Image of মো: জুলকারনাইন

নাম: মো: জুলকারনাইন

জন্ম তারিখ: ২৯ জানুয়ারি, ২০০৭

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: রাজশাহী

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা :ছাত্র , শাহাদাতের স্থান : এনাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল

শহীদের জীবনী

শহীদ মো: জুলকারনাইন জেএল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির ছাত্র ছিল। থাকতো সাভারে। তাঁর গ্রামের বাড়ি পাবনার স্বরপ গ্রামে। গ্রামে বৃদ্ধ দাদা, দাদি এবং তিন চাচার পরিবারের বসবাস। জুলকারনাইনের পরিবার ঈদে গ্রামে এলে তাঁর চাচার বাড়িতে থাকেন। শহীদের বাবা আব্দুল হাই আল হাদি সাভারে একটি ছোট্ট হোমিওপ্যাথির দোকান চালান। তাঁর আয়ের ওপরই নির্ভর করে পরিবারের ভরণপোষণ। বাসা এবং দোকান ভাড়া বাবদ প্রতি মাসে তাঁদের ১২ হাজার টাকা প্রদান করতে হয়। শহীদ জুলকারনাইন অনেক বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখতো। তাঁর ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন ছিল। নিজস্ব একাডেমিতে নিয়মিত খেলতো। এছাড়া বড়ো ব্যবসায়ী হওয়ার ইচ্ছাও পোষণ করতো। সে বলতো, “আমি কখনো কারও অধীনে চাকরি করব না। যদি চাকরি করতে হয়, তাহলে আমি সেনাবাহিনীতে যোগ দেবো।” শহীদ জুলকারনাইন শুধু স্বপ্নদ্রষ্টা ছিল না, সে ছিল একজন সংগ্রামীও। শিক্ষার্থীদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছিল। স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার প্রশাসনের নিপীড়নের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে তাঁর ভেতরে ছিল অদম্য সাহস। যখন বাবা তাকে নিষেধ করতেন, তখন সে বলতো, “বাবা, যদি কিছু ঘটে, আমি আবু সাঈদের মতো শহীদ হবো। তুমি তো সারাজীবন আমাকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে শিখিয়েছ, আজ কেন আমাকে থামতে বলছ?” ঘটনার বিবরণ শহীদ জুলকারনাইন ৫ আগস্ট ২০২৪ তারিখে তাঁর মায়ের কাছ থেকে আন্দোলনে যাওয়ার অনুমতি নেয়। বাবার নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সে বলেছিল, “বাবা, আজ আমি কোনো বাধা মানবো না।” সেদিন বিকেলে ছাত্র-জনতার সাথে জুলকারনাইন বাইপাইল মোড়ে অবস্থান নেয়। স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের সেই ঐতিহাসিক দিনেও পুলিশ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর সরাসরি গুলি চালায়। বিকেল ৩টা ৪৫ মিনিটে জুলকারনাইনের গলায় গুলি লাগে। শিক্ষার্থীরা দ্রুত তাকে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে। হাসপাতালে বিকেল ৫টা ৩৭ মিনিটে সংগ্রামী এই তরুণ শাহাদাত বরণ করেন। শাহাদাতের পূর্বে জুলকারনাইন বলেছিল, “আমি বাবা-মা’র বড়ো ছেলে, আমার বাবা-মাকে আপনারা দেখে রাখবেন।” ছেলেহারা মায়ের হৃদয় ভাঙা আর্তনাদ যেন থামতে চায় না। তিনি বলেন, “আমার ছেলে সবসময় ঘরেই থাকতো। আমি এখন বারবার ঘরের চেয়ারের দিকে তাকাই, মনে হয় আমার ছেলে বসে আছে।” জুলকারনাইনের বৃদ্ধ দাদা আব্দুর রহিম শোকের সাগরে ভাসছেন। তাঁর কথাগুলো ভারী হয়ে আসে, “আমার নাতিটা অনেক ভালো ছিল। যখনই গ্রামে আসতো, অনেক চুপচাপ থাকতো। ওরা আমার নিরীহ নাতিটাকে মেরে ফেলল।” তিনি আরো বলেন, “শেষ কুরবানির ঈদে বাড়ি আসছিল, এরপরে আর নাতির মুখ দেখি নাই। আর এখন আমার নাতি আসলো লাশ হয়ে। এত শান্ত শিষ্ট, ভদ্র একটা ছেলেরে ওরা কেমনে গুলি কইরা মাইরা ফেলল!’’ শহীদের পিতা দৈনিক সমকালকে বলেন, “আমি নামাজে ছিলাম। ছেলেটা আমার মুখের দিকে এক নজর চেয়ে চলে গেল, আর ফিরে আসলো না। ছেলেটা শরীরে গুলি নিয়েই কবরে চলে গেল, কিয়ামতের দিন গুলি নিয়েই উঠবে। ছেলেকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল, সব শেষ হয়ে গেল।” শিক্ষার্থীদের এই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ছিল স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সরকারের অন্যায়, দুর্নীতি ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে একটি সোচ্চার প্রতিবাদ। শেখ হাসিনার নিষ্ঠুরতা জুলকারনাইনের মতো অনেক স্বপ্নবাজ তরুণের জীবন কেড়ে নিয়েছে। “আমি নামাজে ছিলাম। ছেলেটা আমার মুখের দিকে এক নজর চেয়ে চলে গেল, আর ফিরে আসলো না। ছেলেটা শরীরে গুলি নিয়েই কবরে চলে গেল, কিয়ামতের দিন গুলি নিয়েই উঠবে। ছেলেকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল, সব শেষ হয়ে গেল।” শহীদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি নাম : মো: জুলকারনাইন জন্ম তারিখ : ২৯.০১.২০০৭ জন্মস্থান : স্বরপ, নন্দনপুর, সাথিয়া, পাবনা পেশা : ছাত্র শ্রেণি : ৯ম বিভাগ : বানিজ্য বর্ষ : ২০২৪-২৫ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান : জে.এল মডেল স্কুল অ্যান্ড গার্লস কলেজ। আহত হবার স্থান : আশুলিয়া থানার অন্তর্গত বাইপাইল মোড় শহীদ হবার স্থান : এনাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল আঘাতের ধরন : গুলি বিদ্ধ আক্রমণকারী : পুলিশ আহত হবার সময় ও তারিখ : বিকাল ৩:৪৫ মিনিট; ৫ আগস্ট, ২০২৪ শহীদ হবার সময় ও তারিখ : বিকাল ৫:৩৭ মিনিট; ৫ আগস্ট, ২০২৪ শহীদের কবরস্থান (জিপিএস লোকেশনসহ) : তেতুলিয়া গোরস্থান, পাবনা (২৪.০৭২৬৪৯, ৮৯.৫১৬৯৬৭) স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: স্বরপ, ইউনিয়ন: নন্দনপুর, থানা: সাথিয়া, জেলা: পাবনা, বর্তমান ঠিকানা বাসা/মহল্লা : পলাশবাড়ি কাঁঠাল তলা, থানা : আশুলিয়া, জেলা : ঢাকা পরিবার সংক্রান্ত তথ্য পিতা : মো: আ: হাই আল হাদি পিতার পেশা ও বয়স : হোমিও ডাক্তার (উগঅঐ), ৫৪ বছর মাতা : মোছা: হালিমা খাতুন মাতার পেশা ও বয়স : গৃহিণী, ৩৭ বছর মাসিক আয় : ২২,০০০/- আয়ের উৎস : হোমিও চিকিৎসা শহীদের সাথে সম্পর্ক : পিতা পরিবারের বর্তমান সদস্য সংখ্যা : ৪ জন পরিবারের অন্যান্য সদস্য ভাই: হামজা, বয়স: ৬ বছর, শ্রেণি: প্রথম শ্রেণি বোন: তোহফা, বয়স ও পেশা : ২৬ বছর, গৃহিণী (বিবাহীতা) পরামর্শ ১. শহীদ পরিবারকে নিয়মিত ভাতা প্রদান করা ২. ছোট ভাইয়ের পড়াশোনার দায়িত্ব নেওয়া

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: জুলকারনাইন
Image of মো: জুলকারনাইন
Image of মো: জুলকারনাইন
Image of মো: জুলকারনাইন
Image of মো: জুলকারনাইন
Image of মো: জুলকারনাইন

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো. শরিফুল ইসলাম মোহন

মো: মিনহাজ হোসেন

 মো: সাব্বির হাসান

মো: কমর উদ্দিন খাঁ

মো: নজিবুল সরকার

মতিউর রহমান

 মো: সোহানুর রহমান রঞ্জু খান

 মো: মাহবুব হাসান নিলয়

হাফেজ মো: সিয়াম হোসেন

মো: রনি

মোঃ আব্দুল লতিফ

মো: রায়হান আলী

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo