Image of মো: জিহাদ হোসেন

নাম: মো: জিহাদ হোসেন

জন্ম তারিখ: ১৬ জুন, ২০০৫

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: বরিশাল

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : শিক্ষার্থী, শাহাদাতের স্থান : যাত্রাবাড়ী থানার সামনে।

শহীদের জীবনী

বাংলাদেশ একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। এখানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির আবহমান ঐতিহ্য রক্ষা করে একই সাথে নানা ধর্মের মানুষ বসবাস করে আসছে। দারিদ্র পীড়িত মানুষদের গুণগত শিক্ষা প্রদানে ব্যর্থ হয় বিগত আওয়ামী লীগ সরকার। এতিম, ধর্মভীরু মানুষদের আশার প্রদীপ এ দেশের দ্বীনি চর্চা কেন্দ্র মাদ্রাসাগুলো। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়াই অসংখ্য মাদ্রাসা দরিদ্র শিশুদের শিক্ষা দিয়ে আসছে। দেশের মাদ্রাসাগুলোকে ধ্বংস করার জন্য বিগত পতিত আওয়ামী লীগের সরকার সকল ধরনের ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছিল।জুলাইয়ের আন্দোলনে টালমাটাল অবস্থায় হাসিনা সরকার আবার ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার প্রয়াস পায়। তার অংশ হিসেবে তারা ১ আগস্ট জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। মাদ্রাসার ছাত্রদের সকল প্রকার সরকারি সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হয়। শুধু গুটিকয়েক আওয়ামীপন্থী আলেম ছাড়া সবাই ছিল সরকারের অন্যায় আচরণের স্বীকার। তাই তাওহীদবাদী জনতা তার প্রধান শত্রু আওয়ামী লীগকে চিনতে ভুল করেনি। জুলাই আগস্টের আন্দোলনে ঝেটিয়ে বিদায় করা হয় আওয়ামী লীগ সরকারকে। ঐ বিপ্লবী আন্দোলন মাদ্রাসার ছাত্ররা ছিল অগ্র সেনানী হিসেবে। তেমনি একজন বিপ্লবী বীর শহীদ মো: জিহাদ হোসেন। শহীদ জিহাদ হোসেনের জন্ম ২০০৫ সালে। বরিশাল জেলার দক্ষিণ পূর্ব কাজীর চর গ্রামে। বর্তমানে সেখানে উল্লেখযোগ্য তেমন কিছু নেই তাঁদের। তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে যাত্রবাড়ীর বিবির বাগিচা ০৪ নং গেট এলাকায় বসবাস করছেন। শহীদ জিহাদ হোসেন ছোটবেলা থেকে ডায়রি লিখতে পছন্দ করতেন। বাবা মায়ের আশা ছিলো তাঁদের ছেলে একদিন অনেক বড় হবে। সেই সুবাদে স্থানীয় একটি সনামধন্য প্রতিষ্ঠানে তাঁকে র্ভতি করানো হয়। সেখানে ভালো করলে পরর্বতীতে জামেয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম কতুবখানা মাদ্রাসায় র্ভতি হয় জিহাদ। পরিশ্রম এবং অধ্যবশায় ভাল ফলাফল করে বাবা মায়ের মুখ উজ্জল করেন তিনি। সফলতার সাথে কয়েক শ্রেণি পার করেন। সর্বশেষ মিজান জামায়াতে অধ্যায়নরত ছিলেন শহীদ জিহাদ। চার ভাই-বোনের মধ্যে জিহাদ তৃতীয়। জিহাদের বাবা জনাব মোশারফ হোসেন (৬৮) একজন ক্ষুদ্র হোটেল ব্যবসায়ী। বয়সের ভারে ঠিকমত চলা ফেরা করতে পারেন না। তাই বড় ছেলে রিয়াদকে (২৭) সাথে নিয়ে ছোট্ট একটা দোকানে হোটেল ব্যবসা করেন তিনি। সারাদিন চপ, সিঙ্গারা, পিঁয়াজু বিক্রি করে উপার্জিত অর্থ দিয়ে কোন রকম সংসার চলে পরিবারটি। যেভাবে শহীদ হয় : শহীদের বাবার হোটেলের উপর তলায় আওয়ামী