জন্ম তারিখ: ২৫ অক্টোবর, ২০০৫
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: ঢাকা
পেশা : ছাত্র শাহাদাতের স্থান : সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
দুনিয়া তো শান্ত হয়েছে, আমার মনিরে কেউ ফিরায় দিতি পারবা’ শহীদ মিঠু বিশ্বাস মারুফ মাগুরা সদর উপজেলার হাজিপুর ইউনিয়নের আলাইপুর গ্রামের মো: শাহাজান ইসলাম ও মালা আক্তার দম্পতির কনিষ্ঠ ছেলে। ২০০৫ সালের ২৫ অক্টোবর মাগুরা জেলায় তাঁর জন্ম হয়। শহীদ পিতা রাজধানীর সাভার এলাকায় একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে চাকুরি করেন। মিঠু সাভার টেকনিক্যাল এন্ড বিএম কলেজের ২০২২-২০২৩ সেশনের ডিজিটাল টেকনোলজি ইন বিজনেস গ্রুপে অধ্যয়ন করতেন। তাঁর ক্লাস রোল ছিল ৫২। শহীদের বড় ভাই কওমি মাদরাসা থেকে দাওরা পাশ করেছেন। স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় তিনি শিক্ষকতা করতেন। কিছুদিন আগে মারাত্মক এক্সিডেন্ট করায় এই মুহূর্তে পরিবারের সাথেই দিনাতিপাত করছেন শহীদ সহোদর। আওয়ামী শাসনামল সন্ত্রাসী শাসনামলে দ্রব্যমূল্যের যে উগ্রগতি ছিল তাতে মাছ মাংস তো দূরের কথা ঠিকমতো মানুষ সবজিও কিনতে পারত না। অথচ আওয়ামী দুর্নীতিবাজরা, মন্ত্রী থেকে শুরু করে সামান্য কর্মী পর্যন্ত হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছে। কারও বাড়ির চাকর পর্যন্ত ৪০০ কোটি টাকার মালিক বনে গিয়েছে। এমন ভাব যেন হেলিকপ্টার ছাড়া যাতায়াত করতে পারে না। মন্ত্রী এমপি থেকে শুরু করে পাতিনেতা, আওয়ামী সমর্থক চোর ছেচ্চর লুটেরা বাটপাররা এদেশের সিংহভাগ সম্পত্তির দখল নেয়। দেশটা তাদের বাপের সম্পত্তি মনে করে সবকিছু বাটোয়ারা করে। কানাডা, আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং ভারতীয় ধনীদের সাথে টেক্কা দিয়ে জায়গা জমি সম্পদ বাড়াতে ব্যস্ত হয়েছিল তারা। এসব দুর্নীতি দেখে জনগণ একপর্যায়ে রাস্তায় নেমে আসে। বাধ্য হয়ে সরকারের টুটি চেপে ধরে। শতশত ছাত্র-জনতার তাজা প্রানের বিনিময়ে দেশ উদ্ধার করতে সক্ষম হয় স্বাধীন দেশের নাগরিকগন। শাহাদতের প্রেক্ষাপট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রথম থেকেই শহীদ মিঠুর সক্রিয় অংশগ্রহন ছিলো। বিগত ৫ আগস্ট ২০২৪ তারিখ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কর্তৃক খুনি, ফ্যাসিস্ট, স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়। উক্ত কর্মসূচী প্রতিহত করার জন্য সরকার কারফিঊ ঘোষণা করে। শহীদ মিঠু সহ অন্যান্য ছাত্রজনতা উক্ত কর্মসূচী বাস্তবায়নের জন্য সাভার অধঃচন্দ্র স্কুলের সামনে সমবেত হয়। দুপুরের পরপর খবর আসে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। মুহূর্তে সাভার এলাকায় বিজয় মিছিল শুরু হয়। আনন্দঘন পরিবেশ তৈরি হয়। মরণকামড় দিতে তখনও হাসিনার পালিত নরখাদক পুলিশ বাহিনী গণহারে গুলি চালাতে থাকে। একটু পর আসরের আজান হলে স্থানীয় মসজিদে নামাজ আদায় করতে যায় মিঠু। নামাজ শেষে ফেরার পথে ঘাতক পুলিশের একটি গুলি শহীদের বুকে এসে বিদ্ধ হয়। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। তারপরও থামেনি ঘাতক দল। অস্ত্র ঠেকিয়ে আবারও তাঁর বুকে গুলি চালানো হয়। জখম নিথর দেহে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন তিনি। পরবর্তীতে স্থানীয়রা তাঁকে উদ্ধার করে সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। চিকিৎসকেরা জনায় মিঠু বিশ্বাস মারুফ আর নেই। তিনি এই পৃথিবী ছেড়ে মহান আল্লাহর দরবারে পাড়ি জমিয়েছেন। পরিবারের অনুভূতি কান্না জড়িত কণ্ঠে শহীদ জননী মালা আক্তার বলেন- ‘আমার মনি দুনিয়া ছেড়ে চলে গেল কেন? আমি কেমনে বেঁচে থাকব? পুলিশ আমার মনির বুকটা গুলি করে ঝাজরা করে দিছে। আমার মনিরে কেউ ফিরায় দিতে পারবা?’ এক নজরে শহীদের তথ্যাবলি নাম : মো: মিঠু বিশ্বাস মারুফ জন্ম তারিখ : ২৫-১০-২০০৫ পেশা : ছাত্র প্রতিষ্ঠান : সাভার টেকনিক্যাল এন্ড বিএম কলেজ সেশন : ২০২২-২০২৩ গ্রুপ : ডিজিটাল টেকনোলজি ইন বিজনেস রোল : ৫২ পিতা : মো: শাহাজান ইসলাম, পেশা: চাকরি, বয়স: ৫০ মাতা : মোছা: মালা আক্তার, পেশা: গৃহিণী, বয়স: ৪৬ আহতের সময়কাল : ০৫-০৮-২৪, বিকাল ৫.১৫, সাভার অধঃর্চন্দ্র স্কুলের সামনে মৃত্যুর সময়কাল : ০৫-০৮-২৪, সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কবর : আলাইপুর, ওয়ার্ড-০৫, সদর, মাগুরা পারিবারিক অবস্থা : গ্রামের বাড়ীতে অসম্পূর্ণ বসবাসে অনুপযোগী একটি বাড়ি আছে। বসতি জমি নেই প্রস্তাবনা : ১. শহীদ পরিবারে মাসিক বা এককালীন সহযোগিতা করা যেতে পারে : ২. শহীদের বড় ভাইকে চিকিৎসা বাবদ সহযোগিতা করা প্রয়োজন : ৩. বাসস্থান নির্মাণ করতে আর্থিক সহযোগিতা করা যেতে পারে