জন্ম তারিখ: ১৫ আগস্ট, ২০০৫
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৪ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: রাজশাহী
পেশা : ছাত্র, শাহাদাতের স্থান :রেলগেট (পাচুর মোড়) জয়পুরহাট কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সামনে।
আজ যদি কেউ শহীদ হয়, তাহলে আমি শহীদ হব।” শহীদ নজিবুল সরকার জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি থানার অন্তর্গত ধরনচি ইউনিয়নের রতনপুর গ্রামে ১৫ আগস্ট ২০০৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। হতদরিদ্র বাবা মো: মজিদুল সরকার মাথা মোসা: বুলবুলি খাতুন এর দুই পুত্র সন্তানের মধ্যে শহীদ নজিবুল সরকার বড়। ছোট ভাই মুমিন সরকার নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। দুই সন্তান এবং স্ত্রীকে নিয়ে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি, মেকানিক মজিদুল সরকার ছোট্ট একটি বাঁশের বেড়ার ঘরে বসবাস করেন। মজিদুল সরকার এর স্বপ্ন ছিল বড় ছেলে নজিবুলকে পড়াশুনা করিয়ে বড় মানুষ বানাবেন। জন্য শত দারিদ্রতা মোকাবেলা করে ছেলেকে পড়াশোনা করিয়েছেন। ছেলেকে ঘিরে স্বপ্ন দেখতেন একটি স্বচ্ছল আগামীর। তার সেই স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেল। যেমন ছিল শহীদ নজিবুলের চরিত্র শহীদ নজিবুল ছোটবেলা থেকেই ছিলেন নিরাহংকার, ধার্মিক, সহজ সরল পরোপকারী, উত্তম চরিত্রের অধিকারী। নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন, তাহাজ্জুদের নামাজ পড়তেন নফল রোজা রাখতেন। শহীদের মা বলেন, "আমি একদিন দেখলাম, সে শেষ রাতে ওযু করে এসে রুটি খাচ্ছে। তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, বাবা তোমার কি এতোই ক্ষুধা লেগেছে যে, তুমি এখন খাবার খাচ্ছ? সে বলেছিল, মা আমি রোজা রাখব।" শহীদের বন্ধু ওমর ফারুক বলেন, "শহীদ নজরুল নিরহঙ্কারী ও অত্যন্ত ভালো চরিত্রের অধিকারী ছিল। বড়দের সম্মান করতো, ছোটদের সব সময় তুমি বলে সম্বোধন করতো। বন্ধুর মত ছিলাম কিন্তু আপনি ছাড়া কথা বলত না।" শাহাদাতের প্রেক্ষাপট ৩ আগস্ট শহীদ নজিবুল সরকার ও তার বন্ধুরা মিলে ঠিক করে আন্দোলনে যাবে। পরের দিন তারা ২৪ জন বন্ধু একসাথে গ্রাম থেকে বের হয়। তার বক্তব্য ছিল, "আজ যদি কেউ শহীদ হয়, তাহলে আমি শহীদ হব"। তারা জয়পুরহাট কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সামনে আন্দোলনে যুক্ত হয়। নজিবুল আন্দোলনের সামনে অবস্থান নেন। এমন সময় পুলিশ টিয়ারেশেল ছুঁড়ে। তারা পিছনে সরে আসে। ভিডিওতে দেখা যায়, নজিবুল দুই হাত দিয়ে সবাইকে পিছনে সরিয়ে দিচ্ছিলেন। ঠিক সেই সময় পুলিশ তাকে লক্ষ্য করে গুলি করে। গুলি তাঁর ডান পাঁজর দিয়ে ঢুকে বাম হাত ভেদ করে বের হয়ে আসে। তাকে দ্রুত জয়পুরহাটে নিকটস্থ একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে, ডাক্তার তাকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেলে ট্রান্সফার করে। পথিমধ্যেই দুপুর ১ টা ৩০ এর দিকে নজিবুল সরকার মারা যান বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়। নিভে যায় জীবন প্রদীপ, ভেঙ্গে যায় তাঁকে ঘিরে পরিবারের স্বপ্ন, রক্ত ফোঁটা দেখা যায়, শত সহস্র অশ্রু অগোচরেই ঝরে যায়। শহীদ পারিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা শহীদ নজিবুল সরকারের পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই শোচনীয়। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি বাবা, মেকানিক হিসেবে ভাড়ায় অন্যের কাজ করেন। নিয়মিত কাজ থাকলে তিনি মাসিক আনুমানিক ৮০০০ টাকা আয় করতে পারেন। তবে অনেক সময়ই তিনি কোনো কাজ পান না। মাঝে মাঝেই পরিবারের সদস্যদের এক বেলা না খেয়ে থাকতে হয়। পরিবারের আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়ায়, শহীদ নজিবুল সরকার পড়াশোনার পাশাপাশি মাঝে মাঝে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে, কোনো খাবার খেতে ইচ্ছা করলেও সরাসরি মাকে তা বলতেন না। ঘুরিয়ে বলতেন, "মা আমাদের যখন টাকা হবে, তখন আমি তোমাকে এই খাবার বানিয়ে খাওয়াবো।" মা বলেন, "আমি বুঝতে পারতাম আমার ছেলেরে খাবার খেতে ইচ্ছা করছে।" সংক্ষিপ্ত শহীদ প্রোফাইল নাম : মো: নজিবুল সরকার জন্ম তারিখ : ১৫/০৮/২০০৫ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান : বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট, এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষ পেশা : ছাএ পিতা : মোঃ মজিদুল সরকার বয়স : ৪৪ বছর পেশা : মেকানিক মাতা : মোসা: বুলবুলি খাতুন বয়স : ৩৯ বছর পেশা : গৃহিণী ভাই বোন : দুই ভাই ভাই বোনের মধ্যে অবস্থান : বড় শাহাদাতের স্থান : রেলগেট (পাচুর মোড়) জয়পুরহাট কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সামনে শাহাদাতের তারিখ : ০৪/০৮/২০২৪, দুপুর ১:৩০ টা আঘাতের ধরন : পুলিশের বুলেট ডান পাঁজর দিয়ে ঢুকে বাম পাঁজর ভেদ করে বের হয়ে যায় পরামর্শ ১. শহীদ পরিবারের জন্য একটি স্থায়ী বাসস্থান গড়ে দেওয়া ২. শহীদের পিতার জন্য নিয়মিত উপার্জনের ব্যবস্থা করা ৩. শহীদের ছোট ভাইয়ের পড়ালেখার দায়িত্ব গ্রহণ করা