জন্ম তারিখ: ১০ ডিসেম্বর, ২০০১
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৪ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: রাজশাহী
পেশা : শিক্ষার্থী, শাহাদাতের স্থান : দুপচাঁচিয়া থানার উত্তরপূর্ব কর্নার
শহীদ মো: মুনিরুল ইসলাম ১০ই ডিসেম্বর ২০০১ সালে বগুড়া জেলার দুপচাঁচিয়া ইউনিয়নের বীর কেদার গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মো: শামছুল হক (৫৮) কৃষিকাজ করেন এবং মা মোরশেদা বেগম (৪৬), গৃহিণী। বোন মোছা: নাফিসা খাতুন (১৯) সরকারি আজিজুল হক কলেজের বোটানি বিভাগের অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। শহীদ মো: মুনিরুল ইসলাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় নওগাঁর অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তরুণ মুনিরুল এলাকার উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন। মেধাবী এই দুই-ভাই বোন নিজেদের পড়ালেখার খরচ চালানোর জন্য টিউশনি করাতেন। ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি অসহযোগ আন্দোলনে দুই ভাই বোন একসাথে যোগদান করেছিলেন। দুপুর সাড়ে বারোটার দিকে পুলিশ হঠাৎ করে ছাত্রদের উপর টিয়ারসেল, সাউন্ডগ্রেনেড এবং গুলি করতে শুরু করলে চারিদিক অন্ধকার হয়ে উঠে। পুলিশ বাহিনীর নেতৃত্বে ছিল এস আই এরশাদ এস আই নাসির এসআই পলাশ। তারা গুলি চালিয়ে হত্যা করতে থাকে একের পর এক ছাত্র। দুই ভাইবোন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। এই গোলযোগের এক পর্যায়ে বোন শুনতে পান তার ভাই গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ হয়েই মারা যান শহীদ মুনিরুল ইসলাম। শাহাদাতের প্রেক্ষাপট শহীদ মো: মুনিরুল ইসলাম ছিলেন একজন স্বপ্নবাজ তরুণ। প্রতিবাদী এই শিক্ষার্থী কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হলে প্রতিটি কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতেন। প্রতিটি কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করায় তিনি ছিলেন পুলিশের নজরদারিতে। ১৯ জুলাই এর পর থেকে তিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। দীর্ঘদিন বাড়িতে ঘুমাতে না পারলেও কোনো কর্মসূচিতে তিনি অনুপস্থিত থাকতেন না। অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী বোন নাফিসা খাতুনকেও এইসব কর্মসূচিতে নিয়ে যেতেন। ৪ আগস্ট তিনি বোনকে সঙ্গে নিয়েই আন্দোলনে যোগদান করেছিলেন এবং দুপচাঁচিয়া থানার সামনে অবস্থান নিয়েছিলেন। এখানেই পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের সাথে কয়েক দফা ছাত্র জনতার সংঘর্ষ হয়। পুলিশ ছাত্র জনতা কে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে থাকে। বিশৃংখল পরিস্থিতিতে ভাই বোন আলাদা হয়ে পড়েন। দুপুর ১২ টার দিকে একটি গুলি মুনিরুলের কোমরে লেগে সামনের দিক দিয়ে বেরিয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই মনিরুল ইসলাম শাহাদত বরণ করেন। পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন। উত্তেজিত ছাত্র জনতা তার লাশ নিয়ে প্রায় দুই ঘন্টার বেশি সময় ধরে মিছিল করে। পরবর্তীতে হাজার হাজার ছাত্র জনতার উপস্থিতিতে তার জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। শহীদের মৃত্যুর পর বন্ধু ও আত্মীয়-স্বজনের প্রতিক্রিয়া শাহাদাতের পর শহীদের পিতা বলেন, "আমি শহীদের গর্বিত পিতা। আমার ছেলের কোনো অন্যায় ছিল না। শোষণ ও জুলুমের বিরুদ্ধে সে কথা বলেছে, সত্যের পক্ষে সে কথা বলেছে, ঘাতকের বুলেটের আঘাতে আমার ছেলে শহীদ হয়েছে। আমি একজন বীর শহীদের পিতা। যতদিন এই দেশে অন্যায় ও জুলুম মাথা চাড়া দিয়ে উঠবে ততদিন মুনিরুলের মত হাজারো তরুণ এগিয়ে আসবে অন্যায় ও জুলুম রুখে দিতে। হাজারো ছেলে জন্ম নিবে, যারা অন্যায় ও জুলুমের বিরুদ্ধে নিজের বুকের তাজা রক্ত দিতে কুণ্ঠাবোধ করবে না। তারা অন্যায় ও জুলুমের শিকল মেনে নেবে না।" শহীদের চাচা আতাউর রহমান বলেন, "মুনিরুল আমার ভাতিজা। সে আমাদের খুব আদরের সন্তান ছিল। আমরা তাকে কোলে পিঠে মানুষ করেছি। সেই স্থানীয় বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী এবং সামাজিক সংগঠনের সাথে জড়িত ছিল। ও আমাকে খুব ভালোবাসত এবং সম্মান করতো। যে কোনো একটি কাজের কথা বললে সাথে সাথে করে দিত।" শহীদ পরিবারের বিশেষ তথ্য শহীদ মনিরুল ইসলামদের অর্থনৈতিক অবস্থা খুব একটা ভালো নয় তার বাবা কৃষি জমিতে কাজ করে যা আয় করেন তা দিয়ে তাদের সংসার ভালোভাবে চলতো না। তাই মনিরুল ও তার বোন টিউশনি করে নিজেদের খরচ নিজেরাই যোগাত। তাদের এ সংসারে একজন স্বামী পরিত্যক্তা ফুফুও রয়েছেন। ব্যক্তিগত প্রোফাইল নাম : মো: মুনিরুল ইসলাম পিতার নাম : মো: শামছুল হক (৫৮) মাতার নাম : মোর্শেদা বেগম (৪৬) জন্ম তারিখ : ১০ ডিসেম্বর, ২০০১ স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: বীরকেদার, ইউনিয়ন: দুপচাঁচিয়া, থানা: কাহালু, জেলা: বগুড়া বর্তমান ঠিকানা : বীর কেদার, ২ নং ওয়ার্ড, কাহালু, বগুড়া আহত হওয়ার স্থান : দুপচাঁচিয়া থানার উত্তর-পূর্ব কর্নার আহত হওয়ার সময় কাল : ৪ আগস্ট, ২০২৪, দুপুর ১২:০০ মিনিট শহীদ হওয়ার সময় ও স্থান : ৪ আগস্ট, ২০২৪, দুপুর ১২:০০ মিনিট, দুপচাঁচিয়া থানার উত্তরপূর্ব কর্নার যাদের আঘাতে শহীদ : এস আই এরশাদ, এসআই পলাশ, এসআই নাসির কবরস্থান : বাড়ির পাশেই কবরস্থ করা হয় শহীদ পরিবারের জন্য করণীয় ১. শহীদের পরিবারের জন্য নিয়মিত মাসিক অনুদানের ব্যবস্থা করা ২. শহীদের বোনের জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা করা যেতে পারে ৩. চাষাবাদের জন্য জমি লিজ কিংবা পশু পালনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে আমরা এখন স্বাধীন দেশের নাগরিক। আমাদের এই স্বাধীনতার জন্য কত শত স্বপ্নের পরিসমাপ্তি হয়েছে। কত শত তরুণ তাদের তাজা প্রাণ উৎসর্গ করেছেন। মনিরুলও তার জীবন উৎসর্গ করে এদেশের মানুষকে ঋণী করে গেছেন।