায় ও সাম্যের ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনা করার উদ্দেশ্যেই পাকিস্তানি হানাদার গোষ্ঠীকে এ দেশ হতে বিতাড়িত করেছিলাম। দেশ হানাদার মুক্ত হয়েছে ঠিকই কিন্তু এদেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি ঘটেনি। দুর্নীতি অনিয়ম আর বৈষম্য এদেশের প্রতিটি পরতে পরতে গেঁথে গিয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধারা এদেশের মহান সন্তান। তাদের আত্মত্যাগ জাতি দীর্ঘদিন গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। তাদের রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সর্বোচ্চ পর্যায়ের ভাতা দেয়া হোক, সম্মান প্রদর্শন করা হোক, সর্বোচ্চ মর্যাদায় আসীন করা হোক এতে কোন মানুষের কোন অভিযোগ থাকার কথা নয়। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাপ্য সম্মান দিতে জাতি কখনো কার্পণ্য করেনি। তার সন্তানদের মূল্যায়নের প্রশ্ন আসলে সেখানেও জাতি কোন কথা বলেনি। কিন্তু বিপত্তি বেধেছে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে মুক্তিযোদ্ধার নামে তার বংশধরদের সুবিধা প্রদানের ক্ষেত্রে। দৈনিক প্রথম আলোর মতে এদেশে ৫৫ হাজার মুক্তিযোদ্ধা রয়েছে যাদের জন্ম ৭১ সালের পরে। এর মানে হচ্ছে আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধকে উপলক্ষ করে তাদের দলীয় স্বল্পশিক্ষিত ক্যাডারদের দেশের গুরুত্বপূর্ণ সরকারী চাকুরীতে পুনর্বাসিত করা। আওয়ামী লীগের এই জাতি বিনাশী অপতৎপরতাই ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী কাজ। তাইতো এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগঠিত হলো অভূতপূর্ব গণঅভ্যুত্থান। এই অভ্যুত্থানে সকল শ্রেণীর সকল পেশার মানুষের সমান অংশীদারিত্ব ছিল। ৩ আগস্ট ২০২৪ শনিবার গাজীপুরের শ্রীপুরের বকুলতলা পুলিশ ফাঁড়ির কাছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচী পালন করে সাধারণ ছাত্র-জনতা। সেদিন নিজের দোকান বন্ধ করে আন্দোলনে যোগদান করেন জাহাঙ্গীর আলম। একপর্যায়ে ঘাতক পুলিশ মিছিলের ছাত্র-জনতাকে উদ্দেশ্য করে গুলি চালায়। দুপুর ২:৩০ এর দিকে হঠাৎ একটি গুলি শহীদের শরীরে এসে বিদ্ধ হয়। চারিদিকে গোলাগুলি চলায় পথচারীরা তাঁকে উদ্ধার করতে বিলম্ব করে ফেলে। একপর্যায়ে নিথর হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন শহীদ জাহাঙ্গীর। ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। পরবর্তীতে বেপারি পাড়া মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় জানাজা শেষে শহীদকে দাফন করা হয়। প্রতিবেশীর অনুভূতি আবুল কাশেম বলেন- ‘আমার মতে শহীদ জাহাঙ্গীর আলম একজন ভাল মানুষ ছিলেন। সবার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতেন তিনি। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতেন। এই ভাল মানুষটিকে কেন হত্যা করা হলো? আমি এর বিচার চাই। শহীদের প্রোফাইল নাম : শহীদ জাহাঙ্গীর আলম পিতা : জনাব শেখ আব্দুল হান্নান মাতা : জাহানারা খাতুন জন্ম তারিখ : ১৯৮০ সালের ১৫ আগস্ট স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: বারতোপা, উপজেলা: শ্রীপুর, জেলা: গাজীপুর বর্তমান ঠিকানা : একই আহত হওয়ার স্থান : গাজীপুর, শ্রীপুর, বকুলতলা পুলিশ ফাঁড়ি সংলগ্ন আহত হওয়ার সময় কাল : ৩ আগস্ট ২০২৪ শনিবার, দুপুর ২:৩০ টা শহীদ হওয়ার সময় ও স্থান : ৩ আগস্ট ২০২৪ শনিবার, দুপুর ৩:০০ টা যাদের আঘাতে শহীদ : ঘাতক পুলিশ বাহিনী শহীদের কবরস্থান : বেপারি পাড়া মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থান, বারতোপা, শ্রীপুর, গাজীপুর সম্পদের বিবরণ : কোন জায়গা জমি নেই পরিবারের বিবরণ ১. মোছা: শাহিনুর আক্তার (৩৫), পেশা: গৃহিণী, সম্পর্ক: স্ত্রী ২. মোছা: জিমকিয়া আলমী (৭), পেশা: ছাত্রী, তাকওয়া বালিকা মাদরাসা, শ্রেণী: প্রথম, সম্পর্ক: মেয়ে ৩. মোছা: জাকিয়া সুলতানা (৫), সম্পর্ক: মেয়ে প্রস্তবনা ১. শহীদ পরিবারে মাসিক সহযোগিতা করা যেতে পারে ২. শহীদের সন্তানদের লেখাপড়ার দায়িত্ব নেয়া যেতে পারে ৩. শহীদের ঋণ পরিশোধে সহায়তা করা যেতে পারে ৪. শহীদের পরিবারের জন্য স্থায়ী বাসস্থান নির্মাণ করা প্রয়োজন ৫. শহীদের স্ত্রীকে কর্মসংস্থান করে দেয়া যেতে পারে