জন্ম তারিখ: ১৫ ডিসেম্বর, ২০০৭
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: রাজশাহী
পেশা :শিক্ষার্থী, শাহাদাতের স্থান :সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
শহীদ রিতা আক্তার জয়পুরহাট জেলার কালাই থানার অন্তর্গত পুনট ইউনিয়নের তালখুর গ্রামে ২০০৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। দুই ভাইয়ের একমাত্র বোন রিতা আক্তার অত্যন্ত আদরের। পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় পিতা-মাতা দুই ছেলেকে নিয়ে ঢাকায় আসেন। রিতা বড় হতে থাকে এলাকায় তার মামীর কাছে। অত্যন্ত মেধাবী শিক্ষার্থী রিতা দ্রুতই মাদ্রাসার শিক্ষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। গ্রামের প্রত্যন্ত ভূগোইল হেজবুল্লাহ দাখিল মাদ্রাসা থেকে ২০২৪ সালে কৃতিত্বের সাথে এসএসসি পাস করেন শহীদ রিতা। বিজ্ঞান বিভাগের এই শিক্ষার্থীর জিপিএ ছিল ৪.৭৮। পিতা-মাতা আশায় বুক বাঁধেন। সিদ্ধান্ত নেন যত কষ্টই হোক তাকে বড় মানুষ বানাবেন। ভর্তি করিয়ে দেন মিরপুর দুয়ারীপাড়া সরকারি কলেজে। ছোট ছেলেকেও বেসরকারি স্কুলে ভর্তি করান। ঘটনা সংক্রান্ত বিস্তারিত বিবরণ শহীদ রিতা আক্তার ৫ আগস্ট আন্দোলনে অংশগ্রহণ করার জন্য পিতা-মাতার কাছে অনুমতি চান কিন্তু তারা তাকে অনুমতি দেননি। অতঃপর বাবা রিকশা নিয়ে বের হলে এবং মা অন্যের বাসায় কাজে গেলে সে আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের সাথে অংশগ্রহণ করে। শিক্ষার্থীরা তখন মিছিল নিয়ে শাহবাগের দিকে যাচ্ছিল। দুপুর ১.৩০ টায় এ মিছিল মিরপুর ২ নং মডেল থানার সামনে পৌঁছালে পুলিশ হঠাৎ করে এলোপাথাড়ি গুলিবর্ষণ করা শুরু করে। সেখানেই ৫-৬ জন শিক্ষার্থী মাটিতে ঢলে পড়ে। শহীদ রিতা আক্তার তার পেটে ও মাথায় গুলিবিদ্ধ হন। তার মা জানান , "আমি বাসায় এসে তাকে না পেয়ে খুঁজতে বের হই। মিরপুর মডেল থানার সামনে ব্রীজের পাশে কয়েকটা লাশ দেখতে পাই। সেখানেই আমার মেয়েকে পড়ে থাকতে দেখি। সে তখনো জীবিত ছিল। কিন্তু তাকে ধরার কোনো শক্তি আমার গায়ে ছিল না। আমি দ্রুত বাসায় এসে এক মহিলাকে সঙ্গে নিয়ে যাই। কিন্তু তখন গিয়ে আমার মেয়েকে খুঁজে পাই না। এদিকে শিক্ষার্থীরা রিতা আক্তারকে নিয়ে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলে পৌঁছে। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১০ টার দিকে রিতা আক্তার শাহাদাত বরণ করেন। শহীদ রিতা আক্তার সম্পর্কে তার মামীর মন্তব্য, 'ও খুবই ভালো একটা মেয়ে ছিল। ওর বাবা-মা থাকতো ঢাকায়। ও আমার কাছেই বড় হয়েছে। এই কিছুদিন আগে ঢাকায় গেল ওর বাবা মার কাছে, সেখানে ভালো কলেজে পড়বে সেই জন্য। আমি ওকে নিজের মেয়ের মতোই মানুষ করেছি। নম্র ভদ্র একটা মেয়ে, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তো, আমার মেয়েদের সাথে মিলেমিশে থাকতো। ওকে নিয়ে যে আমার কত স্মৃতি, কখনো কোনো বিষয় নিয়ে বকাঝকা করলে কথা বলতো না, চুপ করে থাকতো। এমন সোনার মেয়েকে ওরা মেরে ফেলল, আমি এর বিচার চাই।' পরিবারের আর্থিক অবস্থা শহীদ রিতা আক্তারের পরিবারে রয়েছে তার বাবা-মা, বড় ভাই এবং ছোট ভাই । ছোট ভাই একটি বেসরকারি স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। বড় ভাই অন্যের দোকানে মুরগি বিক্রি করত। বাবা রিকশা চালাতেন। মা অন্যের বাসায় কাজ করতেন। ঢাকায় একটি বাসা ভাড়া নিয়ে তারা থাকতেন। বর্তমানে শহীদের পরিবার এলাকায় তাদের গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করছেন। কিন্তু তাদের নিজস্ব কোনো জমি নেই। অন্যের জমিতে ঘর করে আছেন। এলাকায় তারা কর্মহীন বেকার অবস্থায় রয়েছেন। বাবার রিকশা কেনার টাকা নেই। বড় ভাই মুরগির ব্যবসা করতে চাচ্ছেন কিন্তু অর্থ সংস্থানের অভাবে তিনিও শুরু করতে পারছেন না। বর্তমানে এলাকাবাসীর সহায়তায় হত দরিদ্র এই পরিবারটির সংসার কোনোভাবে চলছে। শহীদের সংক্ষিপ্ত প্রোফাইল নাম : মোসা: রিতা আক্তার জন্ম : ১৫ ডিসেম্বর ২০০৭ পেশা : এইচ এস সি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী, দুয়ারীপাড়া সরকারি কলেজ পিতা : মো: আশরাফ আলী পেশা : মোসা: রিকশা চালক মাতা : রেহেনা বিবি পেশা : গৃহ পরিচারিকা ভাই বোন : দুই ভাই, এক বোন ভাই বোনের মধ্যে অবস্থান : দ্বিতীয় আহত হওয়ার স্থান : মিরপুর ২ নং মডেল থানার সামনে আহত হওয়ার তারিখ : ৫ আগস্ট ২০২৪, দুপুর ১:৩০ মিনিট আঘাতের ধরন : পুলিশের গুলিতে পেটে ও মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত শাহাদাতের স্থান ও তারিখ : সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রাত ১০টা পরামর্শ ১. শহীদের পিতা-মাতার জন্য একটি স্থায়ী আবাস গড়ে দেওয়া ২. শহীদের পিতার জন্য এবং বড় ভাইয়ের জন্য ক্ষুদ্র ব্যবসার পুঁজির ব্যবস্থা করা ৩. শহীদের ছোট ভাইয়ের পড়ালেখার দায়িত্ব গ্রহণ করা