Image of  মো: জামাল হোসেন শিকদার

নাম: মো: জামাল হোসেন শিকদার

জন্ম তারিখ: ১১ ডিসেম্বর, ১৯৮৩

শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৯ জুলাই, ২০২৪

বিভাগ: বরিশাল

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : অটো রিক্সা চালক, শাহাদাতের স্থান : সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল,ঢাকা

শহীদের জীবনী

মৃত্যুর পরেও স্মৃতি ধরে রাখার আরেক নাম কর্ম। ছায়াসুনিবিড় শান্তির নীড় আমাদের এই গ্রাম বাংলা। ৬৮ হাজার গ্রাম নিয়ে গড়ে উঠেছে অপরূপ নৈসর্গিক সৌন্দর্যের এই বাংলাদেশ। হাজারো গ্রামের ভেতর ভোলা জেলার বোরহানউদ্দিন থানার অন্তর্ভুক্ত চরচিটিয়া তেমনি একটি গ্রাম। শত শত বছর ধরে গ্রামের সহজ-সরল মানুষগুলো সেখানে মিলেমিশে বসবাস করে আসছে। এই গ্রামে পিতা মোহাশীন শিকদার ও মাতা সালেহা বেগমের মুখ আলোকিত করে ১৯৮৩ সালের ১১ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন এক নবজাতক। মাতা-পিতা ভালোবেসে নাম রাখেন মো. জামাল হোসেন শিকদার তিনি শৈশবকাল থেকেই নম্র, ভদ্র এবং একজন পরোপকারী ব্যক্তি ছিলেন। হাজারো দুঃখ-কষ্টের মধ্যে বেড়ে ওঠা জামাল ছিলেন নরম মনের অধিকারী। তিনিও চেয়েছিলেন সমাজের বাকি দশজনের মতো স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সংসার সাজাতে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, ৯ বছর আগে তার স্ত্রী একমাত্র মেয়েকে নিয়ে তাকে ছেড়ে আলাদা হয়ে যান। এরপর থেকে শুরু হয় তার একাকী জীবন, যার কেন্দ্রবিন্দু ছিল তার মা ও ভাইরা। তিনি জীবন ও জীবিকার তাগিদে গ্রাম ছেড়ে রাজধানীতে পাড়ি জমান অটো চালাতে, যার একমাত্র স্বপ্ন ছিল মা-বাবাকে ভালো রাখা। পারিবারিক অবস্থা: মূলত মো: শহীদ জামাল হোসেন শিকদার ঢাকায় এবং তার বৃদ্ধ মা-ভাইরা গ্রামের বাড়িতে থাকতেন। পরিবার ও মা-ভাইদের সকল খরচই জামাল উদ্দিনের আয়ের উপর নির্ভরশীল ছিল। বাড়িতে বসতভিটা ছাড়া বাইরে কোনো জমি বা সম্পদ ছিল না। এখানে তাঁর মা ও ভাইয়েরা বসবাস করতেন, তবে সেটার অবস্থাও ছিল জীর্ণশীর্ণ। এই করুণ অবস্থার মধ্যে দিন কাটাচ্ছিলেন জামাল উদ্দিনের মাতা এবং এক ভাই, যিনি মৃগী রোগী। তার শাহাদাতে পরিবারটি একেবারে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। তাকে হারিয়ে পুরো পরিবার এখন পথে নামার অবস্থায়। তাদের নিজের বলতে এখন আর কোনো সম্পদই অবশিষ্ট নেই। অন্যদিকে অটো গাড়ি কেনার জন্য তিনি দুই লক্ষ টাকা ঋণ করেছিলেন, যেটা এখন মরার পর খাড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে পরিবারটির জন্য। বর্তমানে তারা অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত। এখন তারা চিন্তিত, কিভাবে চলবেন এবং কিভাবে সংসারের খরচ চালাবেন। পরিবার প্রধানের অভাব তাদের জীবনকে অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে। তাই তো কবি বলেছিলেন, "দুঃখরা কেন এভাবে মিছিল করে আসে খেটে খাওয়া মানুষগুলোর জীবনের স্পন্দন থামিয়ে দিয়ে? দুঃখরা কেন বারবার ওদেরকেই ভালোবাসে ওদের হাসি-কান্নায় ভরপুর জীবনকে স্তব্ধতায় ঢেকে দিয়ে?" এই দুরবস্থার মধ্যে তারা আশা করছে, সমাজ তাদের সহায়তা করবে যাতে তাদের জীবনে কিছুটা আলো ফিরে আসে। ঘটনার বিবরণ: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলছিল জুলাই ২৪ জুড়ে। ছাত্ররা মূলত শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ, মানববন্ধন, প্রতিবাদ সভা, এবং সেমিনারের মাধ্যমে তাদের দাবি তুলে ধরছিল। তবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আন্দোলনটি সংঘাতপূর্ণ হয়ে ওঠে, যেখানে নিরাপত্তা বাহিনী ও ছাত্রদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। কারণ স্বৈরাচার সরকার ছাত্রদের ন্যায্য দাবি না মেনে তাদের ওপর অত্যাচারের স্টিমরোলার চালাচ্ছিল। সারাদেশ জুড়ে গুলি, রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড, এবং টিয়ার শেল ছোঁড়া হচ্ছিল ছাত্র-জনতাকে লক্ষ্য করে। খালি হয়ে যাচ্ছিল হাজারো মায়ের বুক, পিতাহারা হয়ে পড়ছিল হাজারো শিশু, আর হাতের মেহেদির রং শুকানোর আগেই অনেকেই বিধবা। এই আন্দোলনের জের ধরেই গত ১৯ জুলাই, শুক্রবার সকালে নাস্তা করে অটোরিকশা নিয়ে বের হন জামাল উদ্দিন। কিন্তু পথিমধ্যে ছাত্র আন্দোলনের মুখে পড়েন, যেখানে ছাত্র ও পুলিশের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও গুলাগুলি চলছিল। এমতাবস্থায় হঠাৎ একটি গুলি এসে লাগে জামালের বুকে এবং সাথে সাথে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তখন সাধারণ জনতা তাকে ধরাধরি করে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলে নিয়ে যান এবং হৃদরোগ বিভাগে ভর্তি করেন। কিন্তু তার পরিবারকে নিঃস্ব করে বেলা ১১:৩০-এ এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে পরপারে পাড়ি জমান জামাল উদ্দিন। এসব দেখে দেশের সাধারণ মানুষও চুপ করে বসে থাকতে পারেনি। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন ড্রাইভার জসীম উদ্দিন, যিনি মজলুম ছাত্র-জনতার মুখে নিজের সন্তানদের ছাপ দেখতে পেতেন। তাই বিবেকের কাছে হার মেনে ড্রাইভিং বাদ দিয়ে প্রতিদিনই শামিল হতেন আন্দোলনে। সে সময় চরম প্রতিকূলতার মধ্যেও ছাত্র-জনতার পাশে থেকে সাহায্য করার চেষ্টা করতেন। এক পর্যায়ে এই আন্দোলন সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নেয়। সারাদেশে ঢল নামে ছাত্র-জনতার। মুখে মুখে আন্দোলিত হতে থাকে হাসিনার পতন ধ্বনি। সর্বোপরি, ৪ আগস্ট থেকে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছিল ছাত্র-জনতা। সেদিন বিকেলেই ঘোষণা আসে "লং মার্চ টু ঢাকা" হবে পরের দিন। এরই মধ্যে দেশ স্বৈরাচার মুক্ত হয়। কিন্তু সেই মুক্ত দেশের মুক্তির আনন্দ উপভোগ করতে পারেননি শহীদ মো. জামাল উদ্দিন। শহীদ সম্পর্কে নিকটাত্মীয় ও বন্ধুদের অনুভূতি: কথায় আছে, ÒA man does not live in years but in deedsÓ এটাই যথার্থ জামাল উদ্দিনের ক্ষেত্রে। জামাল উদ্দিনের এক প্রতিবেশী বলেন, জামাল উদ্দিন ছেলে হিসেবে খুবই ভালো ছিলেন। সবার সাথে হাসিমুখে কথা বলতেন। কারো সাথে কোনো ব্যক্তিগত শত্রুতা ছিল না। তাছাড়া এলাকার সকল মানুষ একই কথা বলেছে জামাল উদ্দিন সম্পর্কে। জামাল উদ্দিনের বোন বলেন, "আমার ভাই খুব ভালো মানুষ ছিলেন, কখনো কারো সাথে ঝগড়া-বিবাদ করেননি। গ্রামের সবার সাথে ভালো সম্পর্ক ছিল তার। ঈদে আমাদের জামা-কাপড় কিনে দিতেন। তার কথা মনে পড়লে খুবই খারাপ লাগে।" এক নজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্য পুরো নাম : মো: জামাল হোসেন শিকদার জন্ম : ১১-১২-১৯৮৩ পেশা : অটোরিকশা চালক পিতা : মোহাশীন শিকদার মাতা : মোসা: ছালেহা বেগম ঠিকানা : গ্রাম: চরচিটিয়া, ইউনিয়ন: দেউলা, ৯ নম্বর ওয়ার্ড, থানা: বোরহানউদ্দিন, জেলা: ভোলা বর্তমান ঠিকানা : মোহাম্মদপুর, ঢাকা পরিবারের সদস্য সংখ্যা : ৪ জন : ১. ভাই: কামাল (বয়স ৩০ বছর, মৃগী রোগী) : ২. ভাই: লিটন (বয়স ২৭ বছর, অটোরিকশা চালক) : ৩. বোন: রিনা বেগম (বয়স ২২ বছর, বিবাহিত) আহত হওয়ার স্থান ও তারিখ : মোহাম্মদপুর আল্লাহ করিম মসজিদ, ১৯ জুলাই, বেলা ১০:০০ টা আক্রমণকারী : পুলিশ নিহত হওয়ার তারিখ ও স্থান : হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় , বেলা ১১:৩০টা , ১৯/০৭/২০২৪ সমাধি : মোহাম্মদপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থান শহীদ পরিবারকে সাহায্যের প্রস্তাবনা : ১. ভাইয়ের জন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করে দিলে উপকার হবে : ২. ভাইয়ের চিকিৎসার খরচের ব্যবস্থা করা : ৩. পরিবারের জন্য বাসস্থানের ব্যবস্থা করা

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of  মো: জামাল হোসেন শিকদার
Image of  মো: জামাল হোসেন শিকদার
Image of  মো: জামাল হোসেন শিকদার

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: ইমরান হোসেন

মো: জাকির হোসেন

মো: রাকিব

আবদুল ওয়াদুদ

মো: শাহীন বাড়ি

মো: আরিফ

মো: আল আমিন হোসেন আগমন

 মোসা: লিজা

মো: রাকিব বেপারী

হাফেজ মো: জসিম উদ্দিন

রাকিব হাওলাদার

মো: মিজানুর রহমান

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo