জন্ম তারিখ: ১৩ অক্টোবর, ২০০৬
শহীদ হওয়ার তারিখ: ২১ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: বরিশাল
পেশা : গার্মেন্টসে চাকরি, শাহাদাতের স্থান : ফতুল্লা, নারায়ণগঞ্জ
শহীদ মো: রাকিব বেপারী এক দরিদ্র পরিবারের সন্তান। তিনি ২০০৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর জন্ম স্থান বরিশাল জেলার বানারীপাড়া থানার জম্বদ্বীপ, মাছরং ইউনিয়নের জম্বদ্বীপ গ্রামে। তার পিতার নাম মো: মোশারফ হোসেন এবং মাতার নাম মোসা: রাশিদা বেগম। শহীদ রাকিব বেপারী ছিল পরিবারের একমাত্র ভরসা। বাবা দিনমজুরের কাজ করে পরিবার পরিচালনা করতেন। অর্থসংকুলান না হওয়ার কারণে রাকিব একটি গার্মেন্টসে কাজ শুরু করেন পরিবারের বর্তমান অবস্থা তাদের পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই খারাপ। সহায় সম্বলহীন রাকিবের বাবা দিনমজুরী করে ঝড়-বৃষ্টিতে ভিজে, রোদে পুড়ে,রিকশা চালিয়ে তার সন্তানদের বড় করেছেন। রাকিব ছিল তার একমাত্র যক্ষের ধন। তাকে নিয়ে তার কত স্বপ্ন। যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়। তারা আসলে জানে একটি সন্তানকে বড় করার কত কষ্ট। অসহায় বাবা রাকিবকে খুব কষ্ট করে বড় করেছিলেন। পরিবারের দূরবস্থার জন্য রাকিব পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেননি। একদিকে বাবা বয়স্ক হয়ে যাওয়া, মায়ের হার্টের সমস্যা, ছোট ভাইটি প্রতিবন্ধী। নির্মম বাস্তবতার শিকার হয়ে রাকিব পড়াশোনা বাদ দিয়ে গার্মেন্টসে গিয়ে চাকরি শুরু করেন। বাবা মা খুশি হলেন যে, তাদের ছেলের একটি গতি হয়েছে। এখন আর তাদের কোন কষ্ট করতে হবে না। ছেলে তাদের দেখাশোনা করবে। বাড়িতে তেমন কোন সম্পত্তি নেই, ঘর উঠানোর মতো টাকাও নেই। পৈত্রিক সম্পত্তি হিসেবে যে জায়গাটুকু পেয়েছিলেন সে জায়গাটা এখন খালি অবস্থায় পড়ে আছে। রাকিবের চাচা তার বাবাকে বললেন: তুই এবার বাড়ি চলে আয় দুই ভাই মিলে জমিতে কাজ করব। রাকিবের বাবা মোশারফ হোসেন বলেন আমার ছেলেটা কাজে স্বাভাবিক হোক আমি বাড়ি চলে আসবো। স্বপ্ন মানুষকে অনেক দূর বাঁচতে শক্তি যোগায়। প্রতিটি পরিবারের ছেলে সন্তানটি বাড়তি গুরুত্ব পেয়ে থাকে। তার মধ্যে যদি গরিব মানুষ যদি হয়ে থাকে তাহলে তো কথাই নেই। রাকিব তার বাবা মার জন্য একটা সম্পদ ছিল। ছোট সন্তানটি প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে বড় ছেলেটার উপরে তাদের সকল স্বপ্ন পুঞ্জিভূত হয়ে গিয়েছিল। রাকিব তার সেই স্বপ্নগুলো বাস্তবায়নের জন্য তার বাবা-মায়ের যে কাজগুলো ছিল সেগুলো করা শুরু করেছিল বাবা-মা তাদের আশায় বুক বাঁধতে ছিল এবার আমাদের পরিবর্তন হবেই। শহীদ হওয়ার ঘটনা: আমাদের এ ভূখণ্ড ভিনদেশীদের দ্বারা শাসিত হয়েছে বহু বার। বিদেশী শক্তিরা এসে আমাদের উপর কর্তৃত্ব খাটিয়েছে। শুরুতে তুর্কিরা এদেশ শাসন করে। দীর্ঘদিন চলে তাদের শাসন। ১৭৫৭ সালে পলাশীর প্রান্তরে সিরাজউদ্দৌলার পতনের মধ্য দিয়ে প্রায় ২০০ বছরের জন্য বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়। শুরু হয় ইংরেজদের শাসন-শোষন। বাংলার আপামর জনতাকে তাদের দাসে পরিণত করে। আর তাদের কাজে সহযোগিতা করে এদেশেরি কিছু জঘন্য মানুষ মীর জাফর, ঘসেটি বেগম সহ আরও অনেকে। এরপর দীর্ঘ সংগ্রামের পর প্রিয় মাতৃভূমি ইংরেজদের হাত থেকে মুক্তি পায়। শুরু হয় পাকিস্তান শাসনামল। পাকিস্তানি আমলে বাংলাকে তারা শোষন করতে শুরু করে। এ যেন বাঘের খাঁচা থেকে মুক্তি পেয়ে সিংহের খাঁচায় বন্দী হওয়া। পাকিস্তানি শাসনামলে বৈষম্যের মাত্রা তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকে। প্রতিটি ক্ষেত্রে জুলুমের মাত্রা সহ্য সীমা অতিক্রম করে। শুরু হয় মুক্তি যুদ্ধ। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে চূড়ান্ত স্বাধীনতা অর্জিত হয়। প্রিয় মাতৃভূমি বিদেশী শক্তি কর্তৃক শোষিত নির্যাতিত হলেও দেশীয়দের দ্বারা কখনো শোষিত হয়নি। আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় এসে অতীতের সকল ইতিহাস মাড়িয়ে এ দেশের মানুষকে শোষণ করা শুরু করে। বাঙালির রক্তে বিনিময়ে পাওয়া স্বাধীনতা ধূলিস্যাৎ করে দেয় নিমিষেই। তাদের ১৬ বছরের শাসনামলে বৈষম্যের মাত্রা পূর্বের সকল ইতিহাসকে ছাপিয়ে যায়। গুম, খুন, গণহত্যা, ধ্বর্ষণ, ডাকাতি, মাদক চালান, অর্থ পাচার, উন্নতির নামে হরি লুট, চাদাবাজি, দুর্নীতি সহ মানবতাবিরোধী সকল অপরাধের সাথে জড়িয়ে যায় আওয়ামী সরকার। বৈষম্য চরম আকার ধারণ করলে শুরু হয় আন্দোলন। শুরু হয় ২য় মুক্তিযুদ্ধ। স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট হাসিনার সরকার দেশের জনগনের ট্যাক্সের টাকায় কেনা অস্ত্র দিয়ে জনগণকেই হত্যা করে। দেশ অগ্নিগর্ভে চলে যায় প্রতিটি মানুষ এই আন্দোলনে শরিক হয়। সেখানে বাদ যায় না শহীদ রাকিবও। ১৬-১৭-১৮ জুলাই আন্দোলন চরম আকার ধারণ করে। এরই মধ্যে খবর আসে আবু সাঈদ,মীর মাহবুব মুগ্ধ গুলিবিদ্ধ হয়ে শাহাদাত বরণ করেছে। ছাত্ররা প্রচন্ড পরিমাণে ক্ষেপে যায়। বুলেটের গুলি তাদের দমিয়ে রাখতে পারে না। নিরপরাধ ছাত্রদেরকে গুলি করে হত্যা করে স্বৈরাচার হাসিনার দোসর পুলিশ, বিজিবি, র্যাব,আনসার, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও আওয়ামীলীগের সদস্যরা। শহীদ রাকিব এগুলো কোনভাবেই সহ্য করতে পারল না। তিনিও আন্দোলনে চরমভাবে নিজেকে সঁপে দিলেন। দিনভর নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লার এলাকায় পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও বিশেষ হেলমেট বাহিনী রুপি ছাত্রলীগ নির্দয়ভাবে ছাত্রদের উপর গুলি বর্ষণ করছে। এরই মাঝে দুপুর ১২ টার দিকে রাকিবের মাথায় একটি গুলি লাগে সাথে সাথে সেখানেই শাহাদাত বরণ করে। রাকিবের বন্ধুরা ও সহকর্মীরা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে নিয়ে যায় সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। বাবা মাকে খবর দিলে বাবা-মা পাগলের মত ছুটে এসে তার সন্তানের নিথর দেহটাকে খুঁজে পায়। নিমিষেই শেষ হয়ে যায় একটি সম্ভাবনাময় দেশের সূর্যসন্তান। যারা নিঃস্বার্থভাবে অকাতরে তাদের জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন। মানুষের স্বাধীনতা অর্জন করার জন্য যারা জীবন দিয়েছেন আমরা তাদের ভুলবনা। জাতি আমাদের এই বীর সৈনিকদের সারাজীবন মনে রাখবে। শহীদ সম্পর্কে অনুভূতি: শহীদ রাকিবের চাচা মোঃ নুরুল হক বেপারী বলেন, রাকিব আমাদের বড় ভাইয়ের ছেলে, আমার বড় ভাই তার ছেলেদের জন্য অনেক কষ্ট করেছেন। অনেক স্বপ্ন নিয়ে বড় করেছিলেন তাদের। তার একটি ছেলে প্রতিবন্ধী সে কিছু করে না। শহীদ রাকিব ই ছিল তার একমাত্র ভরসার খুঁটি। দিনমজুর বাবার স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে গেল নিমিষেই। এখন তো আর সে নেই। আমরা চাই তার এই ছেলের অভাব সে যাতে বুঝতে না পারে। সে ব্যবস্থা আপনারা করবেন। আমরা চাই তাদের জন্য কিছু ব্যবস্থা করবেন। আমরা আপনাদের কাছ থেকে এই আশাটা করছি। শহীদ রাকিবের চাচী বলেন: আমার ভাসুরের কথা কি বলবো! আমার ভাসুরের ছেলেরাই ছিল একমাত্র ভরসা । সে ভরসা জায়গা চলে গেছে। এখন আমরাই তাদের জন্য যদি চাল ডালের ব্যবস্থা করি তাতেই তাদের খাবারের ব্যবস্থা হয়। আমাদের ছেলেরাই এখন একমাত্র ভরসা কিন্তু তারাও তেমন বড় কিছু করেনা যে তাদের সাহায্য করবে। আমাদের আল্লাহই একমাত্র ভরসা। রাকিবের মা অনেক অসুস্থ তার হাটের সমস্যা। অনেক টাকা খরচ হয়ে গেছে। আমাদের ভাসুরের জন্য থাকার ব্যবস্থা করে দিলে তারা উপকৃত হবে। ডাল ভাত খেয়ে বেঁচে থাকবে। আমার ভাসুর ঢাকাতে রিক্সা চালিয়ে তাদের সন্তানদের বড় করেছে এখন আর তা করতে পারে না। এক নজরে শহীদ মো: রাকিব বেপারী নাম : মো: রাকিব বেপারী পেশা : চাকরি, জন্মতারিখ : ১৩-১০-২০০৬ বয়স : ৩১ বছর পিতা : মো: মোশারফ হোসেন মাতা : রাশিদা বেগম শাহাদাতের তারিখ : ২১-০৭-২০২৪, দুপুর ১২টায় শাহাদাতের স্থান : ফতুল্লা, নারায়ণগঞ্জ ঘাতক : পুলিশ, ছাএলীগ হেলমেট বাহিনী স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: জম্বদ্বীপ, ইউনিয়ন: জম্বদ্বীপ, মাছরং থানা: বানারীপাড়া জেলা: বরিশাল বর্তমান ঠিকানা : দাপাইদ্রাকপুর, ফতুল্লা, নারায়ণগঞ্জ শহীদ পরিবারের জন্য প্রস্তাবনা : ১. বাসস্থান প্রয়োজন : ২. বাবার জন্য কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করে দিলে উপকার হবে : ৩. ছোট ভাই লেখা-পড়ার খরচ যোগানে সহযোগীতা করা যেতে পারে