সন্ত্রাসীদের ক্লাব ছিল। বেশ কয়েকবার জিহাদের বাবার থেকে চাঁদা উঠায় তারা। বাঁধা দিলে হোটেল ভাঙচুর এবং লুটপাট করে জখম করে জিহাদের বাবাকে। মাথায় রড দিয়ে আঘাত করে জিহাদের বড় ভাইকে। ভঁয়ে হোটেল বন্ধ রাখেন জিহাদের বাবা। পরবর্তীতে বেশ কয়েকবার হোটেলের আসবাব পত্র কিনতে হয়েছে তাঁকে। লাগাতার চাঁদা দিতে গিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন তিনি। জিহাদের মা হাঁপানি রোগী। তিনি শ্বাস কষ্টের ব্যাধিতে ভুগছেন। মেরুদণ্ডের হাড় ভেঙ্গে যাওয়ায় ভারী কোন কাজ করতে পারেন না। জিহাদের বাবার উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে। ডায়াবেটিস, বাত ব্যাথায় তিনিও স্বাভাবিক ভাবে চলা ফেরা করতে পারেন না। আর্থিক স্বচ্ছলতা না থাকায় ছোট মেয়ের বিয়ে দিতে পারছেন না জনাব মোশারফ হোসেন ওরফে শহীদ জিহাদের বাবা। জিহাদের বাবা স্বপ্ন দেখতেন একদিন তাঁর ছেলে অনেক বড় আলেম হবে। তখন আর তাঁদের সংসারে অভাব অনটন থাকবে না। শহীদ জিহাদ বাবা-মা কে জানিয়েছিল-একদিন তাঁদেরকে বড় একটি বাড়ী নির্মাণ করে দেবেন। সেদিন আর পরিবারে। কোন দুঃখ কষ্ট থাকবে না। বিদ্যাপিঠ ছুটি হলে বাহিরে ঘুরাঘুরি পছন্দ করতেন না জিহাদ। বাবার হোটেলে সাহায্য করতেন তিনি। হঠাৎ দেশে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন গণজোয়ার তৈরি করে। হাজার হাজার ছাত্ররা রাস্তায় নেমে আসে। গত জুলাই মাসে কোটাবিরোধী আন্দোলন থেকে এর যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তীতে তৎকালীন আওয়ামী স্বৈরাচার প্রধানমন্ত্রীর উস্কানিতে এ আন্দোলন সরকার পতনের এক দফা দাবিতে রূপ নেই। সেই আন্দোলনে শামিল হয় জিহাদ হোসেন। আল্লাহু আকবার স্লোগানে ছাত্রদের একটি গ্রুপকে নেতৃত্ব দেন তিনি। দীর্ঘদিন এই আন্দলোন চলতে থাকে। শত শত ছাত্রের মৃত্যুর পর একপর্যায়ে তাঁদের বিজয় হয়। পদত্যাগ করে পালিয়ে যায় স্বৈরাচার শাসক খুনি শেখ হাসিনা। অতঃপর ০৫ই আগস্ট সারাদেশে লাখো মানুষ বিজয় মিছিলে অংশগ্রহণ করে। যাত্রাবাড়ীতে তখনো পুলিশের গুলাগুলি চলতে থাকে। ঘাতকের গুলি উপেক্ষা করে রাস্তায় নেমে আসে ছাত্রজনতা। জিহাদ সে মিছিলে সামনে থেকে অংশগ্রহণ করেন। ফুটওভার ব্রিজের উপরে উঠে পতাকা হাতে আবারও আল্লাহু আকবার স্লোগান দেন তিনি। বারবার তাঁর মুখে স্বাধীন বাংলা উচ্চারিত হয়। হঠাৎ তাঁকে উদ্দেশ্য করে কয়েকটি গুলি ছোড়ে যাত্রাবাড়ী থানার আওয়ামীলীগ পালিত পুলিশ বাহিনী। ঘাতকের প্রথম গুলিটি জিহাদের গলায় বিদ্ধ হয়। এরপর দ্বিতীয় গুলিটি বুক ভেদ করে পিষ্ঠ দেশ দিয়ে বেরিয়ে যায়। জিহাদের বন্ধু ফাহাদ (১৯) দ্রুত তাঁকে যাত্রাবাড়ী দেশ বাংলা হাসপাতালে নিয়ে যায়। চিকিৎসকেরা জানায় ঘটনাস্থলে জিহাদের মৃত্যু হয়েছে। সেদিন পুলিশের গুলিতে শতশত মানুষ হতাহত হয়। যাত্রাবাড়ীর সুফিয়া গার্মেন্টস সংলগ্ন এলাকাটি যেন রণাঙ্গনে পরিণত হয়। বেদনাদায়ক মৃত্যুর পর শহীদ জিহাদ হোসেনর লাশকে বীরের বেশে গ্রামের বাড়িতে নেয়া হয়। পরবর্তীতে মুলাদী, কাজীরচর গোরস্থানে চির নিদ্রায় শায়িত হয় শহীদ জিহাদ হোসেন। তাঁর বাবার সর্বশেষ জমানো কিছু টাকা ছিল। যা দিয়ে সন্তানের জন্য দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেন। প্রতিবেশীদের মাঝে খাবার বিতরন করেন। সন্তান হারানোর শোকে তিনি মানসিক ভাবে চরম বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এবং দীর্ঘদিন হোটেল বন্ধ থাকায় পুঁজি সংকটে ভুগছেন জনাব মোশারফ হোসেন। ছেলের লাশ গ্রামে নিতে গিয়ে ঋণ গ্রস্ত হতে হয়েছে তাঁকে। প্রিয় সন্তানকে হারিয়ে পরিবারটি এখন পাগল প্রায়। তাঁর বাবার বড় হওয়ার স্বপ্ন অধরা হয়ে রইল। ঘাতকের গুলিতে সকল স্বপ্ন নিমিষেই বিলীন হয়েছে পরিবারটির। শহীদ সম্পর্কে মন্তব্য : আমার ভাই খুব ভালো মানুষ ছিল। যে কেউ ডাকলে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিত। বাবা-মায়ের খুব আদরের সন্তান ছিল সে। আমার হাতের লাঠি ছিল, শক্তি ছিল আমার ভাই। ভাইকে হারিয়ে এখন আমার সব শেষ। আমার খালু নতুন মোটর সাইকেল কিনলে পুরাতন মোটর সাইকেলটি আমাকে দিয়ে দেয়। মাঝে মাঝে আমার কাছে সেই মোটরসাইকেল চালানোর বায়না করত জিহাদ। আমি দিতাম না। সবসময় ভঁয়ে থাকতাম। যদি কিছু হয়ে যায়। আজ আমি নিঃস্ব, আমার সব শেষ। আমার হাতের লাঠি, আমার ভাইকে আমি হারিয়ে ফেলেছি। রিয়াদ হোসেন- শহীদ জিহাদ, হোসেনের একমাত্র বড় ভাই। শহীদের ব্যক্তিগত প্রোফাইল শহীদের পূর্ণ নাম : মো: জিহাদ হোসেন (১৯) পেশা : শিক্ষার্থী। জামেয়া ইসলামীয়া দারুল উলুম কুতুবখালি মাদ্রাসার মিজান জামায়াতের ছাত্র ছিল স্থায়ী ঠিকানা : দক্ষিণ পূর্ব কাজীর চর, কাজীর চর, মুলাদি, বরিশাল বর্তমান ঠিকানা : বিবির বাগিচা ৪ নং গেট, উত্তর যাত্রাবাড়ী, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা জন্ম তারিখ : ১৬/০৬/২০০৫ পিতা : মো: মোশারফ হোসেন(৬৮) পেশা : ক্ষুদ্র হোটেল ব্যবসায়ী মাতার নাম : পারভীন আক্তার (৪৯) শহীদের ভাই-বোন : ১. রিয়াদ হোসেন (২৭) : ২. সাবিকুন নাহার (২৩) : ৩. মুশফিকুন নাহার (২০) পারিবারের সদস্য সংখ্যা : ৪ জন পারিবারিক আয় : ১৫০০০ টাকা আক্রমণকারী : যাত্রাবাড়ী থানার পুলিশ আহত হওয়ার সময়কাল : তারিখ: ০৫-০৮-২০২৪, সময়: দুপুর ০৩:২০ মৃত্যুর তারিখ ও সময় : তারিখ: ০৫-০৮-২০২৪, সময়: দুপুর ০৩:৪৫ শহীদের কবরের অবস্থান : দক্ষিন পূর্ব কাজীর চর গোরস্থান যেভাবে সহযোগিতা করা যায় : ১। শহীদের বড় ভাইয়ের প্রবাসে যেতে সহযোগিতা করা : ২। তাঁর বাবার হোটেল উন্নতি করনে সাহায্য করা : ৩। ছোট বোনের বিবাহ খরচ যোগান দেয়া যেতে পারে

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: জিহাদ হোসেন
Image of মো: জিহাদ হোসেন
Image of মো: জিহাদ হোসেন
Image of মো: জিহাদ হোসেন
Image of মো: জিহাদ হোসেন
Image of মো: জিহাদ হোসেন
Image of মো: জিহাদ হোসেন
Image of মো: জিহাদ হোসেন

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: মিলন

মো: টিটু

মো: আবুল বাশার

মো: হাসান

আবদুল ওয়াদুদ

মো: সাগর হাওলাদার

মো: দুলাল সরদার

মো: রাকিব

মো: সাইফুল ইসলাম

মো: আতিকুর রহমান

মো: আবু জাফর হাওলাদার

মো: এমদাদুল হক

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo