জন্ম তারিখ: ১৬ জানুয়ারি, ২০০৫
শহীদ হওয়ার তারিখ: ২০ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: বরিশাল
পেশা : ম্যানেজার, নিউ হীরাফিল, শাহাদাতের স্থান : নিউহীরাফিল হোটেল চিটাগাং মেইন রোড, নারায়ণগঞ্জ
শহীদ শাহীনের পিতার নাম হাসান বাড়ি এবং মাতার নাম নাজমা বেগম। ১৬ জানুয়ারি ২০০৫ সালে বরিশালের হিজলা থানার ঘুন্না গোবিন্দপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বরিশালে নিজ এলাকায় পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেই শিক্ষা জীবনের ইতি টানেন। তারপরে জীবিকার তাগিদে পরিবারের সাথে ঢাকা নারায়ণগঞ্জে চলে আসেন। শহীদ শাহীনের পিতা শাহীনকে নারায়ণগঞ্জের নিউ হিরাফিল হোটেলে কাজে লাগিয়ে দেন। এই দশ বছর বয়স থেকে এখন পর্যন্ত এই হোটেলেই তিনি চাকরি করতেন। হোটেলের সাধারণ কর্মচারী থেকে শুরু করে তিনি ম্যানেজারে পদোন্নতি পেয়েছিলেন। শহীদ শাহিনের ১৩ বছরের ভাই শামীম এই হোটেলেই কাজ করে। হোটেলে কাজ করলেও শহীদ শাহীন ছিলেন স্বৈরাচার বিরোধী, অন্যায়ের প্রতিবাদকারী এবং বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন সহযোগী। তিনি সকল সময় চাইতেন বাংলাদেশের স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার যেন দ্রুতই পতন হয়। অবশেষে পতন হলো কিন্তু তিনি দেখে যেতে পারলেন না। সরকারের পুলিশ বাহিনী ২০-৭-২০২৪ বিকেলে শাহিনের হোটেলে ঢুকে শাহীনকে গুলি করে হত্যা করে। শাহিনের দুনিয়া জীবনের সফর শেষ হয়। শহীদ শাহীনকে যেভাবে হত্যা করা হয় হাসিনার শাসনামলে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলি স্পষ্টভাবে কারচুপি করা হয়েছে এবং তরুণ প্রজন্ম তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ না করেই বেড়ে উঠেছে। "ব্যাংকগুলি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় লুট করা হয়েছে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাষ্ট্রীয় কোষাগার লুণ্ঠন করা হয়েছিল। সকল সেক্টরে শেখ হাসিনা দুর্নীতি করে দেশকে অচল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ছাত্রজনতা সেই ষড়যন্ত্রকে নস্যাৎ করে দিয়েছে। ১৯ বছর বয়সী শাহীন বাড়ি গরীব ঘরের সন্তান। হোটেল বয় শাহিন তার বাবার সাথেই প্রথমে কাজ শুরু করে। কিছুদিন পর আরেকটু বেশী ইনকামের আশায় আরেকটি হোটেলে কাজ শুরু করেন। শাহীন বাড়ির বাবার ২ ছেলেসহ মোট ৪ জনের পরিবার ভালোই চলছিলো। ১৪ জুলাই আন্দোলন শুরুর পর সারাদেশেই সরকার গ্রেফতার ও হামলা মামলা শুরু করে। আন্দোলনের দাবানল থেকে সরকার রক্ষাপাওয়ার জন্য দলকানা প্রশাসনকে ব্যবহার করে। পুলিশ কোন আইনের তোয়াক্কা না করে সাধারন জনতার ওপড় গুলি ছুড়ে। ১৯ জুলাই রাত ১২ টা থেকে আন্দোলন দমানোর জন্য সরকার জরুরী অবস্থা জারী করে। বিপ্লবী জনতা জরুরী অবস্থা ভেঙ্গে রাস্তায় বিক্ষোভ করে। ২০ জুলাই বিকেলে নারায়নগঞ্জের বিপ্লবী জনতা মিছিল শুরু করে। পুলিশ মিছিলে আতর্কিত গুলি ছুড়ে। অসংখ্য মানুষ হতাহত হয়। শাহীন বাড়ি পুলিশের হামলা থেকে বাঁচতে হোটেলের অন্যান্য কর্মচারীদের নিয়ে দোকানের ঝাপ নামিয়ে বসে থাকে। পুলিশি হামলায় কিছু ছাত্র-জনতা তার দোকানে এসে আশ্রয় নেয়। প্রাণ ভয়ে রাস্তায় অনেক ছাত্র চারদিকে ছোটাছুটি করছিল। খুনী পুলিশ বাহিনী হোটেল ঝাপ উঠিয়ে হোটেলের সকলের ওপর হামলা করে। শাহীনকে পথভ্রষ্ট পুলিশ গায়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে। পিতা মাতার আদরের সন্তান শাহীনকে হত্যা করার পর লাশ দিতে পুলিশ গড়িমসি করে। অনেক ধরনার পর লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে। স্থানীয় বিক্ষুব্ধ জনতা লাশ নিয়ে মিছিল করতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। এবং অনেককে নির্যাতন করে। লাশ গ্রহণ করার পর শাহীনের গরীব বাবা স্থানীয় মানুষের সহযোগিতা নিয়ে লাশ গ্রামের বাড়ীতে নিয়ে যায়। এলাকার মানষের অংশগ্রহনের মাধ্যমে জানাযার পরে শাহীনের লাশ দাফন করা হয়। একজন সহজ সরল কিশোরকে কোন কারণ ছাড়াই সরকারি বাহিনী দোকানে ঢুকে হত্যা করলো। গরীব পিত-মাতা তাদের আদরের সন্তানকে হারিয়ে নির্বাক। শাহীনের কর্মজীবন নারায়ণগঞ্জ চট্টগ্রাম মেইন রোড সংলগ্ন নিউ হীরাফিল হোটেলে তার কর্মজীবন শুরু হয়। মৃত্যু কালিন সময় পর্যন্ত তিনি এই হোটেলেই চাকরি করতেন। এই হোটেলে সাধারণ কর্মচারী হিসেবে তিনি যোগদান করেন ১০ বছর আগে। সর্বশেষ তিনি এই হোটেলের ম্যানেজার হিসেবে চাকরি করতেন। শহীদ শাহীনের গর্বিত পিতার বক্তব্য আমার শাহীন আমাকে সকল দিক থেকে সহযোগিতা করত। এমন ছেলে সবার ঘরে জন্মায় না। অর্থ অভাবে আমরা যখন গ্রাম ছেড়ে শহরে আসি তখন থেকে সে আমাকে অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করে আসছিল। কোনদিন আমার সাথে খারাপ আচরণ করেনি। সে সবার সাথেই ভালো আচরণ করতো। সন্ত্রাসী পুলিশ বাহিনী আমার ছেলেকে এভাবে হত্যা করবে কখনো ভাবিনি। সে তো আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে ছিল না আর থাকলেও হোটেলের ভিতরে যেয়ে এভাবে হত্যা করা সন্ত্রাসীদের কাজ ছাড়া সাধারণ পুলিশ সদস্যদের কাজ হতে পারে না। পুলিশের কাজ শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখা, কিন্তু যে পুলিশ এভাবে সাধারণ মানুষকে হত্যা করে পিতা মাতার বুক খালি করবে সেই ধরনের পুলিশ আমরা চাই না। আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই। শাহীনের হোটেল মালিকের বক্তব্য শহীদ শাহিন বাড়ি আমার হোটেলে কাজ করতো। সে আমার খুব বিশ্বস্ত ম্যানেজার ছিল। তার কাছে আমি হোটেল ছেড়ে দিয়ে শান্তি পেতাম। সে খুব ভালো ছেলে ছিল এবং পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তো। সে অন্যায়কে কখনো প্রশ্রয় দেয়নি। আওয়ামীলীগ সরকারের এতসব অপকর্ম দেখে সে সহ্য করতে পারত না। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। সে সব সময় দোয়া করত আল্লাহ যেন এই সরকারকে দ্রুতই পতন ঘটায়। পতন ঘটল ঠিকই কিন্তু সে দেখে যেতে পারলো না। আমার সামনেই শাহীনকে হত্যা করা হয়েছে। আমাকেও গুলি করেছে কিন্তু ভাগ্যক্রমে আমি বেঁচে গিয়েছি। আমি পুলিশের পা জড়িয়ে ধরে কেঁদে কেঁদে বলেছিলাম শাহীনকে ছেড়ে দাও। ওর কোন দোষ নেই আমরা কেউ আন্দোলনে যাইনি। আমরা হোটেলের মালিক। তারপরেও কুখ্যাত পুলিশ বাহিনী শাহীনের বুকে বন্দুক ঠেকিয়ে পরপর দুইটি গুলি করল। প্রস্তাবনা: মাসিক ভাতার ব্যবস্থা করা যায় শহীদের ব্যক্তিগত প্রোফাইল শহীদের পূর্ণ নাম : মো: শাহীন বাড়ি জন্ম তারিখ : ১৬-০১-২০০৫ জন্মস্থান : ঘুন্না গোবিন্দপুর, হিজলা বরিশাল পেশা : ম্যানেজার, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম মেইন রোড সংলগ্ন নিউ হীরাফিল হোটেল বর্তমান ঠিকানা : সিংড়ায়, বউবাজার, নারায়ণগঞ্জ স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: ঘুন্না গোবিন্দপুর, ইউনিয়ন: বড়জালিয়া, থানা: হিজলা, জেলা: বরিশাল পিতার নাম : হাসান বাড়ি (৬৩), হোটেল ব্যবসা মাতার নাম : মোছা: নাজমা বেগম (৫৫) গৃহিণী : ছোট ভাই: শামীম রেজা (১৩) হোটেলের কাজ আঘাতকারী : আওয়ামী লীগ সমর্থিত সন্ত্রাসী পুলিশ বাহিনী আহত হওয়ায় ও স্থান সময় : নিউহীরাফিল হোটেল চিটাগাং মেইন রোড, নারায়ণগঞ্জ ২০-০৭-২০২৪ বিকেল ৬:০০টায় মৃত্যুর তারিখ ও সময়, স্থান : ২০-০৭-২০২৪, বিকেল ৬:০০টায়, হীরাফিল হোটেল, চিটাগাং মেইনরোড, নারায়ণগঞ্জ জানাজা : ২১-০৭-২০২৪ সকাল ১০:০০টায় কবরস্থান : নিজে গ্রামের পারিবারিক কবরস্থান