Image of মো: ইফতি আব্দুল্লাহ

নাম: মো: ইফতি আব্দুল্লাহ

জন্ম তারিখ: ২৪ জুন, ২০১০

শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৯ জুলাই, ২০২৪

বিভাগ: বরিশাল

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : ড্রাইভার, শাহাদাতের স্থান : রামপুরা, ঢাকা

শহীদের জীবনী

“যে মৃত্যু বরণ করে, সে স্মৃতি হয়ে যায়, কেউ ক্ষণিকের জন্য, কেউবা হাজার বছর বেচে রয়। কেউ স্মৃতির পাতায়, দাপটের সাথে রাজত্ব করে, কারো লাশ মাটিতে শুধু রয় যে পড়ে।” মো: ইফতি আব্দুল্লাহ ছিলেন একজন সাহসী ও কঠোর পরিশ্রমী ব্যক্তিত্ব। তিনি ২০০০ সালের ৩১ শে আগস্ট বরিশাল জেলার মেহেদীগঞ্জ উপজেলার মোদ্দার চর গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। পিতা ইউনুস সরকার এবং মাতা রাবেয়া বেগম। পিতা মাতা পরম আদরে একমাত্র পুত্র সন্তানের নাম রাখেন ইফতি। বাবা শখ করে গ্রামের মাদ্রাসায় ভর্তি করে দেন। লেখাপড়ায় মনোযোগী না হওয়ায় বেশিদূর পড়াশোনা করতে পারেননি তিনি। গ্রামীণ পরিবেশে অর্থনৈতিক ভঙ্গুর অবস্থায় যাচ্ছিল তাদের জীবন। এমতাবস্থায় তিনি পরিবারসহ ঢাকায় চলে আসেন এবং ড্রাইভারের চাকরি নেন। তিনিই ছিলেন তার পরিবারের একমাত্র কর্ণধার। ইফতি স্বপ্ন দেখতেন একদিন তার ও একটি সোনার সংসার হবে। কিন্তু তার এই রঙিন স্বপ্ন অধরায় রেখে স্বৈরাচারি সরকারের পুলিশ বাহিনীর হাতে শহীদ হন ইফতি। পারিবারিক অবস্থা : ইফতি আব্দুল্লাহ তাঁর পিতামাতাকে নিয়ে রাজধানীর মতিঝিল এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন। পরিবারের সকল খরচই ইফতির আয়ের উপর নির্ভরশীল ছিল। বাড়িতে বসতভিটার সাথে সাথে বাহিরে কোন জমি বা সম্পদ ছিল না। এই করুন অবস্থার ভিতর দিয়ে দিনাতিপাত করছিল ইফতি ও তার পরিবার। তার মৃত্যুতে পরিবারটি একেবারে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। তাকে হারিয়ে পুরো পরিবার এখন পথে নামার অবস্থা। তাদের নিজের বলতে এখন আর কোন সম্পদই অবশিষ্ট নেই। বর্তমানে তারা অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত। এখন তারা চিন্তিত, কিভাবে চলবেন এবং কিভাবে সংসারের খরচ চালাবেন। পরিবার প্রধানের অভাব তাদের জীবনকে অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে। তাইতো কবি বলেছিলেন, “দুঃখরা কেন এভাবে মিছিল করে আসে খেটে খাওয়া মানুষগুলোর জীবনের স্পন্দন থামিয়ে দিয়ে ? দুঃখরা কেন বার বার ওদেরকেই ভালোবাসে ওদের হাসি-কান্নায় ভরপুর জীবনকে স্তব্ধতায় ঢেকে দিয়ে ?” এই দুরবস্থার মধ্যে, তারা আশা করে সমাজ সহায়তা করবে, যাতে তাদের জীবনে কিছুটা আলো ফিরিয়ে আনা যায়। ঘটনার বিবরণ : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলছিল জুলাই, ২৪ জুড়ে। ছাত্ররা মূলত শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ, মানববন্ধন, প্রতিবাদ সভা, এবং সেমিনারের মাধ্যমে তাদের দাবি তুলে ধরেছে। তবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আন্দোলনটি সংঘাতপূর্ণ হয়ে উঠতে দেখা যায়, যেখানে নিরাপত্তা বাহিনী ও ছাত্রদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। কারণ স্বৈরাচার সরকার ছাত্রদের নায্য দাবী না মেনে চালাচ্ছিলো অত্যাচারের চরম মাত্রা। সারাদেশ জুড়ে গুলি,রাবার বুলেট,সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল ছোঁড়া হচ্ছিলো ছাত্রজনতাকে লক্ষ্য করে। খালি হয়ে যাচ্ছিলো হাজারো মায়ের বুক,পিতাহারা হয়ে পড়ছিলো হাজারো শিশু, আর হাতের মেহেদীর রঙ শুকাবার আগেই অনেকেই হয়েছিলো বিধবা। এসব দেখে দেশের সাধারণ মানুষেরা ও চুপ করে বসে থাকতে পারেনি। তাদের মধ্যে একজন হলেন ইফতি আব্দুল্লাহ। যিনি মজলুম ছাত্রজনতার মুখে নিজের ছাপ দেখতে পেতেন। তাই বিবেকের কাছে হার মেনে প্রতিদিনই শামিল হতেন আন্দোলনে। সে সময় চরম প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে ছাত্রজনতার পাশে থেকে সাহায্য করার চেষ্টা করতেন। এক পর্যায়ে এই আন্দোলন সরকার পতনের আন্দোলনে রুপ নেয়। সারাদেশে ঢল নামে ছাত্রজনতার। মুখে মুখে আন্দোলিত হতে থাকে স্বৈরাচার হাসিনার পতনধ্বনি। এই ঘটনার পরিক্রমায় ১৯ জুলাই ২০২৪ইং জুমাবার বিকেলে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিতে রাজধানীর রামপুরার মিছিলে যোগদান করেন তিনি। সেখানে দিনভর ছিল গোলাগুলি। পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও খুনী আওয়ামী লীগের বিতর্কিত সংস্থা রাস্তায় ছিল তৎপর। ছাত্ররা তারপরেও রাস্তায় অবস্থান ধরে রেখেছিল। সরকারী দলের তান্ডবে রাজপথ রক্তাক্ত হচ্ছিল। হাসপাতাল গুলো আহত ও লাশে ভরছিল। এরইমধ্যে ইফতির পরিবার তাকে অনুসন্ধান করা শুরু করে এবং তাদের চোখে মুখে ভেসে উঠে আতংকের ছাপ। এক আকাশ দুশ্চিন্তা নিয়ে তার বোন তার সাথে বারবার ফোনে যোগাযোগ করতে চায় কিন্তু তাকে ফোনে পাওয়া যায় নি। এমতাবস্থায় তারা টিভিতে দেখেন যে অনেক মানুষ নিহত হয়ছে। তখন ইফতির বাবা ইফতিরও লাশ পড়ে রয়েছে সেখানে। মুহূর্তেই ভেঙে যায় এক পিতার এক আকাশ স্বপ্ন ও একমাত্র অবলম্বন। বিনা দোষে শাস্তি পেয়ে এভাবে শহীদি কাফেলায় সংযুক্ত হয় আরেকটি নাম ইফতি আব্দুল্লাহ। সর্বোপরি, ৪ আগস্ট থেকে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন ছাত্র জনতা, সেদিন বিকেলেই ঘোষণা আসে "লং মার্চ টু ঢাকা" হবে পরের দিন। এরই মধ্যে দিয়ে দেশ স্বৈরাচার মুক্ত হয়। কিন্তু সেই মুক্ত দেশের মুক্তির আনন্দ উপভোগ করতে পারেননি শহীদ ইফতি আব্দুল্লাহ। তার স্মৃতি রয়ে গেছে কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ে। তাইতো কবির ভাষায়, “যে মৃত্যু বরণ করে সে স্মৃতি হয়ে যায়, কেউ ক্ষণিকের জন্য কেউবা হাজার বছর বেচে রয়। কেউ স্মৃতির পাতায় দাপটের সাথে রাজত্ব করে, কারো লাশ মাটিতে শুধু রয় যে পড়ে।” শহীদ সম্পর্কে নিকটাত্মীয় ও বন্ধুদের অনুভূতি: কথায় আছে, ÒA man does not live in years but in deedsÓ এটিই যথার্থ ইফতি আব্দুল্লার বেলায়। তার প্রতিবেশি বলেন, “ইফতি আব্দুল্লাহ ছেলে হিসেবে খুবই ভালো। সবার সাথে হাসি মুখে কথা বলতো। কারো সাথে কোন ব্যক্তিগত শত্রুতা ছিলো না। তাছাড়া এলাকার সকল মানুষ একই কথা বলেছেন তার সম্পর্কে।” বোন বলেন, “আমার ভাই খুব ভালো মানুষ ছিলো কখনো কারো সাথে ঝগড়া বিবাদ করে নাই। গ্রামের সবার সাথে ভালো সম্পর্ক ছিলো তার। ঈদে আমাদের জামা কাপড় কিনে দিতো। তার কথা মনে পড়লে খুবই খারাপ লাগে” শহীদের ব্যক্তিগত প্রোফাইল পুরো নাম : মো: ইফতি আব্দুল্লাহ জন্ম : ২৪-০৬-২০১০ পেশা : ড্রাইভার পিতা : ইউনুস সরকার মাতা : রাবেয়া বেগম ঠিকানা: গ্রাম: মোদ্দার চর, ইউনিয়ন: পথের হাট, থানা: মেহেদীগঞ্জ, জেলা: বরিশাল বর্তমান ঠিকানা : মতিঝিল, ঢাকা পরিবারের সদস্য সংখ্যা : ৪ জন আহত হওয়ার স্থান ও তারিখ : রামপুরা ঢাকা, ১৯ জুলাই সন্ধ্যা ৬টা আক্রমণকারী : পুলিশ নিহত হওয়ার তারিখ ও স্থান : ১৯ জুলাই ২০২৪, রামপুরা, ঢাকা সমাধি : কিশোরগঞ্জ (নানাবাড়ি) শহীদ পরিবারের জন্য প্রস্তাবনা ১. বাবার জন্য ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান করে দিলে উপকার হবে ২. পরিবারের জন্য বাসস্থানের ব্যাবস্থা করা ৩. তার স্মৃতিকে ধরে রাখার ব্যাবস্থা করা

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: ইফতি আব্দুল্লাহ
Image of মো: ইফতি আব্দুল্লাহ
Image of মো: ইফতি আব্দুল্লাহ
Image of মো: ইফতি আব্দুল্লাহ

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: শিহাব উদ্দিন

মো: সুজন

 মোসা: লিজা

মো: লিটন

 মো: আরিফুর রহমান রাসেল

মো: রাব্বি

মো: ফয়সাল আহমেদ (শান্ত)

মো: মিজানুর রহমান

মো: জামাল হোসেন

মো: নাহিদুল ইসলাম

মোঃ মামুন

মো: শাহিন

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo