জন্ম তারিখ: ১ আগস্ট, ১৯৯৫
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৭ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: রাজশাহী
পেশা :কাপড়ের ব্যবসা, শাহাদাতের স্থান :শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিট, ঢাকা।
শহীদ মেহেদী হাসান রবিনের জন্ম ১৯৯৫ সালের ১ আগস্ট। তার জন্মস্থান নাটোর জেলার নাটোর সদরের উত্তর বড়গাছা গ্রামে। তার পিতা মৃত বকুল হোসেন। মায়ের নাম আমেনা আক্তার রুবি। ছোটবেলায় তার বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ ঘটে। এরপর থেকে তিনি মায়ের কাছে নানাবাড়িতে বেড়ে ওঠেন। শহীদ মেহেদী হাসান রবিন বিবাহিত ছিলেন। তার স্ত্রী রিতু আক্তার একজন গৃহিণী। তাদের রয়েছে ৪ বছর বয়সী এক পুত্র সন্তান। নাম ওয়াহিদ হাসান রাহাত। শহীদ মেহেদী হাসান রবিন পেশায় ছিলেন কাপড় ব্যবসায়ী। নাটোর শহরের উত্তর প্লাজার দ্বিতীয় তলায় তার রয়েছে লাইফ স্টাইল ফ্যাশনওয়্যার নামে একটি কাপড়ের দোকান। তার এই কাপড়ের ব্যবসা থেকে যা আয় হতো, তা দিয়ে কোনোমতে পরিবারের দৈনন্দিন খরচ চলতো। রবিনের এই কাপড়ের ব্যবসাই ছিল তার পরিবারের একমাত্র আর্থিক ভরসা আর তিনিই ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তাঁর মৃত্যুতে তাঁর পরিবার এখন নিঃস্ব-অসহায়। তার পরিবারে রয়েছে মা, স্ত্রী ও চার বছরের একটি পুত্র সন্তান। যেভাবে শহীদ হন মেহেদী ছাত্রজনতার চূড়ান্ত বিজয়ের দিন নাটোরের অত্যাচারী এমপি শিমুলের বিলাসবহুল বাসভবন জান্নাতি প্যালেসের অগ্নিকাণ্ডে যে পাঁচজন নিহত হন, তাদের মধ্যে অন্যতম শহীদ মেহেদী হাসান রবিন। ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হলে রবিন ছাত্রদের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানান এবং নানাভাবে তাদেরকে সহযোগিতা করেন। আন্দোলনে তিনি নিজেও সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ৫ আগস্ট ২০২৪। শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার খবরে হাজার হাজার মানুষ নাটোরের রাজপথে নেমে আসে। সেদিন নাটোরের অধিকাংশ মানুষের গন্তব্য ছিল অত্যাচারী ও দুর্নীতিবাজ এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুলের বাসা জান্নাতি প্যালেসে। জান্নাতি প্যালেস নাটোরের একটি আলোচিত নাম। এমপি শিমুলের এই বিলাসবহুল বাসভবনে জনসাধারণের প্রবেশ নিষেধ ছিল। এমপি শিমুল পালিয়ে গেলে হাজার হাজার জনতা তার জান্নাতি প্যালেস দেখার জন্য উপস্থিত হয়। সে উদ্দেশ্যে রবিনও উপস্থিত হয় সেই আলোচিত-সমালোচিত জান্নাতি প্যালেসে। বিক্ষুব্ধ জনতা জান্নাতি প্যালেস ভাঙচুর করে এবং অনেকেই কৌতুহলবশত উপরতলায় ওঠে। রবিনও উপরে উঠেছিলেন। কিন্তু হঠাৎই নিচ তলায় আগুন ধরে যায় এবং তা দ্রুত চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। রবিন সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামার চেষ্টা করেন কিন্তু আগুনের শিখা তাকে দগ্ধ করে ফেলে। তাৎক্ষণিকভাবে তাকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে রবিনকে ঢাকায় শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে ৭ আগস্ট সন্ধ্যায় রবিন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। শহীদ রবিনের সংগ্রামী জীবন মেহেদী হাসান রবিনের শৈশব ছিল সংগ্রামের ছোটবেলায় তার বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ ঘটে এবং তার মা আমেনা আক্তার রুবি অন্যত্র বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। রবিন তার নানাবাড়িতেই বড় হতে থাকেন। পরে মায়ের দ্বিতীয় স্বামীর মৃত্যু হলে মা ও ছেলে দুজনেই স্থায়ীভাবে নানাবাড়িতে বসবাস করতে শুরু করেন। রবিন নাটোর এনএস কলেজে তৃতীয় বর্ষ পর্যন্ত পড়ালেখা করেন। তবে পরিবারের অভাবের কারণে পড়াশোনা ছেড়ে দেন এবং সংসারের হাল ধরেন। নাটোর শহরে একটি দোকান ভাড়া নিয়ে তিনি কাপড়ের ব্যবসা শুরু করেন। এই সময়েই রবিন ঋতু আক্তারের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের সুখী সংসারে ছোট্ট ছেলে রাহাতের আগমনে আরো খুশির ছোঁয়া লাগে। রবিন ছিলেন অত্যন্ত সৌখিন। মাঝেমধ্যেই মোটরসাইকেল নিয়ে দূরে ঘুরতে যেতেন। এমনকি ভারতেও ভ্রমণ করেছেন। শহীদ পরিবারের আহাজারি রবিনকে হারিয়ে তার পরিবারে এখন চলছে শোকের মাতম। চারিদিকে হাহাকার, আহাজারি। রবিনের মা বলেন, "ছেলেকে নিয়ে আমার হাজারো স্মৃতি। ওর ছোটবেলায় দেশে বড় বন্যা হয়েছিল। সেই সময় আমি ওকে আগলে রেখেছিলাম। আর এখন যখন আমার ছেলেটা প্রতিষ্ঠিত হলো, ঠিক তখনই সে পৃথিবী ছেড়ে, আমাকে ছেড়ে চলে গেল। আমার একটা মাত্র সন্তান! এখন আমি কীভাবে বাঁচব?" রবিনের স্ত্রী রিতু আক্তার বলেন, "রবিন ছিল অত্যন্ত পরোপকারী। কারো কোনো বিপদে বা কারো রক্তের প্রয়োজন হলে রবিন সবার আগে ছুটে যেত। আমার চোখের সামনে সে এভাবে চলে গেল! এখন আমার আর আমার বাচ্চাটার কী হবে? আমার বাচ্চাটা আজকে এতিম হয়ে গেল! পৃথিবীর সবকিছু দিলেও তো আমার বাচ্চাটা আর বাবা ডাকতে পারবে না। বাবার ভালোবাসা পাবে না।" এক নজরে শহীদ মেহেদী হাসান রবিন নাম : মো. মেহেদী হাসান রবিন জন্ম তারিখ : ০১.০৮.১৯৯৫ আহত হওয়ার তাং ও সময় : ৫ আগস্ট, ২০২৪; বিকাল ৪টা আহত হওয়ার স্থান : জান্নাতি প্যালেস (অত্যাচারী এমপি শিমুলের বাসভবন), নাটোর সদর শহীদ হওয়ার তাং ও সময় : ৭ আগস্ট, ২০২৪; সন্ধ্যা ৭টা শহীদ হওয়ার স্থান : শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিট, ঢাকা আঘাতের ধরন : আগুনে পোড়া সমাধিস্থল : বড় গাছা কবরস্থান, নাটোর পেশা : কাপড়ের ব্যবসা পিতা : মৃত বকুল হোসেন মাতা : মোছা. আমেনা আক্তার রুবি স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: উত্তর বড়গাছা, থানা+জেলা: নাটোর স্ত্রী : মোছা: ঋতু আক্তার, বয়স: ২৫ বছর, গৃহিণী, শিক্ষা: এইচএসসি পাশ সন্তান : ছেলে: ওয়াহিদ হাসান রাহাত, বয়স: ৪ বছর ভাইবোন : নেই বাড়িঘর ও সম্পদ : একটি টিনশেডের ঘর। সম্পদ নেই শহীদ পরিবারের জন্য সহযোগিতা সংক্রান্ত প্রস্তাবনা ১. শহীদ রবিনের মায়ের আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন ২. রবিনের দোকানটি তার স্ত্রী চালাতে ইচ্ছুক, যাতে সে তার ছেলের জন্য কিছু করতে পারে তবে এর জন্য আর্থিক সাহায্য প্রয়োজন ৩. ছেলের লেখাপড়ার দায়িত্ব গ্রহণ