Image of হাফেজ মো: সিয়াম হোসেন

নাম: হাফেজ মো: সিয়াম হোসেন

জন্ম তারিখ: ৪ মার্চ, ২০০৫

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৪ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: রাজশাহী

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : শিক্ষার্থী, পড়াশোনার পাশাপাশি মসজিদের মোয়াজ্জিন ছিলেন, শাহাদাতের স্থান : এনায়েতপুর থানার সামনে, সিরাজগঞ্জ

শহীদের জীবনী

“ আমার এত সুন্দর সোনার নাতিকে তারা মেরে ফেলল ” শহীদ মো: সিয়াম হোসেন সিরাজগঞ্জ জেলার এনায়েতপুরের গোপরেখি দক্ষিণ, গোমুখিতে ৪ মার্চ ২০০৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা: মো: কুদ্দুছ আলী (৬২), মাতা: মোছা: লাকী খাতুন (৫০)। শহীদ মো: সিয়াম ছিলেন অবিবাহিত। তিনি এনায়েতপুর ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার নবম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। কোরআনের হাফেজ শহীদ সিয়াম পড়াশোনার পাশাপাশি মসজিদের মোয়াজ্জিন ছিলেন। মসজিদ থেকে যা যৎসামান্য বেতন পেতেন সেখান থেকে পরিবারকেও সহায়তা করতেন। বাবা-মায়ের খুব আদরের সন্তান মোঃ সিয়াম যে কারো সাথে সহজে মিশে যেতে পারতেন। আপন করে নিতে পারতেন যে কাউকে। বাবা মায়ের আদর্শ সন্তান সিয়াম বাবা-মাকেও খুব ভালোবাসতেন এবং তাদের আদর যত্ন করতেন। তিনি খুব সুমধুর কন্ঠে তেলাওয়াত করতেন। তার কোরআনের তেলাওয়াত শুনে যে কেউ খুশি হতেন। আবার শিক্ষার্থী হিসেবেও ছিলেন খুবই মেধাবী। তার আজানের সুর ছিল চমৎকার। তার সুললিত কন্ঠে প্রতিদিন পাঁচবার মসজিদের মিনার থেকে ভেসে আসতো আজান। তার বড় ভাই রকিবুল হাসান টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার। সকলের অতি প্রিয় নম্র-ভদ্র শহীদ সিয়াম হোসেন চার আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অন্যান্য ছাত্র-জনতার সাথে অংশগ্রহণ করেন। এনায়েতপুর থানার সামনে গুলিবিদ্ধ হন এবং শাহাদাতের অমিয় সুধা পান করেন। শাহাদতের প্রেক্ষাপট অবৈধ দখলদার ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার বাংলাদেশকে কতটা বিভীষিকাময় রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল সর্বস্তরের জনগণের সম্মিলিত প্রতিরোধ থেকে তার কিছুটা অনুমান করা যায়। কে বা কোন শ্রেণির মানুষ এ আন্দোলনে অংশ নেয়নি তা নির্ণয় করা একটা দুরুহ ব্যাপার। শিক্ষক, কর্মচারী, কর্মকর্তা, মুটে, মজুর, ইমাম, মোয়াজ্জিন, মাওলানা, কৃষক, শ্রমিক থেকে শুরু করে একেবারে সাধারণ মানুষও এ আন্দোলনে যোগদান করেছিল। সকল শ্রেণির মানুষই যেন আওয়ামী দুঃশাসন হতে মুক্তির প্রহর গুনছিল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যেন কাঙ্ক্ষিত সেই মুক্তির বার্তা নিয়ে বাংলার ঘরে ঘরে হাজির হয়। কোনো দ্বিধা ছাড়াই সকল শ্রেণির মানুষ এ আন্দোলনে যুক্ত হয়। তাদের ঘোষিত সকল কর্মসূচিকেই সাদরে গ্রহণ করে। তাইতো চরম প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রত্যেকে এ আন্দোলনে নিজেকে সম্পৃক্ত করে। ৪ আগস্ট নতুন বাংলাদেশের ইতিহাসে এক স্মরণীয় অধ্যায়ের নাম। এদিনই নতুন বাংলাদেশের গতিপথ নির্ধারণ হয়ে গিয়েছিল। সারা বাংলাদেশে মুক্তিকামী মানুষের প্রতিরোধ দখলদার হাসিনা সরকারের ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছিল। এদিন ছাত্র জনতা এক দফা দাবি নিয়ে মাঠে নেমেছিল। সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরের মানুষের সাথে এক সাথে মাঠে নেমেছিলেন শহীদ মো: সিয়াম হোসেন। হয় জালিমের প্রতিরোধ না হয় শাহাদাতের মৃত্যু' এমনই দৃঢ়তা নিয়ে মানুষ রাজপথে নেমে এসেছিল। এনায়েতপুরে সমবেত জনতার সাথে সকাল থেকেই হাসিনার পেটুয়া বাহিনীর সাথে সংঘর্ষ শুরু হয়। বেলা বাড়ার সাথে সাথে সেই সংঘর্ষও বাড়তে থাকে। একের পর এক মানুষ মৃত্যুমুখে ঢলে পড়লেও পিছপা হচ্ছিলেন না কেউ। দুপুর ঠিক একটার দিকে পুলিশের ছোড়া গুলি এসে লাগে শহীদ মোহাম্মদ সিয়াম হোসেনের মাথায়। এ সময় তিনি স্লোগান দিচ্ছিলেন 'জালেমের ঠিকানা বাংলাদেশে হবে না'। স্লোগান দিতে দিতেই তিনি মাটিতে পড়ে যান। আন্দোলনকারীরা তাকে স্থানীয় খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। শাহাদাতের পর বন্ধু ও আত্মীয়-স্বজনের প্রতিক্রিয়া শহীদ মো: সিয়াম হোসেনের মৃত্যু সংবাদে পুরো গ্রামবাসী শোকে বিহবল হয়ে পড়ে। বাবা মায়ের কান্নায় আকাশ ভারী হয়ে ওঠে। আম গাছে ঝুলানো ব্যায়ামের রিংগুলো, নিজ হাতে লাগানো ফুল গাছগুলো আর গোলাপ গাছে ফুটে থাকা কয়েকটি গোলাপ কোরআনের পাখিটির কথা বারবার মনে করে দেয়। মসজিদের মিনার হতে সুললিত কন্ঠে আর কোনোদিনও শহীদ মো: সিয়ামের আজান ভেসে আসবে না তা কোনো মানুষই ভাবতে পারে না। বিশেষ করে শহীদের বাবা-মা। শহীদের নানি রবি খাতুন বলেন, "আমার নাতির মত ছেলে হয় না। সে খুবই নম্র ভদ্র একজন ছেলে। সে ছোটদের স্নেহ করতো ও বড়দের সম্মান করতো, শ্রদ্ধা করত। ছোট শিশুরা সবসময় তার পাশে থাকতো। যেদিন সে আন্দোলনে যায় আমরা ভাবতেও পারিনি যে তার এমন কিছু হবে। হঠাৎ একজন কল দিয়ে বলে সিয়ামের খবর নেন ওর গুলি লেগেছে ও হাসপাতালে আছে। আমরা হাসপাতালে ছুটে যাই। গিয়ে তাকে মৃত অবস্থায় পাই। আমরা এই হত্যার বিচার চাই।" শহীদ সিয়াম হোসেন যেন কোনো গল্পের এক অমর অধ্যায়। তার শাহাদত ও সংগ্রামের কাহিনী মানুষের হৃদয়ে চিরকাল থাকবে। তার অমর স্মৃতি, বাবা মায়ের প্রতি ভালোবাসা, সুললিত কন্ঠে কোরআন তেলাওয়াত আর সুমধুর আযানের ধ্বনি মানুষের মাঝে তাকে জীবন্ত করে রাখবে। শহীদের পরিবার সংক্রান্ত বিশেষ তথ্য শহীদের পিতা মোঃ কুদ্দুস আলী পূর্বে বিদেশে থাকলেও এখন কর্মহীন। শহীদের বড় বোন কনা পারভিন বিবাহিত। তার নিজস্ব কোনো জমিজমা নেই এবং আর্থিকভাবে অসচ্ছল। শহীদের বড় ভাই রাকিবুল হাসান পড়াশোনা শেষ করে ঢাকায় চাকরি করেন। ব্যক্তিগত প্রোফাইল নাম : মো: সিয়াম হোসেন পিতার নাম : মোঃ কুদ্দুছ আলী (৬০) মাতার নাম : মোছা: লাকী খাতুন (৫০) জন্ম তারিখ : ৪ মার্চ ২০০৫ স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: গোপরেখি দক্ষিণ, গোমুখি, ইউনিয়ন: বেতিল, থানা: এনায়েতপুর, জেলা: সিরাজগঞ্জ বর্তমান ঠিকানা : গোপরেখি দক্ষিণ, গোমুখি, এনায়েতপুর, সিরাজগঞ্জ আহত হওয়ার স্থান : এনায়েতপুর থানার সামনে, সিরাজগঞ্জ আহত হওয়ার সময় কাল : ৪ আগস্ট ২০২৪, দুপুর ১টা শহীদ হওয়ার সময় ও স্থান : ৪ আগস্ট ২০২৪, দুপুর: ১টা, এনায়েতপুর, সিরাজগঞ্জ যাদের আঘাতে শহীদ : পুলিশের গুলিতে শহীদ পরিবারের ব্যাপারে করণীয় ১. শহীদের পিতার জন্য কাপড়ের ব্যবসার ব্যবস্থা করে দিলে ভালো হয়

শহীদ সম্পকির্ত কুরআনের আয়াত

তাদের প্রতিদান তাদের রবের কাছে রয়েছে, জান্নাত, যার নিচ দিয়ে নদী প্রবাহিত, তারা সেখানে চিরকাল থাকবে। (সুরা আল-ইমরান ৩:১৪৭)

শহীদ সম্পকির্ত হাদিস

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “শহীদদের আত্মা সবুজ পাখির পেটে থাকে।” (সহীহ মুসলিম ১৮৮৭)

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image
Image
Image
Image
Image
Image
Image
Image
Image
শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo