জন্ম তারিখ: ১৬ অক্টোবর, ১৯৯৭
শহীদ হওয়ার তারিখ: ২০ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: বরিশাল
পেশা : ড্রাইভার, শাহাদাতের স্থান : বাড্ডা
শহীদ মো: এমদাদুল হক ১৯৯৭ সালের ১৬ অক্টোবর পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়া থানার ধাওয়া গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। এক নিতান্ত দরিদ্র পরিবারে তার জন্ম হয়েছিল। পিতা রিকশাচালক মো: ছোবাহান হাওলাদার ও মাতা হাছিনা বেগম। তিন ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার চেয়ে ছোট ও আদরের। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরিচালিত পিরোজপুরের জিয়ানগর ডিগ্রী কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। পরবর্তীতে পেশাগতভাবে এমদাদুল ঢাকায় একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে ড্রাইভার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি ছিলেন ২৭ বছর বয়সী এক স্বপ্নবাজ তরুণ। যিনি কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজ পরিবার ও ইসলামের জন্য কাজ করে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তার স্বপ্নগুলো তার জন্য অধরাই থেকে গেল। শহীদের অর্থনৈতিক অবস্থা শহীদ মো: এমদাদুল ঢাকার বাড্ডায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ড্রাইভার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এছাড়া তার বাবা প্যাডেল রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। মা গৃহিনী। বাবা-মা পিরোজপুরেই অবস্থান করছেন। বড় ভাই মো: হাসান এবং বড় বোন আয়েশা বিবাহিত, তারা নিজ পরিবার নিয়ে আলাদা থাকেন। এমদাদুল হকের মৃত্যুতে তাদের পরিবার আর্থিকভাবে অনেক অসহায় জীবন যাপন করছেন। তার দরিদ্র পিতার পক্ষে শুধু রিকশা চালিয়ে ডায়াবেটিকস ও রক্তশূন্যতায় আক্রান্ত বয়স্ক স্ত্রীর দেখভাল করা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। এমদাদুল হক ছিল তাদের পরিবারের শক্তি। সেই শক্তি হারিয়ে বৃদ্ধ পিতা-মাতা আজ অসহায়। বর্তমানে শারীরিক, মানসিক, আর্থিক - সবদিক দিয়ে তারা কষ্টে আছেন। শহীদী মৃত্যুর প্রেক্ষাপট ২০ জুলাই, ২০২৪। রোজ শনিবার। ঘড়িতে সময় সকাল ৯টা বেজে ৩০ মিনিট। এমন একটা সময় যখন সারাদেশে তুমুলভাবে চলছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। আন্দোলনের তীব্রতা কমানের জন্য তৎকালীন সরকার সারাদেশে ইন্টারনেট সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। সবাই একটা অন্ধকারের মুখে রয়েছে যেন। কোথায় কার সাথে কি ঘটছে জানার উপায় নেই। এদিকে বাড্ডা তখন পুলিশ বাহিনির আক্রমনের কেন্দ্রবিন্দুগুলোর মধ্যে অন্যতম। ফ্যাসিস্ট সরকারের নির্দেশে বেহিসাবে নির্বিচারে মানুষ মারছে তারা। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর একজন নিবেদিত প্রাণ কর্মী হিসেবে মো: এমদাদুল হক বাড্ডায় আন্দোলনকারীদের সাথে মিলে ফ্যাসিস্ট সরকারের জুলুম নির্যাতনের বিরোধিতা করছিলেন। আন্দোলন চলাকালীন সময় পুলিশের একটি গুলি এসে লাগে ঠিক তার কপালে। মুহূর্তেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি, রাজপথ ভেসে যায় শহীদের লাল রক্তে। তখনই তার মৃত্যু হয়। আল্লাহ তাকে শহীদ হিসেবে কবুল করুন, তাকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসীব করুন। শহীদ সম্পর্কে নিকটাত্মীয়/বন্ধুর অনুভূতি শহীদ মো: এমদাদুল হকের প্রতিবেশি নূরে মিল্লাত জানিয়েছেন, “শহীদ এমদাদ জামায়াতের একনিষ্ঠ কর্মী ছিলেন। তার আচার- ব্যবহার ছিল অমায়িক। সকলের সাথে ভালো ব্যবহার করতেন। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কষ্ট করে এইচ এস সি পাশ করেন। পরবর্তীতে ড্রাইভিং শিখেন এবং বাড্ডায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন।” ব্যক্তিগত প্রোফাইল নাম : মো: এমদাদুল হক জন্মতারিখ : ১৬/১০/১৯৯৭ পেশা : ড্রাইভার স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: ধাওয়া, ইউনিয়ন: ধাওয়া, থানা: ভান্ডারিয়া, জেলা: পিরোজপুর বর্তমান ঠিকানা : গ্রাম: ধাওয়া, ইউনিয়ন: ধাওয়া, থানা: ভান্ডারিয়া, জেলা: পিরোজপুর পিতার নাম : মো: ছোবাহান হাওলাদার, বয়স: ৫০, পেশা-রিকশাচালক মাতার নাম : হাছিনা বেগম পরিবারের সদস্য সংখ্যা : ৩ জন ঘটনার স্থান : বাড্ডা আক্রমণকারী : পুলিশ আহত হওয়ার সময়কাল : ২০/০৭/২০২৪, সকাল: ০৯:৩০টা মৃত্যুর তারিখ ও সময় স্থান : ২০/০৭/২৪, ঘটনাস্থলে, ৯:৩০ টা শহীদের কবরের বর্তমান অবস্থান : নিজ গ্রাম