জন্ম তারিখ: ৩ জুলাই, ১৯৯৩
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৪ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: রাজশাহী
পেশা : সেলসম্যান, শাহাদাতের স্থান : পঙ্গু হাসপাতাল, ঢাকা
” মা আমি যদি মরে যাই, মরেও শান্তি পাবো। হাসিনা পদত্যাগ করেছে। দেশটা আজ থেকে স্বাধীন ” - হাসপাতালের বেডে শুয়ে যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে শহীদ আবু রায়হান শহীদ মো: আবু রায়হান ১৯৯৩ সালের ৩ জুলাই বগুড়ার দুপচাঁচিয়ার চক সুখানগাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা শাজাহান আলী বর্তমানে মৃত এবং মা মোছা: রওশন আরা (৫২), গৃহিণী, স্ত্রী মোসা: দিলরুবা (২৩), ছেলে আবু সুয়াইবকে (৪) নিয়ে যৌথ পরিবারে বসবাস করতেন। তিনি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হক্কান অ্যান্ড টিস্যু কোম্পানিতে সেলসম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। শহীদ আবু রায়হান ৪ আগস্ট দুপচাঁচিয়া সদর থানার সামনে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। দুপুর সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশ আন্দোলনরত জনসাধারণের উপর গুলিবর্ষন শুরু করে। পুলিশের এসআই এরশাদ আবু রায়হানের হাটুর নিচে গুলি করে। তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হওয়ায় কয়েক ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়। সেখানকার ডাক্তাররা তাকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু সব গাড়ি বন্ধ থাকার ফলে ঢাকা পৌঁছাতে একদিন দেরি হয়। ৫ তারিখ রাত ৮টার পর জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। ডাক্তার সেখান থেকে তাকে পঙ্গু হাসপাতালে রেফার করেন। ৬ তারিখ সকালে আবু রায়হানকে পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানে আরো রক্ত দেওয়া হয়। ডাক্তাররা জানান দ্রুত তার অপারেশন করতে হবে এবং তার পা কেটে ফেলতে হবে। সেদিনই রাতে আবু রায়হানের পা কেটে ফেলা হয়। পরবর্তী দুই দিন সে হাসপাতালে ছিল। ৯ তারিখ শুক্রবার সকাল আটটায় ডাক্তার ও পরিবারের সকলের প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিয়ে তিনি ইন্তেকাল করেন। শাহাদাতের প্রেক্ষাপট বিরোধী মতকে সম্পূর্ণরূপে দমন করে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার সাধারণ জনগণের উপর দমন নিপীড়ন শুরু করে। সকল প্রকার পণ্য সামগ্রীর দাম নাগালের বাইরে চলে যায়। দ্রব্য সামগ্রীর অগ্নিমূল্যের ফলে জনগণের মধ্যে হতাশা যখন চরম পর্যায়ে, তখন আওয়ামী লুটেরাদের লুটপাট চরমে। তারা সিন্ডিকেট করে জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণ করত। তাদের দৌরাত্ম্যের কারণে জনসাধারণকে সকল পণ্যদ্রব্য তাদের নিয়ন্ত্রিত দামেই ক্রয় করতে হতো। এভাবে দেশের সব জায়গায় তারা নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছিল। বাক স্বাধীনতা, বিচার ব্যবস্থা, নির্বাচন ব্যবস্থা কুক্ষিগত করার কারণে অনাচার ও অবিচার সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছিল। এ অবস্থা থেকে মানুষের লক্ষ্য ছিল কেবলই মুক্তি। দীর্ঘদিন আন্দোলন সংগ্রাম করেও মুক্তির কোনো পথ দেখতে পাচ্ছিল না। এমন সময় মুক্তির উপলক্ষ হয়ে হাজির হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তাদের ঘোষিত একের পর এক কর্মসূচিতে বাংলাদেশ উত্তাল হয়ে ওঠে। শহীদ আবু রায়হান ৪ আগস্ট দুপচাচিয়া থানার সামনে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে। দুপুর ১১টা থেকে ১২:০০টার মধ্যে দুপচাঁচিয়া থানার পুলিশ আন্দোলনকারীদের ওপর গুলিবর্ষণ শুরু করে। ছুড়তে থাকে এলোপাতাড়ি গুলি। এ সময় পুরো ফোর্স নিয়ে মাঠে নামে পুলিশ। জনতার উপর গুলি বর্ষণে নেতৃত্ব দেয় বগুড়া দুপচাঁচিয়া থানার এসআই এরশাদ, এসআই নাসির, এসআই পলাশ প্রমুখ। একের পর এক গুলিবিদ্ধ হতে থাকে আন্দোলনকারীরা। কারো হাত কারো পা আবার কারো বুকে গুলি লাগে। এ অবস্থায় হঠাৎ এসআই এরশাদের পিস্তল থেকে ছোড়া গুলি আঘাত করে আবু রায়হানের পায়ে। ব্যথায় যন্ত্রণায় লুটিয়ে পড়েন মাটিতে। অসহ্য যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকেন আবু রায়হান। এই খবর শোনা মাত্র পরিবারের লোকজন ভেঙ্গে পড়েন। তাকে নিয়ে দৌড়াদৌড়ি ছোটাছুটি শুরু হয়। প্রথমে শহীদ জিয়া মেডিকেল কলেজ এরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে পঙ্গু হাসপাতাল। ৬ তারিখ পঙ্গু হাসপাতাল এ শহীদ আবু রায়হানের একটি পা কেটে ফেলা হয়। অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে এরপরও ৩ দিন বেঁচে ছিলেন। ৯ তারিখ সকাল ৮ টায় বিদায় নেন পৃথিবী থেকে। শহীদের মৃত্যুর পর বন্ধু ও আত্মীয়-স্বজনের প্রতিক্রিয়া শহীদের স্ত্রী মোসা: দিলরুবা বলেন, ”সে একজন খুবই ভালো মানুষ ছিল। আমাকে অনেক ভালোবাসত। কিন্তু আমাকে একা করে সে চলে গেল।ছেলেকেও খুব আদর করতো। এখন আমি কী করবো? তার মৃত্যু আমি এখনো মেনে নিতে পারছি না।” শহীদ পরিবারের বিশেষ তথ্য শহীদ আবু রায়হান একজন কর্মক্ষম ব্যক্তি ছিলেন। শহীদের বাবা এক বছর আট মাস আগে ইন্তেকাল করেছেন। শহীদের স্ত্রী এবং চার বছরের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। শহীদের মা, শহীদের স্ত্রী, চার বছর বয়সী ছেলে, বড় ভাইয়ের স্ত্রী এবং তাদের তিন সন্তান, সবাই মিলে যৌথ পরিবারের বসবাস করেন। শহীদের বড় ভাই অবৈধ সৌদি প্রবাসী। তিনি ২ থেকে ৩ মাস পর পর ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা পাঠান। প্রায় ৫-৬ লক্ষ টাকা ঋণ করে সৌদি আরবে গিয়েছেন। তার অর্ধেক ঋণ এখনো শোধ হয়নি। শহীদের ছোট ভাই চাকরি উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জে অবস্থান করেন এবং পরিবারকে তেমন সহায়তা করতে পারেন না। ব্যক্তিগত প্রোফাইল নাম : মো: আবু রায়হান পিতার নাম : শাহজাহান আলী (মৃত) মাতার নাম : মোসা: রওশন আরা (৫২) স্ত্রীর নাম : মোসা: দিলরুবা (২৩) জন্ম তারিখ : ৩ জুলাই ১৯৯৩ স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: চক সুখানগাড়ি, ইউনিয়ন : দুপচাঁচিয়া, থানা: দুপচাঁচিয়া পৌরসভা, জেলা: বগুড়া বর্তমান ঠিকানা : চক সুখানগাড়ি, ৪ নং ওয়ার্ড দুপচাঁচিয়া আহত হওয়ার স্থান : দুপচাঁচিয়া সদর থানার সামনে আহত হওয়ার সময় কাল : ৪ আগস্ট, ২০২৪, দুপুর ১১:৩০ মিনিট শহীদ হওয়ার সময় ও স্থান : পঙ্গু হাসপাতাল, ঢাকা, সকাল ৮টা যাদের আঘাতে শহীদ : এস আই এরশাদ কবরস্থান : দুপচাঁচিয়া কেন্দ্র কবরস্থান শহীদ পরিবারের জন্য করণীয় ১. শহীদের মায়ের জন্য নিয়মিত মাসিক অনুদানের ব্যবস্থা করা ২. শহীদের স্ত্রীর জন্য একটি চাকুরীর ব্যবস্থা করা ৩. ছেলের জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা করা