জন্ম তারিখ: ১০ জুন, ২০০৬
শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৯ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: ঢাকা_সিটি
পেশা : ব্যবসা (গার্মেন্টস ঝুট কাপড়) শাহাদাতের স্থান : ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল, ঢাকা
শহীদ মো: আসিব মিয়া। পিতা জনাব আমজাদ হোসেন, মাতা ফজিলা খাতুন। আসিফ জন্মগ্রহণ করেন ১০ জুন ২০০৬ সালে শেরপুর জেলার কেরেংগা পাড়া গ্রামে। ইউনিয়ন: ৫নং রাম চন্দ্রপুর, থানা: নলিতাবাড়ি। আসিফের বর্তমান ঠিকানা ১৫/১ লাইন, বাসা-৬, মিরপুর ১১, থানা: পল্লবী, জেলা: ঢাকা। আসিব তার বাবার প্রথম সন্তান। তার আছে আরও ৩ বোন ১ ভাই। তিনি গার্মেন্টসের ঝুটের ব্যবসা করতেন। মা শেরপুরে গ্রামের বাড়িতে থাকেন। ১৯ জুলাই ২০২৪ শুক্রবার কমপ্লিট শাট ডাউন চলাকালে ৫:৩০ টায় মিরপুর-১০ এ মাথায় গুলিবিদ্ধ হন। রাত ৯:৪০ এ নিউরো সাইন্স হাসপাতালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ২০ জুলাই জানাজা শেষে গ্রামের বাড়িতে তাকে দাফন করা হয়। আসিবের শাহাদাত যাত্রা জুলাই ২০২৪ চলছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলন। তাদের কর্মসূচী ছিল ১৯ জুলাইয়ে কমপ্লিট শাট ডাউন । আসিব মিয়া একজন গার্মেন্টস কর্মী। শরীরে রক্ত প্রবাহে তার ছাত্রত্বের স্রোত। তিনি নেমে এলেন রাজপথে। ছাত্র জনতার সাথে দাঁড়িয়ে যান স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। আসিবরা ছিলেন মিরপুর-১০ ফায়ার সার্ভিসের পাশে। সকাল ১১ টা পর্যন্ত ছিল শান্তিপূর্ণ অবস্থান। ১১ টা থেকেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে থাকে। ১১ টার পরেই মারমুখী হয় পুলিশ। নিক্ষেপ করে শান্ত নিরীহ মিছিলকারীদের লক্ষ্য করে টিয়ারশেল। স্বৈরশাসকের হুকুমে পুলিশ গুলি ছোড়ে। পুলিশের সাথে যুক্ত হয় আওয়ামী যুবলীগ। মিরপুর মূল সড়ক থেকে ছাত্র জনতাকে হঠাতে পুলিশ ও যুবলীগের গুন্ডারা দিনভর টিয়ারশেল, গুলি ছোড়ে। বিকেল ৫.৩০ মিনিটে পুলিশ ও যুবলীগের ছোঁড়া গুলিতে আহত হন আসিফ মিয়া। গুলি লাগে আসিবের মাথার ডান পাশে। মারাত্মক আহত অবস্থায় ছাত্ররা তাকে দ্রুত ভর্তি করে আলোক হাসপাতালে। আসিব বাবাকে ফোন দিয়ে বলেন, “ বাবা আমি এক্সিডেন্ট করেছি।’’ তার পিতা দ্রুত হাসপাতালে যান। আলোক হাসপাতাল থেকে তাকে রিক্সায় করে নিয়ে যান সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল থেকে তাকে মাথায় ব্যান্ডেজ করে নিয়ে যান নিউরো সাইন্স হাসপাতালে। নিউরো সাইন্স হাসপাতালের ডাক্তাররা উন্নত চিকিৎসার পরামর্শ দেন। কিন্তু কোনো চেষ্টা আর কোনো চিকিৎসাই কাজে লাগেনি। আসিব মিয়া আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে চলে যান দুনিয়া ছেড়ে। রাত প্রায় ৯:৩০ মিনিটে তিনি নিউরো সাইন্স হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। রেখে যান, তার বাবা মা, ৩ বোন ও ছোট এক ভাই। ১৯ জুলাই তিনি রেখে যান রক্তস্নাত এক বাংলাদেশ। পরদিন ২০ জুলাই জানাযা শেষে তাকে চির নিদ্রায় শায়িত করা হয়। তিনি শুয়ে আছেন নিজের জেলা শেরপুরে। শহীদের কবর কেরেংগা পাড়া ফুলপুর নিজ গ্রামে। আসিবের বাবার বক্তব্য এই বয়সেই আসিব সংসারের দায়িত্ব নিয়ে চিন্তিত ছিলো। তার বাবা ঋণগ্রস্থ ছিলেন তাই আসিফ মাদ্রাসার লেখাপড়া বন্ধ করে দেন। বাবার সাথে নেমে পড়েন কাজে। বাবার মতে তার ছেলে খুব ভালো ছিল। পড়া লেখাতেও মনযোগী ছিল। সংসারের অভাব উপলব্ধি করে সে কাজে লেগেছিলো। বাবার ৩ লক্ষ টাকার ঋন রয়েছে। ঋণ মুক্তির জন্যই ছেলে কাজ করত। পিতা-পুত্র মিলে মাসে আয় করত ৩০ হাজার টাকা। তিনি কখনও পিতার অবাধ্য হননি। কারও সাথে ঝগড়া-মারামারি করতেন না। ছোট থেকেই ছিলেন বুদ্ধিমান। দেশ নিয়েও তার ভাবনা ছিল। এক নজরে শহীদের ব্যক্তিগত প্রোফাইল নাম : শহীদ মো: আসিব মিয়া পেশা : ব্যবসা (গার্মেন্টস ঝুট কাপড়) জন্ম : ১০-০৬-২০০৬ শাহাদাত বরণের তারিখ : ১৯-০৭-২০২৪, রাত ৯.৪০টা পিতা : জনাব আমজাদ হোসেন মাতা : ফজিলা খাতুন অন্যান্য সদস্য : ৩ বোন, ১ ভাই স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম-কেরেংগা পাড়া, ইউনিয়ন-৫নং রামচন্দ্র্র পুরণ কুরা, থানা-নলিতাবাড়ি, জেলা-শেরপুর বর্তমান ঠিকানা : ১৫/১ লাইন, বাসা-৬, মিরপুর-১১, থানা-পল্লবী, ঢাকা বাবার পেশা : ঝুটের ব্যবসা; আয়-২০ হাজার টাকা। উৎস ঝুটের ব্যবসা মা : গৃহিণী আন্দোলনের চিত্র : অবস্থান-১৯ জুলাই, মিরপুর-১০, গুলিবিদ্ধ হন মাথায়। আনুমানিক বিকাল-৫.৩০ মিনিট প্রথম ভর্তি-আলোক হাসপাতালে, তারপর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল সেখান থেকে নিউরো সায়েন্স হাসপাতাল মৃত্যু : ১৯ জুলাই ২০২৪, রাত ৯:৩০, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল, ঢাকা জানাজা ও দাফন : ২০ জুলাই ২০২৪ কবর : কেরেংগা পাড়া, ফুলপুর নিজগ্রাম সম্ভাব্য প্রস্তাবনা ১. এককালীন অনুদান দিয়ে তাদের পাশে থাকা দরকার। ২. বাড়িঘর সংস্কার ও এক খণ্ড জমি দানের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। ৩. ভাই বোনদের শিক্ষাভাতার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। ৪. প্রতি মাসে নির্ধারিত পরিমাণ অর্থ অনুদান যেতে পারে। ৫. তার পরিবারে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা ।