Image of  মো: সেলিম হোসেন

নাম: মো: সেলিম হোসেন

জন্ম তারিখ: ২ জানুয়ারি, ১৯৮৯

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৪ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: রাজশাহী

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : প্রাইভেট স্কুলের শিক্ষক , শাহাদাতের স্থান : শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

শহীদের জীবনী

“ শিক্ষক হিসেবে নিজের দায়বদ্ধতার বাইরেও শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক কিছু করার চেষ্টা করতেন। কোনো ছাত্রের আর্থিক সমস্যা থাকলে তাকে বিনামূল্যে পাঠদান করেছেন মাসের পর মাস ” -শহীদের স্ত্রী জেসমিন আরা শহীদ সেলিম হোসেন ১৯৮৯ সালের ২ জানুয়ারি বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ থানার সিহালী ইউনিয়নের বালিকান্দা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মো: সেকেন্দার আলী (৬০) মুদি ব্যবসায়ী এবং মা মোসা: মনোয়ারা বিবি(৫২) গৃহিণী। প্রাইভেট স্কুলের শিক্ষক শহীদ সেলিম হোসেন একটি কোচিং সেন্টারও পরিচালনা করতেন। স্ত্রী জেসমিন আরা (৩০) এবং সন্তান সাইদুজ্জামান তাসরিফ (১৩ মাস) ওকে নিয়ে বাড়ির একটি বাসা বাসা ভাড়া বাসায় থাকতেন। শহীদ সেলিম চার আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা ডেগার দিয়ে তার বুকে পিঠে আঘাত করে মারাত্মকভাবে আহত করে। আহত শহীদ সেলিম হোসেনকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। শাহাদাতের প্রেক্ষাপট শিক্ষক মো: সেলিম হোসেন ছিলেন একজন সমাজ সচেতন মানুষ। বিবেকের তাড়নায় তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যোগদান করতেন নিয়মিত। জুলাইয়ের উত্তাল দিনগুলোতে তিনি সক্রিয়ভাবে মাঠে অবস্থান করেন। স্বৈরাচার সরকার নিরস্ত্র মানুষের ওপর গুলি বর্ষণ ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ পরিচালনা করলেও অকুতোভয় মো: সেলিম হোসেন রাজপথ থেকে সরে যাননি। ৪ আগস্ট শিক্ষার্থীদের সাথে বরাবরের মতোই তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগদান করেন। যাওয়ার সময় পকেটে ছিল মাত্র ২০০ টাকা। বাসা থেকে বের হবার সময় বাজার না থাকায় আসার সময় বাজার নিয়ে আসার আবদার ছিল স্ত্রীর। কিন্তু আন্দোলনের ছাত্রদের সাথে দেখা হলে তাদেরকে নাস্তা করান সম্পূর্ণ টাকা দিয়ে। সকাল থেকে আন্দোলনে জনগনের সংখ্যা বাড়তে থাকে। দুপুর ২ টার সময় প্রচন্ড গরম। এমন সময় শহরের ডাকবাংলো ভবনের সামনে জনতার ওপর অতর্কিত হামলা শুরু করে পুলিশ। তাদের আন্দোলনকে ছত্রভঙ্গ করার জন্য রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড ও গুলি ছুড়ে পুলিশ। একের পর এক গুলিবিদ্ধ হতে থাকে আন্দোলনকারীরা। কিছু শিক্ষার্থী পাশের বাংলোর প্রাচীরের ভিতর আশ্রয় নেয়। শহীদ সেলিম তাদেরকে নিরাপদ স্থানে যেতে সহায়তা করে। ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সন্ত্রাসীরা বাংলোর ভিতরে অবস্থান করছিল। তারা শিক্ষক মোহাম্মদ সেলিম হোসেনকে একা পেয়ে ডেগার দিয়ে তার মাথায়, পেটে, বুকে এবং কোমরে মারাত্মকভাবে আঘাত করে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। সন্ত্রাসীরা দূরে সরে গেলে তারা দ্রুত তার নিকট যান এবং তাকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ছাত্রদের উদ্ধার করার বাসনা তার জীবনের কাল হয়ে দাঁড়ায়। শহীদের মৃত্যুর পর বন্ধু ও আত্মীয়-স্বজনের প্রতিক্রিয়া মাত্র দেড় বছর আগে বিয়ে করেছিলেন শহীদ মো: সেলিম হোসেন। স্ত্রী জেসমিন আরা বলেন, "তিনি বলতেন শিক্ষকের প্রধান কাজ শিক্ষার্থীদের জ্ঞান বিতরণ করা, যেখানে টাকার অংক মুখ্য নয়। ধৈর্য ধরো, এক সময় আল্লাহ আমাদেরকে এত পরিমাণ দিবেন যে রাখার জায়গা পাবানা।" শহীদের স্ত্রীর বড় ভাই আলামিন বলেন, "শহীদ সেলিম আমার ছোট বোনের জামাই। কিন্তু আমি তাকে বড় ভাইয়ের মত সম্মান করতাম। সে নিয়মিত আন্দোলনে অংশ নিত। আমরা নিষেধ করলে ছাতা ঠিক করতে যাওয়া, বাজার করতে যাওয়াসহ নানান অজুহাতে আন্দোলনে অংশ নিত। সে একজন দেশপ্রেমিক মানুষ ছিল। বিপদে আপদে সবাইকে সাহায্য করত। তার সাথে আমার খুব ভালো সম্পর্ক ছিল। সে খুবই পরিশ্রমী মানুষ ছিল।" শহীদের স্ত্রীর ছোট ভাই বলেন, "আড়াইটা পর্যন্ত আমরা একসাথে আন্দোলন ছিলাম। তারপর আলাদা হয়ে যায়। চারটার দিকে শুনি তার উপর হামলা হয়েছে। দ্রুত সেখানে পৌঁছে দেখি তিনি রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন। তাকে নিয়ে আমরা হাসপাতালে যাই।" শহীদ পরিবারের বিশেষ তথ্য মাত্র দেড় বছর আগে বিয়ে করা মো: সেলিম হোসেন ছিলেন একটি প্রাইভেট স্কুলের সহকারী শিক্ষক। মাত্র চার মাস আগে চাকুরিটি স্থায়ীকরণ হয়েছিল। পাশাপাশি তিনি একটি কোচিং সেন্টার পরিচালনা করতেন। স্ত্রী ও পুত্র সন্তানকে নিয়ে বাসা বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। এখন তাদের আর কোনো আয়ের উৎস নেই। ব্যক্তিগত প্রোফাইল নাম : মো: সেলিম হোসেন পিতার নাম : মো: সেকেন্দার আলী (৬০) মাতার নাম : মোছা: মনোয়ারা বিবি (৫২) স্ত্রীর নাম : জেসমিন আরা (৩০) জন্ম তারিখ : ২ জানুয়ারি ১৯৮৯ স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: পালি কান্দা, ইউনিয়ন : সিহালী, থানা: শিবগঞ্জ, জেলা: বগুড়া বর্তমান ঠিকানা : ইসলামপুর, ১৪ নং ওয়ার্ড, বগুড়া সদর, বগুড়া আহত হওয়ার স্থান : বগুড়া সাতমাথায় এপেক্সের পাশে ডাকবাংলোর ভিতর বগুড়া আহত হওয়ার সময় কাল : ৪ আগস্ট, ২০২৪, বিকাল ৩.৩০ (আনুমানিক) শহীদ হওয়ার সময় ও স্থান : ৪ আগস্ট, ২০২৪, সময়: বিকাল ৪:১৫ মিনিট শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল যাদের আঘাতে শহীদ : ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের ডেগারের আঘাত কবরস্থান : পালিকান্দা কবরস্থান শহীদ পরিবারের জন্য করণীয় ১. শহীদের স্ত্রীর জন্য বগুড়া শহরের মধ্যে একটি চাকরির ব্যবস্থা করা শহীদ সেলিমের দেড় বছরের ছোট বাচ্চা শিশুটি তার বাবাকে দেখলে দূর থেকেই পাপা পাপা বলে ডাক দিত। ছেলেকে বুকে জড়িয়ে চুমু দিতেন বাবা। এখনো ছোট বাচ্চাটি বাবার কাপড়ের কাছে গিয়ে বাবাকে ডাকেন পাপ্পা পাপ্পা বলে। এমন অসংখ্য ছোট শিশু তাশরিফদের ত্যাগের বিনিময়ে আজকের এই বাংলাদেশ।

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of  মো: সেলিম হোসেন
Image of  মো: সেলিম হোসেন
Image of  মো: সেলিম হোসেন
Image of  মো: সেলিম হোসেন
Image of  মো: সেলিম হোসেন
Image of  মো: সেলিম হোসেন
Image of  মো: সেলিম হোসেন
Image of  মো: সেলিম হোসেন
Image of  মো: সেলিম হোসেন
Image of  মো: সেলিম হোসেন
Image of  মো: সেলিম হোসেন
Image of  মো: সেলিম হোসেন

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মিকদাদ হোসাইন খান (আকিব)

মো: মিনহাজ হোসেন

মো: রাসেল রানা

মোসা: রিতা আক্তার

মো: রনি

মাহফুজ আলম শ্রাবণ

মো: সুমন সেখ

মো: জাহিদুল ইসলাম

 ইয়াছিন

মোঃ আব্দুল লতিফ

মো: আব্দুল হান্নান খান

মো: কমর উদ্দিন খাঁ

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo