জন্ম তারিখ: ৩০ আগস্ট, ১৯৮৪
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৪ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: রাজশাহী
পেশা : গ্রাম্য চিকিৎসক (ডেন্টাল), শাহাদাতের স্থান : এস এস রোড, সিরাজগঞ্জ শহর (মাহবুব কমপ্লেক্স)
তোমার সাথে আর দেখা হবে কিনা জানি না। হায়াত-মউত সব আল্লাহর হাতে। আমার মেয়েটিকে দেখে রেখো ’ শহীদ সোহানুর রহমান রঞ্জু খান সিরাজগঞ্জ পৌরসভার মাছুমপুর ইউনিয়নের দক্ষিণপাড়ার বাসিন্দা ছিলেন। পেশায় ছিলেন একজন ডেন্টিস্ট। কর্মজীবনের শুরুতে ঢাকায় একটি ডেন্টাল মেডিকেল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পরবর্তীতে সিরাজগঞ্জ নিউমার্কেট খান ডেন্টাল নামে আরেকটি নতুন ডেন্টাল ক্লিনিক তৈরি করেন। স্ত্রী ও কন্যা সন্তান নিয়ে ভালোই ছিলেন। ছোটোবেলা থেকেই ছিলেন খুবই নম্র-ভদ্র। মানুষকে সাহায্য করতে পারলেই যেন তৃপ্তি পেতেন। নিজের সাধ্যমতো যেকোনো প্রয়োজনে মানুষের পাশে দাঁড়াতেন। শহীদের স্ত্রী ও ২ বছরের একটি মেয়ে আছে। বর্তমানে তাদের কোনো আয়ের উৎস নেই। ঘটনার বিবরণ ৪ আগস্ট ২০২৪ তারিখ সকাল ১০ টায় শহীদ সোহানুর রহমান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে মিছিলে যোগ দেন। মিছিলে যাওয়ার আগে স্ত্রীকে বলেন, ‘তোমার সাথে আর দেখা হবে কি না জানি না। হায়াত-মউত সব আল্লাহর হাতে। আমার মেয়েটিকে দেখে রেখো। শহীদরা হয়তো আগে থেকেই বুঝতে পারেন তিনি শহীদ হবেন। সেদিন সিরাজগঞ্জ এস.এস. রোডে মিছিল শুরু হয়। আস্তে আস্তে জনসমাগম বাড়তে থাকে। সকাল ১১ টার দিকে মাহবুব শপিং কমপ্লেক্সের সামনে এসে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায় আওয়ামী ও যুবলীগের সন্ত্রাসী বাহিনী। তাদের ছোড়া একটি গুলি শহীদ সোহানুর রহমান রঞ্জুর ডান চোখে লাগে। গুলি মাথার পেছন দিক দিয়ে বেরিয়ে যায়। শহীদের নিথর দেহ পড়ে থাকে রাস্তায়। পিচঢালা পথ রঞ্জিত হয় লাল রক্তে। পরে তাকে হসপিটালে নিলে ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন। তাঁর হত্যাকারী ছিল সিরাজগঞ্জ আওয়ামী ও যুবলীগের নেতা এনামুল, রিজভী ও মূসা। শহীদের স্ত্রী বলেন, ‘‘উনার শেষ কথাগুলো বারবার মনে পড়ছে। মিছিলে যাওয়ার আগে তিনি মেয়েকে দেখে রাখতে বলেছিলেন। আজ ১৫-১৬ দিন হয়ে গেল উনি নেই। আমি জীবন্ত লাশের মতো দিন পার করছি। সবচেয়ে বেশি কান্না আসে যখন আমার মেয়েটি ওর বাবার শার্ট বুকে জড়িয়ে কান্না করে। আমাকে জিজ্ঞেস করে, ‘আব্বু কখন আসবে? তখন আমার হৃদয় ফেটে যায়।’ আমার মেয়েটা তার বাবাকে আর কখনো বাবা বলে ডাকতে পারবে না। দেখতে পারবে না তার বাবাকে। বাইরে থেকে এসে মেয়েকে বুকে জড়িয়ে নেবে না কেউ।” কথাগুলো বলার সময় অবিরত অশ্রু গড়িয়ে পড়ছিল শহীদের স্ত্রীর চোখ থেকে। ছোট্ট মেয়েটি বাবার স্নেহ থেকে বঞ্চিত হলো চিরতরে। রোজার বাবার সাথে আর হাত ধরে হাঁটা হবে না। আওয়ামী সন্ত্রাসীরা গোছানো সুন্দর একটি পরিবারকে ধ্বংস করে দিল। এমন হাজারো পরিবারকে তারা ধ্বংস করেছে। শহীদ সম্পর্কে তাঁর ভাগিনা বলেন, “আমার মামা একজন দানশীল ব্যক্তি ছিলেন। অনেক সময় ভাইবোনদের থেকে টাকা নিয়ে গরিব মানুষদের সহযোগিতা করতেন। এলাকার মানুষের যে-কোনো বিপদে তিনি সবার আগে এগিয়ে যেতেন। আমার সাথে তার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল।” শহীদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি নাম : মো: সোহানুর রহমান রঞ্জু খান জন্ম তারিখ : ৩০/০৮/১৯৮৪ জন্মস্থান : মাসুমপুর, সিরাজগঞ্জ পেশা : গ্রাম্য চিকিৎসক (ডেন্টাল) প্রতিষ্ঠান : খান ডেন্টাল আহত হবার স্থান : এস এস রোড, সিরাজগঞ্জ শহর (মাহবুব কমপ্লেক্স) শহীদ হবার স্থান : এস এস রোড, সিরাজগঞ্জ শহর (মাহবুব কমপ্লেক্স) আঘাতের ধরন : চোখে গুলি বিদ্ধ আক্রমণকারী : আওয়ামী সন্ত্রাসী এনামুল, রিজভ্,ি মূসা আহত হবার তারিখ ও সময় : ০৪/০৮/২০২৪; দুপুর ১২.০০ টা শহীদ হবার তারিখ ও সময় : ০৪/০৮/২০২৪; দুপুর ১২.০৫ টা শহীদের কবরস্থান (জিপিএস লোকেশনসহ) : কান্দারপাড়া কবরস্থান (২৪ক্ক২৬'৩০.৩"ঘ ৮৯ক্ক৪১'২৯.০"ঊ) বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম : মাসুমপুর, ইউনিয়ন : সিরাজগঞ্জ পৌরসভা থানা : সিরাজগঞ্জ সদর, জেলা : সিরাজগঞ্জ পরিবারসংক্রান্ত তথ্য পিতা : মৃত মো: মাজেদ আলী খান মাতা : মৃত শামসুন নাহার স্ত্রী : মৌসুমী খাতুন বয়স ও পেশা : ৩২, গৃহিণী মাসিক আয় : নেই শহীদের সাথে সম্পর্ক : স্ত্রী পরিবারের বর্তমান সদস্য সংখ্যা : ২ জন পরিবারের অন্যান্য সদস্য মেয়ে : সুমাইয়া খান রোজা, বয়স: ২ বছর প্রস্তাবনা ১. স্ত্রীর চাকরির ব্যবস্থা করা ২. ডেন্টাল ক্লিনিকটি যেকোনো মাধ্যমে চালু করার ব্যবস্থা করা