জন্ম তারিখ: ১২ জানুয়ারি, ১৯৭৮
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৪ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: রাজশাহী
পেশা : দিনমজুর, শাহাদাতের স্থান : এলিয়ট ব্রিজ
সিরাজগঞ্জের অনতিদূর গয়লা নামক গ্রামের ৯ নং ওয়ার্ডে জন্ম শহীদ মোঃ আব্দুল লতিফের। জন্মের আগেই বাবা মারা যান। তাঁর বয়স যখন তিন মাস তখন মা-ও পৃথিবী থেকে বিদায় নেন। মাত্র তিন মাস বয়সেই পিতামাতা হারা হয়ে যান আব্দুল লতিফ। আপন বলতে ছিল শুধু একজন খালা। খালার বাড়িতেই বেড়ে উঠতে থাকেন আব্দুল লতিফ। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস- খুব অল্প সময়েই খালাও বিদায় নেন পৃথিবী থেকে। এরপর চার খালাতো বোন তাঁর দায়িত্ব নেন। নেমে পড়েন জীবন সংগ্রামে। খালাতো বোনদের কাছেই বড় হন তিনি। পরবর্তীতে পেশা হিসেবে দিনমজুরের কাজ শুরু করেন। এছাড়াও বিভিন্ন সময় চায়ের দোকানে কাজ করেছেন। নিজেদের থাকার জন্য কোনো পৈতৃক জমি নেই। থাকতেন ভাড়া বাসায়। অভাবের সংসার হলেও চার বোনকে নিয়ে সুখেই ছিলেন। ব্যক্তিগত জীবনে শহীদ আব্দুল লতিফ খুবই সহজ-সরল মানুষ ছিলেন। কেউ কোনো কাজ দিলে খুশিমনে করে দিতেন। ঘটনার বিবরণ ২০২৪-এর জুলাই মাসের কোটা সংস্কার আন্দোলন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলনের মাত্রা তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকে। সরকারি চাকরিতে দলীয়করণের অসৎ উদ্দেশ্যকে সামনে নিয়ে পুনরায় সরকারি চাকুরিতে ৫৬% কোটা চালুর ব্যবস্থা করে। এরই প্রতিবাদে সারা দেশে ছাত্র-জনতা প্রতিবাদে ফেটে পড়ে। শান্তিপূর্ণ এ আন্দোলন দমনে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরাসহ স্বৈরাচার সরকারের পুলিশ বাহিনী নেমে পড়ে। ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর হামলে পড়ে। ছাত্রলীগের হাত থেকে রেহায় পায়নি মেয়েরাও। তাদের ওপর নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়। রক্তাক্ত হয় টিএসসি। রাজপথ রঞ্জিত হয় শিক্ষার্থীদের রক্তে। ১৬ই জুলাই এসব বর্বর হামলার প্রতিবাদে আন্দোলন তীব্র হতে থাকে। এদিন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ পুলিশের গুলিতে শহীদ হলে সারা দেশে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন দেশে কর্মরত প্রবাসী বাংলাদেশীরাও মিছিল ও মানববন্ধন করে। রূপ নেয় গণ আন্দোলনে। এরই ধারাবাহিকতায় ৪ঠা আগস্ট সকাল থেকেই সিরাজগঞ্জ শহরের বিভিন্ন জায়গায় গণআন্দোলন শুরু হয়। সকাল ১১ টা থেকে শুরু হওয়া মিছিলটি সিরাজগঞ্জ শহর থেকে ইলিয়ট ব্রিজের কাছে পৌঁছালে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা মিছিলে গুলি ছুড়ে। যুবলীগ নেতা মূসার শর্টগান থেকে ছোড়া পরপর ২টি গুলি এসে লাগে বাম পাজরে ও গলার বাম পাশে। ঘটনাস্থলেই শাহাদাত বরণ করেন এই জীবন সংগ্রামী সৈনিক। শহীদের নিথর দেহ পড়ে থাকে ব্রিজের ওপর। আব্দুল লতিফের প্রতিবেশী হাসিনুর রশিদ ব্রিজের পূর্ব পাশ দিয়ে নামার সময় কারো ডাকে পেছনে তাকালে আব্দুল লতিফকে পড়ে থাকতে দেখেন। আন্দোলনকারীদের কয়েকজন তাকে রিক্সায় করে নর্থ বেঙ্গল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিল- তখন শহীদের দুই হাত দুপাশে ছড়িয়ে ছিল। টুপ টুপ করে ঝরছিল তাজা রক্ত। যেন ২৪-এর নির্মম গণহত্যার সাক্ষী দিচ্ছিল। হসপিটালে পৌঁছালে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেছিলেন। শহীদের এক বোন বলেন, ‘‘মা-বাবা মারা যাওয়ার পর আমরাই তাকে কোলেপিঠে করে বড়ো করেছি। আমাদের কোনো ছেলেমেয়ে নেই। সে-ই ছিল আমাদের সম্বল, বেঁচে থাকার আশা। সেই ভাইটি আজ দেশের জন্য জীবন দিয়েছে। তাকে তো আর ফিরে পাবো না। ভাই বলে কাউকে ডাকতে পারবো না। ঘুমাতে গেলে মনে হয় আমার পাশে এসে ভাই ডাকছে। খেতে গেলে মনে হয় আমার পাশে বসে খাচ্ছে। স্বৈরাচার কি পারবে আমার ভাইকে ফিরিয়ে দিতে? সবকিছু হারা আমার ভাই দেশেরে জন্য জীবন বিলিয়ে দিলো।’’ বোনদের এই আহাজারি, হৃদয়ের রক্তক্ষরণ যেন আকাশ-বাতাসকে ভারী করে তোলে। শহীদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি নাম : মোঃ আব্দুল লতিফ জন্ম তারিখ : ১২/০১/১৯৭৮ জন্মস্থান : গয়লা, সিরাজগঞ্জ সদর পেশা : দিনমজুর আহত হবার স্থান : এলিয়ট ব্রিজ শহীদ হবার স্থান : এলিয়ট ব্রিজ আঘাতের ধরন : গুলি বিদ্ধ আক্রমণকারী : যুবলীগ ক্যাডার মূসা আহত হবার তারিখ ও সময় : ০৪/০৮/২০২৪; সকাল ১১:৩০ মিনিট শহীদ হবার তারিখ ও সময় : ০৪/০৮/২০২৪; সকাল ১১:৩০ মিনিট শহীদের কবরস্থান (জিপিএস লোকেশনসহ) : মালশা পাড়া কবরস্থান (২৪ক্ক২৭'০৫.৬"ঘ ৮৯ক্ক৪২'৩২.৪"ঊ) বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: গয়লা, ইউনিয়ন: সিরাজগঞ্জ সদর, থানা: সিরাজগঞ্জ সদর, জেলা: সিরাজগঞ্জ পরিবারসংক্রান্ত তথ্য পিতা : মৃত আসু মুন্সি মাতা : মৃত বেদেনা মাসিক আয় : ১২,০০০/- (চার খালাতো বোনের সম্মিলিত আয়) আয়ের উৎস : বাসা বাড়িতে কাজ পরিবারের বর্তমান সদস্য সংখ্যা : ৪ জন পরিবারের অন্যান্য সদস্য (খালাতো বোন) সালেহা বেগম, বয়স ও পেশা : ৪৭ বছর; অন্যের বাড়িতে কাজ নাসিমা, বয়স ও পেশা: ৫০ বছর; অন্যের বাড়িতে কাজ শেফালী, বয়স ও পেশা: ৫৫ বছর; অন্যের বাড়িতে কাজ জ্যোৎস্না, বয়স ও পেশা: ৬০ বছর; অন্যের বাড়িতে কাজ পরামর্শ ১. গবাদি পশু অথবা হাঁস-মুরগি পালনের ব্যবস্থা করে আয়ের উৎস তৈরি করা ২. জায়গা ক্রয় করে ঘর তৈরি করে দেওয়া