Image of হাফেজ মো: জসিম উদ্দিন

নাম: হাফেজ মো: জসিম উদ্দিন

জন্ম তারিখ: ২৮ নভেম্বর, ১৯৮৯

শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৯ জুলাই, ২০২৪

বিভাগ: বরিশাল

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : ইমাম, শাহাদাতের স্থান : উত্তরা ৭ নম্বর ঈদগাহ এর সামনে

শহীদের জীবনী

শহীদ হাফেজ জসিম উদ্দিন একজন সাধাসিধে মানুষ, যার জীবন ছিল বরিশালের বাকপুর গ্রামের মাটির গন্ধে ভেজা, শান্ত আর নিস্তব্ধ প্রকৃতির মাঝে রচিত। ছোটবেলা থেকেই শ্যামল গ্রাম, সরল জীবন আর মাটির কাছাকাছি থেকেছেন। এই প্রকৃতির মাঝেই তিনি বেড়ে উঠেছেন, সেখান থেকেই পেয়েছেন ভরসা আর সাহস, পেয়েছেন নিজের পথ খুঁজে নেবার শিক্ষা। প্রথম জীবনে ওয়ার্কশপে কাজ করলেও, তাঁর আসল পরিচয় ছিল একজন ধর্মপ্রাণ মানুষ হিসেবে। তিনি শুধু নিজে ধর্মের পথে থেকেছেন তা নয়; বরং অন্যকেও দ্বীনের পথে ডেকে এনেছেন আন্তরিকতার সাথে। তার কণ্ঠ ছিল কোমল, কথাগুলো ছিল স্নিগ্ধতায় মোড়ানো—যা মানুষকে আপনা থেকে আকর্ষণ করত। অনেক সময় মসজিদের ইমামতি করতেন তিনি, আর তার মসজিদে এক অন্যরকম পবিত্রতা অনুভব করত সবাই। যেন তার মুখের একেকটা শব্দ মানুষের অন্তরে আলোর ঝলকানি ছড়িয়ে দিত। দুই সন্তানের পিতা ছিলেন জসিম। সন্তানদের মধ্যে ধর্মের শিক্ষা আর নীতি বুনে দিয়েছেন ছোট থেকেই। তাদের সাথে কাটানো প্রতিটি মুহূর্ত ছিল ভরসার, ভালোবাসার, আর একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার প্রত্যয়ে পূর্ণ। জসিম শুধু নিজের পরিবার নয়, পুরো গ্রামের কাছে এক আলোকবর্তিকা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তাঁর মধ্যে ছিল এক ধরনের স্নিগ্ধতা, যা তাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে তুলেছিল। গ্রামবাসীরা তাঁর মধ্যে একজন সত্যিকারের মানুষকে খুঁজে পেত—একজন যিনি নিজে প্রার্থনা করতেন, পাশাপাশি সকলকে নিয়ে প্রার্থনার পথে আহ্বান করতেন। জসিম ছিলেন গ্রামবাংলার সেই মানুষ, যিনি নিজের বিশ্বাস আর মূল্যবোধে অবিচল ছিলেন। তাঁর জীবন ছিল ধর্মীয় বিশ্বাস, কর্মনিষ্ঠা আর মানবতার আদর্শে অলংকৃত। এমন মানুষ এ সমাজে বিরল, এবং তাঁর অনুপস্থিতি বাকপুর গ্রামকে যেন কিছুটা নিঃস্ব করে দিয়েছে। তাঁর এই অমলিন স্মৃতি রয়ে গেছে সবার হৃদয়ে—একজন নিরলস কর্মী, নিবেদিত প্রাণ ইমাম, এবং সত্যিকার অর্থে একজন পথপ্রদর্শক হিসেবে। শহীদ পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা হাফেজ মাওলানা জসিম উদ্দিন ঢাকার উত্তরা এলাকায় একটি ওয়ার্কশপে কাজ করতেন। পাশাপাশি স্থানীয় একটি মসজিদে ইমামতির দায়িত্ব পালন করতেন। বাড়িতে তার বৃদ্ধ বাবা-মা, যারা প্রতিনিয়ত তার স্নেহ ও সহায়তার আশায় দিন গুনতেন, তাদের জন্য প্রতি মাসে উপার্জিত অর্থের একটি বড় অংশ পাঠাতেন। সেই সামান্য টাকাই ছিল পরিবারের একমাত্র অবলম্বন, যার দ্বারা চলে যেত তাদের মাসিক খরচ। জসিম উদ্দিন ছিলেন পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে বড়। যৌথ পরিবারে তাদের বেড়ে ওঠা, যেখানে সবাই মিলে সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে কাটাতো। কিন্তু তার হঠাৎ মৃত্যুতে পুরো পরিবার যেন অসহায় ও দিশেহারা হয়ে পড়েছে। তার দুটি ছোট সন্তান; একটির বয়স মাত্র ১১ বছর, আরেকটি দেড় বছর। এই নিষ্পাপ শিশুদের জন্য এখন দেখার মতো কেউ নেই। আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীর কাছ থেকে মাঝে মাঝে কিছু সাহায্য আসে, যা দিয়ে কোনোরকমে দিন কাটছে। এই এতিম সন্তানেরা যেন একটু ভালোভাবে বাঁচতে পারে, এমন কিছু ব্যবস্থা করা একান্ত প্রয়োজন। তাদের চোখের কোণে এখনও বাবার সেই স্নেহ মাখা স্মৃতি অম্লান, অথচ বাস্তবতার কঠিন দুঃখ তাদের প্রতি মুহূর্তে থাবা বসাচ্ছে। একটি ছোট সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দিলে হয়তো এই অসহায় পরিবারটি আবার বাঁচার সাহস পাবে। যেভাবে শহীদ হোন- ঢাকার উত্তপ্ত রাস্তায় হাজারো মানুষের কণ্ঠে প্রতিবাদের ধ্বনি, দম বন্ধ করা উত্তেজনায় আকাশ যেন থমথমে। জসিম উদ্দিন—একজন শান্তিপ্রিয়, ধার্মিক হাফেজ মাওলানা, ঢাকা শহরে কাজ করতেন শুধুই জীবিকার তাগিদে, পরিবারের মুখে অন্ন তুলে দিতে। তবে দিনের পর দিন দেখে আসা সমাজের বঞ্চনা, অন্যায় ও ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে তাঁর প্রতিবাদী সত্তাটি ক্রমে শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল। কোটা সংস্কার আন্দোলনে যখন দুর্নীতির বিরুদ্ধে হাজারো কণ্ঠ এক হয়েছে, তখন তিনিও তাতে শামিল হলেন। বিশেষ করে হাসিনা ১৬ বছরের শাসন ছিলো অসহ্য যন্ত্রণার ও বঞ্চনার। ১৯ জুলাই, উত্তরা ৫ নম্বর সেক্টরে সাধারণ মানুষের সঙ্গে তিনিও দাঁড়িয়েছিলেন অধিকার আদায়ের আশায়। তবে সেই শান্তিপূর্ণ মিছিল মুহূর্তেই রূপ নিলো রক্তাক্ত সংঘর্ষে। পুলিশের দিকে তাকিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু কথা থেমে গেল গুলির শব্দে। মুহূর্তের মধ্যে মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন জসিম উদ্দিন। শেষ নিঃশ্বাসে হয়তো তাঁর চোখে ভেসে উঠেছিলো এক শান্তিময় সমাজের স্বপ্ন, যেখানে তাঁর সন্তানরা বেড়ে উঠবে অন্যায়ের অবসানে। বরিশালের বানারীপাড়ার গ্রামে, পূর্ব সলিয়াবাকপুরে যখন তাঁর নিথর দেহ ফিরে এলো, তখন তাঁর বৃদ্ধা মা মেহেরুন্নেছা বেগমের বুকফাটা কান্নায় আকাশ যেন ভারী হয়ে উঠল। বিধবা স্ত্রী সুমি আর ১০ বছরের মেয়ে জান্নাতের চোখে নেমে এলো অনিশ্চয়তার কালো ছায়া। ছোট্ট জান্নাত বাবার ছবি বুকে জড়িয়ে বললো, "বাবা আর কোনোদিন ফিরে আসবে না? আমাদের জন্য আর কখনো খেলনা আনবে না?" আধো আধো কথায় দেড় বছরের শিশু সাইফও সবার মাঝে খুঁজে ফিরছে বাবাকে। সুমির চোখে ঘোর অমানিশার মতো অন্ধকার। তাঁর স্বামীই ছিল একমাত্র ভরসা; এখন এই জীবনসংগ্রামে কে তাঁদের পাশে দাঁড়াবে? জসিম উদ্দিনের মতো প্রতিবাদী কণ্ঠ, এক সাধারণ মানুষ, দুর্নীতি ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন সাহস নিয়ে। আজ তিনি আর নেই, কিন্তু তাঁর বলিদান সমাজে অন্যায়ের বিরুদ্ধে একটি দীপ্ত আলো হয়ে থাকবে প্রস্তাবনাসমূহ ১: বাসস্থান প্রয়োজন। ২: হাতের কাজের যেমন হ্যান্ডির্ক্যাফট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করে দিলে উপকার হবে। ৩: এতিম দুই বাচ্চার জন্য লেখা-পড়ার খরচ যোগানে সহ স্থায়ী সহযোগিতা করা যেতে পারে। এক নজরে শহীদ নাম : হাফেজ মো: জসিম উদ্দিন জন্ম : ২৮-১১-১৯৮৯ পেশা : আব্দুল্লাহপুরে একটি গ্যারেজে চাকুরী করতেন এবং গ্যারেজ সংলগ্ন একটি পাঞ্জেখানা মসজিদে ইমামতি করাতেন জন্মস্থান : গ্রাম: সলিয়া বাকপুর (পুর্ব), ইউনিয়ন: বাকপুর, থানা: বানারীপাড়া, জেলা: বরিশাল পিতা : আ: মান্নান হাওলাদার মাতা : মেহেরননেসা বেগম পরিবারের সদস্য সংখ্যা : ৩ জন : জান্নাতুল ফেরদাঊস, বয়স: ১১, সম্পর্ক: মেয়ে : জামিল উদ্দিন, বয়স: ১.৫, সম্পর্ক ছেলে শাহাদাতের স্থান : উত্তরা ৭ নম্বর ঈদগাহ এর সামনে আক্রমণকারী : পুলিশের গুলি শাহাদাতের তারিখ : ১৯-০৭-২০২৪, দুপুর ১টার দিকে কবরস্থান : এলাকার পারিবারিক কবরস্থান

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of হাফেজ মো: জসিম উদ্দিন
Image of হাফেজ মো: জসিম উদ্দিন
Image of হাফেজ মো: জসিম উদ্দিন

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: হাসান

আবদুল্লাহ আল আবীর

মো: আল-আমিন

মো: হাবিবুর রহমান

মো: জাকির হোসেন

মো: আল আমিন হোসেন আগমন

মো: রাকিব

মো: বাবলু মৃধা

মো: সেলিম তালুকদার

আবদুল ওয়াদুদ

মো: ফয়সাল আহমেদ (শান্ত)

মো: শাহীন বাড়ি

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo