Image of মো: মোবারক

নাম: মো: মোবারক

জন্ম তারিখ: ৩১ আগস্ট, ২০০৮

শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৯ জুলাই, ২০২৪

বিভাগ: ঢাকা

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : ছাত্র, শাহাদাতের স্থান : গ্রীণ রোড এলাকা

শহীদের জীবনী

"দুধ ডেলিভারি দিতে গিয়ে বলি হলেন স্বৈরাচারের বুলেটের" শহীদ মো: মোবারক ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সরাইল উপজেলায় জন্মগ্রহণ করে। তাঁর পিতা জনাব রমজান আলী এবং মাতা মোছা: ফরিদা বেগম। শহীদ মোবারক ছিলো একজন কিশোর। ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়াশোনা করতো। কিশোর মোবারক ছিলো মেধাবী এবং পরিশ্রমী। পড়াশোনার পাশাপাশি তাঁর বাবার সাথে গরুর খামারে কাজ করতো। জালিমের ঘাতকের বুলেটের আঘাতে অকালেই প্রাণ দিতে হয় এই মেধাবী তরুণকে। ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই মাত্র ১৩ বছর বয়সে পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে শাহাদাত বরণ করতে হয় তাকে। বিস্তারিত ঘটনা দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের পর ২০০৮ সালে তত্বাবধায়ক সরকার নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়। নির্বাচন দিলেও সেটি ছিল একটি পাতানো নির্বাচন। এই প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসে আওয়ামীলীগ। দলের প্রধান হিসেবে সরকার হোন শেখ হাসিনা। ক্ষমতায় এসেই শুরু করে নানান অরাজকতা। বিডিআর বিদ্রোহের মাধ্যমে পিলখানা ট্রাজেডি ঘটানো হলো। যেখানে নিহত হয় ৫৭ জন চৌকস সেনা অফিসার সহ অসংখ্য সেনা ও বিডিআর সদস্য। ২০১৩ সালে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামি ১৩ দফার দাবিতে একত্রিত হয়। তাদের উপর নির্বিচারে গুলি করে পাখির মত হত্যা করে অসংখ্য হেফাজত কর্মীকে। ঘটনা ধামাচাপা দিতে রাতের আধারে লাশ গুম করে ফেলে স্বৈরাচারী সরকারের বিভিন্ন সহযোগী বাহিনী। নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনেও সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর আওয়ামী সরকারের সহচর ছাত্রলীগের ক্যাডাররা সন্ত্রাসী কায়দায় হামলা চালায়। স্বৈরাচার শেখ হাসিনার কাছে মানুষ খুন করা ছিল ছেলে খেলা। বিরোধী দলকে দমন করতে গুম-খুন, হত্যা, গ্রেফতার,দমন -নিপীড়ন চালানো হতে থাকে নিয়মিতভাবে। বিরোধী দলের অসংখ্য নেতা কর্মীকে নির্বিচারে হত্যা করে। মানবতাবিরোধী অপরাধ ও মিথ্যে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ এনে আল্লামা মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাইদীকে দিনের পর দিন কারাগারে আটকে রাখে। ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়ে জামায়াতে ইসলামীর অসংখ্য নিরপরাধ নেতৃবৃন্দকে অন্যায়ভাবে হত্যা করে। আয়না ঘরে বন্দী করে রেখে অমানবিক নির্যাতন চালায় অসংখ্য নিরপরাধ মানুষকে। শুধু তাই নয় ব্যাংক লুট, অর্থ পাচার, দুর্নীতি, ঘুষ, চাঁদাবজি, সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ইত্যাদির মাধ্যমে দেশে এক অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করে। সরকারের অতিরিক্ত ব্যয়ের অর্থের যোগান দিতে জনগণের উপর মাত্রাতিরিক্ত ট্যাক্স আরোপ করে। দ্রব্য মূল্যের উর্ধ্বগতি সাধারণ মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে। নিম্ন আয়ের মানুষ পরিবারের ব্যয় বহন করতে না পেরে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে। কেউ অপকর্মের প্রতিবাদ করতে গেলে স্বাধীনতা বিরোধী বলে গলা চেপে ধরে। জনগণের বাকস্বাধীনতা হরণের মাধ্যমে সমালোচনার সকল পথ বন্ধ করে দেয়। ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার লক্ষ্যে সংবিধান সংশোধন করে তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে। পরপর দুইটি প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার সকল আয়োজন সম্পন্ন করে। প্রতিটি সেক্টরে বৈষম্য চরম আকার ধারণ করে। সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথার মাধ্যমে মেধাবীদের অবমূল্যায়ন করা হয়। দলীয় অযোগ্য স্বল্পশিক্ষিত কর্মীদের অবৈধভাবে সরকারের বিভিন্ন কর্মে নিয়োগ প্রদান করে। ছাত্রজনতা এসব বৈষম্য মেনে নিতে পারেনি। ২০১৮ সালে ছাত্র-জনতা কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু করে। সেখানে শেখ হাসিনার নির্দেশে ছাত্রলীগ হামলা চালায়। আন্দোলন নিয়ন্ত্রণ করতে সরকার নির্বাহী আদেশে কোটা প্রথা বাতিল করার কথা বললেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। তাইতো ২০২৪ এ এসে আবারো আন্দোলন শুরু করে ছাত্র জনতা। জনগণের মনে দীর্ঘ দিনের ক্ষোভ এই আন্দোলনে এসে ফেটে পড়ে। ছাত্রদের সাথে সাধারণ মানুষও যুক্ত হতে থাকে বৈষম্যের বিরুদ্ধে। অবিরাম আন্দোলন চলতে থাকে। ১৩ জুলাই ছাত্র-জনতা মিছিল নিয়ে শাহবাগে আসে। সেখানে পুলিশ বাঁধা প্রদান করে। ছাত্র-জনতা পুলিশের বেরিকেড ভেঙে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। লাগাতার আন্দোলন চলতে থাকে। ১৪ তারিখ রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্র-জনতা কে রাজাকারের বাচ্চা বলে গালি দেয়। মুহুর্তেই ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ছাত্রজনতা ‘তুমি কে আমি কে? রাজাকার রাজাকার’ বলে স্লোগান দিতে থাকে। পরদিন ১৫ তারিখ ছাত্র-জনতা প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে অবস্থান করে। অপরদিকে ছাত্রলীগ লাঠিসোঁটা, রামদা, চাপাতি, হকিস্টিক স্ট্যাম্প, লোহার রড ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর হামলার সকল প্রস্তুতি নেয়। হঠাৎ করেই তারা ছাত্রজনতার উপর ঝাপিয়ে পড়ে। ৭১'র ২৫ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যেভাবে ঢাকার ঘুমন্ত মানুষের উপর হামলা চালিয়েছিল ঠিক তেমনিভাবে ছাত্রলীগ ও ছাত্রজনতার উপর হামলা চালায়। বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে অবস্থান নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পিটিয়ে আহত করে। তাদের হাত থেকে নিরীহ বোনরাও রক্ষা পায় না। অনেকের মাথা ফেটে রক্ত বেরিয়ে আসে। অনেকের হাত-পা ভেঙে দেয়। হল গুলোতে প্রবেশ করে নির্যাতন চালায়। তারা ছাত্রীদের গায়ে হাত তুলতেও দ্বিধাবোধ করে না। শত শত ছাত্র-ছাত্রী শিক্ষার্থী আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হয়। ছাত্রলীগ হাসপাতালে গিয়েও ভর্তিরত আহত শিক্ষার্থীদের উপর হামলা ও নির্যাতন চালায়। ছাত্রলীগের ভয়ে পালিয়েও রক্ষা মেলে না। ১৬ তারিখ হামলার প্রতিবাদে সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিল হয়। এই দিনে শহীদ আবু সাইদ বুক পেতে দেয় ঘাতকের বুলেটের সামনে। পুলিশের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যায় আবু সাইদের শরীর। আবু সাইদের মৃত্যু পুরো দেশকে কাঁদিয়ে দেয়। ১৮ তারিখ ছাত্র-জনতা কম্লিট শাট ডাউন ঘোষণা করে। সেদিন রণক্ষেত্রে পরিণত হয় ঢাকা শহর। ছাত্র-জনতার সাথে পুলিশ, আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। ছাত্র-জনতাকে লক্ষ করে কাদাঁনে গ্যাস , রাবার বুলেট, গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়। গ্রেনেডের শব্দে কেঁপে ওঠে ঢাকা শহর। শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়। তাদেরকে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। নিহত হয় আরও অনেকে। সারাদেশে রাতভর সাড়াশি অভিযান পরিচালনা করে পুলিশ। চিরুনি অভিযান চালিয়ে ঢাকার বিভিন্ন ছাত্রাবাস থেকে নিরপরাধ ছাত্রদেরকে ধরে এনে অমানবিক নির্যাতন চালায় পুলিশ। এসব দৃশ্য দেখে সাধারণ মানুষের বিবেক কেঁদে উঠে। কেউ ঘরে বসে থাকতে পারে না। সবাই যার যার জায়গা থেকে আন্দোলনে যুক্ত হয়। কেউ পানি দিয়ে, খাবার দিয়ে কেউ আবার আশ্রয় দিয়ে ছাত্রদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসে। ১৯ জুলাই সকাল ১০ টায় শহীদ মোবারক হোসেন বাসা থেকে বের হয়ে আন্দোলনে যোগ দেয়। সেদিন সকাল থেকেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে থাকে। স্বৈরাচারের পুলিশ বাহিনী সাজোয়াজান ও আধুনিক অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে আন্দোলন প্রতিহত করতে মরিয়া হয়ে উঠে। সকালের পর থেকে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে রাজধানীর ধানমণ্ডি ও মোহাম্মদপুর এলাকা। সকাল থেকে পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের সাথে সংঘর্ষ শুরু হয় একটানা বিকেল তিনটা পর্যন্ত চলে এই সংঘর্ষ। আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে রাবার বুলেট, টিয়ারসেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে পুলিশ। ছাত্র-জনতা ইট পাটকেল ছুড়ে পুলিশকে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করে। কিন্তু পুলিশ বাহিনী অতর্কিত গুলি চালালে সেখানে ছাত্র জনতা টিকে থাকতে পারে না। কাঁদানে গ্যাসের ধোঁয়ায় উপস্থিতদের চোখে জ্বালাপোড়া শুরু হয়। একের পর এক সাধারণ শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হয়ে রাস্তায় পড়ে যায়। অনেকে সেন্সলেস হয়ে যায়। আহত হয় শতাধিক। মুহুর্তের মধ্যেই রাজধানীর গ্রীণ রোড এলাকা মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়। অদম্য সাহসী কিশোর মোবারক প্রতিদিনের মত সেদিনও খামারের দুধ নিয়ে ডেলিভারি দিতে যাচ্ছিলেন। গ্রীণ রোড এলাকা দিয়ে যখন যাচ্ছিলেন তখন তিনি সংঘর্ষের মুখে পড়েন। পুলিশের ছোড়া গুলি থেকে একটি গুলি এসে শহীদ মোবারকের মাথায় বিদ্ধ হয়। গুলির আঘাতে তাঁর মাথার মগজ বেরিয়ে পড়ে। আহত মোবারককে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে ভর্তি থাকা অবস্থায় ২০ জুলাই ২০২৪ তিনি শাহাদাত বরণ করেন। পারিবারিক অবস্থা শহীদ মোবারক হোসেনের পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৭ জন। তার পরিবার রাজধানীর কলাবাগানে বসবাস করতো। পিতা জনাব রমজান আলী গরুর খামারে গরু লালন-পালনের কাজ করেন। তাঁর আয় দিয়েই পরিবার চলে। মোবারকের ভাই-বোন সবাই পড়াশোনা করে। বড় ভাই রতন ৮ম শ্রেণিতে, বোন রত্না ৭ম শ্রেণিতে, ছোট বোন স্বপ্না ৫ম শ্রেণিতে এবং ফাতিহা ৪র্থ শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে। রমজান আলীর একার পক্ষে এত বড় পরিবারকে চালানো খুবই কষ্টকর। এজন্য পিতার সাথে শহীদ মোবারক এবং বড় ভাই রতন সহযোগিতা করতো। মোবারকের শাহাদাতে পরিবারে শোকের বন্যা বইছে। একনজরে নাম : শহীদ মোবারক জন্ম তারিখ : ৩১-০৮-২০০৮ পিতা : জনাব রমজান আলী মাতা : মোছা: ফরিদা বেগম পেশা : ছাত্র স্থায়ী ঠিকানা : সরাইল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া বর্তমান ঠিকানা : কলাবাগান, ঢাকা আহত হওয়ার তারিখ : ১৯/০৭/২৪ শহীদ হওয়ার তারিখ : ২০/০৭/২৪

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: মোবারক
Image of মো: মোবারক
Image of মো: মোবারক
Image of মো: মোবারক

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: সিয়াম

আমজাদ হোসেন

মো: সাইদুল ইসলাম শোভন

আরাফাত মুন্সি

হযরত বিল্লাল

মো: ইরফান ভূঞা

মো: হাছান মিয়া

মো: রিয়াজ হোসেন

আক্কাস আলী

মোঃ জালাল উদ্দিন

রাহাত হোসেন শরিফ

মো: আব্দুল আহাদ

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo