জন্ম তারিখ: ১৪ এপ্রিল, ১৯৯০
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: বরিশাল
পেশা :ব্যবসা, (আগমন মোবাইল এন্ড কম্পিউটার পয়েন্ট) শাহাদাতের স্থান :ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
শহীদ মো: আল আমিন হোসেন আগমন ১৯৯০ সালের ১৪ এপ্রিল বরগুনা জেলার নাপিতখালী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মো: হানিফ চিশতী ও মাতা মোছা: মুনিয়া বেগমের একমাত্র ছেলে ছিলেন আল আমিন হোসেন আগমন। নয় ভাই বোনের মধ্যে তিনি একমাত্র ছেলে সন্তান। তাহলে বোঝাই যাচ্ছে তিনি কত আদরের সন্তান ছিলেন। ঢাকায় নিজস্ব কম্পিউটার ও মোবাইলের দোকান ছিল আগমনের। জীবনে অনেক স্বপ্ন এঁকে ছিলেন যে ঢাকায় অনেক বড় বাড়ি করবেন এবং বড় ব্যবসায়ী হবেন। আর তার স্বপ্নগুলো শুধু নিজেকে নিয়ে নয় গরিব দুঃখী মানুষকে নিয়েও ছিল। তিনি বলতেন আমাদের জীবনের সবকিছু আল্লাহ রাব্বুল আলামীন দিয়েছেন এজন্য যে আমরা যেন এগুলো ভালোভাবে বন্টন করতে পারি। আমাদের সম্পদ শুধু আমরা ভোগ করলে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে পারবো না। আমাদের সম্পদের ভিতরে গরিব-দুঃখীদের হক আছে। সেই হক আমাদের সঠিকভাবে আদায় করতে হবে। আওয়ামীলীগ সন্ত্রাসী পুলিশের গুলিতে দুনিয়ার সকল স্বপ্নকে বাদ দিয়ে পরকালে পাড়ি জমাতে হলো মোঃ আল আমিন হোসেন আগমনকে। ঘটনার সংক্রান্ত বিবরণ শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের স্বৈরাচারী শাসনের দ্রুত পতনটি ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত অবিশ্বাস্য বলে মনে হয়েছিল। বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী মহিলা রাষ্ট্রপ্রধানের ঐতিহাসিক পতন মধ্যপ্রাচ্যের আরব বসন্তের প্রতিফলন, যা ২০১০ সালে শুরু হয়েছিল। যখন কর্তৃত্ব বিরোধী বিদ্রোহ এই অঞ্চলে একের পর এক কুখ্যাত স্বৈরশাসকের পতন ঘটায়। তার আচরণ তিউনিসিয়ার বেন আলী, মিশরের হোসনি মোবারকের মতো ক্ষমতাচ্যুত আরব নেতাদের আগ্রাসী স্বৈরাচারী প্রবণতা এবং নৃশংস পদ্ধতির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ ছিল।কে জানতো যে ফ্যাসিবাদী সরকার পতনের পরেও এভাবেই সাধারণ মানুষের উপর হত্যাকান্ড চালাবে! বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুরো সময় ধরে যত মানুষ শহীদ হয়েছেন তার চেয়ে বেশি শহীদ হয়েছেন সম্ভবত বিজয়ের দিন । শেখ হাসিনা ভেবেছিল আমি যখন চলেই যাব, তখন বাংলাদেশের মানুষদের যতোটুকু পারা যায় কাঁদিয়ে যাবো। শহীদ আল আমিন হোসেন আগমন শুরু থেকেই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। ৫ আগষ্ট ফ্যাসিবাদী স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা পালিয়ে যাবার পর বিজয় মিছিল নিয়ে বাড্ডা থানার সামনে থেকে মেইন রোড হয়ে গনভবনের দিকে যাচ্ছিলেন। তখন বিকাল ৫:০৫ মিনিটের দিকে মিছিলের উপর মুহুর্মুহু গুলি আসতে থাকে। হঠাৎ তিনি কপালে গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে ঢলে পড়েন। পরবর্তীতে সেখান থেকে বিপ্লবী ছাত্রজনতা ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যায়। পরিবারের সদস্যরাও খবর পেয়ে ঢাকা মেডিকেলে যান। পরবর্তীতে ডাক্তার পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। অস্বাভাবিক পরিস্থিতির কারনে কালক্ষেপণ না করে বাবা আবু হানিফ চিশতী (৬৭) তার লাশ নিয়ে বরগুনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন এবং ঐ দিন রাত ১১টায় বরগুনা সদরের নাপিতখালী নিজ গ্রামে দাফন করা হয়। প্রকৃতপক্ষে, এই শহীদদের রক্ত, এই শহীদদের গল্প এবং এই শহীদদের উদাহরণ ছাড়া আর কোন ইতিহাস লেখা হয়নি। এই শহীদদের মতো লোকেদের দ্বারা জাতি প্রতিষ্ঠিত হয়, বিশ্বাসে সজীব হয় এবং চিন্তার জয় হয়। শহীদের এক বন্ধুর কথা আমাদের মাঝে আল আমিন ছিল সবার প্রিয়। তার অমায়িক ব্যবহার আমাদের মুগ্ধ করত শহীদ আল আমিন হোসেন আগমন নিয়মিত সকলপ্রকার সামাজিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতেন। সমাজের মানুষের যেকোন বিপদে সে সবার আগে ছুটে যেতেন। সকলের কাছে আল আমিন পরোপকারী হিসাবে পরিচিত ছিলেন। সে সব সময় স্থানীয় সকল ভালো উদ্যোগের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকতেন। আন্দোলনের শুরু থেকেই তিনি নিয়মিত মিছিলে অংশগ্রহণ করতেন। আল আমিন বন্ধুদের কাছে সব সময় বলতেন- আমি যেন শহীদ হতে পারি। পিতার অনুভূতি আমি আমার একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে ফেললাম। সে তো কোন অন্যায় করেনি বরং অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছে। আমার ছেলে সকলের কাছে প্রিয় ছিল। তারপরেও স্বৈরাচার শেখ হাসিনা আমার ছেলেকে হত্যা করলো। আমি শেখ হাসিনা সহ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সকলের ন্যায্য বিচার দাবি করছি। পারিবারিক অবস্থার বিবরণ আল আমিন হোসেনের বাবা আবু হানিফ চিশতী(৬৭) সেগুন বাগিচায় জেনারেটরের ব্যবসা করেন। এলাকায় বিদ্যুৎ না থাকাকালীন সময়ে বিভিন্ন দোকান ও প্রতিষ্ঠানে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে থাকেন। তার বাবা দুই বিয়ে করেন। ১ম ও ২য় স্ত্রীকে নিয়ে একত্রে সেগুন বাগিচায় থাকেন। আল আমিনের বাবা মোট ৯ সন্তানের জনক। ৮ মেয়ে ও একমাত্র ছেলে আল আমিন (২৫)। আল আমিন হোসেন ভাটারায় আগমন মোবাইল এন্ড কম্পিউটার পয়েন্ট এর স্বত্বাধিকারী ছিলেন। আল আমিন ও তার বাবার আয়ের মাধ্যমে পরিবার চলতো। তিনি ৫ বছর পূর্বে বিয়ে করেছিলেন এবং পারিবারিক কলহে তালাক হয়ে যায়। বর্তমানে তার কোন স্ত্রী, সন্তান নেই। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে আল আমিনের বাবা, মা ও বোন পাগল প্রায়। এমতাবস্থায় আর্থিক সমস্যা বেশি না থাকলেও একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে অসহায় হয়ে গেছে। এক নজরে শহীদ আল আমিন নাম : মো: আল আমিন হোসেন আগমন জন্ম তারিখ : ১৪-০৪-১৯৯০ জন্মস্থান : নাপিতখালী, বরগুনা সদর, বরগুনা পেশা : ব্যবসা, (আগমন মোবাইল এন্ড কম্পিউটার পয়েন্ট) বর্তমান ঠিকানা : বাসা/মহল্লা: ২৭/সি তোপখানা রোড, এলাকা : সেগুনবাগিচা থানা : শাহবাগ, জেলা: ঢাকা স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: নাপিতখালী, ইউনিয়ন: বুড়িরচর থানা : বরগুনা সদর, জেলা: বরগুনা পিতার নাম : মো: হানিফ চিশতী (৬৭) জেনারেটর ব্যবসায়ী মাতার নাম : মুনিয়া বেগম (৫৫) গৃহিণী বোন : ৮ বোন, ভাই নেই বৈবাহিক অবস্থা : বিবাহিত (বিচ্ছেদ) আঘাতকারীর : পুলিশ আহত হওয়ায় ও স্থান সময় : আজমপুর, উত্তরা, ০৫-০৮-২০২৪, বিকাল ৫:০৫টায় মৃত্যুর তারিখ ও সময়, স্থান : ০৫-০৮-২০২৪, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সন্ধ্যা ৬:০০টায় জানাজ : ০৫-০৮-২০২৪ রাত ১১:০০ টায় কবরস্থান : নাপিতখালী , বরগুনা সদর, বরগুনা