Image of  মো: মাহবুব হাসান নিলয়

নাম: মো: মাহবুব হাসান নিলয়

জন্ম তারিখ: ১৮ জুলাই, ২০১১

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৪ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: রাজশাহী

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : ছাত্র , শাহাদাতের স্থান : পাবনা ট্রাফিক মোড়, পাবনা

শহীদের জীবনী

“বাবা, তুমি তো আমাকে এত শাসন করো, আমি না থাকলে তখন অনেক মনে পড়বে।” শহীদ মাহবুব হাসান নিলয় সিদ্দিক মেমোরিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। ফুটবল খেলতে ভালোবাসতেন। ফুটবলে দারুণ পারদর্শী ছিলেন। শহীদের বাবা আনসার বাহিনীর একজন সদস্য। তাদের তিন তলা বিশিষ্ট একটা বাড়ি আছে। শহীদের বড়ো ভাই সৌদি প্রবাসি ছিলেন। বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। ঘটনার বিবরণ ৪ আগস্ট ২০২৪ তারিখে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে সকাল ১১টায় পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ থেকে মিছিল বের হওয়ার কথা ছিল। সকাল ৮টা বাজতেই শহীদ নিলয়ের মন মিছিলের জন্য ছটফট করতে থাকে। সদ্য সৌদি আরব থেকে ফেরা বড়ো ভাই মেহেদী হাসান মিলন, বোন মাহবুবা নাজনীন এবং মাহবুব হাসান নিলয়— তিন ভাইবোনই মিছিলে যোগ দেওয়ার জন্য উদগ্রীব ছিলেন। মা দিল আফরোজা ছেলেকে বললেন, “তোমরা মিছিলে যাবে, তাহলে তোমাদের লাঠি কোথায়?” মায়ের কথা শুনে মাহবুব যেন আরও সাহস পায়, নিজেই তিনটি লাঠি বানিয়ে নেয়। সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে দিল আফরোজা গরম ভাত ও কচু ভর্তা রান্না করেন। এরপর তিন সন্তানকে খাবার টেবিলে ডেকে নেন। কেউই নিজের হাতে খেতে চায় না, তিন ভাইবোনের একই অভ্যাস- মায়ের হাত থেকেই খাওয়া যেন তাদের নিত্যদিনের অধিকার। মাহবুবের কচু ভর্তা তেমন পছন্দ না। দুই গাল ভাত মুখে নিয়ে সে বলল, “খাবো না।” বড়ো ভাই মিলন টাকা দিয়ে তাকে দোকানে পাঠান গাড়ি ভাড়ার জন্য খুচরা করে আনতে। মাহবুব টাকা নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে স্থানীয় অন্যান্য ছেলেদের আন্দোলনে যাওয়ার জন্য ডাকতে গেল। কিছুক্ষণ পর মাহবুব বাড়িতে ফিরে এসে দেখল, দেরি দেখে মিলন ও মাহবুবা রিকশা নিয়ে আন্দোলনের স্থানে চলে গেছেন। মাহবুব বাড়িতে এসে মাকে বলল, “আম্মু, আমি কচু ভর্তা দিয়েই খাবো।” মা তাকে খাইয়ে দিলেন। কে জানতো, সেটাই হবে মায়ের হাতে তাঁর শেষ খাওয়া। এরপর মাহবুব পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের সামনে চলে গেল। ইতোমধ্যে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী সেখানে জমায়েত হয়েছে। শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে পাবনা ট্রাফিক মোড়ে অবস্থান নিয়েছে। শিক্ষার্থীরা সেখানে বসে বা দাঁড়িয়ে দেশাত্মবোধক গান গাচ্ছিলেন। প্রায় ৪০ মিনিট পর হঠাৎ পাবনা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ভাঁড়ারা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবু সাঈদ খান তার জিপগাড়ি নিয়ে মিছিলের উত্তর পাশের রাস্তায় এসে উপস্থিত হয়। গাড়ি থেকে নেমে চেয়ারম্যান এবং তার সহযোগী নাসির অস্ত্র হাতে নেয়। সেখান থেকেই শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে নির্বিচারে গুলি চালাতে শুরু করে। শিক্ষার্থীরা দিগি¦দিক ছুটতে শুরু করেন। কেউ বুকে, কেউ পিঠে, কারও মাথায়, আবার কারও চোখে গুলি লাগে। মুহূর্তেই চিৎকার-আর্তনাদে ভারী হয়ে ওঠে পাবনা ট্রাফিক মোড়ের বাতাস। রাজপথ হয় রক্তাক্ত। সাঈদ খানের ছোড়া একটি গুলি এসে শহীদ মাহবুবের বুকে লাগে। তৎক্ষণাৎ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। এভাবেই শেষ হয়ে যায় মাহবুব হাসান নিলয় নামের এক তরুণের অধ্যায়। সেদিন ঘটনাস্থলেই জাহিদুল ইসলাম নামে আরো একজন শিক্ষার্থী শহীদ হন। শহীদ মাহবুব তাঁর বাবা আবুল কালাম আজাদের শাসন ভয় পেতো। একদিন সাহস করে বলেছিল, “বাবা, তুমি তো আমাকে এত শাসন করো, আমি না থাকলে তখন অনেক মনে পড়বে।” আজ বাবা আবুল কালাম আজাদ তাঁর ছেলের কথা মনে হলেই অঝোরে কাঁদতে থাকেন। মা দিল আফরোজা ভাত নিয়ে বসে থাকেন মাহবুবের জন্য, কিন্তু মাহবুব আর আসবে না। চিরদিনের জন্য চলে গেছে, রেখে গেছে তাঁর সকল স্মৃতি টুকরো। শহীদ মাহবুব নিলয় সম্পর্কে জানতে চাইলে তাঁর এক প্রতিবেশী চাচা বলেন, “মাহবুব নিলয় ছিল অত্যন্ত ভালো ছেলে। ছোটোবেলা থেকেই খেলাধুলার প্রতি ছিল গভীর আগ্রহ। সে খেলাধুলা করতে ভালোবাসতো এবং প্রায়শই মাঠে সময় কাটাতো।” শহীদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি নাম : মো: মাহবুব হাসান নিলয় জন্ম তারিখ : ১৮.০৭.২০১১ জন্মস্থান : ব্রজনাথপুর, দোগাছী, সদর, পাবনা পেশা : ছাত্র শ্রেণি : ৯ম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান : সিদ্দিক মেমোরিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ, পাবনা আহত হবার স্থান : পাবনা ট্রাফিক মোড়, পাবনা শহীদ হবার স্থান : পাবনা ট্রাফিক মোড়, পাবনা আঘাতের ধরণ : গুলি বিদ্ধ আক্রমণকারী : ভাড়ারা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সাইদ খান ও তার সহযোগী নাসির আহত হবার সময় ও তারিখ : দুপুর ১২:৩০ মিনিট, ৪ আগস্ট ২০২৪ শহীদ হবার সময় ও তারিখ : দুপুর ১২:৩০ মিনিট, ৪ আগস্ট ২০২৪ শহীদের কবরস্থান (জিপিএস লোকেশনসহ) : পাবনা সদর গোরস্থান (২৪.০০৩২৫৩, ৮৯.২৫২১৫১) বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: ব্রজনাথপুর, ইউনিয়ন: দোগাছী, থানা: পাবনা সদর, জেলা: পাবনা পরিবারসংক্রান্ত তথ্য পিতা : মো: আবুল কালাম আজাদ পিতার পেশা ও বয়স : আনসার বাহিনী, ৬২ বছর মাতা : দিল আফরোজা মাতার পেশা : গৃহিণী,বয়স, ৫২ বছর। মাসিক আয় : ৪০,০০০ আয়ের উৎস : শহীদের বাবার চাকুরী ও বাসা ভাড়া বাবদ আয় শহীদের সাথে সম্পর্ক : পিতা পরিবারের বর্তমান সদস্য সংখ্যা : ৪ পরিবারের অন্যান্য সদস্য ভাই : মেহেদী হাসান মিলন, বয়স : ২৭ বোন : ওয়াকিয়া নাজনীন, বয়স ও পেশা : ২৩, ছাত্রী (বিবাহিত) বোন : মাহবুবা নাজনীন, বয়স ও পেশা : ১৬, ছাত্রী (দশম শ্রেণি) পরামর্শ ১. শহীদের পরিবারের খোঁজখবর রাখা দরকার

শহীদ সম্পকির্ত কুরআনের আয়াত

আর যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে তাদেরকে কখনোই মৃত মনে করো না; বরং তারা জীবিত এবং তাদের রবের কাছ থেকে তারা জীবিকা-প্রাপ্ত হয়ে থাকে। (সুরা আল-ইমরান ৩:১৬৯)

শহীদ সম্পকির্ত হাদিস

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “শহীদদের আত্মা সবুজ পাখির পেটে থাকে।” (সহীহ মুসলিম ১৮৮৭)

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image
Image
Image
Image
শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo