Image of রুবেল হোসেন

নাম: রুবেল হোসেন

জন্ম তারিখ: ৮ জানুয়ারি, ২০০২

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: বরিশাল

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : গার্মেন্টস কর্মকর্তা, শাহাদাতের স্থান : আশুলিয়া থানা, ঢাকা

শহীদের জীবনী

“ দেশকে ভালোবেসে যে জীবন দেয় তাকে মৃত বলোনা, সে তো শহীদ ” বৃহত্তর বরিশালের ঝালকাঠি জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম চর হাইলাকাঠী। এই গ্রামে ২০০২ সালের ৮ জানুয়ারি জন্ম নিয়েছিলো এক বীরপুরুষ। নাম তার রুবেল হোসেন। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট ছিলো রুবেল। পরিবারের আর্থিক অনটনের কারণে খুব অল্প বয়সেই পড়াশোনার পাশাপাশি গার্মেন্টস কর্মী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। চাকরি পাওয়াটা তার মূল উদ্দেশ্য ছিল না। দ্রবমূলের ঊর্ধ্বগতি ও স্বৈরাচার সরকারের অনৈতিক কার্যাবলী গুলো কোনভাবেই সে মেনে নিতে পারছিল না। তাইতো তাকে জীবন দিতে হলো। পরিবারের অতি আদরের ছোটো সন্তানকে হারিয়ে পরিবারটি যেনো বাকরুদ্ধ। পারিবারের আর্থিক টানাপোড়েনের কারনে মাত্র অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ার সুযোগ হয়েছিলো রুবেলের। এরপরেই দারিদ্র পরিবারের দুঃখ ঘোচাতে গার্মেন্টস কর্মী হিসেবে কাজে যোগদান করে।পরিবারের দুঃখ ঠিকই ঘুচে গিয়েছিলো, কিন্তু তা এই স্বৈরাচার সরকারের পদলেহনকারী দালালেরা বেশিদিন স্থায়ী হতে দেয়নি। হায়েনারা বুলেটের আঘাতে পিতামাতার স্বপ্নকে নিমিষেই শেষ করে দিয়েছ। পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা বৃদ্ধ বাবা মা ও একটা ৪ ভাইবোন নিয়ে গোছানো ১টা পরিবার ছিলো রুবেলের। রুবেলের আয়েই বৃদ্ধ পিতামাতার ওষুধের খরচ চলতো। বৃদ্ধ পিতা-মাতার পিছনে ওষুধেই প্রতিমাসে অনেক টাকা খরচ হয়। অন্য দুই ভাইবোন গার্মেন্টসে চাকরি করা সত্ত্বেও পিতামার ওষুধের খরচ চালানো কঠিন হয়ে যাচ্ছে। পরিবারটির কোনো ফসলি জমি নেই। ০৬ শতাংশ জমির উপরে টিনের চালা ও কাঠ-টিনের বেড়া বিশিষ্ট ছোটো ১টা ঘর যেখানে কোনোরকমে মাথা গুজে দিনের পর দিন পার করছেন। ঘটনার প্রেক্ষাপট আন্দোলে যোগদানের প্রারম্ভিকতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দ্বারা শুরু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নিউজ শুরু থেকেই রবেল প্রতিদিনই দেখতো মোবাইল ফোনে। তারও ইচ্ছে হতো আন্দোলনে শামিল হতে। মাঝে মাঝে গার্মেন্টসের অফিস টাইম থেকে ফেরার পথে শিক্ষার্থীদের সাথে শামিল হতেন আন্দোলনে। আন্দোলনে যেতে মায়ের বারণ ছিল, তাই মাকে না জানিয়েই আন্দোলনে যোগ দিতেন। অনেকটা বিবেকের টানে অনেকটা স্বৈরাচার সরকারের প্রতি অতিরিক্ত ক্ষোভের জায়গা থেকে। সর্বশেষ স্বৈরাচার পতনের দিন ৫ আগস্ট দুপুরের দিকে বিজয় মিছিলে যোগদান করে। বিজয় মিছিলে উল্লাসরত হাজার হাজার ছাত্র-জনতার সাথে যাত্রাবাড়ি থানার সামনে থেকে বিজয় মিছিলে যোগ দেন রুবেল। বিজয় মিছিলে উল্লাসরত হাজার হাজার শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনতার কল্পনায়ও ছিল না যে স্বৈরাচারী সরকারের পদলেহনকারী পশুরূপ পুলিশবাহিনী বিজয় মিছিলেও অতর্কিত হামলা চালাতে পারে বা গুলি করতে পারে। বিজয় উল্লাসরত নিরস্ত্র ছাত্রজনতা ও শিক্ষার্থীদের কল্পনাকে ঠেলে দিয়ে অতি উৎসাহী পথভ্রষ্ট পুলিশ বাহিনী অতর্কিত হামলা চালায় আন্দোলনকারীদের উপর। মুহূর্তেই বিজয় মিছিল আর্তচিৎকারে রূপ নেয়। তখন যাত্রাবাড়ী এলাকাটি ভয়াবহ যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়। এজন্যই স্বাধীনতার পরেও পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ এক যুদ্ধ। হঠাৎ করে পুলিশের একটা গুলি এসে রুবেলর বুকে এসে লাগে। মুহূর্তেই রুবেল মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। রুবেলের রক্তে এদেশের মাটি রঞ্জিত হয়ে যায়। শহীদ উদ্ধার ও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া আন্দোলনরত আশেপাশের লোকজন আহত রুবেলকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালে নেয়ার কিছুক্ষণ পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক রুবেলকে মৃত ঘোষণা করেন। লাশ নিয়ে গ্রামে যাওয়া ও দাফন-কাফন পরিবারের আরো দুই আত্মীয়ের উপস্থিতিতে এম্বুলেন্সে লাশ নিয়ে বরিশালের গ্রামের বাড়িতে চলে আসেন। এলাকার অসংখ্য লোকের উপস্থিতিতে শহীদ রুবেলের লাশ দাফন-কাফন করা হয়। এভাবেই হারিয়ে গেছে দেশের অসংখ্য বীর রুবেলরা। যারা জীবন দিয়ে নিজের বীরত্ব প্রকাশ করে গেছে। হয়তো বেঁচে থাকতে আমরা কেউই জানতাম না আমাদের দেশ প্রেম তাদের ত্যাগ। হাজারো রুবেলরা তাদের জীবনের বিনিময়ে এনে দিয়েছে নতুন এক স্বাধীনতা। দেশ স্বাধীনতাকে আমরা দেখতে পাচ্ছি স্বাধীনতার ফল উপভোগ করতে পারছি। অথচ রুবেলের শুধু দিয়েই গেছে বিনিময়ে কিছুই নেই নি। আমরা শুধু শুনতে পেয়েছি সন্তানহারা হাজারো মায়ের আর্তচিৎকার। তাইতো আমাদের মনের আকুতি হাজারো রুবেলদের নাম ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকুক প্রজন্মের পর প্রজন্ম। যেনো জানতে পারে এদেশে রুবেলরা ছিল বলেই আমরা একটা স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছিলাম। শহীদের নিকট আত্মীয়ের স্মৃতিচারণ: শহীদের রুবেল ছিলো আমার ছোটো সন্তান। আমার নয়নের মনি। আমার সন্তানদের মধ্যে খুবই নম্র ও শান্ত ছেলে ছিলো। বাজানকে হারানোর পরে কাঁদতে কাঁদতে আমার চোখের পানি শুকিয়ে গেছে। কিন্তু হৃদয়ের যন্ত্রণা ও হাহাকার আমৃত্যু থাকবে। শহীদের বাবা: আমার সন্তান ৫ ওয়াক্ত নামাজী ও বিনয়ী ছিলো। প্রতিদিন ফোন করে আমাদের খোঁজ-খবর নিতো। ওর আয়ে আমাদের চিকিৎসার খরচ চলতো। আমার সন্তানকে যেনো রাস্ট্রীয়ভাবে শহীদের মর্যাদা দান করা হয় এই প্রত্যাশা বড়ো ভাইয়ের কথা: আমার ভাই খুবই ভালো মানুষ ছিলো। নিজের কাজ সবসময় নিজে গুছিয়ে করতো কাউকে কিছু বলতো না। একমাত্র ছোটোভাইকে হারিয়ে আমি কোনোভাবেই কাজে মন দিতে পারছিনা। ভাইয়ের সাথে আমার অসংখ্য স্মৃতি। কোনোভাবেই ভাইয়ের স্মৃতিগুলো ভুলতে পারছিনা। ছোটো বোনের কথা: আমার বাবা-মা খুবই অসুস্থ। বাবা কোন কাজ করতে পারে না। সব খরচ ভাই চালাতো।এখন আপনারা আমার ছোট ভাইকে কোন কাজের ব্যবস্থা করে দিলে ভালো হতো। বন্ধুর কথা: রুবেল খুবই ভালো ছেলে ছিলো। হাসিখুশি থাকতো সবসময়। নামাজ পড়তো নিয়মিত। বন্ধুমহলে রুবেলের উপস্থিতি আামাদেরকে আনন্দিত করতো। চাচার কথা: আমার ভাতিজা খুবই শান্ত ও ভদ্র ছেলে ছিলো। আমাদেরকে খুবই সম্মান করতো। ওকে হারিয়ে আমরা অতি মূল্যবান কিছু হারিয়ে ফেলেছি। সহযোগিতা সংক্রান্ত প্রস্তাবনা ১. বৃদ্ধ বাবা-মার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। ২. তার নামে একটি গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠা করা । শহীদের ব্যক্তিগত প্রোফাইল পুরো নাম : রুবেল হোসেন জন্মতারিখ : ০৮/০১/২০০২ পেশা : পি কে ডি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে আয়রনম্যান হিসেবে ছিল ঠিকানা : গ্রাম: চরহাইলাকাঠি রামপুর, ইউনিয়ন: মঠবাড়ি, থানা: রাজাপুর, জেলা: ঝালকাঠি পিতার নাম : মো: মালেক তালুকদার, বয়স: ৭৫ বছর মাতার নাম : রহিমা বেগম বয়স: ৫৫ বছর, পেশা: গৃহিনী পরিবারের সদস্য সংখ্যা : ৫ জন ভাই বোনের সংখ্যা : ৪ জন : ১. সুমন (৪৩), দিনমজুর : ২. সোহেল (২৭), গার্মেন্টস কর্মকর্তা : ৩. নাজমে (২৮), গার্মেন্টস কর্মকর্তা : ৪. শাহনাজ (৪৫), বিবাহিত ঘটনাস্থান : আশুলিয়া থানা, ঢাকা আক্রমণকারী : পুলিশ আহত হওয়ার তারিখ : ০৫/০৮/২০২৪ মৃত্যুর সময় ও তারিখ : ০৫/০৮/২০২৪ বিকাল ৩ টা ( আনুমানিক ) শহীদের কবরের অবস্থান : গ্রামের বাড়িতে পারিবারিক কবরস্থান

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of রুবেল হোসেন
Image of রুবেল হোসেন

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মোহাম্মদ রনি

মো: আরিফ

মো: সাগর গাজী

মো: ইয়াসিন

মো: শাহ জামাল ভূঁইয়া (জামাল)

মো: শাহীন বাড়ি

মো: হাবিবুর রহমান

মো: ফয়সাল আহমেদ (শান্ত)

এম. ডি. ইলিয়াস হোসাইন

মো: বাবলু মৃধা

মো: আবু জাফর হাওলাদার

 মোঃ ফজলু

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo