Image of মো: শাওন শিকদার

নাম: মো: শাওন শিকদার

জন্ম তারিখ: ৮ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৮

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: বরিশাল

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা :ছাত্র, শাহাদাতের স্থান :যাত্রাবাড়ী থানার, পূর্বপাশে, সুফিয়া গার্মেন্টস এর থেকে ১ কিলোমিটার সামনের দিকে

শহীদের জীবনী

বৃহত্তর বরিশাল বিভাগের বাকেরগঞ্জ জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম বলইকাঠী। এই গ্রামের বাদল পাড়া ইউনিয়নের সেলিম সিকদার ও রিনা বেগম দম্পত্তির কোল আলোকিত করে ১৯৯৮ সালের ৮ সেপ্টেম্বর জন্ম নেয় এক ফুটফুটে পুত্র সন্তান। পিতা-মাতা নাম রাখেন শাওন সিকদার। শাওন অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়ছিলেন। ২৬ বছর বয়সি এক কর্মঠ যুবক। পাশাপাশি গার্মেন্টস কর্মী হিসেবে কাজ করতো। অভাবের পরিবারে বাবার পাশে দাড়ানোর জন্য পড়াশোনার পাশাপাশি চাকরি নিয়েছিলো। সংসারের অভাব ঠিকই দূর হয়েছিলো, কিন্তু খুব বেশি দিন সে সুখ স্থায়ী হয়নি। পুলিশ নামধারী হায়েনাদের বুলেটের ছোবলে বাবা-মায়ের স্বপ্নকে নিমিষেই ধ্বংস করে দিলো। বাবার কাধে তুলে দিলো সন্তানের লাশ। এমন কোনো ঘৃন্য কাজ নেই যা এই স্বৈচারারী খুনি হাসিনা সরকার করেনি। পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা বাবা, মা, এক ভাই ও দুই বোন সহ ৬ জনের গোছানো একটা পরিবার ছিলো শাওনের। জীবিকার তাগিদে পরিবারটি ঢাকা শহরে বাস করে। শাওনের বাবার রাস্তার পাশে ছোটো ১টা হোটেল, যেখানে তিনি শুধুমাত্র পরাটা-ডালভাজি বিক্রি করেন। এই হোটেলের আয় দিয়ে কোনোরকমে টানাপোড়েনে সংসার চলছিলো। অভাবের সংসারে বাবাকে সহযোগিতা করার জন্য পড়াশোনার পাশাপাশি গার্মেন্টসে চাকরি করতো। বাবা-ছেলের ইনকামে সংসার ভালোই চলতো। শাওন শহীদ হওয়ার পর পরিবারে চলছে টানাপোড়েন। শাওনের রড়ো ভাই এখনও কাজে মন দিতে পারেনি। ভাই মারা যাওয়ার পর থেকে কেমন যেনো অস্বাভাবিক হয়ে গেছে। গ্রামে নিজেদের থাকার মতো ৬ শতাংশ জমির উপর একটা কাঠ ও টিনের ছোটো একটা বাড়ি আছে। ঘটনার প্রেক্ষাপট আন্দোলনে যোগদানের প্রারম্ভিকতা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দ্বারা শুরু বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নিউজ শুরু থেকেই শাওন প্রতিদিনই দেখতো মোবাইল ফোনে। তারও ইচ্ছে হতো আন্দোলনে নামার। মাঝে মাঝে কাজ থেকে ফেরার পথে শিক্ষার্থীদের সাথে শামিল হতেন আন্দোলনে। আন্দোলনে যেতে মায়ের বারণ ছিল তাই মাকে না জানিয়েই আন্দোলনে যোগ দিতো। অনেকটা বিবেকের টানে, অনেকটা স্বৈরাচার সরকারের প্রতি অতিরিক্ত ক্ষোভের জায়গা থেকে। সর্বশেষ স্বৈরাচার পতনের দিন ৫ আগস্ট দুপুরের দিকে বিজয় মিছিলে যোগদান করে। বিজয় মিছিলে উল্লাসরত হাজার-হাজার ছাত্র-জনতার সাথে যাত্রাবাড়ি থানা ঘেরাও করতে গিয়েছিলেন। বিজয় মিছিলে উল্লাস রত হাজার হাজার শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনতার কল্পনায়ও ছিল না যে স্বৈরাচারী সরকারের পদলেহনকারী পশুরূপ পুলিশবাহিনী মিছিলে অতর্কিত হামলা চালাতে পারে বা গুলি করতে পারে। বিজয় উল্লাসরত নিরস্ত্র ছাত্রজনতা ও শিক্ষার্থীদের কল্পনাকে ঠেলে দিয়ে অতি উৎসাহী পথভ্রষ্ট পুলিশ বাহিনী অতর্কিত হামলা চালায় আন্দোলনকারীদের উপর। মুহূর্তেই বিজয় মিছিল আর্তচিৎকারে রূপ নেয়। যাত্রাবাড়ী এলাকাটি ভয়াবহ রণক্ষেত্র পরিণত হয়। এজন্য স্বাধীনতার পরেও পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ এক যুদ্ধ। হঠাৎ করে পুলিশের একটা গুলি এসে শাওনের বুকে লাগে। মুহূর্তেই শাওন মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। শাওনের রক্তে এদেশের মাটি রঞ্জিত হয়ে যায়। শহীদ উদ্ধার ও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া আন্দোলনরত আশেপাশের লোকজন আহত শাওনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালে নেয়ার কিছুক্ষণ পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক শাওনকে মৃত ঘোষণা করেন। পরিবারে জানানো ও লাশ হস্তান্তর শাওনের পকেটে থাকা মোবাইল ফোন থেকে কল করে আর আহত হওয়ার খবর জানানো হয়। খবর শুনে শাওনের বড় ভাই ও বাবা হাসপাতালে চলে আসেন। দেখতে পায় যে তার আদরের সন্তান আর নেই। শাওনের বাবা সেন্স হারানোর মতো হয়ে যায়। আশেপাশের লোকজন কোনোরকমে বুঝিয়ে শুনিয়ে পরিস্থিতি শামাল দেন। হসপিটাল কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকতা শেষে শহীদের লাশকে তার পিতা ও ভাইয়ের কাছে হস্তান্তর করেন। লাশ নিয়ে গ্রামে যাওয়া ও দাফন-কাফন পরিবারের আরো দুই আত্মীয়ের উপস্থিতিতে এম্বুলেন্সে লাশ নিয়ে বরিশালের গ্রামের বাড়িতে চলে আসেন। এলাকার অসংখ্য লোকের উপস্থিতিতে শহীদ শাওনের লাশ দাফন-কাফন করা হয়। এভাবেই হারিয়ে গিয়েছেন দেশের অসংখ্য বীর শাওনেরা। যারা জীবন দিয়ে নিজের বীরত্ব প্রকাশ করেছেন। হয়তো বেঁচে থাকতে আমরা কেউই জানতাম না তাঁদের দেশপ্রেম ও ত্যাগ কথা। হাজারো শাওনেরা তাদের জীবনের বিনিময়ে এনে দিয়েছে নতুন এক স্বাধীনতা। দেশ স্বাধীনতাকে আমরা দেখতে পাচ্ছি স্বাধীনতার ফল উপভোগ করতে পারছি। আমরা শুধু শুনতে পেয়েছি সন্তানহারা হাজারো মায়ের আর্তচিৎকার। তাইতো আমাদের মনের আকুতি হাজারো শাওনদের নাম ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকুক প্রজন্মের পর প্রজন্ম, যেন জানতে পারে এদেশে শাওনরা ছিল বলেই আমরা একটা স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছিলাম। শহীদের নিকট আত্মীয়ের স্মৃতিচারণ বাবার কথা কোরবানির সময় বাড়ি আইলো আবার যাওয়ার সময় বললো আব্বা আমি যাই আমার কাজ আছে। ওই যে আমার ছেলে গেল আর আসলো না। পোলার কোন রাজনৈতিক দল ছিল না। আমার ছেলে পড়তো এবং কাজ করতো আর বাড়িতে টাকা পাঠাতো।আমার বাজানরে হায়েনারা শেষ করে দিলো। মায়ের কথা আমার ছেলের সাথে আমি ১৮ তারিখ তাকে বাবা ঢাকা গরম আন্দোলনে নামছো নাকি ? সে বলে আমি এগুলোতে নাই পরে বললাম তুমি নাইমো না। আমার দুই ছেলের মধ্যে খুব মিল ছিলো দুজনে মিলে অনেক কিছু করতে চাইতো। ভাই বোনে মিলে থাকার অনেক চেষ্টা করে। কিন্তু আমার বাবারে পুলিশ গুলি করে মারলো। আল্লাহ আমার কলিজার টুকরা সন্তানকে জান্নাতুল ফেরদৌসের মাকাম দান করুন। সন্তান ৫ জন থকুক আর ১০ জন, সন্তান তো সন্তানই। আর সন্তান হারানোর এই যন্ত্রণা মা ছাড়া কেউই বুঝতে পারবেনা। বড়ো ভাইয়ের কথা আমার ভাই খুবই ভালো মানুষ ছিলো। নিজের কাজ সবসময় নিজে গুছিয়ে করতো কাউকে কিছু বলতো না। একমাত্র ছোটোভাইকে হারিয়ে আমি কোনোভাবেই কাজে মন দিতে পারছিনা। ভাইয়ের সাথে আমার অসংখ্য স্মৃতি। কোনোভাবেই ভাইয়ের স্মৃতিগুলো ভুলতে পারছিনা। ছোটো বোনের কথা আমার বাবা খুবই অসুস্থ।বাবা কোন কাজ করতে পারে না। সব খরচ ভাই চালাতো। এখন আপনারা আমার ছোট ভাইকে কোন কাজের ব্যবস্থা করে দিলে ভালো হতো। বন্ধুর কথা শাওন খুবই ভালো ছেলে ছিলো। হাসিখুশি থাকতো সবসময়। নামাজ পড়তো নিয়মিতো। বন্ধুমহলে শাওনের উপস্থিতি আামাদেরকে আনন্দিত করতো। চাচার কথা আমার ভাতিজা খুবই শান্ত ও ভদ্র ছেলে ছিলো। আমাদেরকে খুবই সম্মান করতো। ওকে হারিয়ে আমরা অতি মূল্যবান কিছু হারিয়ে ফেলেছি। সহযোগিতার প্রস্তাবনা ১। বাসস্থান প্রয়োজন ২। বাবার জন্য কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করে দিলে উপকার হবে ৩। ছোট ভাই-বোনদের লেখা-পড়ার খরচ যোগানে সহযোগিতা করা যেতে পারে ব্যক্তিগত প্রোফাইল পুরো নাম : মো: শাওন শিকদার জন্মতারিখ : ০৮/০৯/১৯৯৮ পেশা : ছাত্র ঠিকানা:গ্রাম : বলইকাঠী, ইউনিয়ন: বাদলপাড়া, থানা: বাকেরগঞ্জ, জেলা: বরিশাল পিতার নাম : মো: সেলিম শিকদার, বয়স: ৫৯ বছর, পেশা: কৃষক মাতার নাম : রিনা বেগম, বয়স: ৪৫ বছর, পেশা: গৃহিনী পরিবারের সদস্য সংখ্যা : ৫ জন ভাই বোনের সংখ্যা : ৩ জন : ১। মারুফ শিকদার (১৯), শ্রেণী: একাদশ : ২। লামিয়া (২১), শ্রেণী: ডিগ্রী : ৩। লিমা (১৫), শ্রেণী: নবম ঘটনাস্থান : যাত্রাবাড়ী থানার, পূর্বপাশে, সুফিয়া গার্মেন্টস এর থেকে ১ কিলোমিটার সামনের দিকে আক্রমণকারী : পুলিশ মৃত্যুর সময় তারিখ ও সময় : ০৫/০৮/২০২৪, বিকাল ২.৩০টা তারিখ : ০৫/০৮/২০২৪, বিকাল ৪.৩০টা শহীদের কবরের অবস্থান : বলইকাঠী গ্রামের পারিবারিক কবরস্থান

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: শাওন শিকদার
Image of মো: শাওন শিকদার
Image of মো: শাওন শিকদার
Image of মো: শাওন শিকদার

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: রাব্বি

মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন

 মো: আরিফুর রহমান রাসেল

মো: এমদাদুল হক

মো: দুলাল সরদার

মো: শিহাব উদ্দিন

মো: নয়ন

জসিম উদ্দিন

মো: আতিকুর রহমান

মো: ইয়াসিন

হৃদয় চন্দ্র তরুয়া

মো: আরিফ

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo