Image of আরাফাত মুন্সি

নাম: আরাফাত মুন্সি

জন্ম তারিখ: ১ জানুয়ারি, ২০১১

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: ঢাকা

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : ছাত্র, শাহাদাতের স্থান : গণস্বাস্থ্য মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

শহীদের জীবনী

বার্ডস স্কুল এন্ড কলেজের ৮ম শ্রেণির ছাত্র আরাফাত মুন্সি এক তরুণ স্বপ্নবাজ ও চৌকস ছাত্র ছিল। গোপালগঞ্জের ছোট বনগ্রাম গ্রামে বেড়ে ওঠা আরাফাতের স্বপ্ন ছিল সেনাবাহিনীতে চাকুরী করে জনসেবা করা। রিকশা চালক বাবা জনাব স্বপন ও তাই ভাবছিলেন। জননী মায়া বেগম ও ব্যাতিক্রমী ছিলেন না। ভিটামাটি ও ভূমিহীন সম্পদের পরিবারে জন্মগ্রহণকারী আরাফাত মুন্সি দেশে চলমান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলন কর্মসূচী বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সকাল ১০:০০ টায় বাইপাল মোড়ে পুলিশ বক্সের সামনে যায়। জড়ো হতে থাকে মুক্তিকামী ছাত্র-জনতা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনের প্রথম থেকেই শহীদ আরাফাত মুন্সীর সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিলো। গত ৫ আগস্ট সোমবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলন খুনি, ফ্যাসিস্ট, স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচী ঘোষণা করে। উক্ত কর্মসূচী প্রতিহত করার জন্য সরকার কারফিউ জারি করে। বিকেলে স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট হাসিনা পলায়নের পর যখন সারা দেশে আনন্দ মিছিল চলছিলো তখন মিছিলে অংশ নেয় শহীদ আরাফাত। বিকাল ৪টা ৩০ মিনিটে পুলিশ আশুলিয়া থানার সামনে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করতে থাকে। একটি গুলি তার বুকের নিচে লাগলে সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। স্থানীয় লোকজন তাকে গণস্বাস্থ্য মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। “চলে যাব-তবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ। প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল, এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।” মধুমতির কোল ঘেঁষে গড়ে উঠেছে আজকের গোপালগঞ্জ শহর। প্রাচীনকালে এ এলাকাটি বঙ্গ অঞ্চলের অন্তর্গত ছিল। সুলতানী ও মোঘল যুগে এ অঞ্চল হিন্দু রাজারা শাসন করতেন। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের (১৭৯৩) সময় গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলা ছিল যশোর জেলার অন্তর্গত আর বাকী অংশ ছিল ঢাকা-জামালপুর জেলার অন্তর্ভুক্ত। ১৮০৭ সালে মুকসুদপুর থানা যশোর থেকে ফরিদপুর জেলার সাথে যুক্ত হয়। ফরিদপুর জেলার একটি পরগনার নাম ছিল জামালপুর। গোপালগঞ্জ সদর ও কোটালীপাড়া জামালপুর পরগনাভুক্ত ছিল। ১৮১২ সালে চান্দনা (মধুমতি) নদী যশোর ও ঢাকা-জামালপুর জেলার বিভক্ত রেখা হিসেবে নির্ধারিত হয়। গোপালগঞ্জ-মাদারীপুর এলাকা ছিল বিশাল জলাভূমি। এখানে নৌ-ডাকাতির প্রকোপ ছিল বেশী। এজন্য বাকেরগঞ্জ থেকে বিভাজিত হয়ে ১৮৫৪ সালে মাদারীপুর মহকুমা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৭২ সালে মাদারীপুর মহকুমায় গোপালগঞ্জ নামক একটি থানা গঠিত হয়। ১৮৭৩ সালে মাদারীপুর মহকুমাকে বাকেরগঞ্জ জেলা থেকে ফরিদপুর জেলার সঙ্গে যুক্ত করা হয়। ১৯০৯ সালে মাদারীপুর মহকুমাকে ভেঙ্গে গোপালগঞ্জ মহকুমা গঠন করা হয়। গোপালগঞ্জ এবং কোটালীপাড়া থানার সঙ্গে ফরিদপুর মহকুমার মুকসুদপুর থানাকে নবগঠিত গোপালগঞ্জ মহকুমার অন্তর্ভুক্ত করা হয় গোপালগঞ্জের প্রথম মহকুমা প্রশাসক ছিলেন জনাব সুরেশ চন্দ্র সেন। ১৯১০ সালে মহকুমা প্রশাসকের বেঞ্চ কোর্ট ফৌজদারি কোর্টে উন্নীত হয়। ১৯২১ সালে গোপালগঞ্জ শহরের মানে উন্নীত হয়। আদমশুমারি অনুযায়ী তখন গোপালগঞ্জ শহরের লোকসংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৪ শত ৭৮ জন। ১৯২৫ সালে গোপালগঞ্জে সিভিল কোর্ট চালু হয়। ১৯৩৬ সালে মুকসুদপুর থানা বিভক্ত হয়ে কাশিয়ানী থানা গঠিত হয়। ১৯৭৪ সালে গোপালগঞ্জ সদর থানাকে ভেঙ্গে টুঙ্গিপাড়া নামক একটি থানা গঠন করা হয়। ১৯৮৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি গোপালগঞ্জ মহকুমাকে জেলায় উন্নীত করা হয়। গোপালগঞ্জ জেলার প্রথম জেলা প্রশাসক ছিলেন জনাব এ.এফ.এম. এহিয়া চৌধুরী। বর্তমান জেলা প্রশাসক জনাব কাজী মাহবুবুল আলম ২০২২ সালের ০৪ ডিসেম্বর থেকে অদ্যাবধি দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এখানেই জন্ম রিকশা চালক স্বপনের সন্তান শহীদ আরাফাত মুন্সি। অভাবের ঘরে জন্ম নেওয়া মেধাবী ছাত্র শহীদ আরাফাত মুন্সির স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে সেনাবাহিনীর উচ্চপর্যায়ের একজন কর্মকর্তা হয়ে দেশের সেবা করা। নাটকীয় হাসপাতাল যাত্রা আহত আরাফাত মুন্সিকে বহনকারী এম্বুলেন্স ঢাকা শাহবাগ মোড় দিয়ে যাবার সময় সেখানে টহলরত পুলিশ আর বিজিবি এম্বুল্যান্সের গতিরোধ করে। আটকে দেয় তাদের গাড়ি। খুনি পুলিশ আর নিষ্ঠুর বিজিবি গুলিবিদ্ধ আহত আরাফাত মুন্সিকে হাসপাতালে ভর্তি হতে দিবে না। আহত আরাফাত মুন্সিকে সাহয্যকারী জনতা বিভিন্নভাবে তাদেরকে বুঝাতে থাকেন। কিন্তু তারা কোনোভাবেই এই রোগীকে হাসপাতালে নিতে দিবে না। তাহলে নাকি তাদের চাকরি থাকবে না। স্বৈরাচারের পাচাটা এই বাহিনী দুটোকে নানাভাবে বুঝাতে বুঝাতে অনেক সময় চলে যায়। স্বৈরাচার পুলিশ আর বিজিবি এরকম সরকারি আক্রমণে আহত রোগীকে কোনো হাসপাতালে কিছুতেই ভর্তি হতে দিবে না। ওইদিকে আহত আরাফাত মুন্সির অবস্থা খুবই খারাপ। প্রতিনিয়ত রক্তক্ষরণ হচ্ছে তার শরীর থেকে। এমন সময় আহত আরাফাত মুন্সিকে বাঁচানোর জন্য নতুন কৌশল জনতার মস্তিষ্ককে বাসা বাঁধল। তাদের মনে পড়ে গেলো বাংলাদেশের পুলিশের চিরায়ত চরিত্রের কথা। সাথে সাথে তারা পুলিশের একজন অফিসারকে একপাশে ডেকে নিয়ে তার হাতে বেশ কিছু টাকা ধরিয়ে দিয়ে উর্ধ্বতন কর্মকতাকে ম্যানেজ করতে অনুরোধ করে। হারামখোর সেই পুলিশের চেষ্টায় অবশেষে কাজ হলো। তারপর আবার ঢাকা গণস্বাস্থ্য মেডিকেলের দিকে ছুটে চলে আহত আরাফাত মুন্সিকে বহন করা এম্বুলেন্সটি। বিকেল পৌনে ৫.০০ টার দিকে তাকে নিয়ে এম্বুলেন্স পৌঁছালো ঢাকা গণস্বাস্থ্য মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইমারজেন্সি বিভাগে। হাসপাতালে ভর্তিতে বাধা হাসপাতালে পৌঁছে আহত আরাফাত মুন্সিকে ভর্তি করতে গেলে সেখানেও আসে বাধা। স্বৈরাচার সরকারের বাহিনী দ্বারা আহতদেরকে ভর্তি নিতে তারা প্রচন্ড রকম নারাজ। মনে হয় যেন পুরো দেশটাকে তারা ইজারা নিয়েছে। এমন মুহূর্তে কি করবে তা বুঝায় আসে না আরাফাতের কারও। এমন খেয়াল তামাশায় সন্ধা ৬.০০ টায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। একনজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্যাবলি নাম : শহীদ আরাফাত মুন্সি জন্ম : ১ জানুয়ারি ২০১১ পেশা : ছাত্র স্কুলের নাম : বার্ডস স্কুল এন্ড কলেজ স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম : ছোট বনগ্রাম,, ইউনিয়ন : মহারাজ পুর, থানা : মুকসুদপুর, জেলা : গোপালগঞ্জ বর্তমান ঠিকানা : বাসা : বটতলা, এলাকা : পলাশবাড়ী, থানা : আশুলিয়া, জেলা : ঢাকা পিতা : স্বপন পেশা ও বয়সা : রিকসা চালক ও ৩৫ মাতা : মায়া বেগম পেশা ও বয়স : গৃহিণী ও ৩৪ পরিবারের সদস্য সংখ্যা : ২ প্রস্তাবনা ১। শহীদ আরাফাত মুন্সির পিতা ও মাতার জন্য স্থায়ী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা ২। শহীদ পরিবারের জন্য আজীবন মাসিক ১৫০০০ টাকা হারে অনুদান চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of আরাফাত মুন্সি
Image of আরাফাত মুন্সি
Image of আরাফাত মুন্সি
Image of আরাফাত মুন্সি
Image of আরাফাত মুন্সি
Image of আরাফাত মুন্সি
Image of আরাফাত মুন্সি
Image of আরাফাত মুন্সি
Image of আরাফাত মুন্সি
Image of আরাফাত মুন্সি

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

সুমাইয়া বেগম

সাবিদ হোসেন

মো: মেহেদী হাসান

মো: মাবরুর হুসাইন

মারুফ মিয়া

রিয়া গোপ

মো: জুয়েল রানা

মোহাম্মদ সাইফুল হাসান

আশরাফুল হাওলাদার

মোঃ সুজন খাঁন

মো: জুয়েল মিয়া

মো: সাগর আহম্মেদ

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo