Image of মো: সুমন সেখ

নাম: মো: সুমন সেখ

জন্ম তারিখ: ২ ডিসেম্বর, ১৯৯৩

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৪ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: রাজশাহী

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : শিক্ষার্থী ও পার্টটাইম জব, শাহাদাতের স্থান : সিরাজগঞ্জ শহরের ইলিয়ট ব্রিজের পশ্চিম পাশে।

শহীদের জীবনী

শহীদের মা আরো বলেন, “আমার ব্যাটা চলে গেছে তো কি হয়েছে, হাজার হাজার ব্যাটা আমার পাশে আছে। একটা ছেলে হারিয়ে হাজার হাজার ছেলে পেয়েছি। এই ছেলেগুলোই বারবার শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে সম্মুখে। রুখে দেবে জালিমদের কালো হাত, একেকজন হয়ে উঠবে সুমন সেখ ” ফুল হয়ে ফোটার আগেই ঝরে গেল একটি কলি। সিরাজগঞ্জের গয়লা গ্রামের ইসলামিয়া কলেজের বিএ ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী সুমন সেখ। বেড়ে ওঠেন গ্রামেই। শৈশব ও কৈশোর কেটেছে গ্রামের প্রকৃতির সাথে। বড়ো ভাই প্রতিবন্ধী। নিয়মিত চিকিৎসা করাতে হয়। একমাত্র বোন আদুরী খাতুন। বাবাই হচ্ছেন পরিবারের আয়ের উৎস। ছোট্ট একটি চায়ের দোকানের উপার্জন দিয়েই কোনোরকম পরিবার চালাতেন। পরিবারের অর্থনৈতিক কষ্ট দূর করার জন্য সুমন সেখ পড়াশোনার পাশাপাশি পার্টটাইম জব শুরু করেন। তিনি ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগের কাজ করতেন। তাকে ঘিরে বাবা-মায়ের অনেক আশা-স্বপ্ন ছিল। সবকিছুই শেষ হয়ে গেল ঘাতকের বুলেটের আঘাতে। ঘটনার বিবরণ দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে আওয়ামী স্বৈরাচারী সরকার দেশের মানুষের ওপর অন্যায় ও শোষণের স্টিমরোলার চালিয়েছে। মানুষের ছিল না কোনো বাক-স্বাধীনতা, ছিল না সুযোগের সমতা। গুম, খুন, মিথ্যা মামলা, দুর্নীতি ও ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। অন্যায় ও শোষণের ফিরিস্তি শেষ হবার নয়। দিনে দিনে মানুষের মনে বাঁধতে থাকে ক্ষোভের দানা। অন্যায় ও শোষণের মাত্রা যত বাড়ে জালিমের পতনের ধ্বনি তত বাড়তে থাকে। শেখ হাসিনার সরকার বৈষম্যের পরিধি এতই বাড়িয়েছিল যে, বিসিএসের মতো পরীক্ষায়ও ৫৬% কোটা রাখার ব্যবস্থা করে। তারই প্রতিবাদে ফেটে পড়ে ছাত্র সমাজ। শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি উপেক্ষা করে তাদের ওপর চালানো হয় নির্যাতনের স্টিমরোলার। প্রকাশ্যে দিবালোকে নির্বিচারে জনতার ওপর গুলি চালানো হয়। শহীদ হন আবু সাঈদসহ অনেকেই। পুরো বিশ্ব এগুলো দেখেছে। দিনে দিনে আন্দোলনে লোক সমাগম বাড়তে থাকে। সকল শ্রেণিপেশার মানুষ রাস্তায় নেমে আসে । ৪ঠা আগস্ট ২০২৪ তারিখ সকাল ১০ টায় সিরাজগঞ্জ শহর থেকে শুরু হয় মিছিল। স্বৈরাচার পতনের এই মিছিলের একজন ছিল সুমন সেখ। মিছিলটি যখন শহর থেকে ইলিয়ট ব্রীজের পাশে পৌঁছায় তখন আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা মিছিল লক্ষ্য করে সরাসরি এলোপাথাড়ি গুলি ছুড়তে শুরু করে। গুলির শব্দে মানুষ চারদিকে ছুটতে থাকে। এ সময় শহীদ সুমন সেখের ডান পাজরে তিনটি বুলেট বিদ্ধ হয়। দওবাড়ী আওয়ামী লীগের কার্যালয় থেকে ১০০ গজ দূরে ফায়ার সার্ভিসের দক্ষিণে ইলিয়ট ব্রিজের পশ্চিম পাশে তাকে গুলি করা হয়। ঘাতকের বুলেটের আঘাতে শহীদ হন সুমন সেখ। তাঁর নিথর দেহ পড়ে থাকে রাস্তায়। রক্তে রঞ্জিত হয় রাজপথ। ছাত্র-জনতা রিক্সায় করে নিয়ে নর্থ বেঙ্গল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে সিরাজগঞ্জের সাবেক এমপি জান্নাত আরা হেনরীর ড্রাইভারের গুলিতে শহীদ হন সুমন সেখ। শহীদের বোন বলেন, “আমার ভাইটি খুব শান্ত, খুবই নম্র-ভদ্র ছিল। আমাকে ও মা-বাবাকে খুব ভালোবাসতো। অনেক স্বপ্ন ছিল তাঁর। তাঁর কথা মনে পড়লেই কান্না আসে। তাকে আর কখনো দেখতে পাবো না- এটাই বারবার মনে হয়। আমি ওর বড়ো হলেও পড়াশোনাসহ সবকিছুতে আমাকে পরামর্শ দিতো। পরিবারের সাথে সব কথা শেয়ার করতো। হৃদয়ের এই রক্তক্ষরণ হয়তো থামবে না কখনো, ভাইয়ের সাথে কাটানো স্মৃতিগুলো বারবার ভেসে ওঠে চোখের সামনে।” শহীদের মা বলেন, ‘‘সোনার পাখিটা আর ফিরবে না, আমার ছেলেটাকে খুব কষ্টে মানুষ করেছিলাম। তার অনেক স্বপ্ন ছিল। সে তো আর ফিরবে না, ফিরবে না তাঁর স্বপ্নও। কোনো মায়ের বুক যেন আমার মতো ছেলে হারা না হয়। আমার মতো কষ্ট যেন আর কারো না হয়। ছেলেটা আমার যতটুকু উপার্জন করতো সব আমাকে দিতো। তার কথা মনে আসলে আমার হাত-পা ভাইঙ্গা আসে। যেসব ঘাতকরা আমার ছেলেকে হত্যা করেছে, তাদের যেন কঠিন শাস্তি হয়।” কথাগুলো বলার সময় শহীদের মায়ের চোখ দিয়ে বৃষ্টির মতো অশ্রু গড়িয়ে পড়তে থাকে। ব্যানারে টাঙানো ছেলের ছবিতে গিয়ে চুমো খান। মধ্যরাতে মায়ের মনে হয় পাশে ছেলেটা মা বলে ডাকছে। মিছিলে যাওয়ার আগে ছেলে মাকে দুবার মা বলে ডাক দিয়েছিল। কিন্তু মা সেটা শুনতে পাননি। এখন মায়ের কানে বারবার বাজে মা...মা...! শহীদের মা আরো বলেন, “আমার ব্যাটা চলে গেছে তো কি হয়েছে, হাজার হাজার ব্যাটা আমার পাশে আছে। একটা ছেলে হারিয়ে হাজার হাজার ছেলে পেয়েছি। এই ছেলেগুলোই বারবার শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে সম্মুখে। রুখে দেবে জালিমদের কালো হাত, একেকজন হয়ে উঠবে সুমন সেখ।” শহীদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি নাম : মো: সুমন সেখ জন্ম তারিখ : ০২/১২/১৯৯৩ জন্মস্থান : গয়লা, সিরাজগঞ্জ পেশা : শিক্ষার্থী ও পার্টটাইম জব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান : ইসলামিয়া সরকারি কলেজ আহত হবার স্থান : সিরাজগঞ্জ ইলিয়ট ব্রিজের পশ্চিম পাশ শহীদ হবার স্থান : সিরাজগঞ্জ শহরের ইলিয়ট ব্রিজের পশ্চিম পাশ আঘাতের ধরন : গুলি বিদ্ধ আক্রমণকারী : সিরাজগঞ্জের সাবেক এমপি জান্নাত আরা হেনরীর ড্রাইভার আহত হবার তারিখ ও সময় : ০৪.০৮.২০২৪; বেলা ১১টা শহীদ হবার তারিখ ও সময় : ০৪.০৮.২০২৪; বেলা ১১টা শহীদের কবরস্থান : মালশাপাড়া কবরস্থান (২৪ক্ক২৭'০৫.৬"ঘ ৮৯ক্ক৪২'৩২.৪") (জিপিএস লোকেশনসহ) বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: গয়লা, ইউনিয়ন: সিরাজগঞ্জ সদর, থানা: সিরাজগঞ্জ সদর, জেলা: সিরাজগঞ্জ পরিবারসংক্রান্ত তথ্য পিতা : মোঃ গোনজের আলী পিতার পেশা ও বয়স : চা বিক্রেতা, ৫৯ বছর মাতা : মোছা: ফিরোজা বেগম মাতার পেশা ও বয়স : গৃহিণী, ৫০ বছর মাসিক আয় : আনুমানিক ৮,০০০ টাকা আয়ের উৎস : অস্থায়ী চায়ের দোকান শহীদের সাথে সম্পর্ক : বাবা পরিবারের বর্তমান সদস্য সংখ্যা : ৪ জন পরিবারের অন্যান্য সদস্য ভাই : মো: ফরিদুল ইসলাম বয়স : ৩৩, প্রতিবন্ধী বোন : মোছাঃ আদুরী খাতুন বয়স ও পেশা : ২৩, শিক্ষার্থী, সিরাজগঞ্জ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট (ইলেকট্রিক্যাল) পরামর্শ ১. বাবার আয়ের স্থায়ী উৎসের ব্যবস্থা করে দেওয়া ২. শিক্ষিত বিবাহযোগ্য ছোট বোনের চাকরি ও বিয়ের ব্যবস্থা করা

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: সুমন সেখ
Image of মো: সুমন সেখ
Image of মো: সুমন সেখ
Image of মো: সুমন সেখ
Image of মো: সুমন সেখ
Image of মো: সুমন সেখ
Image of মো: সুমন সেখ
Image of মো: সুমন সেখ

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

জুনাইদ ইসলাম রাতুল

মো: রায়হান আলী

মোঃ শিহাব আহমেদ

মিকদাদ হোসাইন খান (আকিব)

হাফেজ মো: সিয়াম হোসেন

মো: সুজন মাহমুদ

মো: শিমুল

মেহেদী হাসান

মো: মুনিরুল ইসলাম

মো. মেহেদী হাসান রবিন

মো: অন্তর ইসলাম

মো: সোহেল রানা

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo