Image of মো: রাসেল গাজী

নাম: মো: রাসেল গাজী

জন্ম তারিখ: ২০ মার্চ, ১৯৯৭

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: ঢাকা

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : প্রাইভেট স্কুলের পিয়ন, শাহাদাতের স্থান : এনাম মেডিকেল কলেজ

শহীদের জীবনী

মা তুমি চিন্তা করো না, আমি মরে গেলে তোমাকে বীরের মা বলে ডাকবে মানুষ, তুমি শহীদের মায়ের সম্মান পাবে। শহীদ মো: রাসেল গাজী ২০ মার্চ ১৯৯৭ সালে ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানার গাজীরহাট মধ্যপাড়া মহল্লায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা বেলায়েত গাজী ও মাতা সেলিনা বেগম। তিন ভাই বোনের মধ্যে শহীদ রাসেল ছিলেন সবার ছোট। রাসেলকে সবাই ভালোবাসতো। রাসেল এবং তার বড় ভাই এখনো বিয়ে করেনি। নিজস্ব কোন জমিজমা না থাকায় শহীদ রাসেলের পরিবার তার বোনের বাসায় বসবাস করেন। রাসেল যখন খুব ছোট তখন বরিশালে তাদের ভিটেমাটিসহ সব নদীতে বিলীন হয়ে যায় । তারপর তার পরিবার ঢাকায় চলে আসেন। ঢাকায় এসেও তাদের সংগ্রাম করে পরিবার চালাতে হয়। অতি কষ্টে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করা সম্ভব হয় শহীদ রাসেলের। আজ থেকে প্রায় দশ বছর আগে শহীদ রাসেলের পিতা মারা যান। তারপর থেকে আরো কঠিন হয়ে যায় পথ চলা তার পরিবারের। মৃত্যুকালীন অবস্থায় তিনি তার এক বোনজামাইয়ের স্কুলে চাকরি করতেন। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে তিনি খুব পছন্দ করতেন। স্বৈরাচার পতনের আন্দোলনে সকল সময় তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতেন। শহীদ রাসেল এবং তার বড় ভাই নিয়মিত একই সঙ্গে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতেন। ঘটনা সংক্রান্ত বিবরণ ৫ আগস্ট ২০২৪, সোমবার। তিনি বড় ভাইয়ের আগেই আন্দোলনে চলে যান। লোভী শেখ হাসিনা ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য সাধারণ জনতার উপরে ইচ্ছে অনুযায়ী গুলিবর্ষণ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রশাসনকে এবং তার দলীয় ক্যাডারদের। পুলিশ বাহিনী এবং তার দলীয় ক্যাডাররা সেই নির্দেশ অনুযায়ী গুলি চালালে শত শত মানুষ নিহত হয়। হাজারো শহীদদের ভিড়ে শহীদ রাসেল এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে জায়গা করে নেন। শহীদ মো: রাসেল গাজী পুলিশের গুলিতে পরপারে পাড়ি জমান শহীদের মর্যাদা নিয়ে। “মা তুমি চিন্তা করো না, আমি মরে গেলে তোমাকে বীরের মা বলে ডাকবে মানুষ, তুমি শহীদের মায়ের সম্মান পাবে। তোমাকে সবাই শ্রদ্ধা করবে। আমি সবার কাছে আমার ভুল ত্রুটির জন্য ক্ষমা চাচ্ছি। আমাকে সবাই মাফ করে দিবেন।’’ ৫ আগস্ট সকালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যোগ দিতে বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় এ কথা বলে বেরিয়ে যান শহীদ মো: রাসেল গাজী। এটাই মায়ের সঙ্গে তার শেষ কথা। শুরু থেকেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে সক্রিয় অংশগ্রহণ করতেন শহীদ রাসেল গাজী ও তার বড় ভাই ফয়সাল গাজী। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ও ইসলাম এবং ইসলামী আন্দোলনের জন্য তারা জীবন দিতে প্রস্তুত। স্বৈরাচার শেখ হাসিনার গণহত্যা, বিভিন্ন দুর্নীতি ভোট জালিয়াতি ও অর্থপাচারের মত বড় বড় অপরাধ রাসেল গাজী এবং তার ভাইকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। তাই তারা নিজেদের পরিবারের চাইতেও আন্দোলনকে বেশি গুরুত্ব দিতেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রথম থেকেই শহীদ রাসেল গাজীর সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিলো। বিগত ৫ আগস্ট ২০২৪ তারিখ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচী ঘোষণা করে। উক্ত কর্মসূচী প্রতিহত করার জন্য সরকার কারফিউ জারি করে। শহীদ রাসেল্ সহ অন্যান্য ছাত্র-জনতা কর্মসূচী বাস্তবায়নের জন্য সকাল ১০ টায় বাইপাইল মোড় পুলিশ বক্সের সামনে সমবেত হয়। কিছুক্ষণ পর হঠাৎ উক্ত মিছিলে পুলিশ এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে থাকে। একটি গুলি এসে রাসেলের পাজরে লেগে পিছন থেকে বের হয়ে যায়। সাথে সাথে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। স্থানীয় লোকজন তাকে গণস্বাস্থ্য মেডিকেল কলেজে নিয়ে যান। সেখান থেকে এনাম মেডিকেল কলেজে স্থানান্তর করার সময় ৫:৩০ মিনিটে এম্বুল্যান্সেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। শহীদ রাসেলের মত হাজারো জীবনের বিনিময়ে আজ আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি স্বৈরাচার শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকারকে পতন করতে পেরেছি। আজ শহীদ রাসেলের রক্তের উপর সবুজ ঘাস জন্মেছে। সেই ঘাসের উপর দাঁড়িয়ে লক্ষ কোটি মানুষ আজ একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার করছে। শহীদ রাসেলের মত মানুষগুলো যদি জীবন না হারাতো তাহলে আজ আমরা পরাধীনতার ভিতরেই আবদ্ধ থাকতাম। বড় ভাই ফয়সালের বক্তব্য মৃত্যু সকলের জন্য অবধারিত কেউ স্বাভাবিক মৃত্যু বরণ করে আবার কেউ অস্বাভাকি মৃত্যুবরণ করে। আর কিছু মৃত্যু হয় স্মরণীয় মৃত্যু। আর আমার ভাই রাসেল সবসময় সেই স্মরণীয় মৃত্যুই কামনা করত। তার মৃত্যুতে আমি মোটেও দুঃখিত না। বরং শহীদের ভাই হতে পেরে আমি গর্বিত। ৫ আগস্ট ২০২৪ বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় রাসেল সবার কাছে মাফ চেয়ে গিয়েছিল। আল্লাহ পাক যেন তাকে জান্নাত নসিব করেন। শহীদ রাসেলের মায়ের বক্তব্য আমার রাসেলের কোন দোষ ছিল না, তারপরেও কেন তাকে মরতে হলো এর বিচার চাই। আমার ছেলে কোন অন্যায় করত না কিন্তু সে সত্য ন্যায়ের পথে চলার চেষ্টা করত। আমার পরিবারে অর্থ উপার্জনের একমাত্র ব্যক্তি ছিল আমার রাসেল। এখন আমি কিভাবে আমার পরিবার পরিচালনা করব। আমার বড় ছেলে ফয়সাল বেকার অবস্থায় আছে। যারা আমাকে এত কষ্টের মধ্যে ফেলে দিল তারা কি আমার জবাব দিতে পারবে? আমার কষ্ট কি লাঘব করতে পারবে? আমার সন্তানকে যারা হত্যা করেছে তাদের আমি উপযুক্ত শাস্তি চাই। শহীদ রাসেলের স্বপ্ন শহীদ রাসেল ভাবতো, আমরা কবে স্বাধীনতা অর্জন করব? দেশের উপর আমাদের যে অধিকার সে অধিকার আমরা কবে ফিরে পাব। আমাদের কোন সম্পদ নেই কিন্তু এ দেশের তো সম্পদ আছে! আমরা কেন মানুষের বাড়িতে ভাড়ায় থাকবো আমাদের তো ইচ্ছা হয় এদেশের সরকার আমাদের একটি সুন্দর বাড়ি করে দিবে। সেই বাড়িতে আমার পরিবার কে নিয়ে সুখের সাথে বসবাস করবো। শহীদ রাসেল এ ধরনের স্বপ্ন আঁকতেন সব সময়। কিন্তু তার স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেল কোটি কোটি ডলার বিদেশে পাচার করা হলেও শহীদ রাসেলের মত ভিটেমাটিহীন পরিবারের জন্য একটি বাড়ি করে দেওয়ার সামর্থ্য স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের হয়নি। অবশেষে তাকে শহীদ করা হলো। পারিবারিক অবস্থা তিন ভাইবোন খুব কষ্টে বড় হয়েছেন। এই পৃথিবীতে তাদের কোন স্থায়ী সম্পত্তি নেই। আজ থেকে প্রায় ১০ বছর আগে পিতা মারা যান। এখন মা এবং বড় ভাই সৈয়দ রাসেল, বড় বোনের বাসায় থাকেন। বড় ভাইয়ের কোন উপার্জন নেই। তাই অনেক কষ্ট করেই তাদের জীবন অতিবাহিত হচ্ছে। এক নজরে শহীদ মো: রাসেল গাজী নাম : মো: রাসেল গাজী জন্ম তারিখ : ২০-৩-১৯৯৭ জন্ম স্থান : গাজীরচট মধ্যপাড়া, আশুলিয়া, ঢাকা পেশা : প্রাইভেট স্কুলের পিয়ন স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম গাজীর চট মধ্য পাড়া, ইউনিয়ন: আলিয়া মাদ্রাসা, থানা: আশুলিয়া, জেলা: ঢাকা বর্তমান ঠিকানা : গ্রাম গাজীর চট মধ্য পাড়া, ইউনিয়ন: আলিয়া মাদ্রাসা, থানা: আশুলিয়া, জেলা: ঢাকা পিতা : মৃত : বেলায়েত গাজী মাতা : সেলিনা বেগম (গৃহিনী) ভাই : ফইসাল গাজী (৩৩) (চাকুরী) বোন : শারমিন আফরোজ (৩৬)বিবাহিতা ঘটনার স্থান : বাইপাইল মোড়, পুলিশ বক্স আঘাতকারীর নাম : পুলিশ আহত হবার সময় : ০৫-৮-২০২৪ (সকাল ১০টা) মৃত্যুর তারিখ ও সময়, স্থান : ০৫-৮-২০২৪, বিকল ৫:৩০, এনাম মেডিকেল কলেজ, ঢাকা জানাজা : ০৫-৮-২০২৪ রাত ১০:০০ কবরের অবস্থান : দরগার পার কবরস্থান আশুলিয়া সাভার ঢাকা প্রস্তাবনা ১. নিয়মিত মাসিক সহযোগিতা ২. বড় ভাই ফয়সালের চাকরি

শহীদ সম্পকির্ত কুরআনের আয়াত

আর যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে তাদেরকে কখনোই মৃত মনে করো না; বরং তারা জীবিত এবং তাদের রবের কাছ থেকে তারা জীবিকা-প্রাপ্ত হয়ে থাকে। (সুরা আল-ইমরান ৩:১৬৯)

শহীদ সম্পকির্ত হাদিস

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “শহীদদের আত্মা সবুজ পাখির পেটে থাকে।” (সহীহ মুসলিম ১৮৮৭)

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image
Image
Image
Image
শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo