জন্ম তারিখ: ২০ জুলাই, ১৯৮৮
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৬ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: বরিশাল
পেশা : ব্যাবসা, শাহাদাতের স্থান : ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
“ সবাই স্কুলে তাদের বাবাকে নিয়ে যাবে। আমি এখন কাকে নিয়ে যাব। ” শহীদ রফিকুল ইসলাম ১৯৮৮ সালে পিরোজপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা জনাব মোশাররফ হোসেন এবং মাতা মোসা: নুরুন নাহার বেগম। রফিকুল ইসলাম পেশায় ছিলেন একজন ব্যবসায়ী। পরিচিত মহলে একজন সজ্জন ব্যক্তি হিসেব তাঁর খ্যাতি ছিল। তিনি টাইলস, স্যানিটারী ও লাইটিং এর ব্যবসা করতেন। তাঁর দোকানের নাম ছিল “কে এম টাইলস এন্ড স্যানিটারি ও লাইটিং”। পারিবারিক অবস্থা শহীদ রফিকুল ইসলাম পেশায় ছিলেন একজন ব্যবসায়ি। দাম্পত্য জীবনে তিনি তিন কন্যা সন্তানের জনক। তাঁর একক আয়েই পুরো পরিবার চলতো। তাঁর মৃত্যুতে পুরো পরিবার মর্মাহত। এতিম মেয়েদের দায়িত্ব নেওয়ার মত কেউ নেই। বিস্তারিত বর্ণনা আওয়ামী সরকারের দীর্ঘ ১৬ বছরের শাসনামলে দেশে এক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটে। সারাদেশে গুম, খুন, ডাকাতি, ধর্ষণ সহ সব ধরণের অন্যায় অপকর্মের মাত্রা বেড়ে যায়। আওয়ামীলীগের দলীয় লোকজনের দ্বারা সাধারণ মানুষ নির্যাতিত হতে থাকে। অন্যায়ভাবে মানুষের অর্থ আত্মসাত, অপরাধ করেও বিচার না হওয়া, মিথ্যা মামলা দিয়ে সাধারণ মানুষদের হয়রানি, একাধিক অপরাধ করেও পার পেয়ে যাওয়া, সুষ্ঠু বিচার না হওয়া ইত্যাদি কারনে দেশে এক চরম বিপর্যয় সৃষ্টি হয়। এভাবে অনেক মানুষকে অন্যায়ভাবে প্রাণ দিতে হয়। শহীদ রফিকুল ইসলাম ছিলেন তাদেরই একজন। ধার করা টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে মো. রফিকুল ইসলাম মিঠু, বাশার তালুকদার, মো. ছালাম তালুকদার ও হাসিব তালুকদারকে কুপিয়ে আহত করে স্থানীয় জেলা পাড়ার ৩০-৪০ জনের যুবলীগের সন্ত্রাসী দল। স্থানীয়দের বর্ণনা অনুযায়ী, দেশের উত্তাল দিনের সুযোগ নিয়ে আওয়ামীলীগের হামলাকারীরা রামদা, চাপাতি, লাঠি, রড ও হাতুড়ি দিয়ে এলোপাথাড়িভাবে কুপিয়ে যখম করে শহীদ রফিকুল ইসলামকে। রক্তাক্ত অবস্থায় রফিকুল ইসলামকে ফেলে রেখে চলে যায়। পরে ফায়ার সার্ভিস এসে তাদেরকে উদ্ধার করে। প্রথমে রফিকুলকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে তাঁর অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে ৬ আগস্ট রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। তাঁর স্ত্রী হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করতে গিয়েও ব্যর্থ হয়ে ফেরত আসেন। থানায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা নেওয়া হয় না। পরবর্তীতে আওয়ামী সরকারের পতনের পর তাঁর স্ত্রী বাদী হয়ে ভান্ডারীয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে মৃত্যুর কিছু দিন পর পুলিশ আদালতের নির্দেশে কবর থেকে শহীদ রফিকুলের লাশ তুলে মামলার তদন্ত শুরু করেন। শহীদ সম্পর্কে নিকটাত্মীয়ের বর্ণনা শহীদ সম্পর্কে তাঁর বড় মেয়ে কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘এখন আমি কার সাথে স্কুলে যাব। স্কুলের অনুষ্ঠানে সবাই সবার বাবাকে নিয়ে আসবে আমি কাকে নিয়ে যাব’। পাড়া প্রতিবেশী সবাই তাঁর জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। তাঁর এক প্রতিবেশী বলেন, সে খুব ভালো মানুষ ছিল। আমাদের এলাকার কারো সাথে তাঁর কোন বিবাদ ছিল না। সে একজন নম্র, ভদ্র, নিরীহ মানুষ। তাঁকে এভাবে কুপিয়ে যখম করে খুন করা হয়েছে। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই। তাঁর চাচা বলেন, তাঁর মত একজন নিরপরাধ মানুষকে লাঠি-সোটা,রড, রামদা, গরু জবাই করা চা-পাতি দিয়ে অমানবিকভাবে পিটিয়ে, কুপিয়ে হত্যা করা হয়। তাঁর স্ত্রী বলেন, ‘আমার স্বামীকে যারা হত্যা করেছে আমি তাদের শাস্তি চাই। যারা আমার স্বামীকে বাঁচতে দেয়নি তারাও যেন বাচঁতে না পারে’। শহীদের ব্যক্তিগত প্রোফাইল নাম : মো: রফিকুল ইসলাম পিতা : জনাব মো: মোশাররফ হোসেন মাতা : মোসা: নুরুন নাহার বেগম জন্ম : ২০ জুলাই ১৯৮৮ পেশা : ব্যাবসা স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: দক্ষিণ ভিটাবাড়ীয়া ডাকঘর : ভিটাবাড়ীয়া ৮৫৫০, জেলা: পিরোজপুর বর্তমান ঠিকানা : খিলগাও, ঢাকা আহত হওয়ার তারিখ : ৩ আগস্ট, ২০২৪ নিহত হওয়ার তারিখ : ৬ আগস্ট, ২০২৪, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ৬ আগস্ট ২০২৪ স্বৈরাচারী বাহিনীর আক্রমণের শিকার হয়ে তিনি শাহাদাত বরণ করেন। মৃত্যুকালে শহীদ রফিকুল ইসলাম তিনটি কন্যা সন্তান রেখে যান।