Image of মো: জিল্লুর সরদার

নাম: মো: জিল্লুর সরদার

জন্ম তারিখ: ৫ নভেম্বর, ১৯৭৯

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৪ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: রাজশাহী

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : দিনমজুর, শাহাদাতের স্থান : বগুড়া, সাতমাথা (ঝাউতলা)

শহীদের জীবনী

“ দুপুর বেলা আমার খুব অস্থির লাগছিল। আমি আমার ছোট ছেলেকে বললাম, ওর খবর নে। আমার ভালো লাগছে না। আমি পাগলের মত ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম। বিকাল চারটার সময় শুনি ওর গুলি লেগেছে। আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই ”-শহীদের মা শহীদ মো: জিল্লুর সরদার বগুড়া জেলার গাবতলী উপজেলার গোড়াদহ গ্রামের উত্তরপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন ১৯৭৯ সালের ৫ নভেম্বর। পিতা: মৃত মুসা সরদার, মাতা: মোছা: গোলঝার বেগম (৬৫) গৃহিণী, স্ত্রীর নাম মোছা: খাদিজা (২৮)। শহীদ জিল্লুর রহমানের নির্দিষ্ট কোনো পেশা ছিল না। শাহাদাতের প্রেক্ষাপট "আমি মিছিলে গেলে দেশটা স্বাধীন হবে" মিছিলে যেতে স্ত্রী আপত্তি জানালে শহীদ জিল্লুর রহমান এমনটাই বলেছিলেন। শহীদের এমন উক্তি প্রমাণ করে দেশটা স্বৈরাচারের নাগপাশে কতটা পিষ্ট হয়েছিল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিটি কর্মসূচিতে নিয়মিত অংশগ্রহণ করতেন শহীদ জিল্লুর রহমান। ৪ আগস্ট সকাল ৯ টায় তিনি বাড়ি থেকে বের হয়ে প্রথমে গাবতলীর মিছিলে অংশগ্রহণ করেন। পরবর্তীতে বগুড়ায় সাতমাথায় এসে শিক্ষার্থীদের সাথে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। জিল্লুর রহমান মিছিলের সামনের দিকে অবস্থান করছিলেন। দুপুর একটার দিকে পুলিশ এলোপাথাড়ি গুলি ছুড়তে থাকে। দুইটার দিকে জিল্লুর রহমান শরীর, মাথা ও পায়ে গুলিবিদ্ধ হন। আহত অবস্থায় তিনি পরিচিত জনের কাছে ফোন করেন এবং হেঁটে তাদের কাছে পৌঁছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। তার পরিচিতজনেরা হাসপাতালে নিয়ে যায় কিন্তু ডাক্তাররা তাকে বগুড়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। সেখানে থেকে তারা তাকে শহীদ জিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে দুপুর তিনটার দিকে তিনি ইন্তেকাল করেন। স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জিল্লুর রহমান সব সময় ছিলেন এক প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর। তাই তিনি ঘরে বসতে থাকতে পারেননি। সন্ত্রাসী আর পুলিশের ভয়কে উপেক্ষা করে যোগ দেন ছাত্র জনতার মিছিলের। স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত করেন রাজপথ। স্লোগান যেন স্বৈরাচারের মসনদকে কাঁপিয়ে দেয়। প্রতিবাদী কন্ঠকে স্তব্ধ করতে নির্বিচারে মানুষকে দিনের আলোতে হত্যা করার মত নারকীয় তান্ডবে মেতে উঠেছিল সরকারের পেটুয়া বাহিনী আর আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। শহীদদের আত্মত্যাগে দেশটা আজ স্বাধীন। সময় এসেছে তাদের যথার্থ মূল্যায়নের। শাহাদাতের পর বন্ধু ও আত্মীয়-স্বজনের প্রতিক্রিয়া শহীদ জিল্লুর রহমান সাড়ে তিন বছরের একটি মেয়ে রেখে গিয়েছেন। ঘর মাতিয়ে রাখা বাকপটু মেয়েটির সকল আবদার পূরণ করতেন তিনি। শাহাদাতের দিন মিছিলে যাবার পূর্বে মেয়েটি তার বাবাকে যেতে নিষেধ করেছিল। বাবার মৃত্যুতে সে বাকরুদ্ধ। মিছিলে যেতে নিষেধ করেছিলেন শহীদ জিল্লুর রহমানের স্ত্রীও। মিছিলে যাবার পূর্বে স্ত্রীকে বলেছিলেন, "আমি গেলে দেশটা স্বাধীন হবে।" স্বামীকে হারিয়ে স্ত্রীও বাকরুদ্ধ। মা গোলঝার বেগম বলেন, "ছেলে যখন বের হয়ে যায় তখন আমাকে জিজ্ঞেস করল, মা কি করছো? আমি তখন কাজ করছিলাম। জিজ্ঞেস করে সে চলে গেল। দুপুরবেলা আমার খুব অস্থির লাগছিল। আমি আমার ছোট ছেলেকে বললাম ওর খবর নে। আমার ভালো লাগছে না। আমি পাগলের মত ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম। বিকাল চারটার সময় শুনি ওর গুলি লেগেছে। আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।" শহীদের পরিবার সংক্রান্ত বিশেষ তথ্য শহীদ মো: জিল্লুর রহমান গাবতলী পৌরসভা মেয়রের সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। পৌর মেয়র সাইফুল ইসলামের সাথে সব সময় থাকতেন। তার নির্দিষ্ট কোনো পেশা ছিল না। মেয়র প্রদেয় টাকা থেকে তাদের সংসার চলত। এখন তাদের আর কোনো আয়ের উৎস নেই। শহীদের মা গোলঝার বেগম অত্যন্ত দরিদ্র। তিনি অন্যের বাসায় কাজ করে দিনাতিপাত করেন। পরিবারটির অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই খারাপ। শহীদ মো: জিল্লুর রহমান সাড়ে তিন বছর বয়স্ক একটা মেয়ে রেখে গিয়েছেন। সেই সাথে রয়েছেন বিধবা স্ত্রী খাদিজা। ব্যক্তিগত প্রোফাইল নাম : মো: জিল্লুর সরদার পিতার নাম : মৃত মুসা সরদার মাতার নাম : মোসা: গোলজার বেগম (৬৫) স্ত্রীর নাম : মোসা: খাদিজা (২৮), মেয়ে: জয়সব (৩.৫ বছর) জন্ম তারিখ : ৫ই নভেম্বর, ১৯৭৯ স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: গোড়দহ, ইউনিয়ন: গাবতলী, থানা: গাবতলী, জেলা: বগুড়া বর্তমান ঠিকানা : গোড়দহ উত্তরপাড়া, ৫নং ওয়ার্ড, গাবতলী, বগুড়া আহত হওয়ার স্থান : সাতমাথা, বগুড়া আহত হওয়ার সময় কাল : ৪ আগস্ট ২০২৪, দুপুর ২টা শহীদ হওয়ার সময় ও স্থান : ৪ আগস্ট ২০২৪, দুপুর ৩টা। বগুড়া, সাতমাথা (ঝাউতলা) যাদের আঘাতে শহীদ : পুলিশের গুলিতে কবরস্থান : গোড়দহ কবরস্থান শহীদ পরিবারের জন্য করণীয় ১. শহীদের মেয়ের জন্য স্কলারশিপের ব্যবস্থা করা ২. শহীদের মা আলাদা থাকেন। তিনি অন্যের বাসায় কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তার অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই খারাপ। তার জন্য আর্থিক অনুদানের ব্যবস্থা করা দরকার ৩. শহীদ জিল্লুর রহমানের বিধবা স্ত্রীর একটি স্থায়ী কর্মসংস্থান দরকার শহীদ জিল্লুর রহমান মৃত্যুর সময় রেখে গেছেন ছোট্ট একটি মেয়ে। তার বাবার অপরাধ ছিল অন্যায় ও শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা। দেশটা স্বাধীন হয়েছে শহীদের রক্তের বিনিময়ে। দেশ মুক্ত হয়েছে স্বৈরাচারের হাত থেকে, কিন্তু ছোট মেয়েটি তার বাবাকে কোনোদিনও ফিরে পাবে না। স্বৈরাচার কি পারবে মেয়েটির বুকে তার বাবাকে ফিরিয়ে দিতে? জয়নব হয়তো স্মৃতির পাতায় খুঁজে ফিরবে বীর পিতা জিল্লুর রহমানকে।তার সংগ্রাম ও আত্মত্যাগ মুক্তিকামী মানুষের মুক্তির দিশা হয়ে থাকবে)

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: জিল্লুর সরদার
Image of মো: জিল্লুর সরদার
Image of মো: জিল্লুর সরদার
Image of মো: জিল্লুর সরদার
Image of মো: জিল্লুর সরদার
Image of মো: জিল্লুর সরদার
Image of মো: জিল্লুর সরদার
Image of মো: জিল্লুর সরদার
Image of মো: জিল্লুর সরদার
Image of মো: জিল্লুর সরদার
Image of মো: জিল্লুর সরদার
Image of মো: জিল্লুর সরদার
Image of মো: জিল্লুর সরদার

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: সোহেল রানা

 সিয়াম শুভ

মো: আবু রায়হান

মো: আব্দুল আলীম

মো: সাকিব আনজুম

মো: নজিবুল সরকার

মো: ইয়াহিয়া আলী

মো: খোকন সরদার

মো. শাখিল আনোয়ার

 মো: সোহানুর রহমান রঞ্জু খান

মো: শাকিল হাসান

মো. মেহেদী হাসান রবিন

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo