জন্ম তারিখ: ৭ মার্চ, ২০০১
শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৯ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: বরিশাল
পেশা : ডেলিভারি বয়, শাহাদাতের স্থান :ঢাকা মেডিকেল কলেজ
শহীদ মো: আল-আমিন (রনি) এক দরিদ্র পরিবারের সন্তান। তিনি ২০০১ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর জন্মস্থান বরিশাল জেলার বানারীপাড়া থানার বেতাল, সালিয়া বাকপুর ইউনিয়নের হাওলাদার বাড়ি গ্রামে। বাল্যকালে শহীদ মো: আল-আমিন তার পিতাকে হারান। তার পিতার নাম মরহুম মো: দুলাল হোসেন এবং মাতার নাম মোসা: মেরিনা বেগম। শহীদ মো: আল-আমিন পড়াশোনার পাশাপাশি ডেলিভারি বয়ের কাজ করতেন। এভাবেই তাদের মা-ছেলের সংসার চলত। জুলাই বিপ্লবে পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে তিনি শাহাদাত বরণ করেন। পরিবারের বর্তমান অবস্থা: তাদের পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই খারাপ। পরিবারে উপার্জনক্ষম কোনো লোক নেই। আল-আমিনের বাবা ২০২০ সালে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। মৃত্যুর আগে তিনি মাছের ব্যবসা করতেন। বাবা মারা যাওয়ার পর আল-আমিন পরিবারের হাল ধরেন। কিন্তু বেশি দিন ধরে রাখতে পারলেন না। ঘাতকের আঘাতে অকালে প্রাণ হারাতে হলো। দুবেলা দুমুঠো খাবার জোগাতে তার ছোট ভাই আব্দুর রহীম এখন একটি হোটেলে কাজ শুরু করেছে। সামান্য যা আয় করে, তা দিয়েই সংসার চলে। পরিবারে এখন মা এবং তার ছোট ছেলে থাকে। একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলে মারা যাওয়ায় তাদের এখন অভিভাবকহীন অবস্থায় পড়েছে। অর্থনৈতিকভাবে তারা আগে থেকেই ভঙ্গুর ছিল, এখন পরিস্থিতি আরও শোচনীয় হয়ে গেছে। তার মা এখন মানুষের কাছে সাহায্য চেয়ে দিনাতিপাত করছেন। শহীদ হওয়ার ঘটনা: মহাখালী ফ্লাইওভারের নিচে পুলিশের ও ছাত্রলীগের যৌথ হামলায় গুলিবিদ্ধ হন ১৯-০৭-২০২৪ তারিখ বিকাল ৬টায়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০-০৭-২০২৪ তারিখ রাত ১২টায় তিনি শাহাদাত বরণ করেন। আল-আমিনের বাবা করোনার সময়ে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। সংসারের হাল ধরার মতো কেউ ছিল না। ছোট আল-আমিন কচি হাতেই সংসার মেরামতের কাজে লেগে যান। বাবার ব্যবসা পরিচালনা করা তার পক্ষে সম্ভব ছিল না। তাই লেখাপড়াও চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। এরপর ঢাকায় কাজের খোঁজে চলে আসেন। ছোটখাটো কাজ করে যা আয় করতেন, তা সংসারে লাগাতেন। মা ছাড়া তার আর কোনো অভিভাবক ছিল না। তাই তিনি তার মায়ের একমাত্র ভরসার স্থান ছিলেন। গ্যারেজে কাজ শুরু করেন এবং সংসারের জন্য বিয়ে করেছিলেন। কিন্তু সেই বিয়ে তার জন্য সুখকর হয়নি। পারিবারিক সমস্যায় প্রায়ই হেনস্তার শিকার হতেন। বাবার অভাব এবং অর্থনৈতিক চাপ সবসময় তাকে হতাশায় রাখত। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যৌক্তিক দাবি দেখে আল-আমিন আন্দোলনে যোগ দেন। তিনি একটি স্বাধীন ও সুন্দর রাষ্ট্রের স্বপ্নে শামিল হন। এতিম এই ছেলেটি ছাত্রদের নানা ভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করতেন। ছাত্র-জনতার এই লড়াই সারা জুলাই মাস জুড়ে চলতে থাকে। সরকার ছাত্রদের ওপর চড়াও হয়। ১৯ জুলাই পুলিশ, আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের সন্ত্রাসী বাহিনী ছাত্র-জনতাকে টার্গেট করে হামলা চালায়। মহাখালী ফ্লাইওভারের নিচে পুলিশের এবং ছাত্রলীগের হেলমেট বাহিনীর গুলিতে আহত হয়ে লুটিয়ে পড়েন শহীদ মোঃ আল-আমিন (রনি)। ১৯ জুলাই বিকাল ৬টায় তার বুকে গুলি লাগে এবং রাত ১২টায় তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজে মৃত্যুবরণ করেন। শহীদ সম্পর্কে অনুভূতি: মোহাম্মদ রিয়াদ বলেন, "আমার ভাতিজা তার বাবার মৃত্যুর পর পরিবারের সব দায়িত্ব পালন করত। কিন্তু এখন তার মৃত্যুতে পরিবারটি অসহায় অবস্থায় রয়েছে। কোনো আত্মীয়-স্বজন তাদের দেখার মতো নেই। পারিবারিক সমস্যার কারণে শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাদের পরিবারকে নানা সমস্যার মধ্যে ফেলেছে। বিভিন্ন মামলার ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েছে।" আল-আমিনের মা বলেন, "আমার ছেলে আমার একমাত্র ভরসার পাত্র ছিল। তার বাবার মৃত্যুর পর আমার ভরসা ছিল আল-আমিন। আজ সেই ছাতাটুকুও হারালাম। তার মৃত্যুর পর বিভিন্ন জায়গা থেকে আর্থিক সাহায্য এলেও তা ছেলের বউ নিয়ে যায়। আমার দেনা রয়েছে যা আমি পরিশোধ করতে পারছি না। আপনারা যদি কোনো সহায়তা করেন, তবে আমাকে যেন কিছু দেন।" শহীদ পরিবারের জন্য প্রস্তাবনা: ১. বাসস্থানের ব্যবস্থা। ২. ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা। ৩. ছোট ভাইয়ের লেখাপড়ার খরচ যোগাতে সহায়তা। এক নজরে শহীদ মো: আল-আমিন (রনি) নাম : মো: আল-আমিন পেশা : ডেলিভারি বয় জন্ম তারিখ : ০৭-০৩-২০০১ বয়স : ২৩ বছর পিতা : মরহুম মো: দুলাল হাওলাদার মাতা : মোসা: মেরিনা বেগম শাহাদাতের তারিখ : ১৯-০৭-২৪ রাত ১২ টায় আহত হওয়ার তারিখ ও স্থান : ১৯-০৭-২০২৪, মহাখালী ফ্লাইওভারের নিচে শাহাদাতের স্থান : ঢাকা মেডিকেল কলেজ স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: হাওলাদার বাড়ি, ইউনিয়ন: বেতাল, সালিয়া বাকপুর, থানা: বানারীপাড়া, জেলা: বরিশাল ঘাতক : পুলিশ ও ছাএলীগের হেলমেট বাহিনী