Image of মো: শিমুল

নাম: মো: শিমুল

জন্ম তারিখ: ৮ জানুয়ারি, ১৯৮০

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৪ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: রাজশাহী

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : দর্জি , শাহাদাতের স্থান : শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

শহীদের জীবনী

’’ আমার নামের সাথে মিল রেখে স্বামী নিজের আইডি কার্ডে নাম পরিবর্তন করে রেখেছিলেন শিমুল ” - শহীদের স্ত্রী শিমু শহীদ শিমুল ১৯৮০ সালের ৮ জানুয়ারি দিনাজপুরের পার্বতীপুরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। জন্ম বগুড়ার আকাশতারা গ্রামে। পিতা মো: মুজিবুর রহমান মণ্ডল (মৃত) এবং মাতা মোকছেদা খাতুন (৭০) গৃহিণী। পেশায় ছিলেন একজন দর্জি। পূর্বে ফুটপাতে কাপড় অর্ডার নিয়ে সেলাই করলেও মৃত্যুর পূর্বে একটি দোকান ভাড়া নিয়ে সেখানে দর্জির কাজ করতেন। স্ত্রী শিমু খাতুন (৩৮) ও ছেলে সোয়াইব হাসান (১৫) নিয়ে তার সংসার। বড় মেয়ে মাইসা বিবাহিত। ৪ আগস্ট রবিবার শিমুল মন্ডল তার দোকানে বসে কাজ করছিলেন। সকাল সাড়ে দশটার দিকে স্থানীয়রা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমর্থনে মিছিল বের করলে তিনিও সেই মিছিলে যোগদান করেন। বেলা ১১:৩০ মিনিটে মিছিল শান্তিপূর্ণভাবে বগুড়া সদরের ঝাউতালায় মূল রাস্তায় পৌঁছে। কোনোরকম বিশৃঙ্খলা না থাকলেও পুলিশ আন্দোলনকারীদের ওপর অতর্কিত গুলি করতে থাকে। মো: শিমুল মন্ডল গলায় ও মাথায় গুলিবিদ্ধ হন। সাথে সাথে স্থানীয়রা তাকে স্বদেশ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে ডাক্তার তাকে জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ট্রান্সফার করেন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুর একটার দিকে তিনি শাহাদাত বরণ করেন। শাহাদাতের প্রেক্ষাপট প্রায় দেড় যুগ ধরে কি যে এক ফ্যাসিজম চাপিয়ে দিয়েছিল আওয়ামী হায়েনা গোষ্ঠী। স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা এমনভাবে খর্ব করা হয়েছিল যে, জেন-জেড এর অধিকাংশ তরুণ ই বলতে পারবে না ভোট কি? দীর্ঘদিন ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি এ দেশের আবাল বৃদ্ধবনিতা, অথচ মারা যাওয়া ব্যক্তি ভোট দিয়ে গেছেন এমন রেকর্ডও আছে। স্বাধীন বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সম্পূর্ণ হরণ করে দলীয় শাসন কায়েম করা হয়েছিল। বিচার বিভাগ হয়ে উঠেছিল স্বাধীনতা হরণের প্রধান হাতিয়ার। বিরোধীদলকে দমন, অবিচার কায়েম, নিরপরাধ হাজার হাজার মানুষকে আইনের মারপ্যাঁচে ফেলে আটকে রাখা, বিচারের নামে প্রহসন, বিচারিক হত্যাকান্ড, বিচারক নামধারী দলীয় ক্যাডারদের অবিচার ও দুর্নীতির শাসক বিচার বিভাগকে কলঙ্কিত করেছিল। দুর্নীতি দমন কমিশনের মতো প্রতিষ্ঠানকে হাসির পাত্রে পরিণত করা হয়েছিল। স্বাধীন কোনো গণমাধ্যম এবং প্রচার মাধ্যমের কোনো অস্তিত্বই ছিল না। বিরোধী মতকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করা হয়েছিল। বিরোধী দলীয় কর্মীদের নামে লাখ লাখ মামলা দায়ের করে পুরো বাংলাদেশকে কারাগারে পরিণত করা হয়েছিল। রাত নামলেই বিরোধীদের গৃহগুলো আতঙ্কের গৃহে পরিণত হতো। কত সহস্র রাত সরকার বিরোধী কর্মীকে নির্ঘুম কাটাতে হয়েছে তার কোনো হিসাব নেই। এই শ্বাসরুদ্ধ করা অবস্থা থেকে বাঁচতে চাচ্ছিলেন সবাই। তাইতো বৈষম্যবিরোধী এই আন্দোলনে জনতার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ। শহীদ মো: শিমুল মন্ডল খেটে খাওয়া মানুষ, সামান্য একজন দর্জি। অথচ মানুষের মুক্তির জন্য জীবন বাজি রেখেছিলেন। শহীদ শিমুল ১১:৩০ মিনিটে বগুড়া শহরের শান্তিপূর্ণ মিছিলে অংশগ্রহণ করেন। কোনোরূপ উস্কানি ছাড়াই এই মিছিলের ওপর পুলিশ গুলি চালাতে শুরু করে। এ সময় মো: শিমুল তার মাথায় ও গলায় গুলিবিদ্ধ হন। রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে যান রাস্তায়। পুরো মুখ রক্তে রঞ্জিত হয়ে যায়। হাসপাতালে কখনো তার শ্বাস-প্রশ্বাস চলছিল। পরিবার খবর পেয়ে হাসপাতালে গিয়ে নিজেদের পরিচয় দেয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায় তারা চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছে। আন্দোলনকারীদের অধিকাংশ বাসায় ফিরে আসলেও ফিরে আসেনি শহীদ শিমুল। শহীদের ছেলে ইন্টারনেটে বাবার ছবি দেখতে পান। রাতে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন স্বদেশ হাসপাতাল থেকে তার বাবাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বগুড়া জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে মর্গে খুঁজে পান বাবার লাশ। স্বৈরাচার হাসিনার দোসররা আন্দোলনের শহীদদের সংখ্যা গোপন করার জন্য করছিল নানা চক্রান্ত। শহীদের মৃত্যুর পর বন্ধু ও আত্মীয়-স্বজনের প্রতিক্রিয়া শহীদের স্ত্রী বলেন, "এলাকার মানুষের সাথে তার সম্পর্ক ভালো ছিল বলে তার দর্জির দোকান ভালো চলত।" তিনি আরো বলেন, "অনেক সময় নিজের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতেন না ছেলের প্রাইভেটের টাকা দেওয়ার জন্য।" শহীদের প্রতিবেশী মনজুর রহমান বলেন, "ব্যক্তিগত জীবনের শিমুল ভাই খুবই ভালো মনের মানুষ ছিলেন। তিনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন। তার ব্যবহার ছিল অমায়িক। তিনি সহজেই মানুষের সাথে মিশতে পারতেন।" তিনি আরো বলেন, ৪ আগস্ট সকাল ৭টায় আমি তাকে বলি, চলেন আন্দোলনে যাব। আজ শহীদ হব না হয় স্বাধীন হব। সকাল সাড়ে দশটার দিকে আমরা একসাথে বের হই ঝাউতলায়,কাঠালতলার মোড়ে পৌঁছামাত্র পুলিশ গুলি করতে শুরু করে। শিমুল ভাইয়ের বুকে ও মাথায় গুলি লাগে। আমরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। তিনি হাসপাতালেই মৃত্যুবরণ করেন।" শহীদ পরিবারের বিশেষ তথ্য শহীদ শিমুল ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তিনি মারা যাওয়ার পর পরিবারের দায়িত্ব নিয়েছেন তার মেয়ের জামাই। তিনিও অন্যের কাপড়ের দোকানে সেলসম্যান হিসেবে কাজ করেন। উপরন্ত বড় মেয়ে মাইশা আফরিন সন্তান সম্ভবা। পরিবারের আয়ের অন্য কোনো উৎস নেই। ব্যক্তিগত প্রোফাইল নাম : মো: শিমুল পিতার নাম : মো: মুজিবুর রহমান মন্ডল (মৃত) মাতার নাম : মোকছেদা খাতুন (৭০) স্ত্রীর নাম : শিমু খাতুন (৩৮) ছেলে মেয়ে : ২ জন মেয়ে : মাইশা আফরিন বিবাহিত ছেলে : সোয়াইব হাসান (১৫) মোস্তফাদিয়া আলিয়া মাদ্রাসার অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী জন্ম তারিখ : ৮ জানুয়ারি ১৯৮০ স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: বৃন্দাবন পাড়া, ইউনিয়ন: বগুড়া সদর, থানা: বগুড়া সদর, জেলা: বগুড়া বর্তমান ঠিকানা : বৃন্দাবন দক্ষিণপাড়া, ২ নং ওয়ার্ড, বগুড়া সদর, বগুড়া আহত হওয়ার স্থান : ঝাউতলায়, কাঁঠালতলার পাশে, বগুড়া সদর আহত হওয়ার সময় কাল : ৪ আগস্ট, ২০২৪, বেলা ১১:৩০ মিনিট শহীদ হওয়ার সময় ও স্থান : ৪ আগস্ট ২০২৪। সময়: দুপুর ১ টা, শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল যাদের আঘাতে শহীদ : পুলিশের গুলি কবরস্থান : নামাজগড় আঞ্জুমী কবরস্থান শহীদ পরিবারের জন্য করণীয় ১. শহীদের ছেলের জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা করা ২. শহীদের পরিবারেরজন্য নির্দিষ্ট হারে মাসিক অনুদান প্রদান করা

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: শিমুল
Image of মো: শিমুল
Image of মো: শিমুল
Image of মো: শিমুল
Image of মো: শিমুল
Image of মো: শিমুল
Image of মো: শিমুল
Image of মো: শিমুল
Image of মো: শিমুল
Image of মো: শিমুল
Image of মো: শিমুল

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: কমর উদ্দিন খাঁ

মো: রেজাউল হক সরকার

মো: মুনিরুল ইসলাম

 ইয়াছিন

মো: মিনারুল ইসলাম

মো: আব্দুল হান্নান খান

মো: রমজান আলী

 মো: মাহবুব হাসান নিলয়

মো. মেহেদী হাসান রবিন

মো: হৃদয় আহমেদ

মো: আব্দুল আলীম

মো: সুমন সেখ

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo