জন্ম তারিখ: ৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮১
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: বরিশাল
পেশা : ব্যবসায়ী, শাহাদাতের স্থান :হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায়
” যার চলে যায়, সে ই বুঝে হায়, বিচ্ছেদে কি যন্ত্রণা, অবুঝ শিশুর অবুঝ প্রশ্ন, কি দিয়ে দিবো সান্ত্বনা? ” ছোট্ট শিশু জাহিন। আধো আধো বুলিতে বাবাকে ডাকে। কচি হাতে আলতো করে ছুঁয়ে দেয় বাবার মুখ। কিন্তু বাবা যে তার হারিয়ে গেছে চিরতরে। দুচোখ মেলে হন্যে হয়ে খোঁজে প্রিয় বাবার মুখ। খুঁজে ফিরে শহীদ মামুন খন্দকারের মুখ । শহীদ মামুন খন্দকার ১৯৮১ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি নিজ জেলা পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া থানার বেতমোড় গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। চার সন্তানের জনক শহীদ মামুন খন্দকারের পিতা মো: হাজী মুজিবর রহমান খন্দকার এবং মাতা নুরজাহান বেগম রেনু। জীবন ও জীবিকার তাগিদে থাকতেন ঢাকা জেলার সাভার থনার অন্তর্গত মধ্যগাজীর চট এলাকায়। চার সন্তান ও স্ত্রী সহ তার মধ্যবিত্ত পরিবার ছিলো যেন এক সুখের নীড়। তার দুচোখ জুড়ে খেলা করতো সন্তানগুলোকে মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন। কিন্তু সরকারি হায়েনার দল তছনছ করে দেয় সে সুখের নীড়। শহীদ করে ফেলে মামুনকে,রাজপথে রক্তের সাথে মিশিয়ে দেয় সোনালী স্বপ্নগুলো। পারিবারিক অবস্থান বাল্যকাল থেকেই শহীদ মামুন খন্দকার ছিলেন খুবই পরিশ্রমী এবং পেশায় ছিলেন ব্যবসায়ী। বাবাকে সকল কাজে সহযোগিতা করতেন। সন্তানদেরকেও মানুষের মতো মানুষ করে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখতেন। তাই একবুক আশা নিয়ে নিজ বাড়ি ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছিলেন ঢাকা শহরে। সেই ঢাকা শহরের মিছিলেই তিনি হারিয়ে গেছেন চিরতরে। রেখে গেছে চার সন্তানকে।যাদের আশ্রয় এখন বিধবা মায়ের আঁচল। শহীদ মামুনের অনুপস্থিতিতে তার কারখানা এখন বন্ধ। পাশাপাশি তিনি ছিলেন সিদরাতুল মুনতাহা হাফিজিয়া মাদ্রাসার পরিচালক। সেই আয়ের পথও এখন খোলা নেই। মামুনের বিধবা স্ত্রীর বুক জুড়ে শুধু হাহাকার। ঘটনার বিবরণ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলছিল জুলাই মাস জুড়ে। কারণ স্বৈরাচার সরকার ছাত্রদের নায্য দাবী না মেনে চালাচ্ছিলো অত্যাচারের স্টীমরোলার। সারাদেশ জুড়ে গুলি,রাবার বুলেট,সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল ছোঁড়া হচ্ছিলো ছাত্রজনতাকে লক্ষ্য করে। খালি হয়ে যাচ্ছিলো হাজারো মায়ের বুক,পিতাহারা হয়ে পড়ছিলো হাজারো শিশু, আর হাতের মেহেদীর রঙ শুকাবার আগেই অনেকেই হয়েছিলো বিধবা। দীর্ঘ ১৬ বছরের অত্যাচার-নির্যাতন, শোষণ-নিপীড়নে অতিষ্ঠ হয়ে গেছে ১৮ কোটি জনতা। ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে জোয়ার এসেছিলো প্রতিবাদের চিন্তার। জীবন বাজি রেখেই আন্দোলনের নতুন রুপ দেয় ছাত্রজনতা। তারই ফলশ্রুতিতে স্বৈরাচার হাসিনার পদত্যাগের দাবি উঠে। সারাদেশে ঢল নামে ছাত্রজনতার। মুখে মুখে আন্দোলিত হতে থাকে হাসিনার পতনধ্বনি। শহীদ মামুন ছিলেন তাদেরই একজন, যিনি মজলুম ছাত্রজনতার মুখে নিজের সন্তানদের ছাপ দেখতে পেতেন। তাই প্রতিদিনই শামিল হতেন আন্দোলনে। নিজের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করতেন মিছিলকারীদের সামনে নিয়ে যেতে। সে সময় চরম প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে মানুষের পাশে থেকে সাহায্য করার চেষ্টা করতেন। কারণ আন্দোলন তো দূরের কথা, কাউকে আন্দোলনের কাজে ন্যূনতম সহযোগিতা করাকেও মেনে নিতে পারছিলো না অবৈধ সরকারের দলকানা বাহিনী। এমনি একজন ব্যক্তি ছিলেন শহীদ মীর মুগ্ধ,যিনি পানি আর বিস্কুট বিতরণের কারণে পুলিশের গুলির শিকার হয়ে মারা যান। ৪ আগস্ট থেকে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন ছাত্র জনতা, সেদিন বিকেলেই ঘোষণা আসে "লং মার্চ টু ঢাকা" হবে ৫ আগস্ট। তারই প্রেক্ষিতে হেলমেট বাহিনী হুমকি দেয় মামুনকে। সেই হুমকি উপেক্ষা করেই ৫ তারিখে মিছিলে যোগদান করেন। দুপুর ১২:৩০টার দিকে নবীনগর বাইপাইলে মিছিল নিয়ে বের হলে পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন মামুন। এরই মধ্যে দেশ স্বৈরাচার মুক্ত হয়। কিন্তু মুক্তির আনন্দ উপভোগ করতে পারেননি শহীদ মামুন। ৭ আগস্ট ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩০ মিনিটে আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে তিনি চলে যান এই নশ্বর দুনিয়া ছেড়ে। শহীদ সম্পর্কে নিকটাত্মীয় ও বন্ধুদের অনুভূতি চাচাতো ভাই আনোয়ার খন্দকার বলেন, মামুন ছিলেন মিশ্র প্রকৃতির মানুষ। তিনি মানুষের সুখ-দুঃখের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে সমস্যার সমাধান করে দিতেন। মসজিদের সংগে ছিলো তার ভালো সম্পর্ক। আল্লাহ তাকে জান্নাতুল ফেরদৌসের মেহমান বানিয়ে নিন। আমিন। শহীদ পরিবারকে সাহায্যের প্রস্তাবনা ১. স্ত্রীকে শিক্ষকতার চাকুরির ব্যবস্থা করে দেয়া ২. সন্তানদের শিক্ষার খরচের ব্যবস্থা করা শহীদের ব্যক্তিগত প্রোফাইল পুরো নাম : মামুন খন্দকার জন্ম : ৩ রা ফেব্রুয়ারি ১৯৮১ পেশা : ব্যবসায়ী পিতা : হাজী মুজিবর রহমান খন্দকার মাতা : নরজাহান বেগম রেনু ঠিকানা : গ্রাম: বেতমোড়, ইউনিয়ন: বেতমোড়, থানা: মঠবাড়িয়া, জেলা: পিরোজপুর বর্তমান ঠিকানা : মহল্লা: মধ্যগাজীর চট, থানা: সাভার, জেলা: ঢাকা পরিবারের সদস্য সংখ্যা : ৫ : ১. স্ত্রী : ২. ছেলে: হেলাল উদ্দীন খন্দকার তাওহীদ (বয়স-১৭ বছর, এইচএসসি) : ৩. সিদরাতুল মুনতাহা (বয়স-১১ বছর, ৩য় শ্রেণি) : ৪. সাফায়াত হুজায়ফা (বয়স-১০ বছর, ২য় শ্রেণি) : ৫. মাবরুকা জাহিন (বয়স-১১ মাস) আহত হওয়ার স্থান ও তারিখ : নবীনগর বাইপাইল, ০৫/০৮/২০২৪, দুপুর ১২:৩০ মিনিট আক্রমণকারী : পুলিশ নিহত হওয়ার তারিখ ও স্থান : হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায়, ০৭/০৮/২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩০ মিনিট সমাধি : বেতমোড়, মঠবাড়ি, পিরোজপুর