Image of মো: সাগর হাওলাদার

নাম: মো: সাগর হাওলাদার

জন্ম তারিখ: ১৫ মে, ২০০৬

শহীদ হওয়ার তারিখ: ২৪ জুলাই, ২০২৪

বিভাগ: বরিশাল

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা :শিক্ষার্থী, শাহাদাতের স্থান :পঙ্গু হাসপাতাল, শ্যামলী

শহীদের জীবনী

সাগর হাওলাদার একটি পরিবারের স্বপ্ন, গ্রামের গর্ব, এবং সংগ্রামী যুবকের নাম। জন্মেছিলেন ১৫ মে ২০০৬ সালে, বরিশালের আগৈলঝড়ার বাগদা ইউনিয়নের এক ছোট্ট গ্রামে। তার বাবা, নুরুল হক হাওলাদার, গ্রামের একটি প্রাথমিক স্কুলের নৈশপ্রহরী, যিনি সীমিত আয়ের মধ্যে পরিবারটি টিকিয়ে রেখেছিলেন। মা মোসা: আম্বিয়া খাতুন, একজন সাদামাটা গৃহিণী, স্বামীর আয়ের উপর নির্ভর করে সংসার চালাতেন। পরিবারটির মাসিক আয় মাত্র দশ হাজার টাকা, যা দিয়ে সাগরের পড়ালেখা, পরিবারটির দৈনন্দিন খরচ এবং অন্যান্য প্রয়োজন মেটানো ছিল খুবই কষ্টসাধ্য। গ্রামের মেঠো পথ, চারপাশের সবুজ ছায়া, আর খোলা আকাশের নিচে বেড়ে ওঠা সাগরের শৈশবটা ছিল দারির্দ্যের সাথে এক যুদ্ধের মতো। ছোটবেলা থেকেই সে বুঝে গিয়েছিল জীবনের বাস্তবতা কতটা কঠিন হতে পারে। কিন্তু তবুও সে থেমে থাকেনি। পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ ছিল তার অবিচল, আর পরিবারের প্রতি ছিল অগাধ দায়িত্ববোধ। জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে দারির্দ্যের সাথে লড়াই করতে করতে সে বড় হয়েছে। সাগরের ছোট্ট গ্রামটি ছিল সরল প্রকৃতির এক নিস্তব্ধ প্রান্তর, যেখানে খোলা বাতাসের ছোঁয়া আর ধানক্ষেতের মনোরম দৃশ্য তাকে নতুন স্বপ্ন দেখিয়েছে। তার চলার পথে নানান সীমাবদ্ধতা থাকলেও, নিজের মেধা আর সাহসিকতা দিয়ে সে পরিবার এবং সমাজের প্রতি নিজের দায়িত্ব পালন করতে চেয়েছিল। কিন্তু নিয়তির নিষ্ঠুরতায়, সাগর আজ আর নেই। তার শাহাদাত শুধু তার পরিবারকে নয়, পুরো গ্রামকেই শোকের সাগরে ভাসিয়েছে। সাগরের জীবনের গল্প কেবল একটি পরিবারের সংগ্রাম নয়, এটি একটি লড়াকু আত্মার গল্প, যে সব বাধা অতিক্রম করে নিজের স্বপ্ন পূরণের জন্য এগিয়ে যেতে চেয়েছিল। শহীদ পরিবারের দারিদ্রতার ছাপ বাবা মা ভাই বোন মিলে ৬ জনের পরিবার ছিল শহীদ মো: সাগর হাওলাদারের। বাবা (নুরুল হক হাওলাদার, ৩৯) সামান্য একটি প্রাইমারী স্কুলের নাইট গার্ডের কাজ করে। তা দিয়েই তাদের সংসার চলতো। ছেলে যাতে খারাপ না হয়ে যায়, তার জন্য তার চাচার কাছে ঢাকাতে পাঠিয়ে দেয়। সেখানে শহীদ সাগর হাওলাদার একটি দোকানে কাজ নিয়েছিল সে। পড়ালেখার পাশাপাশি দোকানে কাজ করে সংসারে যেন কিছু অবদান রাখতে পারে। স্কুলের পাশের জমিতে একটি টিনের ঘরে তারা বাবা মা আর বোন বসবাস করে। সাগর হাওলাদারের নামে তার বাবা একটা জুতার কারখানা দিয়েছিলেন। কিন্তু তা বেশি দিন করতে পারে নাই। সেখানে অনেক টাকা ক্ষতি হয়ে যায়। এখন প্রায় ৫ লক্ষ টাকা সহ আরও কিছু টাকা ঋণ আছে। যা তাদের পক্ষে পরিশোধ করা অনেক কঠিন কাজ। যদিও সাগর ঢাকায় ছিল, তার মন সবসময় পরিবারের প্রতি নিবদ্ধ ছিল, এবং সে পরিবারের জন্য কিছু করতে চেয়েছিল। বাড়ির অবস্থা ছিল অত্যন্ত সাধারণ-স্কুলের পাশের জমিতে একটি টিনের ঘরে বাবা-মা, এবং ছোট বোন বসবাস করতেন। এই ঋণের বোঝা তাদের জীবনকে আরো সংকটময় করে তুলেছে, তবুও সাগরের বাবা-মা ও বোন জীবনযুদ্ধে টিকে থাকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। ঘটনার প্রেক্ষাপট ১৯ জুলাই ২০২৪ সালে ধানমন্ডি আবাহনী মাঠের সামনে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মিছিলে সাগর হাওলাদার অংশগ্রহণ করেন। মিছিল চলাকালীন সময়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার সৃষ্টি হয়। এ সময় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে সাগর পুলিশের সামনে পড়ে যায়। পুলিশ তাকে তৎক্ষণাৎ পালিয়ে যেতে নির্দেশ দেয়। দৌড়ানোর চেষ্টা করলে সে আহত হয়ে রাস্তায় পড়ে যায়। রাস্তায় পড়া অবস্থায় গুলি করে পাষন্ড পুলিশ। সাগরের বন্ধুরা তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হলেও, তার পায়ের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তা আরও বেশি যত্নের প্রয়োজন ছিল। হাসপাতালে তাকে তৎক্ষণাৎ সঠিক চিকিৎসা না দেওয়ার কারণে তার পায়ের ক্ষত ক্রমশ খারাপ হতে শুরু করে। তার পায়ে ইনফেকশন ছড়িয়ে পড়ে, এবং ধীরে ধীরে তার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি ঘটে। তিন দিন পর, সাগরের বাবা-মা হাসপাতালে এসে তার শারীরিক অবস্থার জটিলতা প্রত্যক্ষ করেন। চিকিৎসকেরা তার পা কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু তখন ইতোমধ্যেই অনেক দেরি হয়ে যায়। অবশেষে, সমস্ত কষ্ট সহ্য করে এবং সরকারি অবহেলার শিকার হয়ে সাগর মারা যান। সাগরের শাহাদাত কেবল একটি পরিবারের জন্য শোকের কারণ নয়, এটি একটি বড় পরিসরের সামাজিক অবক্ষয়ের প্রতিচ্ছবি। তার স্বপ্ন ছিল পরিবারকে সহায়তা করা। নিজের জীবনে কিছু অর্জন করা এবং সমাজের উন্নয়নে অবদান রাখা। কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণের আগেই তার জীবন অকালে থেমে যায়। শহীদ সম্পর্কে অনুভুতি সাগর হাওলাদারের চাচা মাইনুল হক হাওলাদারের কণ্ঠে গভীর বেদনা ও শোকের প্রতিধ্বনি শোনা যায়। তিনি বলেন, "সাগর ছিল আমাদের পরিবারের একমাত্র ছেলে, আমাদের সকল স্বপ্নের কেন্দ্রবিন্দু। সাগরকে ঘিরে আমাদের যে আশার আলো ছিল, তার মৃত্যু সেই আলো একেবারে শেষ করে দিয়েছে। এক নজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্য পুরো নাম : মো: সাগর হাওলাদার জন্ম : ১৫/০৫/২০০৬ পেশা : শিক্ষার্থী স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা : হাওলাদার বাড়ি, ইউনিয়ন: বাগদা, থানা: আগৈলঝড়া, জেলা: বরিশাল পিতার নাম : নুরুল হক হাওলাদার, পেশা: নৈশপ্রহরী, বয়স: ৪০ মাতার নাম : মোসা: আম্বিয়া খাতুন, গৃহিণী মাসিক আয় : ১০,০০০/- আয়ের উৎস : বাবার আয় পরিবারের সদস্য সংখ্যা : ৬ জন ভাই-বোনের সংখ্যা : ২ ভাই, ২ বোন : ১. মো: মরিয়ম হাওলাদার, বয়স: ১২, পেশা: শিক্ষার্থী, প্রতিষ্ঠান: পূর্ব বাগদা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সম্পর্ক: বোন ঘটনার স্থান : ধানমন্ডি, আবাহনী মাঠ আক্রমণকারী : পুলিশের গুলিতে আহত হওয়ার সময়কাল : ১৯ জুলাই ২০২৪, বিকাল ৫ টা নিহত হওয়ার সময়কাল : ২৪ জুলাই ২০২৪, সন্ধ্যা ৬ টা স্থান : পঙ্গু হাসপাতাল, শ্যামলী কবরস্থান : পারিবারিক কবরস্থান প্রস্তাবনা : ১. বাসস্থানের প্রয়োজন : ২. বাবার জন্য কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করে দিলে উপকার হবে

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: সাগর হাওলাদার
Image of মো: সাগর হাওলাদার
Image of মো: সাগর হাওলাদার
Image of মো: সাগর হাওলাদার

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন

 মোঃ ফজলু

মো: সাগর গাজী

মো: সজিব

মো: সেলিম তালুকদার

মো: আল-আমিন

মো: মিজানুর রহমান

মো: আখতারুজ্জামান নাঈম

মো: জিহাদ হোসেন

মো: হাসান

মো: মিজানুর রহমান

 মোসা: লিজা

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo