জন্ম তারিখ: ১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৪
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: রাজশাহী
পেশা : চাকুরী, (বেসরকারি), শাহাদাতের স্থান : যাত্রাবাড়ী গোল চত্বর
”আজকে স্বৈরাচার পতন হবে ইনশাল্লাহ। আমাদের দেশটা স্বাধীন হবে। আজ থেকে আমরা স্বাধীন, আমরা মুক্ত ”-মোবাইলে রেকর্ড করা ভিডিওতে শহীদ সোহেল রানা শহীদ মোহাম্মদ সোহেল রানা ১৯৯৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি বগুড়ার নন্দীগ্রামের ভুষ্কুর মাদ্রাসা পাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। পিতা ফেরদৌস রহমান (৬২) কৃষি কাজ করেন এবং মাতা মাবিয়া বিবি (৬০) গৃহিণী। তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্বপালন করতেন। তার মালিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের স্টেশনারি মালামাল সাপ্লাইয়ের কন্ট্রাক্ট নিতেন এবং তিনি সেই মালামাল সাপ্লাই করতেন। সন্তানসম্ভবা স্ত্রী শাম্মী আক্তার (২০) বাপের বাড়িতে থাকেন। ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ী থানার পেছনের দিকে সে বিজয় মিছিলে অংশগ্রহণ করেন। দুপুর পৌনে তিনটার দিকে পুলিশের ছোড়া গুলি তার বুকে বিদ্ধ হয়। স্থানীয় ছাত্র জনতা তাকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। শাহাদাতের প্রেক্ষাপট ছাত্রদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহীদ সোহেল রানা নিয়মিত যোগদান করতেন। ৫ আগস্ট খুনি হাসিনা হেলিকপ্টার যোগে পালিয়ে গেলে মানুষদের মধ্যে আনন্দের বাঁধভাঙ্গা জোয়ার নেমে আসে। সারা দেশব্যাপী আনন্দ মিছিল বের হয়। শহীদ সোহেল রানা যাত্রাবাড়ী থানার পেছনের বিজয় মিছিলে অংশগ্রহণ করেন। পুলিশ ২টা ৪৫ মিনিটে উক্ত আনন্দ মিছিলে গুলিবর্ষণ শুরু করে। ঘটনাস্থলেই সোহেল বুকে গুলিবিদ্ধ হন। স্থানীয় ছাত্র জনতা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে নিয়ে গেলে ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সোহেল রানার বড় ভাই মোহাম্মদ শিহাব উদ্দিন সোহেল রানার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হন। বিকাল তিনটায় মোবাইল ফোনে অপরিচিত একজন মানুষ বলেন, আমি ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে বলছি, আপনার ভাই তো গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গিয়েছে, আপনারা এসে লাশ নিয়ে যান। পরবর্তীতে তার আত্মীয়-স্বজন গিয়ে তার লাশ নিয়ে আসে এবং তাকে দাফন করে। শহীদের মৃত্যুর পর বন্ধু ও আত্মীয়-স্বজনের প্রতিক্রিয়া শহীদের বড় ভাই শিহাব উদ্দিন এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ”আন্দোলনের শুরু থেকেই ভাই আমার বলতো এই সরকার টিকবে না। আমি ওকে না করতাম আন্দোলনে যেতে। সে বলতো আমার বাড়ির মালিক ৭৪ বছর বয়সের এক মহিলা। সে তার সন্তানকে নিয়ে আন্দোলনে অংশ নিচ্ছে সুতরাং আমার বাসায় বসে থাকা ঠিক হবে না। আমরা দুই ভাই বন্ধুর মত ছিলাম। ভাইয়ের সাথে আমি ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলতাম। ফোন দিলেই বুঝতে পারত আমার কখন টাকার দরকার। আমার যখন যা দরকার তাই দিত। আমি বড় হওয়া সত্ত্বেও তার কাছ থেকে টাকা চাইতে আমার লজ্জা করত না। আমার অজান্তে সে আমার মেয়েকে ও আমার স্ত্রীকে টাকা দিত। সর্বশেষ কুরবানীর ঈদে এসে আমার মেয়েকে একটা সাইকেল কিনে দিয়েছে। সোহেলসহ যারা দেশের জন্য তাদের জীবনকে উৎসর্গ করেছে আমি তাদের রুহের মাগফেরাত কামনা করি। স্থানীয় স্কুল শিক্ষক মোঃ আব্দুল হান্নান বলেন, ”সে ছোটকাল থেকে আমাদের কাছে মানুষ হয়েছে। আমরা তাকে অত্যন্ত ভালো হিসেবে জানি এবং চিনি। শহীদ সোহেল রানা ছোট সময় থেকে খুব নম্র ভদ্র একটা ছেলে। বড়দের শ্রদ্ধা করতো আর ছোটদের আদর করতো। এই ছেলেটা ছিল এই পরিবারের একটা রত্ন। সে সবার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখত। এই ছেলেটার শূন্যস্থান পূরণ হবার নয়। শহীদ পরিবারের বিশেষ তথ্য শহীদ সোহেল রানার বাবা পেশায় একজন দিনমজুর ও কৃষক, মা গৃহিণী। বাড়িতে তারা বড় ভাই ও বড় ভাইয়ের স্ত্রীর একসাথে থাকেন। বিয়ে করেছিলেন মাত্র দেড় বছর আগে। স্ত্রী সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা। বৃদ্ধ বাবা এখনো দিনমজুরের কাজ করেন। বড় ভাইয়েরও এখন তেমন কোনো কর্ম নেই। ব্যক্তিগত প্রোফাইল নাম : মো: সোহেল রানা পিতার নাম : ফেরদৌস রহমান(৬২) মাতার নাম : মাবিয়া বিবি (৬০) স্ত্রীর নাম : শাম্মী আক্তার (২০) জন্ম তারিখ : ১লা ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৪ স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: ভুষ্কুর মাদ্রাসা পাড়া, ইউনিয়ন: ভাটগ্রাম, হাটকড়ই থানা: নন্দীগ্রাম, জেলা: বগুড়া বর্তমান ঠিকানা : ভুষ্কুর মাদ্রাসা পাড়া, ৯ নং ওয়ার্ড, নন্দীগ্রাম, বগুড়া আহত হওয়ার স্থান : যাত্রাবাড়ী গোল চত্বর আহত হওয়ার সময় কাল : ৫ আগস্ট, ২০২৪, দুপুর: ২:৪৫ মিনিট শহীদ হওয়ার সময় ও স্থান : যাত্রাবাড়ী গোল চত্বর, দুপুর: ২:৪৫ মিনিট যাদের আঘাতে শহীদ : যাত্রাবাড়ী থানার পুলিশ কবরস্থান : বাড়ির পাশে দাফন করা হয়েছে শহীদ পরিবারের জন্য করণীয় ১. শহীদের বাবা- মায়ের জন্য নিয়মিত মাসিক অনুদানের ব্যবস্থা করা ২. তার স্ত্রী ও অনাগত সন্তানের জন্য মাসিক ভাতার ব্যবস্থা করা স্বৈরাচারের পতন নিশ্চিত হয়েছে। স্বাধীন হয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ থেকে ত্রাসের রাজত্ব খতম হয়েছে এবং জুলুম তন্ত্রের অবসান হয়েছে। এই স্বাধীনতার জন্য বুকের তাজা রক্ত বিসর্জন দিতে হয়েছে সোহেল রানাদের মত হাজারো যুবককে।