জন্ম তারিখ: ২০ মার্চ, ১৯৯৫
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: রাজশাহী
পেশা :অটোরিক্সা চালক, শাহাদাতের স্থান :জয়পুরহাট সদর থানার সামনে।
বোন, দেখিস আমার ছেলেকে একজন বড় আলেম বানাবো। সে সবার জানাজা পড়াবে ” সবুজ-সুফলা বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দর একটি জেলা জয়পুরহাট। জয়পুরহাট জেলার সদরের-ই একটি গ্রাম শেখ পাড়া। শেখ পাড়া গ্রামটি বাংলাদেশের অন্যান্য গ্রামের মতই খুব সুন্দর একটি গ্রাম। এখানেই কাটছিল আলতাফ শেখ ও ফাতেমা বেগমের সংসার। তাদের এই সুন্দর সংসারে খুশীর সংবাদ নিয়ে হাজির হয় একটি দিন, ১৯৯৫ সালের ২০ মার্চ। মা-বাবার কোল আলোকিত করে জন্মগ্রহণ করে একটি শিশু। পরবর্তীতে ফুটফুটে এ শিশুটির নাম রাখা হয় ‘মেহেদী হাসান’। মেহেদী হাসান মা-বাবার কোলেই বেড়ে উঠতে থাকেন। পাঠশালায় হাতেখড়ি হয় পড়াশোনার। কিন্তু বেশিদূর পড়তে পারেননি তিনি। প্রাইমারি লেভেল পর্যন্ত পড়েই তাকে থেমে যেতে হয়। যেতে হয়েছে দারিদ্রতার কষাঘাতে। ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে তাকে নামতে হয় রিজিকের সন্ধানে। পেশাগত জীবনে মেহেদী ছিলেন একজন অটোচালক। ভাড়ায় অটো চালাতেন তিনি। পরবর্তীতে নিজেই একটা অটোর মালিক হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। কিস্তিতে কিনে ফেলেন একটি অটোরিক্সা। এটি চালিয়েই তিনি জীবিকা নির্বাহ করতেন। মেহেদী ছিলেন বিবাহিত। স্ত্রী জেসমিন আক্তার ও তার সংসারে দুটি ছোট্ট ছেলে মেয়েও আছে। ছেলেকে আলেম বানানোর স্বপ্ন ছিল মেহেদীর। মেহেদী যেভাবে শহীদ হন দীর্ঘ জুলুমের অধ্যায় শেষে ছাত্র-জনতার বিপুল বিক্ষোভের তোপে দেশ থেকে পালিয়ে যান স্বৈরাচার শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের প্রত্যেকটি মানুষ ফেটে পড়েন আনন্দ-উচ্ছ্বাসে। এ আনন্দ এসে বিভোর করে মেহেদী হাসানকেও। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে তিনি বের হয়ে যান বিজয় মিছিলের উদ্দেশ্যে। ৭টা ৩০ মিনিটের দিকে মেহেদী জয়পুরহাট সদর থানার সামনে পৌঁছান। আন্দোলনে পুলিশ ছিলো জনতার বিপক্ষে। সারাদেশে নির্বিচারে গুলি করে ছাত্র-জনতার শরীরে। যার ফলে সদ্য পালিয়ে যাওয়া প্রধানমন্ত্রীর পালানোর সাথে সাথেই ছাত্র-জনতা সারাদেশে থানাগুলোকে ঘেরাও করে এবং বিভিন্ন জায়গায় আগুন জ্বালিয়ে দেয়। তেমনিভাবে আগুন জ্বালানো হয় জয়পুরহাট সদর থানাতেও। মেহেদী গিয়ে থানাতে আগুনে জ্বলতে দেখতে পায়। থানার সামনেই দেখা হয় তাঁর ভাগিনার সাথে। ভাগিনাকে সে প্রশ্ন করে ‘তুই এখানে ক্যান?’। প্রশ্নটি করে মেহেদী ভাগিনাকে নিয়ে পিছনে ঘুরেন। এদিকে তখনই একটি উড়ন্ত গুলি এসে গুলিবিদ্ধ করে মেহেদীকে। বুকের ভেতরে এসে আঘাত করে বুলেটটি। এটি এসেছিল পিছন দিক থেকে। কে গুলি করেছে জানা যায়নি। থানায় তখন কোনো পুলিশের অবস্থান ছিল না। তবে পরিবার এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের ধারণা, এ গুলিটি করেছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা এবং এ হত্যাকাণ্ডের জন্য তারা-ই দায়ী। পরিবারে শোকের মাতম শহীদ মেহেদী হাসানের মৃত্যুর ৪০ দিন আগে মৃত্যুবরণ করেছিলেন তার বাবা আলতাফ শেখ। বাবার মৃত্যুতে এমনিতেই পরিবারে শোক নেমে এসেছিলো। তার সাথে মেহেদীর মৃত্যু পরিবারকে করে তোলে আরো শোকবিহ্বল । বৃদ্ধ মায়ের কাছে এ আরো কঠিন এক বিভিষীকা। প্রাণপ্রিয় স্বামীকে হারানোর পর এখন আবার কলিজার টুকরোকে চিরতরে বিদায়। মা ফাতেমা বেগম বলেন—‘আমার ছেলে আমার ভরণ পোষণের দায়িত্ব নিয়েছিল এবং আমি তার কাছেই ছিলাম। চার ছেলের মধ্যে সেই আমার বেশি খেয়াল রাখত।’ বোনদের কাছে ছিলো অতিপ্রিয়, বড় বোন শাবানা বলেন, ‘মেহেদী হাসান আমার ছোট ভাই। সে আমার সাথে ঝগড়াও করত আবার মজাও করত। এ বাড়িতে আসলে বলত, তুই এ বাড়িতে ক্যান? যে কোনো খাবার রান্না করলে আমাকে খাওয়াত। সে মারা যাওয়ার তিনদিন আগে বলেছিল, ‘বোন, দেখিস আমার ছেলেকে একজন বড় আলেম বানাবো। সে সবার জানাজা পড়বে।’ তাঁর আরেক বোন বলেন, ‘আমরা এ হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।‘ প্রাণপ্রিয় স্ত্রী জেসমিন আক্তার দুটি ছোট্ট ছেলেমেয়ে এবং পারিবারিক রিনের দিকে তাকিয়ে দিশেহারা হয়ে গিয়েছেন, তিনি বলেন, ‘জানি না আমি কী করব? কীভাবে সন্তানদের মানুষ করব? শহীদ মেহেদী হাসানের পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা শহীদ মেহেদী হাসান ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। মেহেদী মৃত্যুর আগে কিস্তিতে একটি অটোরিক্সা কিনেছিলেন, যা তিনি সম্পুর্ন পরিশোধ করতে পারেননি। একটি বাড়ি করেছিলেন ৩ লক্ষ টাকা ঋণ করে, যেখানে মাত্র এক লক্ষ টাকা পরিশোধ করতে পেরেছিলেন তিনি। সুতরাং, তাঁর পরিবারের অর্থনৈতিক সহায়তা প্রয়োজন। শহীদ মেহেদীর ব্যক্তিগত তথ্য নাম : মেহেদী হাসান জন্ম তারিখ : ২০.০৩.১৯৯৫ শহীদ হওয়ার তারিখ ও সময় : ৫ আগষ্ট ২০২৪, সন্ধ্যা ৭:৩৫ শহীদ হওয়ার স্থান : জয়পুরহাট সদর থানার সামনে আঘাতের ধরণ : বুকেতে গুলিবিদ্ধ হত্যাকারী : সন্ত্রাসী আওয়ামী লীগ পেশা : অটোরিক্সা চালক পিতা : আলতাফ শেখ মাতা : ফাতেমা বেগম স্থায়ী ঠিকানা : নতুনহাট, শেখ পাড়া, জয়পুরহাট সদর, রাজশাহী স্ত্রী : জেসমিন আক্তার শহীদ পরিবারের জন্য সহযোগীতা সংক্রান্ত প্রস্তাবনা ১. ঋণ পরিশোধের ব্যাবস্থা করা ২. পরিবারের স্থায়ী আয়ের ব্যাবস্থা করা