Image of মোঃ মাহমুদুল হাসান জয়

নাম: মোঃ মাহমুদুল হাসান জয়

জন্ম তারিখ: ২১ নভেম্বর, ২০০৯

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: ঢাকা_সিটি

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা: স্যানেটারি দোকান কর্মচারী শাহাদাতের স্থান : ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ঢামেক)

শহীদের জীবনী

'ঢাকাসহ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে' শহীদ পরিচিতি বাংলাদেশ আজ ফ্যাসিবাদ মুক্ত। এই মুক্তি আনতে শহীদ হয়েছে কত শত মানুষ। শহীদ মোঃ মাহমুদুল হাসান জয় সে মিছিলেরই একজন। তার বাবা মিজানুর রহমান নাহিদ পেশায় একজন সিএনজি চালক। মা হাসি বেগম পেশায় একজন গার্মেন্টস কর্মী। মাহমুদুল হাসানের গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলায়। তিনি ২০০৯ সালের ২১ নভেম্বর কিশোরগঞ্জ জেলার অন্তর্গত জুলিয়ার চর থানার ফরিদপুর ইউনিয়নের চরপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বয়স যখন ৯ বছর তখন তার বাবা-মায়ের বৈবাহিক বিচ্ছেদ হয়ে যায়। এরপর থেকে তিনি লালিত পালিত হন নানীর কাছে। লেখাপড়া করেন ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত। নানীর কাছে লালিত পালিত মাহমুদুল ছিলেন মামার তত্ত্বাবধানে। মায়ের দুঃখ লাঘবের জন্য তিনি কর্মজীবনে প্রবেশ করেন। যোগ দেন একটি সেনেটারি দোকানে। মাসের শেষে বেতনের পুরো টাকা তিনি তুলে দিতেন মা ও নানীর হাতে। মাহমুদুল হাসান ছাত্র জীবনে ছিলেন মেধাবী। ঢাকাসহ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে: ৫ আগস্ট ছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার কর্মসূচী লং মার্চ টু ঢাকা; যার উদ্দেশ্য ছিল গণভবন ঘেরাও করা। ঢাকার দিকে সারাদেশ থেকে আসতে থাকে জনতা। কিশোরগঞ্জ জেলার কুলিয়ার চর থেকেও আসে জনস্রোত। ছাত্র জনতা মিছিলসহ যাত্রাবাড়ী পৌঁছে। দুপুরের দিকে হাসিনা সরকারের ঘাতক পুলিশ বাহিনী নিরীহ ছাত্র-জনতার মিছিলে গুলি করে। মাহমুদুল মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়; পরে হাসপাতালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ঘটনার বিবরন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে উত্তপ্ত বাংলাদেশ। “লং মার্চ টু ঢাকা” কর্মসূচী প্রথমে ঘোষণা করা হয়েছিল ৬ আগস্ট। কিন্তু স্বৈরশাসক ফ্যাসিস্ট শাসক হাসিনা ৪ আগস্ট সারাদেশে শতাধিক মানুষ খুন করলে আন্দোলনকারীরা বাধ্য হয়ে তাদের কর্মসূচী একদিন এগিয়ে এনে ৫ আগস্ট নির্ধারণ করে। কিশোরগঞ্জ জেলার ভুলিয়ারচর থেকে আসে লং মার্চ মুখী মিছিল। আর এই মিছিলেই বন্ধুদের সাথে ঢাকায় আসেন মাহমুদুল হাসান জয়। তাদের মিছিল যাত্রাবাড়ি কাজলায় অবস্থান নেয়। পরিকল্পনা ছিল তারা সেখান থেকে গণভবন ঘেরাও করতে যাবে। কিন্তু যাত্রাবাড়ির পুলিশ তাদের অবরুদ্ধ করে রাখে। দুপুর ১ টার সময় ঘাতক পুলিশ বাহিনী ছাত্র-জনতার মিছিল উদ্দেশ্য করে আক্রমণ করে। মুহুর্মুহু গুলি ছুঁড়তে থাকে আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে। মাথায় গুলিবিদ্ধ হয় মাহমুদুল। গুলিতে তার মাথার মগজ বের হয়ে যায়। যাত্রাবাড়িতে আসার আগেও আন্দোলনে প্রায়ই যেতেন মাহমুদুল। তার সঙ্গী ছিল মোরসালিন আহমেদ আলিফ। জয়ের শাহাদাতের দিনও আলিফ সাথে ছিলেন। গুলিবিদ্ধ মাহমুদকে আলিফ নিয়ে যান নিকটস্থ মদিনা হাসপাতালে। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে চিকিৎসকদের পরামর্শে দ্রুত নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা মেডিকেলে; সেখানে তার রক্তের প্রয়োজন পড়লে তাকে দেওয়া হয় এক ব্যাগ রক্ত। কিন্তু রক্ত দেয়ার সাথে সাথে তা জয়ের নাক, মুখ ও কান দিয়ে বের হয়ে যায়। অবস্থার অবনতি হতে থাকে। অবশেষে বেলা ৩ টায় হাসপাতালেই মাহমুদুল হাসানের মৃত্যু হয়। রেখে যান একমাত্র বোন মাহমুদা আক্তার চম্পা, মা, বাবা ও আত্মীয়-স্বজন আর বন্ধু বান্ধব। তাকে শুকুশি কবরস্থানে দাফন করা হয়। স্বজনদের অনুভূতি শহীদের নানী সাকেরা বেগম অশ্রুসিক্ত নয়নে রুদ্ধ কণ্ঠে বলেন, “একমাত্র নাতী হিসেবে জয়কে খুবই ভালোবাসতাম। তার বাবা মা আলাদা হওয়ায় সে খুব দুঃখী মানুষ ছিল। লেখাপড়া বেশিদূর করতে পারেনি। কিন্তু ভালো মানুষ ছিল।” তার খুব কাছের বন্ধু বলেন, “মাহমুদুল খুব ভালো ছাত্র ছিল। ভালো ছাত্র হওয়ায় সবাই তাকে ভালোবাসতো ও সকলের প্রিয় ছিল। লেখাপড়া না করলেও রাজনীতি ও সমাজ সম্পর্কে সে সচেতন ছিল।” শহীদের বন্ধুর অনুভূতি: শহীদ জয়ের নিত্যদিনের সঙ্গী ছিল বন্ধু আলিফ। ৫ আগস্ট বন্ধু আলিফের সাথেই ঢাকায় আসেন মাহমুদ। তিনি বলেন,“আমার বন্ধু মাহমুদ খুব ভালো মানুষ ছিল। মেধাবী ছিল। দারিদ্রতার কারণে পড়ালেখা করতে পারেনি। বাপ মা আলাদা হওয়ায় ঠিকমতো সার্পোটও পায়নি। সে খুব মিশুক ছিল। সে খুব খেলাধুলা পছন্দ করতো। আমরা একসাথে জুলাই আন্দোলন করেছি। আহত হওয়ার পর আমি তাকে হাসপাতালে নিয়েছি। আমার বন্ধুকে যারা হত্যা করেছে আমি তাদের বিচার চাই।” পারিবারিক অবস্থা বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হয়েছে। মা গার্মেন্টস কর্মী। বাবা সি এন জি চালক। মা দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন। শহীদ জয় স্যানেটারি দোকানে কাজ করতেন। তিনি ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। এক নজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্য নাম : মো: মাহমুদুল হাসান জয় জন্ম : ২১-১১-২০০৯ পিতা : মো: মিজানুর রহমান নাহিদ মাতা : হাসি বেগম পেশা : স্যানেটারি দোকান কর্মচারী শিক্ষাগত যোগ্যতা : ৮ম শ্রেণি স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: চরপাড়া, ইউনিয়ন: ফরিদপুর, থানা: কুলিয়ার চর, জেলা: কিশোরগঞ্জ বর্তমান ঠিকানা : বাসা: ৬০৮/১ ওয়ার্ড ৬৬, ডগাইর পূর্বপাড়া, ডেমরা, ঢাকা শাহাদাত : ৫ আগস্ট ২০২৪, দিবাগত রাত ৩ টা আহত হওয়ার সময় : ৫ আগস্ট ২০২৪, দুপুর ১ টা আক্রমণকারী : স্বৈরাচারী সরকারের যাত্রাবাড়ী থানার ঘাতক পুলিশ বাহিনী গুলিবিদ্ধ হন : মাথায় কবরস্থান : শুকুশি কবরস্থান পরিবারের সদস্য : ১ বোন, মা, বাবা প্রস্তাবনা : ১. শহীদের মা ও নানীকে এককালীন বা মাসিক ভাতার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। : ২. বোনের লেখাপড়া সহ যাবতীয় খরচ বহন করা যেতে পারে। : ৩. তার স্মৃতি রক্ষার্থে তাদের এলাকার স্কুলটির নাম তার নামে নামকরণ করা যেতে পারে।

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মোঃ মাহমুদুল হাসান জয়
Image of মোঃ মাহমুদুল হাসান জয়
Image of মোঃ মাহমুদুল হাসান জয়
Image of মোঃ মাহমুদুল হাসান জয়
Image of মোঃ মাহমুদুল হাসান জয়
Image of মোঃ মাহমুদুল হাসান জয়
Image of মোঃ মাহমুদুল হাসান জয়
Image of মোঃ মাহমুদুল হাসান জয়
Image of মোঃ মাহমুদুল হাসান জয়
Image of মোঃ মাহমুদুল হাসান জয়

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

আকরাম খান রাব্বি

মো: নাঈম

মোঃ আব্দুল্লাহ কবির

বাবুল হাওলাদার

মারুফ হোসেন

মাসুদুর রহমান জনি

 জোবাইদ হোসেন ইমন

রিদোয়ান শরীফ রিয়াদ (জয়)

মো: নাদিম

মো: মনসুর মিয়া

মো: জোবায়ের বেপারী

মো: সোহাগ

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo