জন্ম তারিখ: ৫ সেপ্টেম্বর, ২০০৭
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: বরিশাল
পেশা : ছাত্র, শাহাদাতের স্থান : বংশাল থানার সামনে,
মো: সিফাত হোসেন ১৬ বছরের টগবগে কিশোর। ছায়েদ আল হাওলাদার দারুসসুন্নাহ মাদ্রাসার ছাত্র। মাদ্রাসায় পড়ালেখার পাশাপাশি মামার দোকানে কাজ করে পরিবারকে সাপোর্ট দেয় । প্রবাসী পিতা মো জাহাঙ্গীর ও গৃহিণী মাতা আকলিমার তৃতীয় সন্তান শহীদ সিফাত ২০০৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর তাঁর পৈতৃক নিবাস বরিশাল জেলার মুলাদি থানার খৈলার চর ইউনিয়নের খৈলার চর পদ্মা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পারিবারিক আর্থিক অবস্থান সিফাতের স্বল্পশিক্ষিত পিতা প্রবাসে গিয়ে ইনকামে সুবিধা করতে না পেরে বড় ভাইকে নিয়ে যান। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস! দালালের খপ্পরে পড়ে নষ্ট হয়ে যায় অনেক টাকা। এখন অল্প বেতনে বাবা আর বড় ভাই কাজ করেন প্রবাসেই। লেখাপড়ার পাশাপাশি সিফাত তার মামার দোকানে কাজ করার মাধ্যমে কিছু আয় করে ৬ সদস্যের পরিবারের খরচ চালাতে সহযোগিতা করে। কিন্তু এতটুকু সহযোগিতা ও বন্ধ হয়ে গেলো সিফাতের শাহাদাতের সাথে সাথে। টগবগে, উচ্ছল্ ও প্রাণবন্ত কিশোর সিফাতের প্রাণ কেড়ে নিতে একটুও হাত কাঁপলো না অবৈধ সরকারের দলকানা পুলিশ বাহিনীর। এদিকে সিফাতের মৃত্যুর খবর শুনে ভারসাম্যহীন হয়ে উপার্জনহীন হয়ে পড়ে সিফাতের বাবা। এছাড়া বাড়ির একমাত্র টিনের ঘরটিই সিফাতের নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের আশ্রয়ের জায়গা। ঘটনার শুরু যেখানে সরকারের জনবিরোধী কর্মকান্ডের বড় একটি উদাহরণ হলো চাকুরীর ক্ষেত্রে ব্যাপক কোটা প্রথা চালু করা। এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে ছাত্ররা প্রতিবাদ করে ১৪ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে কর্মসূচী দেয়। সরকারের পেটুয়া বাহিনী ছাত্রদের দমন করতে চাইলে হিতে বিপরীত হয় যায়। কর্মসূচী সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষুব্ধ জনতা ছাত্রদের সাথে কর্মসূচীতে যোগ দেয়। ধর্মপ্রাণ সিফাত আওয়ামী সরকারের ইসলাম বিরোধী বিভিন্ন কর্মকান্ড দেখে দেশের সকল মানুষের সাথে সরকারের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়। সিফাত তার বন্ধুদের আড্ডায় সরকারের বিভিন্ন অপকর্ম সম্পর্কে আলোচনা করে বন্ধুদের চাঙ্গা রাখতো। ছাত্র হিসেবে সিফাতও সচেতন ভাবে কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করে। মমতাময়ী মা বারণ করলে মাকে সরকারের বৈষম্যের ব্যাপারে তথ্য তুলে ধরে মাকে বুঝিয়ে মিছিলে অংশগ্রহণ করে। কয়েকবার টিয়ারশেলের আঘাতে আহত হয়েছিলো সিফাত। ৫ আগস্ট ২০২৪। বাংলাদেশের ইতিহাসে এক স্মরণীয় দিন। খুনী স্বৈরাচারী হাসিনা সরকার ক্ষমতা ছেড়ে দেশ থেকে পলায়ন করে। সারাদেশের মানুষ খুশীতে রাস্তায় নেমে বিজয় উল্লাস করে সবার মনের যেন একই অনুভূতি। “তরুলতার সবুজ পাতায় দেখি বিজয়ের মিছিল, মধুমক্ষিকার গুঞ্জনে শুনি মুক্তির গান, আজ দখিনা বাতাসে ম ম করে স্বাধীনতার ঘ্রান, সে ঘ্রাণে মাতোয়ারা আমি যেন আজ এক মুক্ত বিহঙ্গ” মুক্ত বিহংঙ্গের মতো সিফাতও দীর্ঘদিনের কষ্টের ফসল বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে