Image of মো: সুজন মাহমুদ

নাম: মো: সুজন মাহমুদ

জন্ম তারিখ: ৩০ জুন, ১৯৯১

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: রাজশাহী

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি বিডিতে চাকুরী করতেন, শাহাদাতের স্থান : মিরপুর ৬ নাম্বার থানার সামনে।

শহীদের জীবনী

মৃত্যুর এক ঘন্টা আগে তার সাথে কথা হয়েছিল আমার। সে নিজেই ফোন করেছিল। হয়তো এজন্য যে শেষ কথাগুলো বলার জন্য। ভাবতেও পারিনি ছোট ভাইয়ের সাথে আর কখনো কথা হবে না ” - শহীদ সুজনের বড় বোন শহীদ মো: সুজন মাহমুদ সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর ইউনিয়নের রূপপুরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৯৯১ সালের ৩০ জুন। পিতা: মো: আব্দুর রশিদ (মৃত) এবং মাতা: মোসা: শামছুন্নাহার (গৃহিণী)। শহীদ সুজন মাহমুদ সিরাজগঞ্জ শহর থেকে প্রায় ৪৭ কিলোমিটার দূরে শাহজাদপুর উপজেলার এক প্রত্যন্ত গ্রামে বেড়ে ওঠা মেধাবী তরুণ। ঢাকার একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে কিছুদিন চাকুরী করার পর নিজস্ব ব্যবসা শুরু করেছিলেন। মিরপুর ১০ নম্বরে থাকতেন। নিজের খরচ নিজেই চালাতেন। স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলাফলগুলোতে তিনি মেধার স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম হন। মাত্র দেড় মাস আগে তিনি বাবাকে হারিয়েছিলেন। সেপ্টেম্বর মাসের ২৭ তারিখে বিয়ের আসরে বসার কথা ছিল তার। গত ঈদের ছুটিতে বাসায় এসে মা ও বোনের সাথে কাটিয়েছিলেন কিছু দিন। কিন্তু মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মায়ের সাথে তার আর দেখা করা হয়নি। শহীদ মো: সুজন মাহমুদ রাজধানী ঢাকায় ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি বিডিতে কর্মরত ছিলেন। এটি ছিল তার ব্যক্তিগত ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠান থেকে ইলেকট্রনিক্স পণ্য অনলাইনে বিক্রি করতেন। শহীদ সুজন মাহমুদ দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জনের দিন অর্থাৎ ৫ আগস্ট বিজয় মিছিলে অংশ নেন। বিজয় মিছিলটি মিরপুর ১০ নাম্বার থেকে মিরপুর ছয় নাম্বারের দিকে যাওয়ার সময় আনুমানিক বিকাল চারটা ৩০মিনিটে ৬ নাম্বার থানা থেকে পুলিশ এলোপাথাড়ি গুলি ছুড়তে থাকে। তখন মানুষজন বিভিন্ন দিকে ছোটাছুটি শুরু করে ঠিক তখনই একটি গুলি সুজন মাহমুদের ঘাড়ে বিদ্ধ হয়। প্রথমে তাকে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। পরবর্তীতে তাকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নেওয়া হলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। হাবিবুল্লাহ ইয়েমেনি মাজার কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। শাহাদতের প্রেক্ষাপট ৫ আগস্ট ২০২৪ বাংলাদেশীদের জীবনে এক বর্ণিল দিন। এই দিন দুর্বিষহ এক জীবন যন্ত্রণা থেকে তারা সামগ্রিকভাবে মুক্তি লাভ করে। দীর্ঘ দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠী জগদ্দল পাথরের মত এ জাতির বুকের ওপর চেপে বসেছিল। দেশের সকল প্রতিষ্ঠানের উপর অবৈধ কর্তৃত্ব স্থাপন করে চরম পর্যায়ের স্বৈরতন্ত্র কায়েম করেছিল পতিত খুনি হাসিনা সরকার। মীমাংসিত ইস্যু কোটা নীতি সংস্কারের নামে তথাকথিত মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনীদের পুনর্বাসনের নীল নকশা বাস্তবায়নের কাজ শুরু করলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তা প্রতিহত করতে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। আন্দোলন সংগ্রামে পুরো জুলাই মাসে বাংলাদেশ অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। জুলাই থেকে আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বাংলাদেশের ইতিহাসে এক কালো অধ্যায়ের সূচনা করে পতিত হাসিনা সরকার। শিক্ষার্থীদের নায্য দাবি মেনে না নিয়ে তাদের উপর নির্বিচারে গুলি চালানোর নির্দেশ দেয় পুলিশকে। ইন্টারনেট বন্ধ করে দেশের মানুষকে হত্যার এক নারকীয় তাণ্ডবে মেতে ওঠে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনগুলো, সাথে যুক্ত হয় পুলিশ বাহিনী। আগস্ট মাসে আন্দোলনের মাত্রা ব্যাপকভাবে বাড়তে থাকে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাথে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় যুক্ত হয়। ফলে আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে উপনীত হয়। শেষ পর্যন্ত ফ্যাসিস্ট মাদার অফ মাফিয়া হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয় ৫ই আগস্ট ২০২৪। সকাল থেকেই আন্দোলনে যোগ দেয়ার প্রস্তুতি নিতে থাকেন শহীদ সুজন আহমেদ। সেদিনের পরিস্থিতি ছিল খুবই ভয়াবহ। কোথাও কোথাও সংঘর্ষও হচ্ছিল। পরিস্থিতি ছিল থমথমে। বিকাল সাড়ে চারটার দিকে মিরপুর-৬ ছাত্র জনতার বিজয় মিছিলের উপর হঠাৎ গুলি চালানো শুরু করে পুলিশ। একটি গুলি শহীদ সুজন মাহমুদের সামনে থাকা ব্যক্তির কান স্পর্শ করে সোজা তার ঘাড়ে বিদ্ধ হয়। সাথে সাথে তিনি শাহাদত বরণ করেন। শহীদের পরিবার সংক্রান্ত বিশেষ তথ্য শহীদ মোহাম্মদ সুজন মাহমুদ মোটামুটি সচ্ছল পরিবারের সন্তান। তিনি ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি বিডিতে চাকুরীরত অবস্থায় ছিলেন। বৃদ্ধ মা, বড় দুই ভাই ও বড় এক বোন রয়েছে তার। ভাই ও বোনেরা বিবাহিত এবং মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত। ব্যক্তিগত প্রোফাইল নাম : মো: সুজন মাহমুদ পিতার নাম : মো: আব্দুর রশিদ (মৃত) মাতার নাম : শামছুন্নাহার (৬৫) জন্ম তারিখ : ৩০ জুন, ১৯৯১ স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: রুপপুর, ইউনিয়ন: শাহজাদপুর, থানা: শাহজাদপুর জেলা: সিরাজগঞ্জ বর্তমান ঠিকানা : রুপপুর ২ নং ওয়ার্ড, শাহজাদপুর, সিরাজগঞ্জ আহত হওয়ার স্থান : মিরপুর ৬ নাম্বার থানার সামনে আহত হওয়ার সময় কাল : ৫ আগস্ট, ২০২৪, বিকাল ৪টা ৩০ মিনিট শহীদ হওয়ার সময় : ৫ আগস্ট, ২০২৪, বিকাল ৪টা ৩০ মিনিট। মিরপুর-৬ থানার সামনে যাদের আঘাতে শহীদ : পুলিশের গুলিতে নিহত পরামর্শ ১. শহীদ পরিবারের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা দরকার

শহীদ সম্পকির্ত কুরআনের আয়াত

যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়, তাদের জন্য রয়েছে মহান পুরস্কার। (সুরা মুহাম্মদ ৪৭:৪)

শহীদ সম্পকির্ত হাদিস

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “শহীদদের আত্মা সবুজ পাখির পেটে থাকে।” (সহীহ মুসলিম ১৮৮৭)

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image
Image
Image
Image
Image
Image
Image
Image
Image
Image
Image
শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo