জন্ম তারিখ: ১ আগস্ট, ১৯৯৫
শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৯ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: ঢাকা_সিটি
পেশা: চাকরি, বায়িং হাউজ শাহাদাতের স্থান : মিরপুর-১০ সংলগ্ন, ঢাকা
"যৌক্তিক আন্দোলনে হার না মানা আসিফ" শহীদ মো: আসিফ ইকবাল ১ আগস্ট ১৯৯৫ সালে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা এম এ রাজ্জাক (৫৯) পেশায় সাবেক জিএম। তার মা রাবেয়া সুলতানা (৫২) পেশায় গৃহিণী। পিতার বর্তমানে কোনো আয়ের উৎস নেই। তার পিতা-মাতার শারীরিক এবং মানসিক অবস্থা শোচনীয়। শহীদ মো: আসিফ ইকবাল পরিবারের একমাত্র ছেলে সন্তান হওয়ার কারণে তাকেই একটি পর্যায়ে সংসারের হাল ধরতে হয়েছিল। তিনি ঢাকায় একটি বায়িং হাউজে চাকরি করতেন। ঢাকার মিরপুর পল্লবীতে ভাড়া বাসায় থাকতেন। ছেলের আয়েই তাদের বৃদ্ধ মা-বাবা এবং বোনের সার্বিক খরচের সংস্থান হতো। শহীদের একমাত্র বোন শারমিন (২৭) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স এ অধ্যয়নরত। সংসারের হাল ধরার একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে বৃদ্ধ মা-বাবা অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। শাহাদাতের সুধা পান: ২০২৪ সালের জুলাই মাসের শুরু থেকেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সূচনা হয়। যত দিন যায় আন্দোলনের গতি ততই বাড়তে থাকে। ১৫ জুলাই ২০২৪ থেকে আন্দোলনের গতি তীব্র থেকে তীব্রতর আকার ধারণ করে। সেদিনই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বক্তব্যের মাধ্যমে তার গুন্ডা লীগকে লেলিয়ে দেয়। পরের দিন ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে থেকে ট্রাক ও বাসযোগে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, এবং ছাত্রলীগ দেশি ও বিদেশি আগ্নেয় অস্ত্র নিয়ে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার উপর হায়েনার পশুর মতো ঝাপিয়ে পড়ে। শহীদ মোহাম্মদ আসিফ ইকবাল ছাত্র-জনতার আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। তিনি ১৯ জুলাই ২০২৪ শুক্রবার বিকাল তিনটার সময় বাসা থেকে বের হন। উদ্যেশ্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগদান করা। এরপর মিরপুর-১০ নাম্বার ফলপট্টি সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান নেন। সকাল থেকেই সেদিন মিরপুর এলাকায় ছাত্র-জনতার ঢল নামে। একদিকে ছাত্র জনতার তিব্র আন্দোলন অন্যদিকে স্বৈরাচার সরকারের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিবন্ধকতা। এই ন্যায্য আন্দোলনকে দমন করার জন্য তারা ছাত্র জনতার উপর নির্মম নির্যাতন চালায়। আন্দোলনের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র ছিল রাজধানীর মিরপুর এলাকা। স্বৈরাচারী সরকার তার সর্বশক্তি প্রয়োগ করে আন্দোলন দমন করার জন্য। যার অংশ হিসেবে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে হেলিকপ্টার দিয়ে উপর থেকে গুলি করা হয়। আসিফ সেনপাড়া মসজিদে আসরের নামাজ আদায় করে বের হলে হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া গুলি তার বুকে এসে বিদ্ধ হয়। একটি ভিডিওতে দেখা যায় গুলি লাগার পরেও তিনি হাঁটার চেষ্টা করছিলেন। কিন্ত কিছুদূর যেতেই হুমড়ি খেয়ে রাস্তায় পড়ে যান। তীব্র গোলাগুলির মুখে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কয়েকজন তাকে উদ্ধার করে আল হেলাল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে তাকে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এভাবেই শাহাদাতের অমিয় সুধা পান করেন মা-বাবার একমাত্র ছেলে শহীদ আসিফ ইকবাল। তাকে গ্রামে স্থানীয় কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। রেখে যাওয়া স্মৃতি ছোটবেলা থেকেই তিনি মিশুক ছিলেন। সবার সাথে সুন্দর ব্যবহার করাই ছিল তার অভ্যাস। মা-বাবা এবং বড়দেরকে তিনি সম্মান করতেন। পরোপকার করতে ভালোবাসতেন। এক নজরে শহীদের তথ্য নাম : মো: আসিফ ইকবাল, পেশা-চাকরি, বায়িং হাউজ জন্ম : ০১ আগস্ট, ১৯৯৫ সাল পিতা : এম এ রাজ্জাক মাতা : রাবেয়া সুলতানা, পেশা-গৃহিণী আহত হওয়ার তারিখ, সময় ও স্থান : ১৯ জুলাই ২০২৪, বিকাল ৫:৩০, মিরপুর ১০, ফলপট্টি শাহাদাতের তারিখ : ১৯ জুলাই ২০২৪, সন্ধ্যা ৬ টা দাফন: নিজগ্রাম স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: নোহাটা, ইউনিয়ন : সর্দারপুর, থানা: শ্রীপুর, জেলা: মাগুরা বর্তমান ঠিকানা : বাসা: ২৮/৭, থানা: মিরপুর পল্লবী, জেলা: ঢাকা
নিশ্চয় আল্লাহ মুমিনদের প্রাণ ও ধন-সম্পদ জান্নাতের বিনিময়ে ক্রয় করেছেন। তারা আল্লাহর পথে লড়াই করে, মারে ও মরে। (সুরা তাওবা ৯:১১১)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “শহীদদের জন্য জান্নাতে বিশেষ মর্যাদা রয়েছে।” (সহীহ বুখারী ২৮০০)