বিজয় মিছিলে যোগ দেয়। লক্ষ লক্ষ জনতার মিছিল বংশাল থানা অতিক্রম করার সময় পথভ্রষ্ট পুলিশ বাধা দেয়। পুলিশের কাছে হাসিনার পলায়নের খবর না আসায় দলকানা পুলিশ জনগনের বিজয় মিছিলে বাধা দিয়ে গুলি ছুড়ে। গুলি ও টিয়ারশেলে অসংখ্য মানুষ আহত হয়। মুহূর্তে বিজয় মিছিল আতঙ্কে রুপ নেয়। সন্ত্রাসী পুলিশের একটি বুলেট সিফাতের কান ভেদ করে মাথার আরেক পাশ দেয় বের হয়ে যায়। সিফাত মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। ওর পরিচিতজন কেউ পাশে না থাকায় এবং ভীতিকর অবস্থা থাকায় চিকিৎসার জন্য কেউ এগিয়ে আসেনি। বিজয়রে চুড়ান্ত ঘোষণার পর সিফাতের লাশের জায়গা হয় মিটফোর্ড এর মর্গে। মমতাময়ী মা সিফাতের কোনো খোঁজ না পেয় পাগলপ্রায়। হন্যে হয়ে চারদিকে সিফাতকে খুঁজতে থাকে। এখনো মা জানেনা যে তার আদরের ধন দুনিয়াতে নাই। ওর আত্মীয় স্বজন সহ সবাই সিফাতকে খুঁজতে থাকে। মিটফোর্ড মর্গে লাশের স্তুপ। টিভি চ্যানেলে লাশের ছবি দেখে প্রাথমিকভাবে ওর কাজিন সিফাতের লাশ দেখে চিনতে পারে। ওর মা সহ মর্গে হাজির। কলিজার টুকরা সন্তানের লাশ দেখে মমতাময়ী মা পাগল হয়ে যায়। হাসপাতালের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে লাশ গ্রহণ করে ঢাকাতে জানাযা দিয়ে গ্রামে নিয়ে যায়। গ্রামের সর্বস্তরের মানুষ সিফাতের জানাযায় অংশগ্রহণ করে। এত শান্ত ছেলেকে বুলেটের আঘাতে হত্যা করতে পারে তা কোনোভাবেই যেন মানা যাচ্ছেনা। প্রবাস থেকে সিফাতের লাশ তার বাবা দেখে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এই নির্মম, পৈশাচিক হামলায় তার ছেলের মৃত্যু কোনভাবেই মেনে নিতে পারছিলেন না শ্রমিক বাবা। মমতাময়ী মা তার সন্তানকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ। সিফাতের সঙ্গী সাথীরা তাদের উন্নত নৈতিকতা সম্পন্ন বন্ধুকে হারিয়ে শোকে বিহ্বল। শহীদ সম্পর্কে নিকটাত্মীয় ও বন্ধুর বক্তব্য/অনুভূতি খালাতো ভাই মিরাজ বলেন, সিফাত অনেক ভালো একটি ছেলে ছিলো। প্রথমে আমরা তাকে খুঁজে পাইনাই পরে ফেসবুকে পোস্ট করি পরের দিন ফোন আসলো সিফাত আর নাই। সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে তার লাশ শনাক্ত করা হয় পরে তাকে আমাদের গ্রামের বাড়িতে এনে পারিবারিক কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়। প্রতিবেশী মামা বলেন, শহিদ সিফাত একজন মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ছিলো। তিনি তার মামার ব্যবসা চাকরি করতো পাশাপাশি লেখাপড়া চালিয়ে যেতো। সহযোগিতার প্রস্তাবনা ১. বাসস্থান প্রয়োজন ২. টিউবওয়েল স্থাপন করে দেয়া ৩. ভাই বোনদের পড়ালেখার খরচ চালাতে সহযোগিতা করা এক নজরে শহীদ পুরো নাম : মো: সিফাত হোসেন জন্ম তারিখ ও স্থান : ৫ /০৯/২০০৭, মুলাদি, বরিশাল ঠিকানা : গ্রাম: খৈলার চর পদ্মা, ইউনিয়ন: খৈলার চর, থানা: মুলাদি, জেলা: বরিশাল পিতা : মো: জাহাঙ্গীর পেশা : প্রবাসী মাতা : আকলিমা পেশা : গৃহিণী পরিবারের সদস্য সংখ্যা : ৫ : ১. পিতা : ২. মাতা : ৩. বোন (বিবাহিতা) : ৪. ভাই (ইকবাল, বয়স: ১৮, প্রবাসী) : ৫. ভাই (সিয়াম, বয়স: ৮, হিফজ) আহত হওয়ার স্থান ও তারিখ : বংশাল থানার সামনে, ০৫/০৮/২০২৪ আক্রমণকারী : পুলিশ বাহিনী নিহত হওয়ার স্থান ও তারিখ : বংশাল, ০৫/০৮/২০২৪